—ফাইল চিত্র।
সেবন্তী ঘোষ তাঁর ‘অবরোধ ভাঙার চিরন্তন আখ্যান’ (রবিবাসরীয়, ৩-৩) প্রবন্ধের শেষে স্বর্ণকুমারী, বেগম রোকেয়া, কাদম্বিনী বসু, রাধারানী দেবী, আশাপূর্ণা দেবী, মহাশ্বেতা দেবী প্রমুখ পূর্বসূরির নাম স্মরণ করেছেন। এসেছে নন্দলাল বসুর কন্যা গৌরী ভঞ্জের কথাও। কিন্তু এই আলেখ্য থেকে কী ভাবে সারদা মা, সিস্টার নিবেদিতা (ছবি) এবং ঠাকুরবাড়ির সরলা দেবীর কথা বাদ গেল, বোঝা মুশকিল। সে যুগের সমাজে তাঁরা মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জুগিয়েছেন। বুঝিয়েছেন নারীশিক্ষার গুরুত্ব। প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও সারদা মা সে যুগের নিরিখে ভেঙেছেন অনেক কুসংস্কার, নারীদের জন্য তুলে রাখা বিধি। ভেঙেছেন মেয়েদের ঋতুকালীন সঙ্কোচ। কন্যাদায়ে বিব্রত বাবাকে বলেছেন, কম বয়সে মেয়ের বিয়ে না দিয়ে নিবেদিতার স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করতে। নিবেদিতার মেয়েদের স্কুল উদ্বোধনে উপস্থিত থেকে আশীর্বাদ করেছেন। আশ্রয় দিয়েছেন বিপ্লবীদের।
নিবেদিতা অনুপ্রাণিত করেছেন এবং সাহায্য করেছেন বিপ্লবীদের, নন্দলাল বসুকে বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত, দুঃস্থ আর্তদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর বিজ্ঞান সাধনায় তিনি ছিলেন উৎসাহদাত্রী। যদিও বোস ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিবেদিতার নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি। মনে হয় না, আর কোনও বিদেশিনি এ ভাবে ভারতকে ভালবেসেছেন, এ দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন!
পাশাপাশি, স্বর্ণকুমারীর কন্যা সরলা দেবী চৌধুরাণীর নাম ভুলে যাওয়ার অর্থ, নারীর স্বাধিকার রক্ষার আন্দোলনের একটি অধ্যায়কে ভুলে যাওয়া। দিদি হিরণ্ময়ী দেবীর সঙ্গে ভারতী পত্রিকার সম্পাদনা, স্বদেশি দ্রব্যের উৎপাদন এবং বিপণনের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রতিষ্ঠা, ‘ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল’ প্রতিষ্ঠায় তাঁর উদ্যম স্মরণীয়। ‘বন্দে মাতরম্’ গানটির সুর দেওয়ার প্রচেষ্টায় তিনি মামা রবীন্দ্রনাথকে সাহায্য করেছেন। স্বভাবে তিনি ছিলেন ইন্দিরা দেবীর বিপরীত। ‘তিনি সমর্থ পায়ে চলা ফেরা করতেন, জোরে কথা বলতেন, জোরে হাসতেন’। এ সব রবীন্দ্রনাথের খুব পছন্দের ছিল না। সরলা দেবীর ‘প্রতাপাদিত্য উৎসব’ পালনেও রবীন্দ্রনাথ বিরক্ত হয়েছিলেন। কেননা বউ-ঠাকুরানীর হাট-এ তিনি প্রতাপাদিত্যর অমানবিক দিকটাই তুলে ধরে ছিলেন। তাঁর আত্মজীবনী জীবনের ঝরাপাতা-য় আমরা পড়ি, কী ভাবে তাঁর জীবন সম্পৃক্ত হয়েছিল জাতীয় চেতনায়। সরলা দেবী এবং নিবেদিতা সম্পর্কে অনেকের ঔদাসীন্য কি এই সব কারণেই!
অলোক রায়, কলকাতা-৮
তিনি ‘ভারতীয়’
স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্যের ‘নিন্দা করা কর্তব্য’ (১৩-৪) শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্রীয় সরকারের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি অতি ভক্তি দেখে এক জন একনিষ্ঠ নেতাজি ভক্ত হিসাবে একটুও খুশি হতে পারছি না। নেতাজিকে হিন্দুত্ববাদী বলে তাঁরা প্রচার করছেন এবং হয়তো এটাকে তাঁরা বঙ্গ রাজনীতিতে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার সহজ রাস্তা ভেবেছেন। এই কাজে তাঁদের সাহায্য করছেন কিছু নেতাজি গবেষক। সমাজমাধ্যম এবং নিজেদের প্রকাশিত বইয়ে তাঁরা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন সাভারকর এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে নেতাজির কোনও আদর্শগত পার্থক্য ছিল না। দুঃখের বিষয়, সমসায়মিক যাঁরা নেতাজির সাহচর্যধন্য ছিলেন, তাঁদের স্মৃতিকথা থেকে এই ঘটনার কোনও প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায় না। ধর্মের আড়ালে রাজনীতিতে তাঁর ঘোরতর আপত্তি ছিল। তাঁর জীবনের নানা কর্মকাণ্ডে, অজস্র ভাষণে তা বারংবার ফুটে উঠেছে।
নেতাজি তখন আজ়াদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক। সুবিশাল ফৌজের বিপুল ব্যয়ভার, যুদ্ধ পরিচালনা ইত্যাদি কারণে বিপুল অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করা তাঁর প্রয়োজন। জাপান সরকারের কাছ থেকে একটি টাকাও তিনি দান হিসাবে গ্রহণ করেননি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যে সব বিত্তবান ভারতীয় ছিলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি তাঁদের অনুদান গ্রহণ করতেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল অপ্রতুল। এমতাবস্থায় মালয়ের চেট্টিয়ার মন্দির পারিষদ আজ়াদ হিন্দ ফান্ডে কিছু দান করতে চাইলেন, দানের অঙ্কও তখনকার দিনে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা। একটাই শর্ত, নেতাজির হাতে তাঁরা মন্দির প্রাঙ্গণে টাকার তোড়াটা তুলে দেবেন। নেতাজিও মন্দির পারিষদদের সামনে ছোট্ট একটা শর্ত রেখেছিলেন, “আমি আমার সমস্ত সমর সচিবকে সঙ্গে নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করব।” এই অসম্ভব প্রস্তাবে চমকে উঠেছিলেন মন্দির পারিষদেরা— চেট্টিয়ারদের মন্দিরে বিধর্মীদের প্রবেশ? কারণ আজ়াদ হিন্দ ফৌজের সমর সচিবদের মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষ ছিলেন। তাঁদের দ্বিধার কথা নেতাজিকে তাঁরা জানিয়েছিলেন। নেতাজি বলেছিলেন, “সুভাষ বোস হিন্দু কিন্তু নেতাজি ভারতীয়”। ম্লান মুখে ফিরে গিয়েছিলেন মন্দির পারিষদেরা। সেই প্রবল অর্থসঙ্কটের দিনেও কুসংস্কারের কাছে নিজের বিবেক বিকিয়ে দেননি। কাহিনির পরের অংশ আরও রোমাঞ্চকর— পর দিন মন্দির পারিষদেরা নেতাজি এবং তাঁর সমস্ত সমর সচিবকে মন্দির প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। সে দিন মন্দির প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে ‘জয় হিন্দ’ ধ্বনিতে।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস, বিশেষ করে নেতাজি এবং আজ়াদ হিন্দ ফৌজের সাফল্যের ইতিহাস জনগণকে কখনওই জানতে দেওয়া হয়নি। ইতিহাসের প্রকৃত সত্য গোপন করা যেমন অপরাধ, তেমনই মিথ্যা তথ্য জনমানসে প্রচার করাও সমতুল্য দোষের। ‘নেতাজি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী’— এই ভুল তথ্য বারংবার প্রচারিত হলে পণ্ডিত নেহরুর গৌরব ম্লান করার অপচেষ্টা কিছুটা হলেও হয়তো সফল হবে, কিন্তু নেতাজিকে এ ভাবে অপমান করার অধিকার তাঁদের আছে কি? বর্তমান শাসক দলের মনে নেতাজির প্রতি সত্যি যদি কোনও সদর্থক ভাবনা থাকে, তা হলে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু জাস্টিস মুখার্জি কমিশনে যা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, তাতে সরকারি সিলমোহর পড়ছে না কেন? রাজধানীর রাজপথে নেতাজির মূর্তি বসানো হল মহা ধুমধাম করে— কিন্তু আজও নেতাজি সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ‘ডি-ক্ল্যাসিফাই’ করা হল না। স্বাধীনতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে যে মানুষটি পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছিলেন দেশের মানুষের তাঁর পথের শেষটা আজও জানা হল না। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পঁচাত্তর বছর পূর্ণ— তাঁর আদর্শের কথা সঠিক ভাবে যেন দেশবাসীর কাছে পৌঁছয়।
ভাস্বতী ঘোষ হাজরা, কলকাতা-৫৫
পুকুর কই?
জয়ন্ত বসুর ‘জলাভূমি বাঁচলে শহরও বাঁচবে’ (৪-৪) প্রবন্ধটি পড়ে মনে হল তিনি যেন রাজ্যের শাসক দলের হয়ে কথা বলছেন। এ কথা ঠিক যে, জলা বোজানো এক বড় ভুল, যার খেসারত দিতে হচ্ছে মানুষকে। যদি জলা ভরাট করা মানুষের সার্বিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে হয়, সেটা তবুও মানা যায়। কিন্তু কিছু প্রোমোটার আর সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক ব্যক্তির যোগসাজশে যে জলাভূমি বুজিয়ে বহুতল নির্মাণের হিড়িক পড়েছে কলকাতা ও শহরতলি জুড়ে, তাতে আমরা দিন দিন খাদের কিনারায় চলে যাচ্ছি। বাম আমলে রাজারহাট জলাজমি ভরাট করার ফলে সেখানে এক নগরসভ্যতা গড়ে উঠেছে। সেই অর্থে সল্ট লেক সিটিও জলাভূমি বুজিয়েই হয়েছে। প্রবন্ধকার বিধান রায়ের তৈরি করা এই প্রকল্পটির কথা উল্লেখ করলেন কি?
আমার ছোটবেলা থেকে কেটেছে অনেক বছর পাতিপুকুরে। সেখানে অজস্র ছোট বড় পুকুর ছিল। আজ ওখানে গেলে কদাচিৎ পুকুর চোখে পড়ে, লেক টাউনের তিনটি বিশাল লেক আজ যেন ছোট পুকুরে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার মানুষের একমাত্র শ্বাস নেওয়ার জায়গা রবীন্দ্র সরোবরও আজ ভীষণ বিপন্ন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে।
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy