— ফাইল চিত্র
শুধু মানুষই নয়, মহাকাশও মরণশীল! পথিক গুহের ‘সর্বনাশের আশায়’ (রবিবাসরীয়, ১৩-১২) সুদূর ভবিষ্যতের সেই ভয়ঙ্কর পরিণতির ভাবনা উস্কে দিল। ১৩৭০ কোটি বছর আগে ঘটে যাওয়া এক নিঃশব্দ মহাবিস্ফোরণের প্রভাবে এখনও প্রচণ্ড গতিতে প্রসারিত হয়ে চলেছে ব্রহ্মাণ্ড। তাতে ক্রমশ তাপ হারিয়ে শীতল হচ্ছে মহাকাশ। মৃত্যু হচ্ছে একের পর এক নক্ষত্রের। বিশাল বিশাল টেলিস্কোপ, ভ্রাম্যমাণ মহাকাশযানের থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গিয়েছে, নক্ষত্রদের এই জীবনকাহিনি। উজ্জ্বল মহাদানব, স্থিতাবস্থার মধ্যবয়স পেরিয়ে যখন একটি নক্ষত্র প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছয়, তখন তা ধাপে ধাপে লাল দৈত্য, শ্বেত বামন, নেবুলা ও সুপারনোভার স্তর ছুঁয়ে পৌঁছে যায় আকারে অনেক ছোট, ঔজ্জ্বল্যহীন, ঘুরন্ত নিউট্রন নক্ষত্রের দশায়। এরাই নক্ষত্রের মৃতদেহ। সূর্যের জন্য এ দশাই নির্দিষ্ট। অন্য দিকে, যে নক্ষত্রদের ভর সূর্যের ভরের পাঁচ গুণ, তারা মৃত্যুর পরে পরিণত হয় আলোখেকো গহ্বর বা ব্ল্যাক হোল-এ।
সূর্যের মরণে পৃথিবীর দশা কী হবে? সূর্যের মরণ অবধি পৃথিবী টিকবেই না। আমাদের প্রিয় নক্ষত্রটির বৃদ্ধ বয়সে তার দুই প্রধান জ্বালানি— হিলিয়াম ও হাইড্রোজেনের মধ্যে হিলিয়াম থাকবে কেন্দ্রে আর হালকা হাইড্রোজেন ছড়িয়ে পড়বে দূরে। কেন্দ্রে ঘটবে হিলিয়াম সংযোজন; ক্রমবর্ধমান পরিধিতে চলতে থাকবে হাইড্রোজেন সংযোজন। অর্থাৎ, সূর্য পৌঁছে যাবে লাল দৈত্যের পর্যায়ে। ভীষণ উত্তাপে গলে যাবে পৃথিবীর বরফঢাকা মেরু দু’টি। সাগরের জল টগবগিয়ে ফুটে পরিণত হবে বাষ্পে। অভূতপূর্ব মেঘে ঢেকে যাবে আকাশ। তবে তা সাময়িক। ক্ষণজন্মা সেই মেঘও উত্তাপে উধাও হবে। তার পর বুধ ও শুক্র গ্রহের সঙ্গেই সূর্যের গ্রাসে চলে যাবে আমাদের প্রিয় পৃথিবীও!
পার্থ পাল
মৌবেশিয়া, হুগলি
কবে শেষ?
পথিক গুহ বিজ্ঞানীদের জ্ঞানলব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে লিখেছেন যে, দু’শো কোটি বছর পর শেষ হয়ে যাবে সূর্যের জ্বালানি এবং তার সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যাবে সূর্য-নির্ভর গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র এবং সমস্ত জড় ও প্রাণিজগৎ। কিন্তু, আইরিশ লেখক-সাংবাদিক পিটার রিচি ক্যাল্ডার জানিয়েছেন, সূর্যের আয়ু দু’শো কোটি নয়, পাঁচশো কোটি বছর। পিটার লিখেছেন, “বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা বিশ্লেষণের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে, সূর্যের (বা অন্য কোনও পর্যবেক্ষিত নক্ষত্রের) মধ্যে কত পরিমাণ হাইড্রোজেন গ্যাস আছে, এবং তাঁরা জানেন কী হারে হিলিয়াম গ্যাসে রূপান্তরিত হয়ে তা হ্রাস হয়ে যাচ্ছে। হিসেব বলছে, সূর্যের মধ্যে সংগৃহীত হাইড্রোজেন গ্যাস শেষ হতে লাগবে প্রায় ৫০০০,০০০,০০০ বছর।”
তিনি একটি মজার কাহিনি শোনালেন, “কারও স্মরণে থাকতে পারে সেই অধ্যাপকের কথা, যিনি ওই সংখ্যাটি (৫০০ কোটি বছর) উদ্ধৃত করেছিলেন। তাঁর শ্রোতাদের মধ্য থেকে এক জন বিচলিত হয়ে তাঁকে সংখ্যাটি পুনর্বার জানাতে বললেন। পাঁচ বিলিয়ন বছর, অধ্যাপক তাঁকে জানালেন। ‘যাক বাবা, বাঁচা গিয়েছে। আপনি তো আমাকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছিলেন। আমি ভাবলাম আমাদের বিলুপ্তি হতে আর মাত্র ৫ মিলিয়ন বছর আছে’, বলে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লেন প্রশ্নকর্তা” (ব্রিটানিকা পারসপেক্টিভস ১৭৬৮-১৯৬৮, প্রথম খণ্ড, পঞ্চম অধ্যায়)। পথিকবাবু উদ্ধৃত করেছেন স্যর জেমস-এর দ্য মিস্টিরিয়াস ইউনিভার্স বইয়ে লেখা তাঁর হতাশ অভিব্যক্তির কথা, “যেন আমরা কোনও দিন ছিলাম না।” অথচ, ওই বইটির শেষ অধ্যায় ‘ইনটু দ্য ডিপ ওয়াটার্স’-এর শেষ অনুচ্ছেদে দেখা যাচ্ছে, লেখক বিজ্ঞানীদের দাবিকে অঙ্কের মতো নির্ভুল মানতে রাজি নন। জেমস লিখেছেন, “আমরা আলোর বড় জোর একটা ক্ষীণ, আবছা আভাস দেখতে পাচ্ছি। তার থেকে বেশি স্পষ্ট ভাবে নির্ণয় করতে পেরেছি বলে দাবি করতে পারি না; হতে পারে এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।”
সুভাষ চন্দ্র সরকার
কলকাতা-৩৫
ধোঁয়াশা
পথিক গুহকে ধন্যবাদ জানিয়েও বলি, কয়েকটা জায়গায় ধোঁয়াশা রয়ে গেল। যেমন, এখনও পর্যন্ত ব্রহ্মাণ্ডে মোট পদার্থের পরিমাণ কি নিশ্চিত ভাবে জানা গিয়েছে? ব্ল্যাক ম্যাটার থেকে আরম্ভ করে সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্রকে ধরেও পদার্থের পরিমাণ অবশ্যই দশ শতাংশের কম। কিন্তু এগুলি ছাড়া যে আর কোনও বস্তুর উপস্থিতি নেই, সে ব্যাপারে কি বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত? ‘বিগ ফ্রিজ়’ তত্ত্ব গ্রহ-নক্ষত্রের পরস্পর থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথা বলছে। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী অ্যালান গুথের বিখ্যাত উক্তি ‘ইউনিভার্স ইজ় আ ফ্রি লাঞ্চ’। যে হেতু আইনস্টাইনের ভর এবং শক্তির নিত্যতা সূত্রানুযায়ী, কেবল ধনাত্মক শক্তিই পদার্থে রূপান্তরিত হতে পারে, এবং মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ এবং শক্তির যোগফল শূন্য, সে হেতু যে মুহূর্তে মহাবিশ্বে পদার্থ তৈরি হয়, সেই মুহূর্তে মহাকর্ষীয় শক্তিও (যেটি ঋণাত্মক শক্তি) সমপরিমাণ তৈরি হয়। কাজেই এই তত্ত্বানুসারে প্রসারণশীল বিশ্বের ধারণা অনুযায়ী, মধ্যবর্তী ফাঁকা অংশ ফাঁকা থাকবে না। সেখানে বস্তু তৈরি হবে, এবং একই সঙ্গে মহাকর্ষ শক্তিও সৃষ্টি হবে।
আইনস্টাইনের মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের ধারণা ছিল স্থিতিশীল বিশ্বকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য। প্রসারণশীল বিশ্বের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে উনি নিজের ধারণা ত্যাগ করেন। যেখানে কিছু তাপ আছে, সেখানে অবশ্যই শক্তি আছে। কিন্তু শক্তি মানে কি কেবল তাপ? অন্য শক্তিও তো আছে। এগুলির বিশদ ব্যাখ্যা থাকলে বোঝার সুবিধা হত।
রাকেশ বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া, হুগলি
পরিণতি
পথিক গুহ স্যর জেমস জিনসের যে দ্য মিস্টিরিয়াস ইউনিভার্স বইয়ের উল্লেখ করেছেন, বহু দিন আগে তার একটি অংশ ‘দ্য ডায়িং সান’ নামে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্টারমিডিয়েট প্রোজ় সিলেকশন’-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেখানে তিনি তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের ব্যাখ্যা করে মহাবিশ্বের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ‘হিট ডেথ’-এর কথা উল্লেখ করেছেন। বোঝা যায়, তিনি কত দূরদর্শী ছিলেন। জীব ও জড়ের মৃত্যুর পরে শেষ পরিণতি কী, তা আমরা কেউ জানি না।
তপন কুমার মুখোপাধ্যায়
সুভাষ পল্লি, বর্ধমান
বিজ্ঞানের ভাঁড়ার
‘মৌমাছি উড়ে গেল মৌচাকে’ (১২-১২) অনেক পুরনো কথা মনে পড়িয়ে দিল। শৈশবে প্রতি সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকা-র ‘আনন্দমেলা’ পড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতাম। সবচেয়ে আকর্ষক ছিল, ‘মৌমাছির চিঠি’। ষষ্ঠ শ্রেণিতে দ্রুতপঠন গ্রন্থ তাঁর জ্ঞান বিজ্ঞানের মধুভান্ড বইটি হাতে পেলাম। স্বপ্ন দেখা, নাক ডাকা, হাঁচি, কাশির মতো অতি সাধারণ বিষয়ের অসাধারণ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ! আর ছিলেন যুগান্তর পত্রিকা-র ‘ছোটদের পাততাড়ি’-র স্বপনবুড়ো অখিল নিয়োগী। তাঁর ‘বাবুইবাসা বোর্ডিং’-এর অসাধারণ গল্প কি ভোলা যাবে?
সত্যব্রত দত্ত
কলকাতা-৮৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy