—ফাইল চিত্র।
‘সবুজ সাথী’ এক স্বপ্নের প্রকল্প আমাদের রাজ্যে। যাদের সাইকেল কেনার সামর্থ্য নেই, সেই সব আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়ের জন্য এটি সত্যিই একটা সাধু উদ্যোগ। এই প্রকল্প নিশ্চয়ই সরকারের ভোটব্যাঙ্ককে পুষ্ট করেছে। তাই ফি বছরের ন্যায় এ বছরেও বিভিন্ন স্কুল প্রাঙ্গণে বা নানা হলঘরে সাইকেল মেরামত চলছে ঝড়ের গতিতে। আগামী শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই সম্ভবত স্কুলগুলো ছাত্রছাত্রীদের হাতে সাইকেল তুলে দেবে। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রশ্ন রইল প্রকল্পের কর্তাদের জন্য— সাইকেলটি পাওয়ার পরে কেন আবার অর্থব্যয় করতে হয় প্রাপকদের? কেন ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রয়োজনীয় বলগুলোও সাইকেলে থাকে না, স্পোক ঠিকঠাক থাকে না? কিছু দিন পর সেই সাইকেল হয় দু’-পাঁচশো টাকায় বিক্রি হয়, নয়তো লজ্জায় সেই সাইকেল না চালানোর কারণে পড়ে পড়ে নষ্ট হয়। শেষ পর্যন্ত তার ঠাঁই হয় ভাগাড়ে। এই ভাবে আমাদের করের টাকায় ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের অন্তর্জলি যাত্রা সম্পন্ন হয়।
এই প্রকল্পের কিছু ত্রুটি দূর করা হোক— এক, যাদের সাইকেল সত্যিই প্রয়োজন একমাত্র তাদেরই সাইকেল দেওয়া হোক। দুই, এমন সাইকেল দেওয়া হোক, যেটা নিয়ে পরের দিনই মেরামত করতে যেতে না হয়। তিন, কার অঙ্গুলিহেলনে এমন নিম্নমানের সাইকেল সরবরাহ করা হচ্ছে, তা খোঁজা দরকার। না কি সরকার সব জেনেশুনেও না জানার ভান করছে? চার, স্কুলে স্কুলে শত শত না বিলোনো সাইকেল ঘর দখল করে দীর্ঘ দিন ধরে এমনিতেই নষ্ট হচ্ছে। দেশের সম্পদ নষ্ট করার কি সত্যিই কোনও প্রয়োজন আছে? এগুলোর উত্তর কে দেবে? দুঃস্থ শিক্ষার্থীরা যাতে এই সাইকেল, বিশেষত একটা ঠিকঠাক সাইকেল পায়— এমনটাই স্বতঃস্ফূর্ত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সরকারের। এমন একটি সাধু উদ্যোগ যাতে বিফলে না যায় তার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ধন্তু বিশ্বাস, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
অমর্যাদার শ্রম
‘বিপজ্জনক’ (৪-১২) শিরোনামে ম্যানহোলে মানুষ নামার ছবিটি দেখে মনে এল ব্রিটিশ কবি উইলিয়াম ব্লেকের বিখ্যাত কবিতা ‘দ্য চিমনি সুইপার’-এ বিবৃত বীভৎস এক শ্রমের কাহিনির কথাটি। অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায় ছিল শিশুশ্রম প্রথা। অর্থাভাবে হতদরিদ্র বাবা-মা তাঁদের শিশুপুত্রদের বিক্রি করে দিতেন কারখানার মালিকদের কাছে। অভুক্ত, অর্ধনগ্ন এই শিশুদের কাজ ছিল কলকারখানার উচ্চাকায় চিমনিগুলোর ভুসোকালি পরিষ্কার করা। এই উদ্দেশ্যে তাদের ফেলে দেওয়া হত চিমনির উপরিভাগ থেকে। পড়ে গিয়ে অথবা সারা দেহে ঝুলকালি মাখার ফলে অচিরেই বহু শিশুর মৃত্যু ঘটত। যারা টিকে থাকত, শ্বাসজনিত সমস্যার কারণে তাদের অপরিসীম যন্ত্রণা থেকে যেত জীবনভর।
বাস্তবিকই, কোনও রকম সুরক্ষাবিধি ছাড়াই খোলা ম্যানহোলের কাজে শ্রমিকদের অসহায় আত্মসমর্পণের কাহিনি মাঝেমধ্যেই উঠে আসে সংবাদপত্রের পাতায়। এক দিকে মৃত্যুর চোখরাঙানি, অপর দিকে অর্থপ্রাপ্তির আশা— এই দোলাচলের সঙ্গেই চলে নিয়মমাফিক নিকাশি নালা পরিষ্কারের কাজ। উপরন্তু, কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় জীবনহানির আশঙ্কাও রয়ে যায় প্রতি মুহূর্তে। পেশাগত সুরক্ষাবিধি কাগজে-কলমে আছে, কিন্তু এ দেশে তা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নেই। নজরদারির এইরূপ অনুপস্থিতি ডেকে আনে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার সম্ভাবনা। ‘ম্যানহোল’ নামকরণেই যেখানে অমর্যাদা, সেখানে পূতিগন্ধময় নালার কাজে প্রতি মুহূর্তে নিহিত থাকে শ্রমিকের অসম্মান।
সুপ্রতিম প্রামাণিক, আমোদপুর, বীরভূম
দূষণের কারণ
সম্পাদকীয় ‘রাস্তা দখল’ (১-১২) প্রসঙ্গে এই পত্র। কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নির্মাণ বর্জ্যের থেকে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ গত এক দশকের বেশি। নির্মাণ বর্জ্যের পক্ষে নির্দিষ্ট নীতি না থাকা যে কোনও উন্নত শহরের পক্ষে একটি বড় সমস্যা। তার উপরে বেআইনি নির্মাণ কাজে জাঁকিয়ে বসেছে ক্ষমতাশালী সিন্ডিকেট। পুরনো নির্মাণ ভাঙা এবং গড়ার সময় ইমারতি দ্রব্যের যে ধুলোবালি ওড়ে, সেটাকেই নির্মাণ দূষণ বলা হয়। সারা বিশ্বে বায়ু দূষণের ২৬ শতাংশ হল এই নির্মাণ বর্জ্য। সাম্প্রতিক কালে একাধিক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। কারণ, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) মাত্রা বৃদ্ধির পিছনে এই নির্মাণ বর্জ্যের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে।
শুধুমাত্র গাড়ির ধোঁয়া কিংবা জঞ্জাল পোড়ানোই নয়, আমাদের তিলোত্তমা নগরীর বায়ুদূষণের একটি অনুঘটক নির্মাণ কাজে উৎপন্ন ধুলো। পুরনো ঘর-বাড়ি ভেঙে নতুন তৈরিতে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কিছু পুরনো নিয়ম থাকলেও তার ন্যূনতম কোনও বিধিনিষেধ মানছে না পুরনাগরিক। তথ্য বলছে, কলকাতায় দৈনিক নির্মাণ বর্জ্য প্রায় ১৬০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক পরিমাণ ৩ লক্ষ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। চেন্নাই এবং মুম্বইয়ে দৈনিক এই নির্মাণ বর্জ্যের পরিমাণ সেখানে ২৫০০ মেট্রিক টন করে। কলকাতা মহানগরের এই নির্মাণ বর্জ্য পুনর্ব্যবহারোপযোগী (অর্থাৎ, বর্জ্যকে গুঁড়ো করে রাস্তা ও ফুটপাত তৈরির কাঁচামাল থেকে পেভার ব্লক বানাতে) করে তোলার জন্য বর্তমানে রাজারহাটে প্লান্টটি চালাতে মিলছে না যথেষ্ট পরিমাণে নির্মাণ বর্জ্য। প্রতি দিন কমপক্ষে যেখানে প্রয়োজন ৫০০ মেট্রিক টন।
নিয়মনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হলে পুরনো বাড়ি ভাঙলেই পুরসভাকে জানাতে হয়। কিন্তু কয়েক জন অসৎ নাগরিক প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাতের অন্ধকারে অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে বর্জ্য। আর এ জন্যই রাজারহাটের প্রকল্পটি চালানোয় সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের একার পক্ষে নির্মাণ বর্জ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ কিংবা বর্জ্য পুনর্ব্যবহারোপযোগী করে তোলা সম্ভব নয়, যদি না পুরনাগরিক হাত মেলান। গত এক দশকের বেশি কলকাতার বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বাতাসের গুণমান খুবই খারাপ এবং বায়ুদূষণের মাত্রা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বিশেষত শীতে তা আরও চরম আকার ধারণ করে। বিপজ্জনক এই বায়ুদূষণে শহরে এক-চতুর্থাংশেরও বেশি বাসিন্দা নানা অসুস্থতার শিকার। এমনকি বায়ুদূষণজনিত নানা অসুখ বাড়ছে গ্রামেও। দূষণের বিপদের সামনে নিজেদের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডে নাগরিক নিজেই আজ অসহায়।
সুব্রত পাল, শালবনি, বাঁকুড়া
প্রয়োজনীয় তথ্য
সম্প্রতি ভারত সরকারের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন দফতর বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য ইউনিক ডিজ়এবিলিটি আইডি (ইউডিআইডি) বাধ্যতামূলক করেছে। সেই অনুযায়ী রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার একটি পোর্টালের মাধ্যমে এই কাজ শুরু করেছে। ভারতে এমন মানুষের সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় তিন কোটি। আর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সংখ্যাটি আট কোটির কম নয়। এই বিশাল সংখ্যক মানুষ চরম বিভ্রান্ত এবং আতঙ্কিত— কী এই ইউডিআইডি, কী ভাবে, কোথায়, কত দিনের মধ্যে এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে? না হলে কী অসুবিধা হতে পারে? যাঁদের এখনও পর্যন্ত প্রতিবন্ধী শংসাপত্র নেই, তাঁরা কী ভাবে আবেদন করবেন? বা যাঁরা ইতিমধ্যেই সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রতিবন্ধী শংসাপত্র পেয়েছেন, তাঁরাই বা কী ভাবে এই কার্ডের জন্য আবেদন করবেন? কোথাও কোনও বিস্তারিত তথ্য নেই। নানা সময়ে সংবাদপত্রে নেতা-মন্ত্রীদের হাসিমুখের ছবি-সহ বিজ্ঞাপন বেরোয়। সেগুলির পরিবর্তে স্থানীয় ভাষায় সমস্ত তথ্য দিয়ে এমন জরুরি বিষয়ে একটি সহজ বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায় না?
অজয় দাস, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy