গোটা উৎপাদন ব্যবস্থাই বৃহৎ পুঁজির করতলগত হচ্ছে। ফাইল চিত্র।
স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘পলিয়েস্টার বাংলা’ (১৮-৪) শীর্ষক প্রবন্ধটি পশ্চিমবঙ্গের হস্ত-তাঁতশিল্পের করুণ পরিণতি তুলে ধরেছে। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে তাঁতের শাড়িই একমাত্র ব্যতিক্রম, যার দাম ক্রমশ কমছে! সরকারি উদাসীনতাকে কাজে লাগিয়ে অধিকাংশ ব্যবসায়ী-মহাজন যন্ত্রচালিত তাঁতে শাড়ি উৎপাদনকে উৎসাহিত করছেন, আর ক্রেতারা ৩০০ টাকায় ‘জামদানি’ পেয়ে আহ্লাদিত হচ্ছেন। তবে হাতের তাঁতকে মেরে যন্ত্রচালিত তাঁত যে বিজয়-রথ ছুটিয়েছিল, তাতে লাগাম টেনে দিচ্ছে র্যাপিয়ার। হস্ত-তাঁতশিল্পীদের পাশাপাশি যন্ত্রচালিত তাঁতের তাঁতিরাও পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। গোটা উৎপাদন ব্যবস্থাই বৃহৎ পুঁজির করতলগত হচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুরাতের সস্তার শাড়ি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এক-দু’টাকা লাভে, এমনকি উৎপাদন মূল্যেও বিক্রি হচ্ছে যন্ত্রচালিত তাঁত-র্যাপিয়ারে তৈরি বস্তা-বস্তা শাড়ি।
হস্তচালিত তাঁত নিয়ে গবেষণারত ছাত্র হিসাবে দেখছি, বিভিন্ন তাঁতের হাটগুলিতে শতকরা দশটা হাতের তাঁতের শাড়ি পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। শান্তিপুরের তাঁতের হাটে হাত-তাঁত শাড়ির জন্য আলাদা এলাকা সংরক্ষণের পর্যন্ত উদ্যোগ করা হয়েছে। এক সময় রফতানিযোগ্য বস্ত্র উৎপাদন করে বাংলার অন্যতম তাঁতকেন্দ্র ফুলিয়ার তাঁতপল্লিগুলি অক্সিজেন পেয়েছিল। ফুলিয়াতে ‘এক্সপোর্ট হাব’ তৈরির পরিকল্পনা দীর্ঘ ১৭ বছরেও হয়নি। তা ছাড়া বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার জন্য রফতানিযোগ্য বস্ত্রের উৎপাদন বর্তমানে বন্ধ। নতুনরা বিশাল পরিকাঠামোর দায়িত্ব নিয়ে করবেই বা কী? সদুত্তর মেলেনি। যেমন মেলেনি উত্তর, যন্ত্রচালিত তাঁতের শাড়িতে ‘হ্যান্ডলুম মার্ক’ লাগিয়ে বিক্রির প্রয়োজন হচ্ছে কেন? একদা যন্ত্রচালিত সস্তার মেশিনের কাপড় মসলিন-সহ বাংলার হাতের তাঁতকে ধবংস করেছিল। তবুও তার মধ্যে টিকে গিয়েছিল হাত-তাঁতের কাপড়। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে অচিরেই হাতের তাঁতে তৈরি কাপড় দেখতে গন্তব্য হবে মিউজ়িয়ম।
নিলয়কুমার বসাক, বিশ্বভারতী, বীরভূম
ধ্বংসস্তূপ
স্বাতী ভট্টাচার্য তাঁর প্রবন্ধ শুরু করেছেন ফুলিয়ার তাঁতি গৌরাঙ্গ বসাকের কথা দিয়ে। গৌরাঙ্গবাবু গত ৩৫ বছর ধরে একটিমাত্র চমকপ্রদ ভোল-বানার (ডিজ়াইন-প্যাটার্ন) লালপেড়ে সাদা শাড়ি বুনে, বলা চলে, তাঁতের কাপড়ের বাজারে রেকর্ড করেছেন। তাঁর এই রেকর্ড অদ্যাবধি কেউ ভাঙতে পারেনি। তা সত্ত্বেও তাঁকে পিছু হটতে বাধ্য হতে হল। আজ বাংলার হস্তচালিত তাঁতশিল্পীদের এই করুণ দশার প্রথম ও প্রধান কারণ অনৈতিক ভাবে তাঁতিপাড়ায় যন্ত্রচালিত তাঁত ঢুকিয়ে দেওয়া। ২০১৩-১৪ সাল থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। ২০১৬-তে বাঁধভাঙা জলের মতো হুড়মুড়িয়ে যন্ত্রের তাঁত ঢুকে পড়ল সর্বত্র, আইনের তোয়াক্কা না-করে। পুলিশ-প্রশাসনের চোখের সামনেই। হস্তচালিত তাঁত-সংরক্ষণ আইন (১৯৮৫) অনুসারে, ১১ প্রকারের কাপড় (প্রথমে ছিল ২২ প্রকারের, পরে ২০০৬ সালে কমিয়ে ১১ করা হয়) মিলে বা যন্ত্রচালিত তাঁতে বোনা সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। তখনকার দেশ-কর্তারা যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হস্তচালিত তাঁত টিকে থাকতে পারবে না জেনেই বাংলার সনাতন তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এই আইন প্রণয়ন করেছিলেন। সে আইন আইনের মতো রয়েছে, এ দিকে প্রকাশ্যে ফুলিয়া, শান্তিপুর, সমুদ্রগড়, ধনিয়াখালি, বেগমপুর প্রভৃতি তাঁতশিল্পের বিখ্যাত অঞ্চলে বিকট শব্দ তুলে যন্ত্রের তাঁত চলছে। প্রশাসন নিশ্চুপ। পঞ্চায়েত বরং তলে তলে ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে যন্ত্রচালিত তাঁত মালিকদের মদত দিল। লোকালয়ে যন্ত্রচালিত তাঁত বসাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমোদন, বিদ্যুৎ দফতরের অনুমতি এবং শিল্প দফতরের শংসাপত্র প্রয়োজন। সে সবের ধার ধারল না গ্রাম পঞ্চায়েত। তাঁতিরা প্রতিবাদ করতে গেলে তাড়া খেয়ে ফিরে এসেছিলেন। গার্হস্থ বিদ্যুৎ সংযোগেই যন্ত্রচালিত তাঁত চলছে। এর ফলে চাপ বেশি পড়ায় বিদ্যুৎ পরিবহণে ঘাটতি হচ্ছে। শব্দদূষণে তাঁতিপাড়া ক্রমে বধির হয়ে যাচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্তারা তদন্তে এসে সব দেখেশুনে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এ সবই স্বীকার করলেন, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা করলেন না।
সমবেত ভাবে আন্দোলন করা নিরীহ তাঁতিদের দ্বারা মোটেই সহজ নয়। ইতিপূর্বে ১৯৭৩-৭৪ সালে ফুলিয়ার তাঁতিরা মহাজনের শোষণের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ ভাবে জোরদার আন্দোলন করেছিলেন। সফলও হয়েছিল সে আন্দোলন। সরকারি সহযোগিতায় গড়ে উঠেছিল কয়েকটি সমবায় সমিতি, যারা ফুলিয়ার তাঁতশিল্পকে ক্রমোন্নতির দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। এক সময় এই সমিতিগুলির উৎপাদন বিশ্বমানে পৌঁছেছিল। বিদেশে রফতানি, সারা দেশে ফুলিয়ার শাড়ির বাজার প্রসারিত হয়ে তাঁতিদের আয়ের পথ সুনিশ্চিত হয়েছিল। আজ ফুলিয়ার তাঁতিপাড়া যেন সেই সুদিনের ধ্বংসস্তূপ।
এখন তাঁতিরা দ্বিধাবিভক্ত। মহাজনদের প্রলোভনে পড়ে কিছু তাঁতি ‘শিল্পী’ তকমা খুইয়ে যন্ত্রচালিত তাঁতের সুইচ অপারেটর হয়েছেন। বাকিরা কিছু পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে জনমজুরের কাজ করছেন, কিছু হাতের তাঁতই আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন। কিন্তু পেটের ভাতটুকু জোগাড় করতেই এখন প্রাণান্তকর দশা তাঁদের।
হরিপদ বসাক, ফুলিয়া, নদিয়া
বিপজ্জনক
‘পলিয়েস্টার বাংলা’ লেখাটি প্রসঙ্গে এই পত্র। বাঙালি পুরুষ ধুতি, লুঙ্গি, পিরেন, ফতুয়া ভুলে শার্ট, প্যান্ট, বারমুডা প্রভৃতি যে সব কাপড় পরছেন, সেগুলি বড় পুঁজির বড় মেশিনে তৈরি পণ্য। ‘তাঁতের শাড়ি’ নামটি উঠে গিয়ে ‘হ্যান্ডলুম শাড়ি’ চালু হয়েছে, যার মধ্যে অনেকটা সিন্থেটিক সুতো মেশানো, যা জ্যালজেলে। গড়িয়াহাট, শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি হাট থেকে অনলাইন, সর্বত্র ‘হ্যান্ডলুম’ বলে তার ব্যবসা চলছে। অথচ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সব শাড়ি যন্ত্রচালিত তাঁত বা র্যাপিয়ার মেশিনে তৈরি। সরকার যদি বাংলার তাঁতের উন্নয়ন চাইত, তবে এ ভাবে যন্ত্রচালিত তাঁত কেনায় উৎসাহ দিত না। পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য চালের বস্তা তৈরিতে পাটের ব্যবহার যদি বাধ্যতামূলক করা যায়, তবে সরকার কেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের, আর আশাকর্মীদের পলিয়েস্টার পরতে বাধ্য করবে? গরমকালে এই পলিয়েস্টার পরে থাকা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তা ছাড়া পলিয়েস্টার সহজদাহ্য। স্কুলের পোশাকের পলিয়েস্টার মেশানো সুতো সরবরাহ করে তন্তুজ, যা কিনা সরকারি উদ্যোগে তৈরি তাঁতিদের সমবায়। এর থেকে আক্ষেপজনক আর কিছুই হতে পারে না।
জাহানারা আলমকান্দি, মুর্শিদাবাদ
সংশোধন
স্বাতী ভট্টাচার্যের লেখাটি পড়ে তাঁতিদের জন্য কষ্ট পেলাম। কষ্টটা নিজের জন্যও, কারণ আমি বিশুদ্ধ তাঁতের শাড়ি ভালবাসি। একটা সংশোধনী আছে। বাংলাদেশের সংগঠনটির নাম উবিগীত নয়, উবিনীগ। পুরো নাম উন্নয়ন বিকল্পের নীতি-নির্ধারণী গবেষণা।
ঊর্মি রহমান, কলকাতা-৬৮
সঠিক নাম
প্রদীপকুমার দাসের চিঠিতে (চিকিৎসার চাবিকাঠি, ২৯-৪) উনি বেশ কিছু মূল্যবান তথ্য দিয়েছেন। আমি দু’টি ভুলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ডাক্তার-শিক্ষক শীতল ঘোষের নাম সুবিদিত। প্রদীপবাবু ওঁর পদবি ‘সরকার’ লিখেছেন। দ্বিতীয়ত, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র হিসাবে জানি, ডাক্তার-শিক্ষক জে সি ঘোষ-এর পুরো নাম জ্যোতিষ চন্দ্র ঘোষ, জ্যোতিষ রঞ্জন নয়।
অসীমকুমার পালিত, কলকাতা-৭৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy