প্রশাসক নির্বিকার। পুলিশও তা-ই।
স্বাধীনতার মানে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো আমরাও অনেকেই বুঝি না (‘কাকে স্বাধীনতা বলে, বুঝিনি’, ১৫-৮)। অবশ্য দেশভাগের গভীর ক্ষত নিয়ে দীর্ঘ জীবনযাপনের যে বেদনা, তা তাঁর মতোই অনেকের লেখায় কথায় আমরা বহু বার পড়েছি, শুনেছি। কষ্ট হয়েছে সে সব কথা শুনে। সেইটুকুই। তার পর দীর্ঘ সময় কেটে গিয়েছে। বলুন তো, দেশের মধ্যে বাস করে স্বাধীনতার কোন স্বাদ পেয়েছেন কোটি কোটি দেশবাসী? নাগরিকত্ব কি শুধু একটা ‘আধার’ নম্বর? দারিদ্র ঘুচল না। সবার হাতে কাজ নেই। স্বাস্থ্য পরিষেবা অপ্রতুল। খাদ্যের নিরাপত্তা নেই, শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত। কোটি কোটি ভবিষ্যৎ নাগরিকের জীবন অনিশ্চিত। যুবসমাজ পথভ্রষ্ট। মানুষের সামাজিক সুরক্ষা লুণ্ঠিত। সামান্য ব্যক্তিপরিসরটুকুও দখল হয়ে গিয়েছে। তাঁদের বেদনার ভাগ আজ কে নেবে? লাউডস্পিকারের চিৎকারে বিনিদ্র রজনী, স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের নামে ‘তাণ্ডব’। নেতা-নেত্রীর ভাষণ, পথে স্তূপীকৃত জঞ্জাল। প্লাস্টিকের প্যাকেট ধরে কুকুরের টানাটানি। ভাঙাচোরা পথঘাট। এর নাম স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন? মানুষ কোথায় যাবেন? কে দেবে তাঁদের অন্যায় প্রতিবিধানের আশ্বাস? কে দেবে নিরাপত্তা? কে নিশ্চিত করবে পরিচ্ছন্নতা?
প্রশাসক নির্বিকার। পুলিশও তা-ই। আইনের শাসনের দাবি উঠবে না কেন? সেই দাবি তোলার কাজ কি স্বাধীন নাগরিকের নয়? দলীয় রাজনীতির সীমার বাইরে যাওয়ার স্বাধীনতা কবে অর্জিত হবে আমাদের? জড়তা না কাটলে স্বাধীনতার মানে অধরাই থেকে যাবে। ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ স্লোগান তাই স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ সঙ্কুচিত করে। এই সব কিছুই চুপ করে বসে দেখা ছাড়া কী বা করতে পারছেন আজ সাধারণ মানুষ? মুখ বুজে সহ্য করে যাওয়ার নামই তো পরাধীনতা, স্বাধীনতা কোথায়? আমরা যে কিছুই করছি না, সেটা স্বীকার করতেও পারছি না। হায় হায় করছি। কী ছিল এক দিন, এই ভাবনায় অলস দুপুর কাটছে। “অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা; যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই/ পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।”
অরণ্যজিৎ সামন্ত, কলকাতা-৩৬
মাফিয়াতন্ত্র
দেশের স্বাধীনতার পঁচাত্তর পূর্তি উদ্যাপন হচ্ছে, বাস্তবে আমরা ছিলাম এক রাজতন্ত্রের অধীন, এখন আমরা মাফিয়াশক্তির অধীন। এক জন শাসক দলের নেতা সিবিআই-এর মামলায় জেলে আটক, আর তার জন্য শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যমণ্ডিত শনিবারের হাট বা সোনাঝুরির হাট বন্ধ। কী নির্লজ্জ এই শাসনব্যবস্থা। সোনাঝুরির হাট পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয়। এই হাটের ইতিহাস আছে। যত দূর মনে আছে, এই হাট শুরু হয় ২০০০ সালে। কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্রী শ্যামলী খাস্তগির এর সূচনা করেছিলেন বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে। মূল উদ্দেশ্য ছিল, এলাকার মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের তৈরি নানা হস্তশিল্প এই হাটে বিক্রি করা। আদিবাসীদের রোজগারের একটা উৎসও বলা যেতে পারে। তখন এই হাটে বসার জন্য টাকাপয়সা দেওয়ার ব্যাপার ছিল না। এখন এই হাটের দখল চলে গিয়েছে রাজনৈতিক গোষ্ঠীর হাতে, বড় বড় ব্যবসায়ী ও দালালদের খপ্পরে। খালপাড়ের যত গাছ ছিল, সেগুলোকে কেটে রেলিং দেওয়া হয়। লালমাটির পথে কালো পিচ পড়ে। দাদাগিরি শুরু হয়ে যায়। কে কাকে অধিকার দিল এই হাট বন্ধ করার? একটা আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় যে বন্দি, তাঁর এখনও এতটাই ক্ষমতা! সরকার ও প্রশাসন এখনও নির্লজ্জের মতো চোখ-কান বন্ধ করে একটা বিতর্কিত মানুষকে এই ভাবে সমর্থন করছে!
পশ্চিমবঙ্গের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে এই হাট একটা আলাদা আবেগ, রাজ্য প্রশাসন কি জানে না? ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই হাটের উন্নয়নের জন্য, পর্যটকদের সুবিধের জন্য অনেক পদক্ষেপ করেছিলেন। তিনি কি জানেন, এই হাটের পরিবেশ এখন কী দাঁড়িয়েছে! এক জন ব্যক্তি গরু পাচারের অভিযোগে বন্দি, তাঁর জন্য একটা সাংস্কৃতিক স্থান বন্ধ থাকবে, এটা ভাবাই যায় না! প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আপনারা দয়া করে এই হাট চালু করার ব্যবস্থা করুন। শাসক দলের শিক্ষিত নেতার উদ্দেশে নিবেদন, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় করুন। সাংস্কৃতিক জায়গায় রাজনীতি করবেন না।
পার্থময় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
তবু অপূর্ণতা
ভারতের স্বাধীনতার পঁচাত্তর পূর্তির উৎসবে ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ স্লোগান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু আজও বহু মানুষ গৃহহীন, তাঁদের ঠিকানা প্ল্যাটফর্ম বা ফুটপাত। তাঁদের কাছে এই স্লোগান বিলাসিতা। আজও ফুটপাতে ঘুমন্ত শিশুকে বিত্তশালীর গাড়ি এসে পিষে দেয়। হোটেল-রেস্তরাঁয় শিশুশ্রমের উদাহরণ দেখা যায়। যে কিশোরের বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার বয়স, সে প্ল্যাটফর্মে ঘুরে সংবাদপত্র বিক্রি করে পেটের দায়ে।
স্বাধীনতার উৎসবের দিনে ভারতের মানবসম্পদের এই অবক্ষয় ভুলে গেলে চলবে না। পরাধীন দেশকে ব্রিটিশদের গ্রাস থেকে মুক্ত করে দেশবাসীর মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন বিপ্লবীরা। সেই প্রত্যাশা কত দূরপূর্ণ হয়েছে?
শর্মিষ্ঠা গুহ, কলকাতা-৩২
অরবিন্দ-গোখলে
শুভ্রাংশুকুমার রায় (‘আগামীর নায়ক?’, সম্পাদক সমীপেষু, ২৮-৮) একটু সজাগ পাঠক হলে নিশ্চয়ই লক্ষ করতেন, আমি আলোচ্য প্রবন্ধের (‘আশ্চর্য আধুনিক ছিলেন’, ১৩-৮) কোথাও বলিনি, অরবিন্দ ‘আগামীর চালক’ বা ‘নায়ক’। পত্রলেখকই প্রবন্ধটির একটি বাক্যকে বিকৃত করে উপস্থাপিত করেছেন— “তিনিই হয়ে উঠবেন আগামীর চালক, ‘দ্য মাস্টার অব দ্য ফিউচার’।” প্রবন্ধে বাক্যটি অরবিন্দর প্রেক্ষিতে রচিতই হয়নি! অরবিন্দই কথাটি লিখেছিলেন ‘নিউ ল্যাম্পস ফর ওল্ড’ প্রবন্ধমালায়, ১৮৯৩ সালে, একটি সম্ভাবনা হিসেবে। জাতীয় নেতা, জাতীয় কাজকর্মের পন্থার নিরিখে। পরবর্তী কালে যেমন লেনিন সেই আগামীর চালক হতে পেরেছিলেন, পেরেছিলেন গান্ধীও। অরবিন্দ যেন দ্রষ্টার মতো এক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন। দুর্ভাগ্য, আরও অনেকে অরবিন্দর ঠিক এমনই ভ্রান্তিময় উপস্থাপনা করেছেন। এতে আখেরে ক্ষতি হয়েছে ভারতীয় ইতিহাসের, বঙ্গীয় ইতিহাসচেতনার তো বটেই।
এই সূত্রে নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়ের চিঠিটি (‘কে বলেছিলেন’, ২৮-৮)গুরুত্বপূর্ণ। গোপালকৃষ্ণ গোখলে কবে কোথায় ‘হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো’— বলেছিলেন, তার কোনও সন্ধান সত্যি কেউ-ই দিতে পারেন না। তাও, গোখলের নামেই দিনের পর দিন চলে আসছে এ কথা। তবে এখন নিশ্চিত বলাই যায় যে, অরবিন্দই এ কথার উদ্গাতা। অরবিন্দ তাঁর ‘বঙ্কিমচন্দ্র’ (১৮৯৩-৯৪) সংক্রান্ত প্রবন্ধগুচ্ছেই প্রথম ব্যবহার করেন সেই বাক্য যা ‘গোখলে-কথিত’র অনুরূপ। আর গোখলেই যদি কথাটির স্রষ্টা হন, তিনি ১৮৯৫-এর আগে বোধ হয় তা বলেননি। ১৮৮৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন গোখলে, ’৯৫-তে কংগ্রেসের জয়েন্ট-সেক্রেটারি হন। অনুমান, তার আগে বাংলাকে নিয়ে এতটাও ভাবার অবকাশ ছিল না তাঁর। দ্বিতীয়ত, ২৩ জুন ১৯০৯ সালে, বাকরগঞ্জ বক্তৃতায় (যার উল্লেখ নির্মাল্যবাবু করেছেন), অরবিন্দ আরও সোজাসুজি বলেন, ‘হোয়াট বেঙ্গল ডাজ় টুডে দ্য রেস্ট অব ইন্ডিয়া উইল ডু টুমরো’। এটি যদি গোখলের কথা হত, নিশ্চয়ই অরবিন্দ তা স্বীকার করতেন বক্তৃতায়। অর্থাৎ, ১৯০৯ পর্যন্ত গোখলে কথাটির সঙ্গে যুক্ত নন, এমনটা ভাবা অনৈতিহাসিক হবে না। তাই, সময় এসেছে বাক্যটি ব্যবহারের আগে ভেবে নেওয়ার, এর প্রকৃত বিন্যাসকারী কে। উত্তর সম্ভবত, অরবিন্দ ঘোষই।
সায়ম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-১৯
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy