E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: চিকিৎসার চাবিকাঠি

আমাদের সময়ে দেখেছি চিকিৎসক অশোক চৌধুরী কিংবা অবনী রায়চৌধুরীর মতো শিক্ষকদের গভীর রাত পর্যন্ত রোগীদের দেখা ও সেই সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর মাধ্যমে ক্লিনিক্যাল আই তৈরি করে দেওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা।

doctor.

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪২
Share
Save

শ্যামল চক্রবর্তীর “হারিয়ে যাচ্ছে ‘ডাক্তারি চোখ’” (১৭-৪) খুবই সময়োপযোগী ও বাস্তবধর্মী বিশ্লেষণ। ডাক্তারি পড়ুয়া হিসাবে আমরা যে শিক্ষক মহাশয়দের পেয়েছিলাম, যেমন জ্যোৎস্না রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, অবনী রায়চৌধুরী, অশোক চৌধুরী, শীতল চন্দ্র সরকার, মঞ্জুশ্রী মিত্র প্রমুখ, তাঁরা সব সময় শিক্ষাদান কালে ওয়র্ডে বেডসাইড ক্লিনিকের উপর জোর দিতেন। হাতেনাতে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করার উপর জোর দিতেন। ওই সময়ে ল্যাবরেটরি টেস্ট যে হত না, এমন নয়। তবে সেটা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পরে নিশ্চিত হওয়ার জন্য (কনফার্মেটরি টেস্ট) হিসাবে গণ্য করা হত। আমাদের মনে আছে, এক বার একটি কর্মশালায় জনৈক রোগীর রোগ নির্ণয়ে যখন কথোপকথন চলছে, তাঁর হৃৎপিণ্ডের জটিল অসুখ নির্ণয়ে একোকার্ডিয়োগ্রাফি করার কথা, সেই সময়ে ওই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন এনআরএস-এর বিশিষ্ট হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ জ্যোতিষ রঞ্জন ঘোষ। তিনি শুধু তাঁর স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে রোগীকে প্রায় দশ মিনিট ধরে দেখে বলেছিলেন একটি জটিল হৃদ্‌রোগের কথা। পরে একোকার্ডিয়োগ্রাফি করে তাঁর সিদ্ধান্ত ঠিক বলে দেখা যায়। এমনই ছিল সেই সময়ের শিক্ষক-চিকিৎসকদের ‘ক্লিনিক্যাল আই’।

আমাদের সময়ে দেখেছি চিকিৎসক অশোক চৌধুরী কিংবা অবনী রায়চৌধুরীর মতো শিক্ষকদের গভীর রাত পর্যন্ত রোগীদের দেখা ও সেই সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর মাধ্যমে ক্লিনিক্যাল আই তৈরি করে দেওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা। আজকাল আর তেমন খুব একটা দেখা যায় না। সময় বদলেছে। সেই সঙ্গে বদলেছে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিকতা। আমাদের সময়ে শিক্ষকরা বলতেন, “ওয়র্ডে পড়ে থাকো। সব শিখতে পারবে। যা কিছু ভুলভ্রান্তি এখানে করে নাও। শোধরানোর সুযোগ পাবে। এখান থেকে বেরিয়ে গেলে বিশাল কর্মজগতে দেখবে তুমি একা। পাশে কেউ নেই। তখন ভুল করলে তোমাকেই তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। সেই ভুলটা যাতে না হয় এখানে থেকেই সেটা শোধরাতে হবে।” তাঁদের শেখানো পথেই পার হয়ে এসেছি কর্মজীবনের দুই-তৃতীয়াংশ পথ। ‘ক্লিনিক্যাল আই’ আমাদের অস্ত্র। প্রয়োজনে আধুনিক পরীক্ষার সাহায্য যে নিতে হয় না, এমনটা নয়। তবে লক্ষ্য থাকে, যতটুকু দরকার ততটুকুই। তাই চিকিৎসাশাস্ত্রে ‘ক্লিনিক্যাল আই’-এর গুরুত্ব কখনও খর্ব হবে বলে মনে হয় না। বর্তমান শিক্ষক-চিকিৎসকদের সেই পথেই চলে উত্তরসূরিদের তৈরি করা দরকার।

প্রদীপকুমার দাসসভাপতি, আইএমএ, শ্রীরামপুর

এত পরীক্ষা?

“হারিয়ে যাচ্ছে ‘ডাক্তারি চোখ’” প্রবন্ধটি পড়ে পুরনো অনেক কথা ছবির মতো ভেসে উঠল। আমাদের গ্রামে যে হেলথ সেন্টার ছিল (বর্তমানে তা গ্রামীণ হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে), সেখানে ডাক্তারবাবুর পিছনে একটা বড় গামলা, আর তাতে চামচের মতো একটা জিনিস থাকত। আমাদের হাঁ করতে বলে ওই চামচের মতো জিনিসটা দিয়ে জিভটা চেপে ধরে পরীক্ষা করতেন। তার পর চোখের নীচটা টেনে ধরে, পেটের বাঁ দিক, ডান দিক টিপে টিপে পরীক্ষা করতেন। স্টেথোস্কোপ দিয়ে বুক-পিঠ দেখতেন। তার পর ওষুধের প্রেসক্রিপশন, সঙ্গে থানকুনি পাতার রস, কুলেখাড়া পাতার রস, ভেজানো কাঁচা ছোলা খাওয়ার পরামর্শ। কী অপূর্ব ছিল ডাক্তারি চোখ, বা পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা।

গ্রামে আর এক ডাক্তারবাবু ছিলেন। আমার বাবাকে খুব স্নেহ করতেন তিনি। বাবার খুব শরীর খারাপ। বাড়াবাড়ি অবস্থা। দিনে এক বার এসে ঠিক দেখে যাচ্ছেন বাবাকে। এসেই চুপ করে বাবাকে দশ মিনিট নিরীক্ষণ করতেন, তার পর সমস্যার কথা জানতে চাইতেন।এক দিন এলেন না। আমরা দেখা করতে গেলে বললেন, “আজ রাতে বাবার কাছে জেগে থেকো। আমার যাওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়েছে।” ঠিক সেই দিন রাতেই বাবা ইহলোক ত্যাগ করলেন।

এখনকার ছবি ঠিক উল্টো। বৌদির কাশি কমছে না। ডাক্তারবাবু অনেক টেস্ট লিখে দিলেন— রক্ত, মল, মূত্র, কফ, বুকের এক্স-রে, এন্ডোস্কোপি, ইসিজি। তার পর হজম, কাশি, ঘুমের, প্রেশারের সব মিলিয়ে দশ রকমের ওষুধ দিয়ে বললেন, “আপাতত এই ওষুধ খাবেন। টেস্টগুলো করিয়ে নিয়ে আসুন। তার পর দেখছি।” চার সপ্তাহ পেরোনোর পরে পুনরায় ওষুধ পরিবর্তন, আবার পরীক্ষা। এই ধরনের চিকিৎসা হলে রোগী মনে করেন, ভয়ানক মারণ রোগ হয়েছে তাঁর। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন রোগী, আর তাঁর পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়। তাই সিনিয়র ডাক্তারবাবুদের কাছে অনুরোধ, নতুন প্রজন্মকে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করে চিকিৎসা করার অনুশীলন করান।

তমাল মুখোপাধ্যায়, ডানকুনি, হুগলি

দুই ডাক্তার

“হারিয়ে যাচ্ছে ‘ডাক্তারি চোখ’” প্রসঙ্গে একটি অভিজ্ঞতা। গত বছর আমার বাঁ পায়ে একটি কালো দাগ হয়, এবং দ্রুত সেটি ছড়াতে থাকে। আমি স্থানীয় এক নামী চর্ম চিকিৎসকের কাছে যাই। তিনি দূর থেকে টর্চ দিয়ে দেখেন এবং বলেন যে, এটি চামড়ার ক্যানসার। তিনি আমাকে বায়প্সি করানোর নির্দেশ দেন। আমি এর পর বারাসতের এক চর্ম চিকিৎসকের কাছে যাই। তিনি টর্চটি আমার হাতে দিয়ে আক্রান্ত অংশটি স্পর্শ করে বলেন, এটি ড্রাই এগজ়িমা। ২০ দিনের ওষুধ দেন। তার মধ্যেই রোগ সম্পূর্ণ সেরে যায়।

সমীর চক্রবর্তী, কলকাতা-১১৮

ধারাভাষ্য

‘পুস্তক পরিচয়’ (২৫-৩) বিভাগে পঙ্কজ সাহার বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: আমার ব্যক্তিগত স্মৃতি বইটি নিয়ে আলোচনায় পড়লাম, ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডে শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর সভায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে ধারাভাষ্যের অভিজ্ঞতাও লিখেছেন লেখক। সন্দেহ হচ্ছে, এই বিষয়ে পঙ্কজবাবুর স্মৃতি তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

আকাশবাণীর তথ্যভান্ডারে খোঁজ করলেই জানা যাবে, সে দিন আকাশবাণী থেকে বাংলায় ধারাভাষ্য দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছিল তৎকালীন সুপরিচিত সংবাদপাঠক বিভূতি দাস, জনপ্রিয় ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার অজয় বসু ও বর্তমান পত্রলেখকের উপর। ইংরেজিতে ধারাভাষ্য দিয়েছিলেন স্টেটসম্যান পত্রিকার সুনন্দ দত্তরায় ও আকাশবাণীর বরুণ হালদার। অজয়বাবু ও আমি দু’জনেই তখন যুগান্তর দৈনিকের সঙ্গে যুক্ত।

দুপুরে ব্রিগেডে সভার আগে সকালে দমদম বিমানবন্দরে মুজিবকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন ইন্দিরা। সেই অভ্যর্থনার ধারাবিবরণও আমরাই দিয়েছিলাম। মনে আছে, ঢাকা থেকে মুজিবের বিমান এসে পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। সেই সময়টুকু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবের ভূমিকা ও অন্যান্য কিছু খুঁটিনাটি তথ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছিল।

ওই বছরই জানুয়ারিতে মুজিব যখন লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন, তখনই সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় (তখন রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত) চেষ্টা করেছিলেন মুজিব যাতে কলকাতায় কিছু ক্ষণের জন্য থামেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। পরে ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখটি স্থির হয়। মুজিবের সফর নিয়ে আমি সেই সব দিনরাত্রি যুগান্তর এবং আরও কিছু বইয়ে (২০১৯, প্রকাশক ‘সহজপাঠ’) বিস্তারিত লিখেছি। আমাদের পাশাপাশি সে দিন আকাশবাণী থেকে অপর একটি সমান্তরাল ধারাবিবরণ প্রচারিত হয়েছিল, এমন কথা তো শুনিনি। আকাশবাণীর সংগ্রহশালায় সেই ঐতিহাসিক সভার রেকর্ডিং অবশ্যই থাকার কথা।

দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০৬

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Doctors Medical Science

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।