ফাইল চিত্র।
‘অধিকার নয়, শুধু কর্তব্য?’ (২৬-১) শীর্ষক প্রেমাংশু চৌধুরীর প্রবন্ধটি প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো দিনে প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ায় তা গভীর তাৎপর্য বহন করে। ৫৬ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৭১-এ লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ায় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যায়, এমন অধিকারকে ফলপ্রসূ করতে বিচার বিভাগকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। স্মরণীয়, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের নিয়োগও ছিল লক্ষ্য। তিন জন প্রধান বিচারপতিকে টপকে তাঁর মনোনীত ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি করা হল। বিষয়টি ছিল কে বড়— সংসদ, না সুপ্রিম কোর্ট। সেই গোলকনাথ মামলার রায় কিন্তু সংসদের পক্ষে যায়নি। তেরো জন বিচারকের রায়ের মধ্যে সাত জনের রায় ছিল সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে। সে দিন তাঁর মনোনীত বিচারকও সংসদের পক্ষে মত দেননি।
আসলে জনগণের ভোটে পুষ্ট হওয়া সরকার ভুলে যায় তার দায়-দায়িত্বের কথা। তারা জনগণের মৌলিক অধিকারে থাবা বসাতে চায়। স্বেচ্ছাচার, আমিত্ব, অহংবোধ বড় হয়ে ওঠে। কিন্তু সংবিধান প্রণেতারা সেই অধিকার ক্ষমতাসীন সরকারকে দেননি। তাঁদের দূরদর্শিতায় বলা হয়েছে, আইন প্রণয়ন বা সংশোধন করা যেতে পারে। তবে সেই আইন কখনও জনগণের মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করবে না। মোদী সরকার সেই সংখ্যাগরিষ্ঠের তকমা দিয়ে ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করতে চায়। এও এক শেষের শুরু!
সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪
ইতিহাস নির্মম
‘অধিকার নয়, শুধুই কর্তব্য?’ প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। আমাদের সংবিধানে আইনসভা এবং বিচারব্যবস্থার মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখার কথা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য, বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধানের মূল কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে দিতে চেয়েছে এবং চাইছে। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ঘটনাবহুল এবং বিতর্কিত সময়। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৬৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, সংবিধানের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার সংসদের নেই। তা সত্ত্বেও শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন জরুরি অবস্থা জারি করেন। নাগপুরের কল্পিত শাসনব্যবস্থাকে ভারতের গণতন্ত্র বলে প্রতিষ্ঠার জন্য আবার নতুন করে বিচারব্যবস্থার স্বাধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দখল নিয়ে ইলেক্টোরাল অটোক্র্যাসি বা নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হচ্ছে। ভারতের বর্তমান শাসকরা নাগরিকদের প্রশ্ন শুনতেও নারাজ। ‘সিলেবাসের বাইরে’ প্রশ্ন করলেই ‘আর্বান নকশাল’ বা ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। প্রবন্ধে সঠিক ভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে কোনও সমস্যার জন্য নেহরুজিকে দায়ী করলেও, নেহরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধীর পথে চলতেই ভালবাসেন। ইতিহাস কিন্তু নির্মম। ইন্দিরা গান্ধীকেও নির্বাচনে পরাজিত হতে হয়েছিল।
শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
রাষ্ট্রের রোষ
প্রেমাংশু চৌধুরীর প্রতিবেদনে সংবিধান স্বীকৃত নাগরিকের অধিকার এবং কর্তব্য নিয়ে কিছু কথা আলোচিত হয়েছে। এখানে সংসদ এবং সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ও তুলে ধরা হয়েছে। সংবিধানের প্রধান উপাদান যে নাগরিকের মৌলিক অধিকার, তাকে কী করে খর্ব করে ক্ষমতাসীন থাকার মেয়াদকে প্রলম্বিত করা যায়, তারই প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ করি সেই ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকে। সেখানেই এসেছে নাগরিকের মৌলিক কর্তব্যের নতুন সংযোজন। মৌলিক অধিকারকে গৌণ করে মৌলিক কর্তব্যকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার সেই ধারা আজও ক্রমবর্ধমান গতিতে এগিয়ে চলেছে। ‘অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’ এখানে গুরুত্ব হারিয়েছে। সরকার তার কর্তব্য করুক না করুক, সরকার যেমন চাইছে জনগণকে সেই মতো তার কর্তব্য করে যেতে হবে। এটাই এখন তথাকথিত গণতন্ত্রের মূল কথা। এটাই বোধ করি বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের প্রকৃত স্বরূপ। রাষ্ট্র এখানে শাসকের হাতে সাধারণ মানুষের উপর শোষণ এবং নিপীড়নের যন্ত্র।
সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান পরিবর্তন করে বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করা বা বিরোধী শক্তিকে শায়েস্তা করার চেষ্টা বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের কাছে বড় অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাধা হিসাবে কাজ করে যে বিচারব্যবস্থা, সেই বিচারব্যবস্থাকে নিজেদের পক্ষপুটে আনার প্রচেষ্টাও সে কারণে অব্যাহত। বিচারপতি নিয়োগের বর্তমান ব্যবস্থা সংসদ মেনে নিতে পারছে না। এই ব্যবস্থায় তারা নিজেদের পছন্দের বিচারপতিদের বসাতে পারছে না। এখানে সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের প্রবীণতম বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত কলেজিয়ামের হাতে বিচারপতি নিয়োগের দায়িত্ব। সেই কারণে বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি থেকে আইনমন্ত্রী সবাই চাইছেন এই ব্যবস্থার পরিবর্তন। তাঁদের মতে, মানুষই ভোট দিয়ে কোনও সরকারকে ক্ষমতায় আনে। তাই সংসদই বিচারপতি নিয়োগ করবে। অথচ, দিনের পর দিন নির্বাচনে অর্থ ও হিংসার অবাধ প্রয়োগ চলছে। আজ ওই কলেজিয়ামের পরিবর্তনে যদি সংসদের হাতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা চলে আসে, বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ চলে আসে, তা হলে ‘আর্বান নকশাল’, ‘আন্দোলনজীবী’ ইত্যাদি রকমারি তকমা ছাড়াই বিরোধী কণ্ঠস্বর বা বিরোধীদের কার্যকলাপকে স্তব্ধ করে দিতে বেশি বেগ পেতে হবে না সরকারকে। এমনিতেই বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী, সমাজ কর্মী, মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী, বিভিন্ন বর্গের নাগরিক রাষ্ট্রীয় রোষের কবলে। এর পর বিচারব্যবস্থার উপর শাসকদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে এলে গণতন্ত্রের যেটুকু বনিয়াদ অবশিষ্ট আছে, তাও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে।
গৌরীশঙ্কর দাস, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
জোশীমঠ
‘এসে ভেসে যায়’ (১৪-১) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। জোশীমঠ শহরটি তৈরি হয়েছে বহু বছর আগে ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপের উপর। ফলে প্রথম থেকেই এই শহরের ভিত নড়বড়ে। তার উপর নদীগুলিতে বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে জলাধার। অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা নিকাশিব্যবস্থা এই বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করেছে। ২০১৩ সালের বিপর্যয়ে নেমে আসা কাদা-মাটি জোশীমঠের নালা-নর্দমায় জমে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, জোশীমঠে কোনও বর্জ্য জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ফলে পাহাড়ের ধার বেয়ে জল চুইয়ে নামায় তা ভূমিধসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের আগে সঠিক সমীক্ষা না করায় হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চল আজ বিপদের সম্মুখীন। বছর দুয়েক আগেই ভূবিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য একের পর এক ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। চার ধামকে এক করতে পাহাড় কেটে শুরু হয়েছে হাইওয়ে তৈরির কাজ। প্রকৃতির উপর এই অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের কারণেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে জোশীমঠ।
রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy