Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Bantul The Great

সম্পাদক সমীপেষু: সেই রংচঙে দুষ্টুমির স্বাদ

নারায়ণ দেবনাথ শুধু লেখায় নয়, রেখাতেও এদের অবয়ব আমাদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৫১
Share: Save:

গত শতাব্দীর ষাট, সত্তর, আশির দশকের শিশু, কিশোরদের কাছে পড়াশোনার পর সময় কাটানোর জন্য ভাইবোনের সঙ্গে খেলাধুলো, কিংবা সন্ধের পরে টিমটিমে আলোয় দল বেঁধে বসে গল্প শোনা ছাড়াও আরও একটা-দুটো কাজ ছিল। শুকতারা, কিশোর ভারতী, সন্দেশ: অজস্র পত্রিকার মধ্যে ডুব দেওয়া। হয়তো আজকের পত্রিকার মতো তারা রংচঙে ছিল না, কিন্তু ভাল সাহিত্যিকদের লেখার রঙে ঠাসা থাকত।

মনে পড়ে, দেব সাহিত্য কুটীরের শুকতারা হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রচ্ছদের পাতা উল্টে এক নিশ্বাসে বাঁটুল দি গ্রেটের অবিশ্বাস্য কাণ্ড, হাঁদা ভোঁদা-র শয়তানি গোগ্রাসে গেলা। ক’দিন পরে তাতে যোগ হল বাহাদুর বেড়াল। বাঁটুলের সঙ্গে থাকা বাচ্চু-বিচ্ছু কখনও বাঁটুলের অনুগামী, আবার কখনও বা বাঁটুলের ভীষণ শত্রু— ঠিক আমাদের ছোটবেলার সম্পর্কগুলোর মতোই। সিড়িঙ্গে চতুর হাঁদা আর মোটকু বোকাসোকা ভোঁদা একই ক্লাসে পড়া দুই ভাই, দু’জন যেন দু’জনকে পাল্লা দিয়ে বিপদে ফেলতে ব্যস্ত। পিসির বাড়িতে পিসেমশাইয়ের প্রবল অভিভাবকত্বে থেকেও সারাক্ষণ তারা দুষ্টুমি করে বেড়ায়, ধরা পড়ে, মার খায়, আহত হয়, আবার সব ভুলে পরের সংখ্যাতেই প্রবল শয়তানি নিয়ে ফিরে আসে। প্রসঙ্গত, আজ পর্যন্ত কোনও ছেলেকে পিসেমশাইয়ের হাতে বেদম পিটুনি খেতে দেখা তো দূরের কথা, শুনিনি পর্যন্ত! কিন্তু হাঁদা ভোঁদা খেত।

এদের থেকে সামান্য বড় নন্টে ফন্টে। হরিহর আত্মা, হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। সিনিয়র কেল্টুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও শেষে কেল্টুকে প্রতি বার ঠিক ঘায়েল করে। এই সব চরিত্র যেন আমাদের শৈশব, কৈশোরের গন্ধমাখা। এমনকি বড়বেলাতেও নিমেষে আমাদের ছোটবেলা ফিরিয়ে দিতে পারে এরা। আমাদের নিজেদের অপূর্ণ দুষ্টুমির ইচ্ছে এরা পূরণ করে দিতে পারে।

নারায়ণ দেবনাথ শুধু লেখায় নয়, রেখাতেও এদের অবয়ব আমাদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। কমিকস-এর ঐতিহ্যহীন বাংলা ভাষায় চিত্রসাহিত্যের এক নতুন ভাষ্য তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে নামীদামি সব কমিকসের তুল্যমূল্য সৃষ্টি ওঁর হাত দিয়ে বেরিয়ে এল। গল্প, ছবি পুরোটাই মিলে একটা গোটা পৃথিবী ওঁর হাতে তৈরি হল।

বাঁটুল, হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টের জয়যাত্রা থেমেছে অনেক দিন। নারায়ণবাবু চাইতেন না, অন্য কেউ ওঁর সৃষ্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাক। তা ছাড়া আমাদের পরের প্রজন্মও ওই সব দুষ্টুমি-সংস্কৃতির গণ্ডি ছাড়িয়ে চলে এসেছে অনেক দূর।

নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণ মনে করিয়ে দিল— কত রকম অর্থে সেই বাঙালি শৈশবে যবনিকা পড়েছে।

পার্থ নন্দী, শেওড়াফুলি, হুগলি

পরিত্রাণ কই

শাসক যখন পীড়ক অত্যাচারীর ভূমিকা নেয়, তখন প্রথমেই দেশের মানুষের হয়ে কথা-বলা সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের উপর খড়্গকৃপাণ নেমে আসে (‘একে সাংবাদিক, তায় সংখ্যালঘু’, ১০-১)। বাংলাদেশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় এসে প্রথমেই ‘ঢাকা বেতার’-এর দখল নেয় ও খুঁজে খুঁজে সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীদের খুন করে। আমাদের দেশে ইন্দিরা গান্ধী সরকার অনেক ভাল কাজ করে থাকলেও ইমার্জেন্সির সময়ে ইন্দিরা একাদশী বইয়ের লেখক, সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্ত-সহ আরও অন্য সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীদের কারারুদ্ধ করেছিল, যা ইতিহাসে কালো অধ্যায় বলেই বিবেচিত হয়। আমাদের রাজ্যে ভোটের খবর করতে গিয়ে সাংবাদিককে নিগৃহীত হতে দেখা যায়। তাঁর ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়, কারণ তিনি প্রকৃত সত্যটি তুলে ধরছেন।

কিন্তু সব ছাপিয়ে গিয়েছে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যায় অত্যাচার। শাহিন বাগে গুলি চালানো, গাড়ির নীচে কৃষকদের পিষে মারা, সীমাহীন বেকারত্ব, শিশুদের অপুষ্টির হারে বৃদ্ধি, অত্যাবশ্যক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কর্মকাণ্ড এই শাসকের বৈশিষ্ট্য। লেখক তাঁর এই প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, সাংবাদিকরা যখনই এ সব খবর প্রকাশ করেন, তাঁদের উপরে চরম অত্যাচারের খাঁড়া নেমে আসে। কেরলের সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান হাথরসে দলিত কন্যার গণধর্ষণ ও খুনের খবর করতে গিয়ে গ্রেফতার হন, এবং আজও এই ভগ্নস্বাস্থ্য সাংবাদিককে শুধু এক জেল থেকে অন্য জেলে পাঠানো হচ্ছে। অনেক আবেদন করেও তাঁর স্ত্রী তাঁকে বাইরের ডাক্তার দেখানোর অনুমতি পাচ্ছেন না। চার্জশিটে তাঁর লেখা রিপোর্টকেই তাঁর অপরাধের প্রমাণ হিসাবে দেখানো হয়েছে, যেখানে তিনি সরকারের অনৈতিক কাজের সমালোচনা করেছেন। এই ভাবে অন্য সাংবাদিকদের বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, সত্য প্রকাশ করলে তাঁদেরও এই হাল হবে। এই দুর্বিষহ অবস্থার পরিত্রাণ কোথায়?

শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

দৃষ্টান্ত

দৃষ্টিহীনতার মতো অসুবিধাকে সঙ্গী করে, একই সঙ্গে তাকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে অন্য কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলাটা খুব সহজ কাজ নয়। যাঁরা এগুলো করতে পারেন, তাঁরা সত্যিই এগিয়ে থাকা মানুষ। বি এস ভারতী আন্নার খবর পড়তে পড়তে (‘জেলা সম্পাদক ভারতী, নজির তামিলনাড়ু সিপিএমে’, ১৩-১) আর এক জন দৃষ্টিহীন মানুষের কথা মনে পড়ে গেল। দীপঙ্কর রায় প্রয়াত হয়েছেন বছর বারো আগে, তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না। তাঁর সম্পর্কে শুনেছি বেশি। জ্ঞানবিজ্ঞান, শিল্প, রাজনীতি, সমাজ সম্পর্কে তাঁর সাবলীল আলোচনা এখনও কানে বাজে। অত্যন্ত আত্মনির্ভরশীল ছিলেন। বামফ্রন্ট সরকার প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রাজ্য জুড়ে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার অন্যতম নেতা ছিলেন দীপঙ্করবাবু। সেই আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা ছাত্র সংগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুরে ব্রেল প্রেস গড়ে তোলার অন্যতম কারিগর তিনি। তথাকথিত প্রতিবন্ধী মানসিকতা কাটিয়ে বড় দায়িত্ব নেওয়ার মতো জায়গায় নিজেকে পৌঁছে দেওয়া কঠিন কাজ। বি এস ভারতী বা দীপঙ্করবাবুরা তা পেরেছেন বলেই তাঁরা সমাজের অনেককে অনুপ্রাণিত করেছেন।

সৌমেন সাহু, মহিয়ারি রোড, হাওড়া

বিপজ্জনক

চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে, তবে গৃহস্থ চুরির পরে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অন্য দিকে সরকার-নিয়ন্ত্রিত ধর্মস্থানে দুর্ঘটনা ঘটলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা এবং তদন্ত কমিটি তৈরি করেই সরকার দায়িত্ব সাঙ্গ করে, পরবর্তী দুর্ঘটনা রোধ করার আর ব্যবস্থা করে না। জম্মুর বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড় নতুন কোনও ব্যাপার নয়। যে সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থার কথা এখন বলা হচ্ছে, তা এত দিন গ্রহণ না করে মন্দির কর্তৃপক্ষ ঠিক কাজ করেনি।

জয়ন্ত কুমার দেবনাথ, রানাঘাট, নদিয়া

এখানেও ই‌ংরেজি

সম্প্রতি ভিস্তা ডোম কোচে চড়ার অভিজ্ঞতা হল। ডুয়ার্সের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় এর যাত্রীরা কাচের ভিতর দিয়ে দু’পাশের চা বাগান, জঙ্গলের অপরূপ ছবি দেখতে পান। সামনের দু’পাশের পর্দায় সারা ক্ষণ ভেসে ওঠে ডুয়ার্সের মনোমুগ্ধকর ছবি এবং তার বর্ণনা। পরবর্তী কোন স্টেশন আসছে, তারও ঘোষণা। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এ সবই হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায়। এখানে বাংলার কোনও স্থান নেই। অথচ, এই ট্রেনে ভ্রমণকারী ৯৫ শতাংশই বাংলাভাষী মানুষ। নিয়ম অনুযায়ী, যে রাজ্যের উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে সেই রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষাকে অবশ্যই গুরুত্ব-সহ সব জায়গায় স্থান দিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রেল কেন সে নিয়ম-নীতি মেনে চলছে না, সেটাই অবাক লাগল।

পরিমল চন্দ্র মণ্ডল, সম্পাদক, আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি সমিতি, কল্যাণী শাখা

অন্য বিষয়গুলি:

Bantul The Great Narayan Debnath
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy