বাংলা-ইংরেজির দ্বন্দ্বটা জরুরি। ফাইল চিত্র।
অচিন চক্রবর্তী ও অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের কথোপকথন (ভাষার নীতি ও রাজনীতি, ১৪-৩) প্রসঙ্গে এই চিঠি। “বাংলা স্কুলেও রীতিমতো গুরুত্ব দিয়ে ইংরেজির চর্চা হত” অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যটিই স্কুলে ভাষা শিক্ষার প্রধান প্রতিপাদ্য হওয়া উচিত, শুধু অতীতটাকে বর্তমানে নিয়ে আসতে হবে। তা হলে বাঙালির ইংরেজি মাধ্যমে যাওয়ার প্রেরণা বা তাড়না কমবে; কাজের ক্ষেত্রে ইংরেজি না জানার অস্বস্তি ঘুচবে; বাংলা মাধ্যমকে ইংরেজি মাধ্যম করার অবিমৃশ্যকারী ভাবনা দূর হবে।
বাংলা-ইংরেজির দ্বন্দ্বটা জরুরি। দ্বন্দ্ব শব্দের অর্থ সংঘর্ষ এবং সম্মিলন— বাংলা-ইংরেজির ক্ষেত্রে দু’টিই প্রয়োজন। বাংলা সাহিত্য বিশ্বপর্যায়ে বিস্তৃত, সেখানে আছে ইংরেজি সাহিত্যেরও অবদান। আবার, বাংলার মাটিতে ইংরেজির ফলনটাও কম কিছু নয়। এবং তা আরও ঋদ্ধ হবে যদি বাংলার সঙ্গে তার সম্পৃক্তি গভীর হয়। বাঙালির শিক্ষায় বাংলা-ইংরেজির দ্বন্দ্ব সমুদ্রতরঙ্গের মতোই কখনও তুঙ্গে ওঠে, কখনও খাদে নামে।
ভাষা শিক্ষার মতো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন এবং তার প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় ছিল। রাজ্য সরকার এ বিষয়ে তার দায়িত্ব আগেও যথাযথ ভাবে পালন করেনি, এখনও তথৈবচ। অথচ, এ বিষয়ে নীতি নির্ণয় করার যোগ্য প্রাজ্ঞ ব্যক্তির অভাব পশ্চিমবঙ্গে নেই, এবং তা রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানেরও অপ্রতুলতা নেই। অভাব সরকারের চিন্তাভাবনার। সরকার যত ক্ষণ না ভাববে, তত ক্ষণ হাজার সংলাপেও কাজ হবে না।
দেবাংশু মাইতি, কলকাতা-৮৬
ইংরেজির জোর
‘ভাষার নীতি ও রাজনীতি’ পড়ে ভাল লাগল। চিরচেনা মধ্যবিত্ত বাঙালি আবেগের বাইরে বেরিয়ে এসে অচিনবাবু বলেছেন, “ভাষা নিয়ে মাঝে মাঝেই যে বাক্যবিনিময় শুনতে পাই... তার মধ্যে আবেগ যতটা থাকে যুক্তি ততটা নয়”, যা স্বচ্ছ ও যুক্তিপূর্ণ ভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপিত করেছে। লোকে মাতৃভাষা নিয়ে যে এত আদিখ্যেতা করে, সেটা কি অপর কোনও বহুলব্যবহৃত ভাষা শুদ্ধ ভাবে বলতে ও লিখতে না পারার হীনম্মন্যতা চাপা দেওয়ার জন্য? ভাষা শিক্ষা একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। পেটের দায়েই রামমোহন তুর্কি ফারসি ভাষা শিখেছিলেন, ঈশ্বরচন্দ্র সংস্কৃত, পরবর্তী প্রজন্ম ইংরেজি, সওদাগরি অফিসে কেরানির কাজ পাওয়ার জন্য। আজকের বিশ্বে বাংলা ভাষা চর্চার উপযোগিতা কী? ব্যবহারিক কী লাভ হবে বাংলা শিখে? সেই সময় ইংরেজি শিখলে বরং পেটের ভাত জোটা সহজতর হবে।
চর্যাপদের পদকর্তা থেকে রায়গুণাকর, কেউই ইংরেজি জানতেন না; তাই তাঁদের স্বচ্ছন্দে বাদ দেওয়া যায়। তার পরের যুগে মাইকেল মধুসূদন দত্তের দ্য ক্যাপটিভ লেডি (১৮৪৯) বা বঙ্কিমচন্দ্রের রাজমোহন’স ওয়াইফ আমাদের এক গূঢ় ও অপ্রিয় সত্যের সন্ধান দেয়— যারা ইংরেজিতে কল্কে পায় না তারাই মাতৃভাষার আদিখ্যেতায়, মানে আরাধনায়, লিপ্ত হয়। আর ইংরেজি জানার, ইংরেজি বুঝতে বলতে পারার সুবিধা চার পাশেই দেখতে পাওয়া যায়। আঁটপুরে বাবুরাম ঘোষের গ্রামের বাড়িতে রামকৃষ্ণ পরমহংসের ন’জন শিষ্য ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে সন্ন্যাস গ্রহণ করার সঙ্কল্প নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জনকে আমরা চিনি, বাকি আট জনের পরিচিতি গবেষক ও শিষ্য মহলেই সীমায়িত। কেন? কারণ নরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রায় সাহেবদের মতো ইংরেজি বুঝতে ও বলতে পারতেন।
তপন পাল, বাটানগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ধর্মকোড
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘সারি’ ও ‘সারনা’ ধর্মকোডের জন্য প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ করেছে। পৃথক ধর্মকোড প্রদানের বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত নয়, এটি নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর। তবে বিধানসভায় এই প্রস্তাবটি পাশ হওয়ায় সাঁওতালদের দীর্ঘ দিনের ধর্মীয় কোড প্রদানের দাবিটি কিছুটা হলেও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছে।
আমরা সকলে জানি, সমাজব্যবস্থা সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে জনজাতিরা প্রকৃতির দেব-দেবী, যেমন, মারাংবুরু, জাহের এরা, মড়েকো তুরুয়কো ও চাঁদোবঙ্গা তথা সূর্যদেবতার উপাসক। বিশ্বাস অনুযায়ী, সেই সমস্ত দেবদেবী কখনও শালবৃক্ষ, মহুয়াবৃক্ষ ও করমবৃক্ষ রূপে আত্মপ্রকাশ করে প্রকৃতিতে, আবার কখনও পাহাড়-পর্বত রূপে আত্মপ্রকাশ করে। সেই কারণে ওই সমস্ত বৃক্ষ ও পাহাড়-পর্বতকে জনজাতিরা মর্যাদা ও আরাধনা করে থাকে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এটা সত্যি যে, একটা জাতির প্রকৃত সত্তার উপাদানগুলি হল তাদের ভাষা-সাহিত্য, পোশাক-আশাক, খাদ্যাভ্যাস এবং অবশ্যই তাদের ধর্মকেন্দ্রিক পরবপালি, রীতিনীতি ও সাংস্কৃতিক পরম্পরা। এই সব কিছুই একটি সমাজ বা সম্প্রদায়ের জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে। তাই, সাঁওতালদের ধর্মীয় কোড প্রদানের দীর্ঘ দিনের দাবি অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ।
তবে প্রস্তাবটি বিধানসভায় পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য সরকারের উচিত অতি দ্রুত কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট প্রেরণ করা। সেই সঙ্গে অনুরোধ, সরকারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদনপত্রে, অফিস-আদালতের নথিগুলিতে, বা চাকরির আবেদনপত্রে যেখানে ধর্মের উল্লেখ থাকে, সেখানে যেন ‘সারি’ ও ‘সারনা’ ধর্মের উল্লেখ করা হয়।
শিবু সোরেন, শান্তিনিকেতন, বীরভূম
শৈশবের মাধুর্য
রুশতী সেন তাঁর প্রবন্ধে (রাগী বাবার জেদি মেয়ে? ৫-৩) অনুযোগ করেছেন, যে সাবলীলতা লীলা মজুমদারের ছোটদের জন্য লেখায় পাওয়া গেছে, তা যেন অনুপস্থিত তাঁর বড়দের জন্য লেখায়। কারণ হিসাবে প্রবন্ধকার দেখিয়েছেন যে, সব গল্পে লীলা মজুমদার মেয়েদের সুপাত্রস্থ করাতেই তাঁর লেখার পরিণতি দিয়েছেন। অথচ, এই মানুষটাই ব্যক্তিজীবনে কত অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ!
এই বিশ্লেষণ পড়ে একটু আশ্চর্য হলাম। ছোটদের জন্য লীলা মজুমদার লিখেছিলেন পদিপিসির বর্মিবাক্স, সব ভুতুড়ে, বদ্যিনাথের বড়ি— এ সমস্তই কালজয়ী লেখা। বাবার সঙ্গে মনোমালিন্য তাঁর বড়দের লেখায় ছাপ ফেলেছে, এই যুক্তি মেনে নেওয়া যায় না। লীলা মজুমদারের মন হয়তো শৈশবে আকৃষ্ট ছিল, তাই সেই শৈশব নিয়ে লেখাগুলিতে তাঁর মন প্রাণ সঁপে দিয়েছেন। আর প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনের জটিলতা তাঁকে আকৃষ্ট করেনি, তাই জীবনের জটিল সম্পর্কের মধ্যে মন ঢুকতে চায়নি, বরং মধুর সমাপ্তি করেছেন। এই প্রসঙ্গে আশাপূর্ণা দেবীর কথাও বলা যেতে পারে। তিনিও সহজ সরল গল্প বুনেছেন, জটিল মনস্তত্ত্ব জাহির করেননি তাঁর লেখায়, তবুও সেগুলি আকর্ষক। লীলা মজুমদারের লেখা নিয়ে একই কথা বলা যেতে পারে।
সর্বাণী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
অশ্বমেধের ঘোড়া
অম্লানকুসুম চক্রবর্তীর প্রবন্ধের (সন্তানকে ‘সফল’ করার বাজি, ১৪-৩) নিরিখে এই চিঠি। রাজস্থানের কোটা শহরটিতে আইআইটি প্রশিক্ষণের কোচিং সেন্টারগুলিতে বছরে প্রায় দু’লক্ষের মতো পড়ুয়া ভর্তি হয়। বিগত চার বছরে ৫২ জন পড়ুয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে এ সব কোচিং সেন্টারের আবাসিক হস্টেলে। এর সবচেয়ে বড় কারণ অভিভাবকদের পর্বতপ্রমাণ প্রত্যাশা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে সব অভিভাবক নিজের জীবনে তেমন কিছু করতে পারেননি, তাঁরাই সন্তানের সাফল্যে জয়ী হতে চান। ইচ্ছের অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটিয়ে দেন, সন্তানের তোয়াক্কা না করেই। এই সব অভিভাবক শেয়ার মার্কেটের রিপোর্টের মতো প্রতি দিন দেখেছেন সন্তানের উন্নতির গ্রাফ। সন্তানের মনের খবর কতটুকু রেখেছেন?
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy