—ফাইল চিত্র।
২০১৩ সালে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কামদুনিতে দ্বিতীয় বর্ষের কলেজছাত্রী বাড়ি ফেরার পথে অপহৃত হয়। সাত-আট জন মিলে একটা ফাঁকা কারখানায় নিয়ে গিয়ে তাকে গণধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করে। পরের দিন থেকে গোটা কামদুনি-সহ আশপাশের এলাকার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিবাদে নামেন। এই ঘটনায় বাংলা-সহ গোটা দেশের রাজনীতি তোলপাড় হয়, যদিও শাসক দল প্রথম দিকে ঘটনাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সারা বাংলাতেই দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ চলতে থাকে। পুলিশ মূল অভিযুক্ত-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করে। বাংলার প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী কামদুনি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে চাকরি, ক্ষতিপূরণ-সহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেন। গ্রামবাসীদের আশ্বাস দেন ১৫ দিনের মধ্যে চার্জ গঠন হবে ও এক মাসের মধ্যে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হবে। সে দিন কামদুনি-সহ গোটা বাংলার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বিশ্বাস করেছিলেন। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বারাসতের নিম্ন আদালত ছ’জন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে। তিন জনের ফাঁসি ও তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়। কিন্তু অভিযুক্তরা এই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে যায়।
আইনের চোখে কালো কাপড় বাঁধা। তাই সুবিচার পেতে তথ্য, সাক্ষ্য, প্রমাণ— সব ঠিকঠাক থাকতে হয়। কিন্তু তথ্যপ্রমাণ যখন টাকায় বিক্রি হয়, তখন সুবিচার পাওয়া কঠিন। এই ঘটনার প্রধান সাক্ষীকে খুন হতে হয়। সিআইডি তথ্য, প্রমাণ, সাক্ষ্য সবই হাই কোর্টে লঘু করে দেখাতে থাকে। সরকারি উকিল বার বার পরিবর্তন করা হয়। ফলে যা হওয়ার তা-ই হল। আদালতে উপযুক্ত সাক্ষ্য, প্রমাণের অভাবে ফাঁসির আদেশ বাতিল হল। আনসার আলি-সহ দু’জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে। বাকি অভিযুক্তরা জামিনে ছাড়া পাচ্ছে।
আর এখানেই নতুন করে কামদুনির ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদীদের ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। টুম্পা, মৌসুমী-সহ যে নারীরা সে দিন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছিলেন, আজও তাঁরা আবার সুবিচারের জন্য রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। পুলিশ ও সিআইডি-র অদক্ষতার জন্য আজ অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। আবার তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে নতুন কোনও মেয়ের সর্বনাশ করতে। নির্ভয়া সুবিচার পেলেও কামদুনির মেয়েটি সুবিচার পেল না। যারা তাকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল, তারাও বোধ হয় ভোটব্যাঙ্কের ভয়ে মত পরিবর্তন করল।
সর্বোচ্চ আদালত অবশ্য হাই কোর্টের রায়ে যারা মুক্তি পেয়েছে, সেই ‘মুক্তি’র নির্দেশে কিছু শর্ত আরোপ করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিহত মেয়েটির পরিবার সুবিচার আদৌ পেল কি না, ভবিষ্যৎই তার জবাব দেবে।
চিত্তরঞ্জন মান্না, গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর
বিপন্ন নারী
দশ বছর পর উচ্চ আদালতের এক রায়ে নৃশংস কামদুনি হত্যাকাণ্ডের হতাশ পরিণতি রাজ্যবাসী প্রত্যক্ষ করলেন। প্রশ্ন উঠেছে, নিম্ন আদালত যেখানে অপরাধীদের ফাঁসি ও যাবজ্জীবন জেলের সাজা ঘোষণা করেছিল, দশ বছর পর সেই সাজা উচ্চ আদালতে গিয়ে লঘু হয়ে যায় কী করে? এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কামদুনি ঘটনার পরই এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, পনেরো দিনের মধ্যে চার্জশিট এবং এক মাসের মধ্যে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যে দশটি বছর পেরিয়ে গেছে। সেই হতভাগ্য কলেজছাত্রীর পরিবার সুবিচারের আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই বিবৃতি তো কোনও কাজে এল না।
আজ প্রতি দিন রাজ্যের কোথাও না কোথাও নারীদের ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সংবেদনশীলতার পরিবর্তে নিরাপত্তাহীনতা ও অসহযোগিতা এ রাজ্যে নারীদের ক্রমশ গ্রাস করছে। এই বিভীষিকা এবং নৈরাজ্য থেকে কবে মুক্তি পাব আমরা? মালদহের রতুয়া থানার এক নাবালিকা দীর্ঘ ছ’মাস নিখোঁজ থাকার পর, রাজ্য মহিলা কমিশনে পর পর তিন বার অভিযোগ করা হয়েছিল। অবশেষে জেলা প্রশাসন সেই নাবালিকাকে গুজরাতের সুরাট থেকে উদ্ধার করে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার হোম-এ রেখেছে। আমাদের রাজ্যে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা এই মহিলা নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা সম্প্রতি সংসদের উভয় সভায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ বিল পাশ করার মতো গর্বের বিষয়কে কি ম্লান করে দেবে না? স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ভারতের পুনর্জাগরণের একমাত্র উপায়— নারীজাগরণ এবং দারিদ্র থেকে মুক্তি। আজ সেই নারীরাই অসহায় অবস্থায় ন্যায়বিচারের আশায় সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে এখন কেবল মহিলাদের নিরাপত্তাই অ-সুরক্ষিত নয়, জাল নোট, পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি থেকে বেআইনি বোমা ও অস্ত্র তৈরির কারখানা দেশের কাছে রাজ্যের ভাবমূর্তিকে ক্রমশ কলঙ্কিত করে চলেছে। রাজ্যের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনগণ ও বিচারব্যবস্থার যথার্থ পদক্ষেপই একমাত্র ভরসা বলে মনে করি।
তরুণ কুমার পণ্ডিত, কাঞ্চন তার, মালদহ
চলুক লড়াই
কামদুনি কাণ্ডে নিম্ন আদালতে কঠিন সাজাপ্রাপ্ত আসামী বা অপরাধীরা যে উচ্চ আদালতে লঘু সাজা পেয়েছেন এবং তা যে শুধুমাত্র পুলিশ ও সিআইডি-র সৌজন্যে তথা বদান্যতায়, এ কথা আজ শুধু কামদুনি নয়, রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষই জানেন। তাঁরা নির্যাতিতার পরিবার-সহ কামদুনির মতো এই লঘু সাজায় অখুশি এবং ক্ষিপ্ত। আদালতের রায়ে এক জন ফাঁসির আসামী বেকসুর খালাস পেয়েছে, বাকি দু’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। আর বাকি তিন জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামীর সাত বছরের জেল হয়েছে। যে-হেতু তারা ইতিমধ্যেই দশ বছর ধরে জেলে বন্দি, অতএব তারা ছাড়া পাবে।
কামদুনির নিহত ছাত্রীর পরিবার ওই দিনই জানিয়েছিল যে, এই আসামীদের ছেড়ে দিলে এরা ছাড়া পেয়ে আবার একই অপরাধ করতে পারে বা করবে। নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের উপর আক্রমণ করতে পারে। কামদুনি সুবিচার চায়। তাই তারা লড়াই জারি রেখেছে। বিজেপি দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যেই কামদুনিতে দাঁড়িয়ে হুঙ্কার দিয়েছেন যে, তাঁরা নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের পাশে আছেন এবং এই মামলা বা বিচারের শেষ দেখে ছাড়বেন। তিনি ঠিক কথাই বলেছেন। বাম ও কংগ্রেসেরও উচিত, এই পরিস্থিতিতে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়ানো এবং সুবিচার পেতে সব রকম সাহায্য করা। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের কামদুনির নিহত ছাত্রীর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ, দীর্ঘ দিন এই লড়াই চালিয়ে নিয়ে যাওয়া অর্থনৈতিক ভাবেও কঠিন। কামদুনিকে এই বিশেষ ও বিশাল লড়াই নিজেদেরই লড়তে হবে এবং আর্থিক ভাবেও সক্ষম হতে হবে। তবে তাঁরা আর্থিক সাহায্যের জন্য জনগণের কাছে আবেদন করতে পারেন, যতটা সাহায্য পাওয়া যায়। যে ভাবেই হোক, লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, হার মানা যাবে না। পরিশেষে প্রার্থনা করি, সত্যের জয় হোক, কামদুনি সুবিচার পাক। অপরাধীরা কঠিন ও সর্বোচ্চ শাস্তি পাক। ন্যায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক। কামদুনির লড়াকু সৈনিকদের আগাম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
অটো বন্ধ
এ বার পুজোয় চতুর্থীর সন্ধে থেকেই দক্ষিণ কলকাতার একাধিক জায়গায় অটো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে, আমাদের মতো অফিসফেরত যাত্রীদের খুব অসুবিধায় পড়তে হয়। আগামী বছর প্রশাসন এ ব্যাপারে একটু ভাবনাচিন্তা করলে ভাল হয়।
সমর শিকদার, কলকাতা-৩৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy