Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: চাই আরও মিলখা

সুষ্ঠু জাতীয় ক্রীড়ানীতি তৈরি না হওয়ার কারণেই ক্রিকেটের প্রতি দেশের সকলের অধিক নজর।

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২১ ০৪:০৭
Share
Save

অরুণ ঘোষের স্মৃতিচারণ ‘ওই তো মিলখা... ওড়ার জন্য তৈরি’ (২০-৬) পড়ে কিছু প্রশ্ন মনে জাগল। আর এক জন মিলখা এ দেশ পেল না কেন? একই ভাবে মনে হয়, ভারতীয় ফুটবল আর এক জন পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় বা চুনী গোস্বামী পেল না কেন? কোথাও যেন এই দু’টির মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। কেন ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিক্সে ৪০০ মিটার দৌড়ে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের চুলচেরা হিসাবের গরমিলে পদক হারানোর পর মিলখা সিংহকে হাপিত্যেশ করে থাকতে হয় এই আশায় যে, যদি আর কোনও ভারতীয় দৌড়বীর অলিম্পিক্সে পদক জিতে তাঁর ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে পারে?

মিলখা সিংহ এক সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে উল্লেখ করেছিলেন, ক্রিকেটের প্রতি তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। সত্যিই হয়তো তাঁর কোনও অভিযোগ ছিল না। কিন্তু পরোক্ষে তো তিনি বলতে চেয়েছিলেন যে, সুষ্ঠু জাতীয় ক্রীড়ানীতি তৈরি না হওয়ার কারণে ক্রিকেটের প্রতি দেশের সকলের অধিক নজর। এবং এই কারণেই ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের চরম ঘাটতি। একই অবস্থা এ দেশের ফুটবলেরও। যে দেশ ১৯৪৮ থেকে প্রায় ১৯৭০ সাল পর্যন্ত দু’টি এশিয়ান গেমস ফুটবলে শুধু জয়ই নয়, ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০— পর পর চারটি অলিম্পিক্স ফুটবলে খেলেছিল ও ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিক্স ফুটবলে চতুর্থও হতে পেরেছিল, সেই দেশ কোন জাদুমন্ত্রে একেবারে তলিয়ে গেল? এ দেশের ফুটবলের এই শোচনীয় চেহারার জন্য কি দায়ী নয় ক্রিকেটের চোখ ঝলসানো জৌলুস, ও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা? একটা দেশ যদি একটা খেলা নিয়েই সব সময় মেতে থাকে, তা হলে অপর খেলাগুলি কল্কে পাবে কী ভাবে? কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রকের এই একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই না হতে পারল এ দেশের অ্যাথলেটিক্সে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড-এর কোনও উন্নতি, না হল ফুটবলের উন্নতি।

তাপস সাহা

শেওড়াফুলি, হুগলি

স্বপ্নের দৌড়

প্রাক্তন অ্যাথলিট মিলখা সিংহের মৃত্যুতে ভারতের খেলাধুলোর জগতে একটা যবনিকাপাত হল। রোম অলিম্পিক্সে মিলখার কিংবদন্তি-সম ৪০০ মিটার দৌড়ের প্রত্যক্ষদর্শী ফুটবলের দিকপাল অরুণ ঘোষের স্মৃতিচারণ পড়ে মনটা যেন ফিরে গেল ৬১ বছর আগের সেই উজ্জ্বল, অথচ বেদনাময় দিনে (৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬০), যে দিন অল্পের জন্য অলিম্পিক পদক মিলখার হাতছাড়া হয়।

মিলখা সিংহের জন্ম যে গ্রামে, এখন তা পাকিস্তানে। কোনও ক্রমে এ দেশে পালিয়ে আসেন। ১৯৫৬ সালে অলিম্পিক্সের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় হাতেখড়ি। সেখানে মোটামুটি ভাল ফল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা জিইয়ে রাখল। ১৯৫৮-য় এশিয়ান গেমস এবং কমনওয়েলথ গেমসে সোনা পান, দ্বিতীয় হন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ অ্যাথলিট ম্যালকম স্পেন্স। এই কৃতিত্বের জন্য ১৯৫৯-এ পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন মিলখা।

১৯৬০-এ রোম অলিম্পিক্সে ৪০০ মিটারে তিনি স্বাধীন ভারতের অ্যাথলেটিক্সে প্রথম ফাইনালিস্ট। প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ডে তাঁর স্থান ছিল দ্বিতীয়; সেমিফাইনালে আবার দ্বিতীয়; কিন্তু ফাইনালে পেলেন চতুর্থ স্থান। ব্রোঞ্জ পদক ছিনিয়ে নিলেন উপরোক্ত স্পেন্স, খুব সামান্য ব্যবধানে। সমস্ত দেশের যেন আশাভঙ্গ হল। মিলখা অলিম্পিক রেকর্ডের চেয়ে দ্রুত দৌড়ন, তবুও পদক রইল অধরা। কিন্তু যে কথা আমরা শুনে এসেছি— রোমের ফাইনালে মিলখা সবার আগে ছিলেন, ফিরে তাকিয়েছিলেন, গতি অত্যধিক হওয়ার জন্য ক্ষণিকের জন্য গতি মন্থর করেন, তাই পদক-লাভ থেকে বঞ্চিত হন— তা হয়তো ঠিক না। মিলখা পাঁচ নম্বর লেনে প্রথম থেকে দারুণ দৌড়েছিলেন, নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন, কিন্তু অন্য তিন জন অল্পের জন্য হলেও সে দিন ছিলেন আরও গতিসম্পন্ন। এটা তো মানতে হবে, মিলখা তার আগে বা পরে, কখনও ৪৫.৬ সেকেন্ড বা তার চেয়ে কম সময়ে ৪০০ মিটার দৌড়োননি।

১৯৬০-এ লাহৌরে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিযোগিতায় ২০০ মিটার দৌড়ে মিলখা হারিয়ে দেন পাকিস্তানের বিশ্বমানের স্প্রিন্টার আবদুল খালিককে। মুগ্ধ হয়ে পাক প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান তাঁকে ‘উড়ন্ত শিখ’ শিরোপা প্রদান করেন। কেউ ভাবতে পারেন অলিম্পিক্সে চতুর্থ স্থান তো অন্য ভারতীয়দের কপালেও জুটেছে, তা নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? আছে! কারণ, অলিম্পিক গেমসের কেন্দ্রবিন্দু অ্যাথলেটিক্স। মিলখা ছিলেন তাঁর বিষয়ে মুষ্টিমেয় বিশ্বসেরাদের এক জন। ঐকান্তিক চেষ্টায় মিলখা নিজেকে এক অবিশ্বাস্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন!

সুরঞ্জন রায়

কলকাতা-৮৪

ওড়া শেষ

পাকিস্তানের গোবিন্দপুরায় চোখের সামনে বাবা-মা’কে খুন হতে দেখে যে কিশোর প্রাণ বাঁচাতে দৌড় শুরু করেছিল, তা ১৮ জুন মাঝরাতে থেমে গেল। তাঁর জীবদ্দশায় অ্যাথলেটিক্সে ভারত অন্তত একটি অলিম্পিক পদক জিতুক, দেখতে চেয়েছিলেন। ১৯৬০-এর ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর ইভেন্টের দৌড়ে ০.১ সেকেন্ডের (অটো টাইমারে ০.১৩ সেকেন্ড) ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যালকম স্পেন্সের পিছনে ফোটো-ফিনিশে দৌড় শেষ করেন। ৯১ বছর বয়সে করোনার কাছে হেরে গেলেন সুস্থ হয়ে উঠেও। রোমে ম্যালকমের থেকে এগিয়ে থেকেও শেষ ৫০ মিটারে কোথাও একটু ভুল করেছিলেন, বার বার বলেছেন তিনি। আশ্চর্য সমাপতন বীরের এই হেরে যাওয়ার।

মণিপুরের মৈরাং থেকে নেতাজি জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনের মশাল-দৌড় অনুষ্ঠানে ১৯৯৭-এর ২২ জানুয়ারি কলকাতা বিমানবন্দরে সহযাত্রী হিসেবে একান্ত আলাপচারিতায় মিলখা বলেন, বাংলার গ্রামগঞ্জে আনাচকানাচে সংগঠিত ট্রেনিং সেন্টার ও কোচিংয়ের যা খবর পান, তা অন্য কোনও রাজ্যে তিনি দেখেননি। কঠিন সঙ্কল্প, শৃঙ্খলা, অনুশীলন ছিল তাঁর সাফল্যের মন্ত্র। ওই মন্ত্রেই হোক এই প্রজন্মের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা

কলকাতা-১৫৪

অবিচার

মিলখা সিংহের পরলোক গমনের খবরটি এই সংবাদপত্রে প্রথম পাতায় স্থান না পাওয়ায় অবাক হলাম। স্বাধীনতার পর তিনিই প্রথম বিশ্বকে ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন। রোম অলিম্পিক্সে অল্পের জন্য চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। এরই সঙ্গে তুলনীয় ২০১৬ সালের রিয়ো ডি জেনিরো অলিম্পিক্সে দীপা কর্মকারের একটুর জন্য পদক হাতছাড়া হওয়ার ঘটনাটি। ২০১৩ সালে তাঁর আত্মজীবনী দ্য রেস অব মাই লাইফ প্রকাশিত হয়। ওই বছরই ভাগ মিলখা ভাগ ছবিটি মুক্তি পায়। মুখ্য ভূমিকায় ফারহান আখতার। অজস্র পুরস্কারে সম্মানিত হলেও তিনি ভারতরত্ন পাননি, যা অনেকেই অবিচার বলে মনে করেন।

সেখ মুবারক হোসেন

বড়তাজপুর, হুগলি

আরও পাঁচ

ক্যারাটে-সহ পাঁচটি নতুন খেলা এ বার দেখা যাবে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে। অন্য ইভেন্টগুলির একটি হল সার্ফিং— সমুদ্রের ঢেউয়ের উপরে সার্ফ বোর্ডে ভেসে থাকা; আর একটি স্পোর্ট ক্লাইম্বিং, ১৫ মিটারেরও বেশি খাড়া দেওয়াল বেয়ে উপরে ওঠা। চতুর্থ ইভেন্ট, স্কেটবোর্ডিং, দু’ভাবে হয়। একটি পার্কে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিশাল একটা কড়াই আকৃতির নির্মাণে স্কেট বোর্ডের নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে হয়। দ্বিতীয়টি রাস্তার উপরে স্কেটবোর্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করতে হয়। পঞ্চম খেলাটি বেসবল (পুরুষ) এবং সফট বল (মহিলা)। এই দু’টি আগেও অলিম্পিক্সে খেলা হয়েছে, তবে গত কয়েকটি অলিম্পিক্স থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

জয়ন্ত কুমার দেবনাথ

ইমেল মারফত

Letters to the editor Milkha Singh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।