কবি জয় গোস্বামীর ‘এই অসহ নিষ্ঠুরতা কেন’ (৯-৭) প্রবন্ধটি পড়ে মর্মাহত হলাম। ৮৪ বছর বয়সি পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ পাদরি স্ট্যান স্বামীকে যে ভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে আটকে, অমানবিক আচরণ করে তিলে তিলে হত্যা করা হল, তা ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ হত্যা। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়।
এনআইএ-র অভিযোগ, তিনি নাকি মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ভীমা কোরেগাঁও-তে দেশে অশান্তি তৈরির পরিকল্পনায় এলগার পরিষদের সভার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থেকে সরকারকে গদিচ্যুত করার ছক কষছিলেন। সুতরাং, যথেষ্ট আইনি প্রমাণ ছাড়াই আটক রেখে, জামিন না দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পরোক্ষ মদতে তাঁকে দোষী প্রমাণের চেষ্টা করা হল। এবং দীর্ঘ দিনের অভুক্ত পাদরিকে হাসপাতালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত বলে ঘোষণা করা হল।
কোনও রাষ্ট্রশক্তি যখন দিশাহারা ও বিপন্ন হয়ে পড়ে, তখন তারা প্রতিবাদী মুখের বাক্স্বাধীনতাকে রোধ করতে যেমন সচেষ্ট হয়, ঠিক তেমনই প্রতিবাদীদের আন্দোলন, শান্তিপূর্ণ জমায়েত এবং সংগঠনের অধিকারকে বাহুবলের মাধ্যমে রোধ করার চেষ্টা করে। স্ট্যান স্বামী সমাজবিরোধী ছিলেন না। তিনি ছিলেন ঝাড়খণ্ডের জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের উন্নয়ন এবং অধিকার আদায়ের এক সংগ্রামী নেতা, যিনি শেষ জীবন পর্যন্ত এই জনজাতি সম্প্রদায়ের ন্যায্য অধিকার আদায়ের ধারক ও বাহক হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বৈরতন্ত্রী শাসকরা প্রমাণ করে দিলেন, কোনও সমাজকর্মী বা আন্দোলনকারী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে এই ভাবেই তাঁকে জেলে আমৃত্যু আটক রেখে নিঃশব্দে হত্যা করা হবে। এই বার্তা গণতন্ত্রের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক।
তপনকুমার বিদ
বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
এতই দুর্বল?
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ শাসক দ্বারা ভারতীয় বিপ্লবীদের উপর নৃশংস অত্যাচার এবং বিচার বিভাগের একপেশে রায়ের কথা ইতিহাসে পড়েছি। কিন্তু স্বাধীনতার পরেও এক অশীতিপর বন্দিকে সামান্য চশমা ফিরে পাওয়ার জন্য কঠিন আইনি লড়াই করতে হবে! উপযুক্ত চিকিৎসা চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হতে হবে! এমনকি খাওয়ার জন্য সিপার চাইলে সেটাও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন বৃদ্ধ, এই অজুহাতে দেওয়া হবে না! সুপরিকল্পিত ভাবে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হল এমন এক জন মানুষকে, যিনি আদিবাসী ভারতীয়দের অধিকার রক্ষার জন্য সরব ছিলেন। এতে কি সরকারের গৌরব বাড়ল? ভারতীয় রাষ্ট্রশক্তি কি নিজেকে এতটা দুর্বল ভাবে যে, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধ কণ্ঠকে রোধ করতে এমন কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে! ইতিহাস তা হলে বর্বর ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে এই শাসনের তফাত দেখাবে কী ভাবে?
গৌতম পাত্র
চন্দননগর, হুগলি
হিটলারোচিত
জয় গোস্বামী তাঁর প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে যেন সমাজের বিবেক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর এই ভূমিকা নিশ্চয়ই দেশের অন্য বুদ্ধিজীবীদেরও এগিয়ে আসার সাহস জোগাবে। কিন্তু বিজেপি সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরণের বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি হঠাৎ স্তালিনের নাম নিয়ে এলেন কেন, বোঝা গেল না। বিজেপি সরকারের ফ্যাসিস্ট কার্যকলাপের সঙ্গে যদি কারও তুলনা করতে হয়, তবে প্রথম নাম আসা উচিত হিটলারের। স্তালিনের সঙ্গে কি হিটলারের তুলনা হয়? হিটলারের ফ্যাসিবাদ শুধু জার্মানির সমাজ-সভ্যতাকে ধ্বংস করেনি, মানবসভ্যতার সামনেও বড় বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছিল। অন্য দিকে, স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েট ইউনিয়ন ফ্যাসিস্ট জার্মানিকে পরাস্ত করে বিশ্বকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছিল। এর জন্য সোভিয়েট ইউনিয়নকে চরম মূল্য দিতে হয়। যুদ্ধে সে দেশের অর্ধেকই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। অথচ, হিটলারের নাম কবির লেখায় এক বারও এল না!
সমর মিত্র
কলকাতা-১৩
জমির অধিকার
এনআরসি-র উদ্দেশ্য, যাঁরা এ দেশের নাগরিক, তাঁদের তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে হবে। কিন্তু আদিবাসীদের পক্ষে এই তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা বা নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়া কি সম্ভব? যাঁরা দেশের বেশির ভাগ নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত, যাঁদের বেঁচে থাকার জন্য কোনও সরকার কোনও ভূমিকা নেয়নি, যাঁদের কঠিন প্রতিকূলতার সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম করে যেতে হয়, তাঁদের কাছে নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া কি ন্যায়সঙ্গত? সরকার বলবে, যাহাই আইনসঙ্গত, তাহাই ন্যায়সঙ্গত। তাই জনজাতিদের হয়তো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে রাষ্ট্রহীন করা হবে। তাঁদের রাষ্ট্রীয় দাসে পরিণত করা হবে। কর্পোরেটদের সস্তা শ্রমিক জোগান দেওয়ার এই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ কারও অজানা নয়। ফাদার স্ট্যান স্বামী আদিবাসীদের এই অধিকার প্রতিষ্ঠারই লড়াই করছিলেন।
জল, জঙ্গল, জমির অধিকার আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার। অথচ, কর্পোরেটদের সুবিধার্থে বিভিন্ন প্রদেশে আদিবাসী উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। স্ট্যান স্বামীর মতো মানুষ সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এই রকম পরিস্থিতিতে তাঁকে থামানো ছাড়া রাষ্ট্রের কাছে অন্য পথ খোলা ছিল না। তাই তাঁর ‘হত্যা’কে যদি শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভেবে নীরব থাকি, এই ধরনের রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দল নির্বিশেষে জনমত গড়ে না তুলি, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে হাজার হাজার স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।
সূর্যকান্ত চক্রবর্তী
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
অবাক বিবৃতি
স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু নিয়ে দেশ-বিদেশে বিতর্ক এবং নিন্দার ঝড় উঠেছে। ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবাক হলাম, যখন দেখলাম তাঁর মৃত্যু নিয়ে সরব হয়েছে বার অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া। তাদের মতে— করোনাকালে ৮৪ বছর বয়সি এক জন অসুস্থ ব্যক্তিকে বিচারের পূর্বে এত দিন আটকে রাখা হয়েছিল, যা নিষ্ঠুরতা এবং অস্বাভাবিক প্রাতিষ্ঠানিক দুর্ব্যবহার। অবাক লাগল এই কারণে যে, দিনের পর দিন যাঁরা আদালতে স্ট্যান স্বামীর জামিনের বিরোধিতা করে এসেছেন, তাঁরা কি বার অ্যাসোসিয়েশনের বাইরের লোক? তাঁরা হয়তো বলবেন— এক জন আইনজীবী মক্কেলের কাছে দায়বদ্ধ। স্ট্যান স্বামীর বিপক্ষের উকিলকে তাঁর বিপক্ষেই কথা বলতে হবে, এটাই তাঁর কর্তব্য। তাই কি? তথাকথিত নিষ্ঠুরতা এবং অস্বাভাবিক প্রাতিষ্ঠানিক দুর্ব্যবহার বুঝতে পেরেও বিপক্ষে বলতে হবে? আর মক্কেলের হয়ে কথা বলাটাই যদি কর্তব্য হয়, তা হলে আর এই বিবৃতি দেওয়া কেন? অপরের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলাই যাঁদের কর্তব্য, তাঁদের নিজস্ব বিবৃতির মূল্য আছে কি?
শফিকুল হক
কলকাতা-৩৭
কিসের গণতন্ত্র
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি দিন গড়ে পাঁচ জন জুডিশিয়াল কাস্টডিতে বা পুলিশ হেফাজতে মারা যান। কারও ক্ষেত্রে সুইসাইড, কারও ক্ষেত্রে দুরারোগ্য রোগ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। এই অবস্থাকে পাল্টানোর চেষ্টা কোনও সরকার করতে পারল না। স্ট্যান স্বামী তাঁর চিকিৎসার জন্য জামিন চেয়ে বার বার প্রত্যাখ্যাত হন। এটা কিসের গণতন্ত্র? রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের অ্যাজেন্ডা অনুসারে আন্দোলন করে। ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে, দলের স্বার্থে। আমরা-ওরা’র মাঝখানে বিচারের বাণী অবহেলিতই থেকে যায়।
অরূপ গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা-৫৫
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy