গণতন্ত্রে নজরদারির বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।
সমাজ জুড়ে দুর্নীতি যেন সত্যিই নীতিতে পরিণত হয়েছে। অথচ, দুর্নীতির হাত থেকে, নীতিহীনতার হাত থেকে, স্বজনপোষণ, খুন, সন্ত্রাস, এ সবের হাত থেকে বাঁচার আশা নিয়েই রাজ্যের মানুষ তৃণমূল সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। শুধু ভাবি, এই যে আগের সরকারকে সরাতে এত লড়াই, এত আন্দোলন, এত রক্তপাত— সবই কি বৃথা গেল! তা হলে কী হবে ভবিষ্যৎ?
আবার ভাবি, এতে আমাদের দায়িত্বই কি কম! অনেক আন্দোলনের পর এক দল নেতার হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে যে যার ঘরে ফিরে গেলাম। কেউই খেয়াল করলাম না, যাঁদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিলাম, ক্ষমতা হাতে নিয়ে তাঁরা কী করছেন। অথচ, এই খেয়াল করাটিই ছিল আজকের এই পরিস্থিতিকে এড়ানোর সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি। আমরা যদি সে দিন এতখানি নিশ্চিন্ত না হতাম, আমরা যদি তাঁদের উপর নজর রাখতাম, পাড়ায়, বাজারে, অফিসে, স্কুল-কলেজে কলকারখানায়, তবে আমরা এই অনাচারের শুরুতেই আঙুল তুলতে পারতাম। প্রতিবাদ করতে পারতাম। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করিনি। চোর এসে কখন সিঁধ কেটে আমাদের সর্বস্ব নিয়ে গিয়েছে, আমরা জানতেও পারিনি।
গণতন্ত্রে নজরদারির বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। গণতন্ত্রকে আমরা পাঁচ বছর অন্তর ভোট আর মাঝেমাঝে সরকার পরিবর্তনে নামিয়ে এনেছি। অথচ, শুধু ভোট দিয়ে আর সরকার পরিবর্তন করে যে দুর্নীতি দূর করা যায় না, নীতিহীন আচরণের পরিবর্তন ঘটানো যায় না, তা আজ স্পষ্ট হচ্ছে। তাই প্রশ্ন করা, আঙুল তোলা অত্যন্ত জরুরি। প্রশ্নবাণে শাসকদের বিদ্ধ করা জরুরি। তাতে শুরুতে হয়তো সরকারের, প্রশাসনের শাসানি, চোখরাঙানি সইতে হয়, কিছু আত্মত্যাগও স্বীকার করতে হয়। কিন্তু তাতে অনাচার শেষ পর্যন্ত এমন বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে না।
সমর মিত্র, কলকাতা-১৩
গৃহশিক্ষক
‘সেই সব মাস্টারমশাই’ (কলকাতার কড়চা, ৩-৯) মনে করিয়ে দিল আমার জীবনের প্রথম গৃহশিক্ষকের কথা। আমি ক্লাস সেভেন তখন, অঙ্কে আর ফিজ়িক্যাল সায়েন্সে লুটোপুটি খাচ্ছি। বেগতিক দেখে নানা সূত্র ধরে যোগাযোগ করা হল মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে। বয়স মোটেই বেশি নয় তাঁর, রাশভারী গুরুমশাইয়ের ছাপ নেই। কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত মাস্টারমশাই ছিলেন আমারই স্কুলের প্রাক্তনী। সপ্তাহে দু’দিন সন্ধেয় অফিস-ফেরত সাইকেল চেপে এসে বেল দিতেন। মৌরি খেতেন তিনি, তাই আমার কাছে বকাঝকার সঙ্গে মৌরির গন্ধ কোথাও মিশে গিয়েছিল। যে সায়েন্সে ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতাম, তাঁর পড়ানোর গুণে মাধ্যমিকে মোটামুটি ভদ্রস্থ নম্বর নিয়েই পাশ করলাম। কিন্তু তিনি ইলেভন-টুয়েলভে আর পড়ালেন না, অনেক অনুনয়-বিনয়ের পরেও। বললেন, এ বার কঠিন সময়। আরও দক্ষ কারও কাছে যাও। আমার ছাত্রজীবন থেকে সেই বকুনি, আর মৌরির গন্ধ হারিয়ে গেল।
২০২১-এ যখন কোভিড টিকার জন্য চার দিকে ছোটাছুটি, তখন আবার যোগাযোগ হল তাঁর সঙ্গে, যেন নতুন করে। কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমার অভিভাবকদের টিকা দান করে দুশ্চিন্তামুক্ত করলেন। আমার সেই প্রথম গৃহশিক্ষককে ফিরে পেলাম বড় দাদার মতো, জীবনের কঠিন যুদ্ধে যিনি না ডাকতেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
শুভংকর ঘোষ রায় চৌধুরী, কলকাতা-৩১
তর্জন রাজনীতি
১৩ সেপ্টেম্বর দলের নবান্ন অভিযান প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছিলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি ও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ওই দিন রাজ্য অবরুদ্ধ করে দেওয়া হবে” (‘নবান্ন অভিযান ১৩ই’, ২৩-৮)। অন্য দিকে, সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাধা দিলে তীব্র প্রতিবাদ হবে।” শাসক তৃণমূল দল এখন কিছুটা বেকায়দায় বলে বিরোধীরা হুঁশিয়ারি-হুমকির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। প্রশ্ন, এই তর্জনগর্জনের রাজনীতির প্রভাব জনমানসে কতটুকু?
কে না জানে, নাগরিক সমাজ পথে না নামলে এ ধরনের প্রতিবাদ-আন্দোলন বেশি দূর এগোয় না। দুর্নীতিকাণ্ডের প্রতিবাদে বাম-বুদ্ধিজীবীরা কিছু কাল আগে যে নাগরিক মিছিল সংঘটিত করেছিলেন, তাতে বিশেষ সাড়া মেলেনি। তা ছাড়া রাজ্যের অধিকাংশ নামী লেখক-শিল্পী শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকার জন্য বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতিবাদ আজ অনেকটাই স্তিমিত। মানুষের মনে ঝড় তুলতে পারেন তেমন বুদ্ধিজীবী কোথায়? শঙ্খ ঘোষের মতো শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বের আজ বড়ই অভাব। কাজেই বিরোধী নেতাদের হুঁশিয়ারি কিংবা অসমর্থ বুদ্ধিজীবী শ্রেণির শক্তিতে ম্যাকিয়াভেলীয় রাজনীতিতে বলীয়ান জননেত্রীকে কাবু করা যাবে না। অনুকূল পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিকে পাল্টা রাজনীতি দিয়ে কেমন করে ঘায়েল করতে হয়, নেত্রী তা বিলক্ষণ জানেন। সর্বোপরি সাময়িক বিড়ম্বনা সত্ত্বেও এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা যে আজও ঈর্ষণীয়, তা অস্বীকার করার কোনও উপায় আছে?
শিবাশিস দত্ত, কলকাতা-৮৪
সর্বনাশা
‘ধিক’ (২২-৮) সম্পাদকীয় শেষ অনুচ্ছেদে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপ্রধানের নির্লজ্জ নির্লিপ্ততার কথা নয়, দেশের নাগরিক-সহ রাজনৈতিক দলগুলির এই সর্বনাশা প্রকল্পের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থাকাকেও ‘ধিক’ শব্দে সঠিক ভাবেই আক্রমণ করেছে। রাষ্ট্র তার বিচারব্যবস্থাকে অন্যান্য প্রশাসনিক নিপীড়নের অস্ত্ররূপে ব্যবহার করতে চাইছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলির বিরুদ্ধে। রাষ্ট্র-প্রণোদিত লুম্পেনদের অপকর্ম সামাজিক ন্যায্যতা পাচ্ছে। এক জন নারীর অবস্থান থেকে বার বার এক বিপর্যস্ত মানসিকতা আমাদের আচ্ছন্ন করছে। বিজয়ী সৈন্যদলের ধর্ষণের শিকার হন যেমন বিজিত দেশের নারীরা, ঠিক সে ভাবেই গণতন্ত্রলুণ্ঠিত এক দেশে সঙ্ঘপরিবারের শাসন না-মানা নারীরা চরমতম অপমানের আঘাতের অপেক্ষায় দিন কাটাতে বাধ্য হবেন। সম্পাদকীয়তে ‘হায়’ শব্দটি যেন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবকে ব্যঙ্গ করে জাতীয় দীর্ঘশ্বাসের দ্যোতনা।
ভারতী দাশগুপ্ত, খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
দূষণের হিসাব
‘কলকাতার বায়ু কতটা দূষিত’ (২-৯) শীর্ষক প্রবন্ধে কল্যাণ রুদ্র হিসাব করে দেখিয়েছেন, কলকাতায় পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ৪৮.৭৩ মাইক্রোগ্রাম (যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ মাইক্রোগ্রাম)। নানা কর্মসূচি রূপায়ণের ফলে এই ‘সাফল্য’। কর্মসূচির বিবরণ লেখক জানাননি। তিনি কলকাতার বায়ুদূষণে মৃত্যুর হারের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সে ক্ষেত্রে তো কলকাতার বাতাসে ভাসমান পিএম-এর পরিমাণ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার ৫৩ শতাংশের জন্য প্রতিবেশী রাজ্য বা রাষ্ট্রকে দোষারোপ করা খুব কি যুক্তিগ্রাহ্য? প্রবন্ধ শেষে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তেমন ভাবে আশ্বস্ত হতে পারছি না। কারণ, দূষণকারীদের প্রতি প্রশাসনিক প্রশ্রয় নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যায়।
বরুণ কর, ব্যান্ডেল, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy