—প্রতীকী ছবি।
অদিতি মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘সীমা ছড়ানোর কিনারায়’ (২-১) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে দুবাইয়ে ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হল ২৮তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (সিওপি২৮)। ১৯৯৫ সাল থেকে জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতি বছরই এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিটি সম্মেলনে গুরুগম্ভীর আলোচনার পরে মিলিত ভাবে পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে সমস্ত দেশ যে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে, তা বেশির ভাগ দেশই দায়িত্ব নিয়ে লঙ্ঘন করে। ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজ়েশন-এর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে গ্রিনহাউস গ্যাসের (কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড) মাত্রা সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। যার ফলে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে সৌরজগতের একমাত্র বাসযোগ্য আমাদের এই নীল গ্রহকে। ২০১৫ সালের প্যারিসে আয়োজিত ২১তম কনফারেন্স অব পার্টিজ় (সিওপি২১) থেকে সমস্ত দেশ সম্মিলিত ভাবে ঘোষণা করেছিল শিল্পায়ন-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বৃদ্ধি হতে দেওয়া যাবে না। অথচ, সাতটি সম্মেলন পার করে অষ্টম সম্মেলনে মিলিত হওয়ার আগে অবধি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে লাগাম পরানো যায়নি।
১৯৮১ সালের পর থেকে প্রতি ১২ বছর অন্তর পৃথিবীর তাপমাত্রা ০.১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে চলেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে শিল্পায়ন-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে গেলে গোটা পৃথিবী জুড়ে ২৮ থেকে ৪২ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্গিরণ বন্ধ করতে হবে, বর্তমান বিশ্বে যা অসম্ভব। পৃথিবীতে মোট যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্গিরণ হয়, তার প্রায় ৮০ শতাংশ জি২০ ভুক্ত উন্নত দেশগুলো থেকে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিন সবচেয়ে বেশি এই গ্যাস উদ্গিরণ করে। অথচ, এরা দূষণের জন্য তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে দায়ী করে। এদের বৈভব এবং স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখার জন্য বিশ্বের প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। এখন দেখার, দুবাই সম্মেলন (সিওপি২৮) থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য যে তহবিল গঠিত হল, তার থেকে কোনও আশার আলো দেখা যায় কি না।
শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
ত্যাগই পথ
অদিতি মুখোপাধ্যায়ের লেখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই প্রাসঙ্গিক। আমাদের প্রাণপ্রিয় পৃথিবী যে ক’টি সমস্যায় আক্রান্ত, তার মধ্যে অন্যতম পরিবেশ দূষণ বা জলবায়ুজনিত সমস্যা। বলা হয়, এই পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল শিল্পবিপ্লব। শিল্পবিপ্লব যেমন আমাদের বহু উপকার করেছে, তেমনই ক্ষতিও করেছে। অনেকে হয়তো অবাক হচ্ছেন এই কথা শুনে। আসলে শিল্পবিপ্লবের ফলে যে কলকারখানাগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল, তার থেকেই প্রথম দূষণের সূত্রপাত। বর্তমানে যে ভাবে কলকারখানাগুলো বেড়ে চলেছে, তাতে দূষণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য যানবাহনের ধোঁয়া ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, এবং চলছে অবাধে বৃক্ষছেদন। পরিবেশ দূষণের জন্য আজ জলবায়ুজনিত সমস্যা ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। এর প্রভাব আমরা আমাদের জীবনে বিভিন্ন ভাবে পাচ্ছি।
তাপমাত্রা ভীষণ ভাবে বেড়ে যাওয়া, সঠিক সময়ে ঋতু পরিবর্তন না হওয়া, হয় অতিবৃষ্টি নাহয় বৃষ্টি কম হওয়া, সঠিক সময়ে শীত না আসা ইত্যাদি উষ্ণায়নের পরিণতি। জলবায়ুজনিত সমস্যার জন্য সুনামি, বন্যা, ঝড় ইত্যাদি অনেক কিছুই ঘটছে। এ ছাড়াও তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য হিমবাহগুলো যে ভাবে গলছে, তাতে সমুদ্রস্তরের জল বৃদ্ধি পেয়ে অনেক স্থলভাগ জলের তলায় আগামী দিনে চলে যাবে। তাতেও কি মানুষ সচেতন হচ্ছে? উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে লড়াই চলছে কারা বেশি পরিবেশের ক্ষতি করছে। লড়াই নয়, দরকার সমাধান। সর্বাগ্রে দরকার ত্যাগ। ভোগবাদে আকণ্ঠ ডুবে থাকার জন্যই পৃথিবী সমস্যায় পড়েছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনও কিছুর ব্যবহার না করা দরকার, সে গাড়ি চালানো হোক, কিংবা মোবাইলের অপব্যবহার। পাশাপাশি প্রচুর গাছ লাগানো চাই। নতুন বছরে পরিবেশ বিষয়ে সকলের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হোক।
অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ
জলঙ্গির স্মৃতি
অনিতা অগ্নিহোত্রীর ‘অতিবৃষ্টির কয়েক কাহন’ (৩-১) পড়ে নিজের কর্মজীবনের কিছু কথা প্রকাশ করার ইচ্ছা হল। প্রায় আটত্রিশ বছর আগেকার কথা। মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তবর্তী ব্লক জলঙ্গি। জলঙ্গি ভূখণ্ডের পরেই খরস্রোতা পদ্মানদী। পদ্মার ও-পারেই বাংলাদেশ। সেই জলঙ্গিতে প্রশাসনিক পদে কাজ করার সুবাদে পুরো অঞ্চলটিই ঘুরে ঘুরে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করতে হত। সেখানকার গ্রামীণ মানুষজন, তাঁদের জীবনযাপন, জীবনধারণ, জীবনধারণের জন্য বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে তাঁদের যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছিল। সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়াতে সেখানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি অফিস ছিল। অফিসটি ছিল একেবারে পদ্মানদীর পাড়ে।
জলঙ্গিতে পা রাখার পরেই সেখানকার খবরাখবর নিয়েছিলাম। পদ্মানদীর ভাঙন সেখানকার একটি বাৎসরিক বিষয় এবং বছরেমোটামুটি দুর্গাপুজোর আগে এক বার ও পরে এক বার বন্যা হওয়ায় অঞ্চলের বাসিন্দাদের ভোগান্তির শেষ ছিল না।
এ-হেন এক বর্ষাকালে নদীর চরে দাঁড়িয়ে নদীর ভাঙন প্রত্যক্ষ করেছিলাম। নদীর পাড়ে যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম, কিছু ক্ষণ পরে সে জায়গাটা ভেঙে নদীতে তলিয়ে গেল। তাড়াতাড়ি পিছনে সরে না এলে, নিজেই নদীতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আরও কিছু ক্ষণ পর আরও কিছু চরের জমি নদীতে তলিয়ে যেতে থাকল। এই ভাবে বেশ কিছু জমি নিমেষের মধ্যেই নদীগর্ভে চলে গেল।
চরের জমি উর্বর হওয়ার সুবাদে সেই চরে মানুষজন ঘরবসতি করে থাকতেন, আর ওই জমিতে ফসলের বীজ ছড়িয়ে দিলে, বিশেষত কলাইয়ের বীজ ছড়িয়ে দিলেই খুব তাড়াতাড়ি সেই ফসল তাঁরা ঘরে তুলতে পারতেন। জমিতে কোনও রকম সার বা গাছে কোনও রকম কীটনাশক প্রয়োগ না করেই চাষ হত। এটা একটা তাঁদের বেশ লাভজনক চাষ ছিল। কিন্তু এই নদীতে ভাঙন বা বন্যা এক বার শুরু হলে তাঁদের আর দুর্গতির শেষ থাকত না।
ব্লক অফিস সংলগ্ন ভাঙন ও বন্যাদুর্গতদের জন্য একটা পাকাপাকি ভাবে আশ্রয় শিবির তৈরি করা হয়েছিল। যখনই এ রকম কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে মানুষ পড়তেন, তখনই তাঁদের নিয়ে এসে সেই শিবিরে থাকার জায়গা দেওয়া হত। এমনকি তাঁদের গৃহপালিত গরু, ছাগল ইত্যাদিকেও সেই স্থানে রাখার ব্যবস্থা থাকত। পাকা শিবিরের উপরের তলায় দুর্গত মানুষদের ও নীচের তলায় গৃহপালিত প্রাণীদের থাকার বন্দোবস্ত করা হত। যত দিন না সেই ভাঙন বা বন্যা বন্ধ হচ্ছে, তত দিন সেখানে রেখে পাশাপাশি তাঁদের খাওয়া ও অসুস্থ দুর্গতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হত।
জলঙ্গির অন্তর্গত এলাকায় পাট চাষের আধিক্য আছে। পাট সেই অঞ্চলের একটি গ্রীষ্মকালীন অর্থকরী ফসল। অনেক মানুষের জীবিকা সেই চাষের উপর নির্ভরশীল। পাট কাটার পরে তা পচানোর জন্য জলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেই সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে মাঝেমধ্যে পাট পচানোর জল ডোবা বা নালায় থাকে না। যথেষ্ট জলের অভাবে পাটের রং ভাল হয় না। ফলে বাজারে বিক্রির সময় দামও বেশি পাওয়া যায় না। পাটচাষিরা এর ফলে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে দাম ঠিক করা হয়, তাঁদের ক্ষতি পূরণ করার জন্য।
সন্তোষ কুমার দে, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy