—ফাইল চিত্র।
কণাদ সিংহ তাঁর ‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি’ (১১-১১) প্রবন্ধে রাজসভার সাহিত্যে যে ভাবে রাজার ক্ষমতা উঠে এসেছে, তার উপর আলোকপাত করতে চেয়েছেন। প্রবন্ধকার এই প্রবন্ধের অনেক জায়গা জুড়ে বাণভট্টের কাদম্বরীর প্রসঙ্গ যেমন এনেছেন, তেমনই গুপ্তযুগ ও পালযুগে সৃষ্ট সাহিত্যে রাজসিক উত্থানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। সেই যুগে রাজা সিংহাসনে বসলে রক্তপাত অনিবার্য ছিল। আর বিজয়ী রাজার পরাক্রমের কথা রাজ-অনুগৃহীত কবি-সাহিত্যিক তুলে ধরবেন, তাতে কোনও বিস্ময় নেই। তবে সব রাজকবিই কি রাজচিত্রের এই ক্ষমতার দিকটি তুলে ধরতেন? বোধ হয় না। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের সভাকবি মহাকবি কালিদাস মূলত সেই ভাবনার দিকে লেখনীর অভিমুখ তৈরি করেছিলেন, যা রাজক্ষমতার কথা নয়। কালিদাস ক্ষমতার অলিন্দ থেকে সাহিত্যকে প্রেমের পথে নিয়ে গিয়েছেন। পরবর্তী যুগ এই ধারার দ্বারা অনুপ্রাণিত, সে কথা অনস্বীকার্য।
প্রবন্ধকার রাজসভার সাহিত্য বলতে গিয়ে শুধুমাত্র সংস্কৃত সাহিত্যের বিশেষ কিছু গ্রন্থ বা রাজার কথা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্যই শুধুমাত্র রাজকাহিনি বা রাজ পৃষ্ঠপোষকতার আলেখ্য নয়। সংস্কৃত ভাষার ক্ষেত্র আলগা হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় সাহিত্য রচিত হচ্ছে, আর সেখানেও রাজ-অনুগ্রহ বা রাজ পরিমণ্ডল সাহিত্য রচনায় বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। ইংরেজ শাসকেরা এ দেশে আসার আগে রাজারা আরও কয়েকশো বছর এ দেশ শাসন করেছে। বেশ আশ্চর্য লাগে, পরবর্তী কালের রাজসভার কবিদের রচনায় মুখ্য বিষয় হয়ে উঠছে ধর্ম, প্রেম, সমাজ এবং মনোরঞ্জন— তাতে ক্ষমতার আস্ফালন বা রাজার পরাক্রমী চিত্র নেই। বিখ্যাত কবি বিদ্যাপতি কীর্তিলতা-তে তাঁর রাজা কীর্তি সিংহের কীর্তির কথা লিখলেও তিনি অমর হয়ে আছেন রাধা-কৃষ্ণের প্রেমগীতি রচনায়। তার আগে লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেব রচনা করেছেন গীতগোবিন্দ। সেখানেও রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকথা। আবার সুদূর আরাকানের (রোসাং) রাজা শ্রী সুধর্মার সভাকবি দৌলত কাজী সতীময়না কিংবা সৈয়দ আলাওল পদ্মাবতী-র মতো রোম্যান্টিক কাব্য রচনা করে গেছেন। আকবর কিংবা জাহাঙ্গীরের সভার লেখকেরা ইতিহাস রচনায় ব্রতী হন।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচনা করেছিলেন বিখ্যাত কাব্য অন্নদামঙ্গল। এই কাব্যে ধর্ম সমাজ লৌকিক প্রেম একাকার হয়ে আছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজকবিদের সাহিত্যচর্চার বিষয় বেশ পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এই ধারা আমাদের দেশের সমস্ত প্রাদেশিক সাহিত্যের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। আর একটা কথা উল্লেখ করতেই হয়। ক্ষমতাবান স্বৈরাচারী রাজাদের আমলে কবিরা সুরক্ষিত ছিলেন। কিন্তু পৃথিবী থেকে রাজতন্ত্র চলে যাওয়ার পর আজকের কবি-সাহিত্যিকরা সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত নন। আঁতে ঘা লাগলে লেখিকাকে দেশান্তরি হতে হয়, মঞ্চে উঠে কথা বলতে গেলে লেখককে ছুরির আঘাত সহ্য করতে হয়।
সব্যসাচী ধর, সিউড়ি, বীরভূম
কলুষ
‘সিএজি-র তিন অফিসার বদলি, সরব বিরোধীরা’ (১২-১০) সংবাদ প্রসঙ্গে এই চিঠি। আয়ুষ্মান ভারত, ভারতমালা পরিযোজনা এবং দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে বড় মাপের দুর্নীতি সিএজি জনসমক্ষে নিয়ে এসেছে। দুর্নীতির যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদান, এবং দুর্নীতি খুঁজে বার করার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সাহসী কর্তব্যপরায়ণতায় উৎসাহ দেওয়ার কথা ছিল সরকারের। পরিবর্তে দোষীদের আড়াল করে দোষ ধামাচাপা দিতে সিএজি-র সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বদলি করা হয়েছে। সিএজি রিপোর্টে আরও অভিযোগ, জাতীয় সড়কে নিয়ম ভেঙে টোল আদায়, অযোধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্বদেশ দর্শন’ প্রকল্পে নিয়ম ভেঙে ঠিকাদারকে বাড়তি অর্থ পাইয়ে দেওয়া, গ্রামোন্নয়ন দফতরের পেনশন প্রকল্প থেকে অর্থ অন্য প্রকল্পের প্রচারে খরচ করা প্রভৃতি।
এর আগে ইউপিএ জমানায় ২জি স্পেকট্রাম, কয়লা ব্লক বণ্টন, কমনওয়েলথ গেমস ইত্যাদি দুর্নীতি, এবং তারও আগে বাজপেয়ী সরকারের আমলে সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্পে চুক্তিভঙ্গ, ঝাড়খণ্ডে কয়লা ব্লক বণ্টনে দুর্নীতি-সহ নানা অভিযোগে জর্জরিত হয়েছে কেন্দ্র। এ রাজ্যের বর্তমান শাসকের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সরকারি নিয়োগে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে। একাধিক প্রকল্প রূপায়ণে দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রের অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে আছে। বাম আমলেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। অর্থাৎ, কেন্দ্রে কিংবা রাজ্যে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, দুর্নীতি শাসকের সঙ্গে ছায়ার মতো জুড়ে থাকে।
প্রদ্যোৎ পালুই, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
কাজের সময়
অতনু বিশ্বাসের ‘একশো বছর পরে বিশ্রাম’ (৮-১১) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাই। মানুষ কত ক্ষণ কাজ করবে, এ বিষয়ে অর্থনীতির সূত্রটি হল, মজুরির হার বাড়লে কাজের সময় বাড়বে এবং অবসর কমবে। তবে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার পর যদি মজুরির হার আরও বাড়ে, তা হলে কাজের সময় কমবে এবং অবসর বাড়বে। এই সূত্র অনুযায়ী শ্রমের জোগান রেখাটি পশ্চাৎমুখী। তবে মজুরির হার কত হলে শ্রমের জোগান রেখাটি পশ্চাৎমুখী হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। শ্রমের মজুরি হার বাড়তে থাকলেও সব শ্রমিক-কর্মচারী কাজের সময় কমান না। যেমন, ডাক্তার-উকিলের ফি বাড়তেই থাকে, তাঁরা কাজের সময় কমান বলে মনে হয় না।
সংগঠিত ক্ষেত্রে কাজের সময় নির্দিষ্ট থাকলেও, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজের সময় নির্দিষ্ট থাকে না। বিশেষ করে যাঁরা স্বনিযুক্ত, তাঁদের কাজের সময়ের সীমা থাকে না। তাঁদের অধীনে কর্মরত ব্যক্তিদেরও মালিকের সঙ্গে কাজ করে যেতে হয়। এক জন কৃষক দিনে ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করে থাকেন। কলেজের অধ্যক্ষ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক, ব্যাঙ্কের ম্যানেজার প্রমুখ নির্ধারিত কাজের সময়ের পরেও কাজ করেন। শ্রম আইন অনুযায়ী, দৈনিক আট ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। কিন্তু বাস্তবে শ্রমিকরা দৈনন্দিন আট ঘণ্টার চেয়ে অনেক বেশি সময় কাজ করেন। বিশেষ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রে দীর্ঘ কর্মদিবস দেখা যায়। প্রযুক্তির উন্নতি ঘটলেও মানুষের কাজের সময় কমেছে বলে মনে হয় না।
সুদেব কুমার ঘোষ, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
আগুন দাম
এ বছর গ্রীষ্ম, বর্ষা, এমনকি পুজোর সময়েও আনাজপাতির দাম ছিল আকাশছোঁয়া! সাধারণ মানুষ কোনও সময়েই স্বস্তিতে বা মনের সুখে বাজার করতে পারেননি। আলু আর চাল ছাড়া সব জিনিসের দামই ছিল বেশ চড়া বা উঁচুতে। একটু ভাল মাছ মানেই কম করে ৪০০ টাকা কেজি। পাঁঠার মাংস ৮০০ টাকা বা তার বেশি। মানুষ কী খাবে? শুধু ডাল ভাত আলুসেদ্ধ? তাও তো ডালের দাম কিছু কম নয়!
সবাই ভেবেছিলেন, শীতকাল এলে আনাজের দাম কিছুটা কমবে। কিন্তু কোথায় কী? আলু পটল পেঁপে কুমড়ো ছাড়া সবই আগুন দাম! যে কোনও আনাজের মূল্য কম করে ৬০ টাকা। আদা টোম্যাটো ও ক্যাপসিকাম বা মটরশুঁটির দামও ঊর্ধ্বমুখী। পেঁয়াজকলি শিম ইত্যাদির দাম গত বছরের তুলনায় কেজিতে কম করে ২০ টাকা করে বেশি! রাজ্যে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করেছিলেন। তাতেও লাভ হয়নি। টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজ়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলে জানাচ্ছেন, আগামী তিন মাসে আনাজের আমদানি বাড়বে, এ রাজ্যের মাঠ থেকেও ফসল তোলা হবে। তখন আনাজের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে! তবে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের বিশ্বাস নেই! তাঁরা কী খেলা খেলবেন, সে কথা শুধু তাঁরাই জানেন! তবে এতে সরকারের গাফিলতি ও শাসক দলের নেতা, মন্ত্রী, কর্মী ও সমর্থকদেরও কিছুটা অন্যায্য ভূমিকা থাকে, এ কথা অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা করতে হবে, নজর রাখতে হবে। কালোবাজারি হচ্ছে খবর পেলে বা ধরা পড়লেই তাদের আইনমাফিক কড়া শাস্তি দিতে হবে।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy