—প্রতীকী চিত্র।
ঈশানী দত্ত রায়ের ‘সেই পতাকা, জিলিপি এবং দেশ’ (২৬-৮) প্রবন্ধ অনেক পুরনো স্মৃতি উস্কে দিল। আশির দশকের শেষের দিকের কথা। তখন দূরদর্শনে অনুষ্ঠান শুরুর আগে শুরু হত ভারতের তৎকালীন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ক্রীড়াবিদদের নিয়ে জাতীয় সংহতির পক্ষে সরকারি প্রচারের সেই বিখ্যাত গান “মিলে সুর মেরা তুমহারা, তো সুর বনে হমারা”। মাত্র ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডের গানে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ভারতের সমস্ত রাজ্যের সংস্কৃতিকে সুচারু ভাবে তুলে আনা হয়েছিল। ভারতের প্রকৃত জাতীয়তাবাদের উত্তাপ ওই গানের মধ্যে পরিবারের সবাই এক সঙ্গে অনুভব করতাম। প্রবন্ধকার সঠিক ভাবেই বলেছেন, তখন কিন্তু কোনও স্বর্ণযুগ ছিল না। তখনও দুর্নীতি ছিল, ছিল নোংরা রাজনৈতিক খেলা, ছিল স্বৈরতন্ত্রের পদধ্বনি। কিন্তু যেটা ছিল না সেটা হচ্ছে, সর্বগ্রাসী জাতীয়তাবাদ। ছিল না ‘এক ভাষা, এক দেশ, এক নেতা’-র কল্পিত আদর্শকে ভারতের প্রকৃত দর্শন বলে চালিয়ে দেওয়া। ছিল না সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই দেশদ্রোহী বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা। ভারতের গৌরবজনক ইতিহাস থেকে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমিকাকে মুছে ফেলার চেষ্টাও ছিল না। আজকে তাই স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের শেষ লগ্নে “তোমার সুর মোদের সুর, সৃষ্টি করুক ঐক্য সুর”— এই বার্তাই হোক আমাদের প্রকৃত জাতীয়তাবাদ।
শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
আপত্তি কিসের
ঈশানী দত্ত রায় দেশের স্বাধীনতা, প্রজাতন্ত্র দিবসের উদ্যাপনকে সে কাল থেকে এ কালে আনতে গিয়ে জিলিপির লাড্ডুতে বিবর্তনটি বেশ লঘু রসে পরিবেশন করেছেন। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের মর্মার্থ সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য করতে কি দেশনায়করা কখনও মনোযোগী হয়েছেন? প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস— দিনগুলো উদ্যাপনের চিরাচরিত পদ্ধতিতেই আমরা সীমাবদ্ধ রয়েছি। আর একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় প্রবন্ধে উল্লিখিত হয়েছে। তা হল— সর্বধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অবনতি। শুধু তা-ই নয়, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক মেরুকরণ, যা মাঝে-মধ্যে হিংসাশ্রয়ী রূপ ধারণ করছে। অবশ্যই এমন প্রতিষ্ঠানও আছে, যেখানে সব ধরনের ধর্মভিত্তিক অনুষ্ঠান সংগঠিত হয়। এ ছাড়াও বিচ্ছিন্ন ভাবে সর্বধর্মাচারের উদাহরণ গ্রামেগঞ্জে বিদ্যমান। আর রচয়িতার ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে যদি পাঠ্যক্রম থেকে তাঁর রচনাকে অপসারণ করা হয়, তা হলে আমরা কি নিজেদের জাতীয়তাবাদের পৃষ্ঠপোষক বলে দাবি করতে পারি? পাঠ্যপুস্তক থেকেই জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মহান, কালজয়ী ব্যক্তিত্বদের অমরগাথার সঙ্গে বাল্যকাল থেকে শিক্ষার্থীরা পরিচিত হত, এটা ঠিক কথা। সেখানেও কুঠারাঘাত প্রতিরোধ করতে জনমতের সংগঠিত মতামত অবশ্যম্ভাবী, সেটি হিংসার পথে অবশ্যই নয়।
শেষাংশে প্রবন্ধকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখ করেছেন। তদানীন্তন ভারত সরকারের সর্বতোভাবে পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা আজ ইতিহাস। বর্ধিত, আরোপিত রঙের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের প্রকাশ বোধ করি তেমন ভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, দেশের মানুষ যথেষ্ট সংবেদনশীল! প্রবন্ধটিকে কিছুটা ধূম্রজালে আবদ্ধ করে অত্যন্ত স্পর্শকাতর কিছু অনুভূতিকে ধোঁয়াশায় আবৃত রাখার একটা প্রয়াস প্রবন্ধকার নিয়েছেন বলে আমার ধারণা! আরও স্পষ্টবাদিতায় আপত্তির কারণ বোঝা গেল না।
সুবীর ভদ্র, কলকাতা-১৫১
দৃঢ়চেতা
সোনালী দত্তের ‘আর দেশ চালানোর শিক্ষা?’ (২৮-৮) প্রবন্ধটি পড়ে আমার মনে পড়ছে সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে-র উদয়ন পণ্ডিতের কথা। তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতায় রাজশক্তির অচলায়তনও ভেঙে পড়েছিল তাসের ঘরের মতো। প্রবন্ধকার উল্লেখ করেছেন, দিল্লিতে অনলাইন এক টিউটোরিয়াল ক্লাসে শিক্ষক করণ সাঙ্গোয়ান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষিত মানুষজনকে ভোট দাও, অশিক্ষিত রাজনীতিকদের চাই না। তাতে তাঁর চাকরি যায়। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যক্তিগত আলাপচারিতা ও রাজনৈতিক আলোচনা শ্রেণিকক্ষে নিষিদ্ধ। বুদ্ধিজীবী মহলের ধারণা, সরকারে বসে-থাকা রুই-কাতলাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কটাক্ষের মুখে পড়ায় শিক্ষকের চাকরি গেল।
লোকসভায় যাঁরা আইন প্রণয়ন করবেন তাঁদের অনেকেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। বিশেষত গুজরাতে যাঁরা নির্বাচনে লড়েছেন তাঁদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ স্কুলের গণ্ডি পার হননি। ২ শতাংশ সম্পূর্ণ নিরক্ষর— এঁরা ভারতের জনপ্রতিনিধি! এঁদের মাধ্যমে এই দেশ থেকে নিরন্ন, নিরক্ষর, দরিদ্র মানুষদের সমস্যা দূরীকরণ কী ভাবে সম্ভব? এঁরা কি সত্যিই সদর্থক ভূমিকা নিতে পারেন? আসলে এঁরা হাত তোলার দলে। শিক্ষিত নেতাদের দ্বারা ব্যবহৃত হন।
দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞানচর্চা নানাবিধ ক্ষেত্রে বিচরণ করতে আইন প্রণয়নে সত্যিই কি ন্যূনতম শিক্ষার প্রয়োজন হয় না? যে ভূখণ্ডের মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাঁদের প্রতি সত্যিই কি অবিচার করছেন না নির্বাচিত প্রতিনিধিরা? দেখা গেছে, লোকসভার অধিবেশন চলাকালীন তাঁরা পরস্পর গল্পে মগ্ন, নয়তো মোবাইলের ছবিতে দৃষ্টি।
আজ পুনর্জাগরণের দিন এসেছে। মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়। তাই আজ নিরক্ষর নেতাদের হাতে দেশ সুরক্ষিত কি না— সে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন শিক্ষক করণ সাঙ্গোয়ান; সাধুবাদ তাঁকে। বিপর্যস্ত ভারতে আজ প্রয়োজন বুনো রামনাথের মতো দৃঢ়চেতা পণ্ডিতের, যিনি শাসকের নির্দেশকেও অমান্য করতে পারেন। শিক্ষক করণের প্রশ্নে চৈতন্য ফিরুক শিক্ষিত সমাজের; অখণ্ড ভারতবর্ষের শিক্ষককুলের কণ্ঠেও ধ্বনিত হোক প্রতিবাদ।
সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪
বন্দি চিন্তা
জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মুক্ত চিন্তাই খলনায়ক?’ (২৫-৮) প্রবন্ধের অধিকাংশ বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হয়েও কিছু কথা। যে মুক্ত চিন্তা যাদবপুরের সম্পদ, যে মুক্ত চিন্তাকে চোখের মণির মতো রক্ষা করতে হবে বলে উনি সওয়াল করেছেন, সেই মুক্ত চিন্তা যদি ডোবায় বদ্ধ হয়ে স্থাণুবৎ হয়ে যায়, তখন তার কী উপায় হবে? র্যাগিং-পরবর্তী ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে এই আশঙ্কা অমূলক নয়। প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনার গভীরতা ও তার অভিঘাত অনেক মুক্ত চিন্তক এখনও যথেষ্ট অনুধাবন করে উঠতে পারেননি, তাই তাঁদের ব্যবহারে ‘চান্স পেয়ে দেখা’ জাতীয় কিছু বালখিল্যতা দেখা যাচ্ছে।
একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালমন্দ তো শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের উপর নির্ভর করে না, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষের কর্মকাণ্ড নির্ধারণ করে দেয় তার গতিপথ। ছাত্রছাত্রীদের পথপ্রদর্শক যে শিক্ষককুল, তাঁদের দায়িত্ব কি কিছুমাত্র কম? কর্তৃপক্ষ কী ভাবে তাঁদের কর্তব্য অস্বীকার করে গা বাঁচিয়ে থেকে ছাত্রছাত্রীদের ঠেলে দিচ্ছেন সমালোচনার মুখে! বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তদের অসহায়তা সরাসরি সামনে এনে দেয় তাঁদের কর্তব্যের গাফিলতি ও ব্যর্থতা। উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই দিনের ঘটনার পর চার দিন যাঁরা ফোন ধরেননি, তাঁরা কেউই কি দায়িত্ব এড়াতে পারেন!
জুটা, ওয়েবকুটা, ওয়েবকুপা, বিভিন্ন ছাত্র সংসদ, কর্মচারী সমিতি সবাইকেই এর দায় নিতে হবে। শুধু যাদবপুরের সাফল্যের আলোয় আলোকিত হতে চাইব, গৌরবের ভাগীদার হতে চাইব, কিন্তু দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে চাইব না, এটা একদমই অন্যায্য ভাবনা। ঘটনার সম্পূর্ণ পর্যালোচনা করলে কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষক সমিতিগুলোর দায়ই অধিক বলে মনে হয়। কাগজের রিপোর্ট অনুসারে, কর্তৃপক্ষের কোনও নিয়ন্ত্রণই ছিল না বিশ্ববিদ্যালয় ও হস্টেল চত্বরে। ছাত্র, প্রাক্তনী এবং বহিরাগতদের প্রবেশ ও প্রস্থান ছিল অবিরাম এবং খুশিমতো। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে, ছাত্রছাত্রীদেরও সেটা বুঝতে হবে। মুক্ত চিন্তার নামে নিয়ন্ত্রণহীনতা কাম্য নয়। আবার এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে দক্ষিণপন্থী দলগুলো খোলামেলা উদার পরিবেশের উপর যে নীতি পুলিশগিরি আরোপ করার চেষ্টা করছে, তাতে আখেরে সমাজের মেধাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy