একত্রে: রাজ্যসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের পর প্রধানমন্ত্রীকে মহিলা সাংসদদের অভিনন্দন। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩। ছবি: পিটিআই।
‘যার কোনও ব্যাখ্যা নেই’ (২৮-৯) প্রবন্ধে প্রেমাংশু চৌধুরী লিখেছেন, মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করা বস্তুত আদানি-কাণ্ড থেকে নজর ঘোরানোর জন্য এক অভিনব ছক। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টাও আছে, বলেছেন প্রবন্ধকার। ভাবতে হবে, এই নরেন্দ্র মোদী ২০১৮ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর তিন তালাক প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মুসলিম মহিলাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আজ স্বাধীনতার ৭৬ বছর পর এই মহিলা সংরক্ষণ বিল ভারতীয় নারীদের এক পরম পাওয়া— এ কথা স্বীকার করতে বাধা কোথায়? পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় আজও নারী অপাঙ্ক্তেয়। পুরুষের সঙ্গে নারীর সমমর্যাদার কথা বললেও সেই মর্যাদা দেওয়া হয় না।
প্রধানমন্ত্রীর জনমোহিনী এই বিলের অন্তরালে যে এক সূক্ষ্ম রাজনীতি আছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে মোদী দূরদর্শী। তিনি জানেন, ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচনে যদি এই এক-তৃতীয়াংশ মহিলা সংরক্ষণ আসন ছেড়ে দেওয়া হয়, তা হলে তাঁর সরকার তাঁকেই গদিচ্যুত করবে। প্রবন্ধকার যথার্থই বলেছেন, ২০১৯ সালে জয়ী বিজেপির মহিলা-প্রার্থী ১২.৬ শতাংশ ছিল। এখন কি বিজেপির পক্ষে আচমকা দলের পুরুষ নেতাদের একটা বড় অংশকে সরিয়ে মহিলাদের প্রার্থী করা সম্ভব? আসলে জনগণনা একটা অজুহাত মাত্র। জনগণনার সঙ্গে মহিলা প্রার্থীর আসন সংরক্ষণের কোনও সম্পর্ক নেই। সমস্ত অঙ্গরাজ্যে নারী-পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান সমান, ৪৮ বা ৪৯ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তা হলে কোন নীতিতে মহিলা-প্রার্থী সংরক্ষণ হবে? প্রবন্ধকার লটারির কথা বলেছেন। আমার মতে, এটা বড় সমস্যা নয়। আসন সংরক্ষণের সমাধান রাজনৈতিক দলগুলোর উপরেই ছাড়তে হবে। তারা বাধ্য হবে আসন ছাড়তে ।
নারী, তুমি অর্ধেক আকাশ— এ কথা কবির কাব্যে মানায়; কঠিন গদ্যে নয়। স্মরণীয়, এই প্রবন্ধ প্রকাশের দিনেই মহারাষ্ট্রে ১২ বছরের ধর্ষিতাকে সকলের তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার এক মর্মন্তুদ সংবাদ প্রকাশিত হয়। মনুষ্যত্বের এমন অবমাননা ভারতেই ঘটে বার বার। আজ বিশ্ব দেখছে এ ঘটনা, তারা শিউরে উঠছে। আমরা শিউরে উঠি না, কারণ আমরা সইতে অভ্যস্ত। এই ঘটনা নির্ভয়া কাণ্ডকেও হার মানায়। নারীর আসন সংরক্ষণ হলেও পুরুষের পেশিশক্তির জয় সর্বত্র। এ লজ্জা যেমন শাসকের, তেমনই লজ্জিত হতে হবে প্রতিটি নাগরিককে।
সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪
কৌশল
প্রেমাংশু চৌধুরীর প্রবন্ধটি যথাযথ। মহিলা সংরক্ষণ বিল বিপুল ভোটে পাশ করিয়েও আগামী লোকসভা ভোটে তা চালু হবে না কেন? জনগণনা ও আসন পুনর্বিন্যাসের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক? আসলে মহিলা ভোটকে কাছে টানার এ এক কৌশল। তিন তালাক নিষিদ্ধ করে বিজেপি কিছুটা হলেও মুসলিম মহিলাদের ভোট পেয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই হাতে সময় থাকতে প্রচার করে দেশের সমগ্র নারী-ভোটে বিজেপি এ বার থাবা বসাতে চায়। বহু বছর ধরে এই বিল আটকে আছে। সেই বন্ধ দুয়ার খোলার কৃতিত্ব মোদীজি অবশ্যই নিতে চাইবেন। সফল চন্দ্রযান ও জি২০ আয়োজন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এখন বলীয়ান। সব শাসক দলই চাইবে ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ। বিরোধীদেরও এ বিলে সমর্থন না দিয়ে উপায় ছিল না। তবে আদানি কাণ্ড থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে এই বিল— এমনটা হাস্যকর যুক্তি।
অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
সঞ্চয়ের ভিত্তি
প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘গৃহস্থের সঞ্চয়ে ধাক্কাই চিন্তা মোদী সরকারের’ (২৯-৯) শীর্ষক প্রতিবেদন সম্পর্কে কিছু কথা। এই ব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি হয়েছিল বহু দিন আগে। সুকৌশলে সঞ্চয়ের কান্ডারিদের অবাঞ্ছিত করার প্রয়াস আজ এই ফলাফলের দিশারি। মজবুত জাতীয় সঞ্চয়ের যে মূলধন তৈরি করেছিলেন সাধারণ ভারতবাসী, তার উপরে বসে ২০০৭-০৮ সালের আশেপাশে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সহায়তায় যে সব আইন তৈরি করা হয়, যে পরিবেশ তৈরি করা হয়, তার কোনওটাই এখনও পর্যন্ত সঞ্চয়ের অনুকূল নয়।
জাতীয় সঞ্চয়ের অগ্ৰগতির জন্য ভারতে একটা আস্ত প্রতিষ্ঠান ছিল ভারত সরকারের নিজের জাতীয় সঞ্চয় সংস্থা বা ন্যাশনাল সেভিংস অর্গানাইজ়েশন। কার সুপরামর্শে জানি না, সরকার জাতীয় সঞ্চয় সংস্থাকে পাল্টে করে দিল ন্যাশনাল সেভিংস ইনস্টিটিউট। ওই দফতরে সম্ভবত আর গুটিকয়েক কর্মচারী বা কর্মকর্তা অবশিষ্ট আছেন সারা ভারতে, যাঁরা নাকি সবাই হয় দফতর পরিবর্তন, নয়তো স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের আবেদন করেছেন। আর সারা ভারতে অবশিষ্ট বা বরাদ্দ আছে একখানা অফিস। বাকিগুলি সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কলকাতার নিজাম প্যালেসে এই অফিস ছিল। আজ অতীত। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যে, আগে স্বল্প সঞ্চয়ের সুদের হারের পরিবর্তনের সময় সংস্থার ডিরেক্টর-এর সই থাকত। কিন্তু এই জমানায় সই থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি বাজেট ডিভিশনের।
আর যাঁরা এই জাতীয় সঞ্চয়ের কারিগর, সেই জাতীয় সঞ্চয় প্রতিনিধিদের খবর কে রাখে? আজ তাঁদের অবস্থা এতই খারাপ যে, গত ২ অক্টোবর থেকে ৬ অক্টোবর দিল্লির যন্তর মন্তরে তাঁরা ধর্না কর্মসূচি পালন করেছিলেন। যাঁরা দিল্লি যেতে পারেননি, তাঁরা স্থানীয় ভাবে ধর্নায় যোগ দিয়েছিলেন। এঁদের রোজগারের পারসেন্টেজ-এর কথা শুনলে অবাক হয়ে যেতে হয়— মাত্র পঞ্চাশ পয়সা, যা সম্ভবত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর-এর সুপারিশে ২০১১-১২ সাল থেকে একই ভাবে বহাল আছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আঁচ কি এঁদের গায়ে পড়ে না? কোভিডের প্রকোপেও এঁরা যতটা সম্ভব পরিষেবা দিয়ে গেছেন। তা সত্ত্বেও এঁদের রোজগারের কোনও পরিবর্তন হয়নি, বরং সিনিয়র সিটিজ়েন প্রকল্প এবং পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড প্রকল্পের কমিশন এঁদের থেকে ছিনতাই হয়ে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, নতুন যত প্রকল্প এসেছে, তার সব ক’টা থেকেই এঁরা ব্রাত্য। ভারতের স্বল্প সঞ্চয়ের একমাত্র এজেন্ট হওয়া সত্ত্বেও এঁরা দীর্ঘ দিন ধরে গুটিকয়েক প্রকল্প থেকেই কমিশন পেয়ে থাকেন। বেশির ভাগ প্রকল্পের কমিশনই অধরা। এমনকি মহিলা এজেন্ট কয়েক লক্ষের উপর থাকা সত্ত্বেও তাঁরা অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে মহিলা সম্মান প্রকল্প বিক্রির অনুমতি পাননি।
অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, ধনীরা আয়ের অনেকটাই সঞ্চয় করেন আর গরিবদের আয়ের ৯০ শতাংশই খরচ হয়ে যায়। এই বক্তব্যের কিঞ্চিৎ সংশোধন প্রয়োজন। যাঁরা ধনী, তাঁরা এ দেশে টাকা ব্যবসায় ব্যবহার করেন মুনাফার উদ্দেশ্যে। তা ছাড়া যথেষ্ট ধনীরা কতটা সঞ্চয় এই দেশে করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। যাঁরা নিত্য নিজের স্বপ্নের সঙ্গে আপস করেন, পাঁচ-দশ টাকার জন্য ঝগড়া করেন, তাঁরাই দেশে সঞ্চয় করেন। সঞ্চয় দেশের অগ্ৰগতির ভিত্তি। এটা নিয়ে ছেলেখেলা করার ফল ভাল হয়নি। অতীতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর শ্যামলা গোপীনাথের সুপারিশ অনুযায়ী সঞ্চয় প্রবণতা হ্রাস করার জন্য স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ কমে যাওয়ার মাসুল দিতে হয়েছিল চিটফান্ডের দ্বারা প্রতারিত হয়ে। এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সঞ্চয়ের আঙ্গিকে দিগ্ভ্রান্ত নবীন প্রজন্ম ঋণ এবং ইএমআই-এর বেড়াজালে দিগ্ভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লটারির প্রলোভনে একের পর এক পরিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাদের দায়িত্ব নেবে তো সরকার?
গত ন’বছরে সরকার জাতীয় সঞ্চয় বা সঞ্চয় প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বারের জন্য কোনও রকম শব্দ, চিন্তা খরচ করেনি। সরকারের কাছে সঞ্চয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ প্রার্থনা করছি শুধুমাত্র সঞ্চয়ের প্রতিনিধিদের স্বার্থরক্ষার জন্য নয়, সারা ভারতের নাগরিকদের জন্যও। কারণ, সঞ্চয়ের ভিত্তি ভারতের ভবিষ্যতের সমৃদ্ধি।
শুভঙ্কর মণ্ডল, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy