‘কথা বললেই গান হয়ে যায়’ (১৭-৬) শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৪৪-এ ‘কেন পান্থ এ চঞ্চলতা’ এবং ‘আমার আর হবে না দেরি’— এই দুই গান দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পা রাখা।
তথ্যটি ঠিক নয়। হেমন্ত সর্বপ্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন ১৯৪২ সালে ‘অপরাধ’ ছবিতে ‘ওই যে ঝড়ের মেঘের কোলে’ গানটি, সুপ্রভা সরকারের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে। হেমন্ত প্লেব্যাক করেছিলেন ধ্রুব চক্রবর্তীর ঠোঁটে। আর সুপ্রভা দেবী প্লেব্যাক করেছিলেন মণিকা দেশাইয়ের ঠোঁটে। ছবিটির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন হরিপ্রসন্ন দাশ। ওই সময় তাঁর সঙ্গে বেশ কিছু ছবিতে সহকারী সুরকার হিসেবে হেমন্ত কাজ করেছিলেন।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে প্রথম জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা যায় ১৯৪৩ সালে প্রণব দে সুরারোপিত ‘প্রিয় বান্ধবী’ ছবিতে ‘পথের শেষ কোথায়’ গানটি। ছবিতে গানটি রেডিয়োতে ভেসে আসছে, এমন দৃশ্যের মাধ্যমে চিত্রায়িত করা হয়।
১৯৪৪ সালে গাওয়া ‘কেন পান্থ এ চঞ্চলতা’ ও ‘আমার আর হবে না দেরি’ গান দু’টি হল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রথম বেসিক রেকর্ডের রবীন্দ্রসঙ্গীত। খুবই জনপ্রিয় হয়। অনাদিকুমার ঘোষদস্তিদারের সঙ্গীত তত্ত্বাবধানে তিনি এই রেকর্ডটি করেছিলেন।
বিশ্বনাথ বিশ্বাস
কলকাতা-১০৫
দায় নেবেন?
এ বারের নির্বাচনী ফলাফল চিন্তার অবশ্যই। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্-নির্বাচন ও উত্তর-নির্বাচন পরিস্থিতি তো নিতান্তই আশঙ্কাজনক ও দুর্বিষহ। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, প্রতিটি ঘটনার পিছনে কিছু কারণ থাকে। তা হলে কি আমরা একটু ইতিহাসের দিকে তাকাব? ২০০৯-২০১০? এক দল মানুষ হাঁটছেন। মাফ করবেন, মানুষ বলে অসম্মান করব না— এক দল বুদ্ধিজীবী হাঁটছেন। বাম শাসনের বাস্তিল চুরমার না করে তাঁরা থামবেন না। তাঁদের অতিমানবিক পদক্ষেপে ভীত কিছু নির্বোধ সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করল— কাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর চাইছেন? আরও খারাপ হবে না তো? হাসলেন কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকরা, ‘‘নির্বোধ! আর কী খারাপ হবে?’’ আজ তবে কেন এই আক্ষেপ? পরিকল্পিত, অদূরদর্শী ও অভিসন্ধিমূলক পদযাত্রা, আজ যে অবস্থানে গোটা রাজ্যটাকে পৌঁছে দিয়েছে, তার দায় কি সেই অতিমানবিক দরদিরা নেবেন? যদি রাজি না-হন নিতে, তা হলে এটাও কি ‘শ্রেণিসংঘাতেরই রকমফের’? ‘দ্য ক্লাস-এফেক্ট অব কাস্ট’?
নরহরি কবিরাজ ‘বাংলার জাগরণ ও ভদ্রলোক’ নিবন্ধে অধ্যাপক ব্রুমফিল্ডকে উদ্ধৃত করে লিখেছিলেন, ‘‘ভদ্রলোক কারা? যারা কায়িক পরিশ্রম করে না, অর্থনৈতিক দিক থেকে যারা জমির খাজনা এবং চাকুরিতে জীবিকার উপর নির্ভরশীল, সামাজিক দিক থেকে যারা উপরতলার সুবিধাভোগী অংশের অন্তর্ভুক্ত, শিক্ষার কৌলীন্য ও উঁচু জাতির তকমা ধারণ করে যারা গরিব জনগণ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে অভ্যস্ত— তারাই ভদ্রলোক। ভদ্রলোকের আন্দোলন ছিল যতটা ইংরেজ বিরোধী, তার চেয়েও বেশি জনবিরোধী।’’ ১৯ শতক থেকে ২১ শতকে পা দিয়ে যেটুকু পার্থক্য, সেটুকু মেনে নিলে ন্যারেটিভটা বোধ হয় আজকের ‘ভদ্রলোক’, ২০০৯-২০১০’এ হাঁটাহাঁটি করা বুদ্ধিজীবীদের, ‘দ্য ক্লাস-এফেক্ট
অব কাস্ট’।
বিপুল বিশ্বাস
কলকাতা-১২৫
বিরল ব্যক্তি
কানহাইয়া কুমারকে দেখলাম ভোটে দাঁড়ানোর আগেও আফজল গুরুর ফাঁসির বিরুদ্ধে, রোহিত ভেমুলার উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন। ভোটে দাঁড়িয়েও, পুলওয়ামা কাণ্ডের পর মোদী সরকার যে জাতীয়তাবাদের জিগির তুলেছিল, কানহাইয়া তার বিরোধিতা করেছেন। শুধুমাত্র ভোটে জেতা তাঁর লক্ষ্য হলে নিশ্চয়ই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও দেশপ্রেমের বন্যা বইয়ে দিতেন। কানহাইয়া তাঁর বক্তব্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ভোটে জয়-পরাজয় তাঁর কাছে প্রধান বিষয় হয়ে ওঠেনি।
এ রকমই ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। জনসভায় দাঁড়িয়ে পরিষ্কার বলেছেন, আমার পক্ষে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে বেশি আসা সম্ভব হবে না। আমি এখানে নালা-নর্দমা, রাস্তা দেখতে আসতে পারব না। আমাকে বেশির ভাগ সময়ে দিল্লিতে থাকতে হবে। সে সব বুঝে আমাকে ভোট দেবেন। পাশ থেকে সহকর্মীরা বলার চেষ্টা করছেন, প্রকাশ্য জনসভায় এ সব বলবেন না। ইন্দ্রজিৎবাবু জোরের সঙ্গেই বললেন, হেরে গেলে হেরে যাব, কিন্তু যা সত্যি তা বলতে হবে।
খড়্গপুরে দেখেছিলাম নির্মল সরকার নামে এক ব্যক্তিকে। তিনি খড়্গপুর পুরসভায় জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে তিন বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিন বারই হেরে যান। ওঁর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বলেছিলেন, নির্মল ছেলেটি সৎ, কাজের, কিন্তু বড় একগুঁয়ে, জেদি। নইলে ওঁকে হারানো যেত না। নির্মলবাবু যখন ভোটের প্রচারে বেরোতেন, হাত জোড় করে থাকতেন না। বলতেন, আমি এই ওয়ার্ডে জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়েছি, যদি ইচ্ছা হয় আমাকে ভোট দেবেন। যদি মনে হয় আমার দ্বারা কাজ হবে, তবে আমাকে ভোট দেবেন। দলের লোকেরা ওঁকে বলেছে, ভোটের ক’টা দিন একটু হাত জোড় করে বিনীত ভাবে কথা বলতে হবে। নির্মলবাবু বলতেন, আমি কি চোর না বদমাশ? আমি কি ভোট-ভিখারি? জনগণ চাইলে আমাকে ভোট দেবেন, না দিলে হেরে যাব।
এই রকম লোকেরা সাধারণত ভোটে হেরে যান। ফলে আমাদের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয় বেশি।
অমিতাভ চক্রবর্তী
সুভাষপল্লি, খড়্গপুর
বিরোধী প্রয়োজন
২০১৯ সালের নির্বাচনের ফল কি সত্যিই ভারতের পক্ষে সুখকর? দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য যেমন প্রয়োজন একটি স্থায়ী সরকার, তেমনই প্রয়োজন একটি শক্তিশালী বিরোধী দল। এই নির্বাচনের ফল জন্ম দিতে পারেনি একটি সংগঠিত বিরোধী দলের। ৩৫৩টি আসনে জয়লাভ করে যে রাজনৈতিক দলটি কেন্দ্রে সরকার গড়ল, আগামী পাঁচ বছর প্রতিটি ভারতবাসীকে তার নীতি, নির্দেশ অনুযায়ী চলতে হবে। সরকার কোনও বিরুদ্ধ কাজ করলে তার বিরোধিতা করার মতো কোনও স্তম্ভ লোকসভাতে আর রইল না। বিরোধী দলকে বলা হয় ‘ছায়া মন্ত্রিসভা’। এটি অদৃশ্য হলে, শেয়ার বাজার হয়তো চাঙ্গা হবে, কিন্তু গণতন্ত্র কতটা মর্যাদা পাবে, প্রশ্নসাপেক্ষ।
স্মিতা চট্টোপাধ্যায়
কসবা, কলকাতা
ধর্মীয় কুস্তি
সংসদ ভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নতুন সাংসদদের কেউ কেউ চিৎকার করছেন ‘জয় শ্রীরাম’, কেউ ‘জয় মা কালী’, ‘জয় দুর্গা’। কেউ ‘আল্লা হু আকবর’ বলে সংসদ সরগরম করছেন। কেউ ‘বন্দে মাতরম্’ বলতে নারাজ, কারণ তা নাকি তাঁর ধর্মবিরোধী! বৃহত্তম গণতন্ত্রের পীঠস্থান স্বরূপ সংসদকে কি এঁরা ধর্মীয় কুস্তির আখড়া পেয়েছেন? ওই সব স্লোগানের জন্য তো মন্দির মসজিদ আছে। ভোটের আগে সভায় সভায় রাম রহিম নিয়ে অনেক তর্জা তো হল। জিতে যাওয়ার পরে এক জন সাংসদ তো সবার। তিনি তখন শুধুমাত্র বিশেষ এক দল, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নন। সে জন্যই, সংবিধান স্বীকৃত ‘নিরপেক্ষতা ও দেশের অখণ্ডতার’ শপথ নিতে হয় প্রত্যেক সাংসদকে। কিন্তু শপথ নিয়েই ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে এই শপথ পরক্ষণেই ভেঙে ফেলছেন এঁরা। সংবিধান ও সংসদের অবমাননা করছেন। এঁদের আচরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় ও দেশের মানুষের কাছে হাসির খোরাক হয়ে উঠেছে। বিদেশিদের কাছে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছ। দোহাই, সংসদকে নাট্যশালা বানাবেন না।
প্রণব কুমার মাটিয়া
পাথরপ্রতিমা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy