সম্ভবত খননের সময় গঙ্গাজলের হাইড্র্যান্ট বা তার ভূগর্ভস্থ পাইপ ফুটো করে বিপদ ঘটিয়েছেন মেট্রোর শ্রমিকরা। ফাইল চিত্র।
যথারীতি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বর্ষা বিরতির পরে কাজ আরম্ভ করেই চূড়ান্ত অপদার্থতা ও ইঞ্জিনিয়ারিং অদক্ষতার প্রদর্শন করে বহু পরিবারের সর্বনাশ করেছেন। বলা হচ্ছে, আপৎকালীন নির্গমন পথের ভূগর্ভস্থ ধাপগুলি তৈরির জন্য খননকার্যের সময় বেগে জল বার হতে থাকে। তা দ্রুত সুড়ঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী ক্ষেত্রকে প্লাবিত করার ফলে মাটি গলে যাওয়ায় কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একটি মত হল, গঙ্গার জোয়ারের সময় জলের চাপ বৃদ্ধি হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। বৌবাজারের সঙ্গে গঙ্গার জলের সংযোগ আছে। সাধারণ মানুষের এখনও মনে থাকার কথা, কয়েক মাস আগে দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেনে দুর্ঘটনার সময়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল ওই স্থানে ‘অ্যাকুইফার’ নামক ভূগর্ভে জলের স্বাভাবিক উৎসের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সম্ভবত খননের সময় গঙ্গাজলের হাইড্র্যান্ট বা তার ভূগর্ভস্থ পাইপ ফুটো করে বিপদ ঘটিয়েছেন মেট্রোর শ্রমিকরা। সকলেই জানেন, কলকাতায় রাস্তা ধোয়ার জন্য হাইড্র্যান্ট ছিল। তার কিছু কল এখনও আছে, পাইপের জালমালা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। মল্লিকঘাটের পাম্পিং স্টেশনটিও চালু থাকতে পারে। এই সব পাইপলাইন ব্রিটিশ শাসনকালে নির্মিত হয়েছিল এবং তার বিস্তারিত ম্যাপ ও নকশা পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে ছিল। মেট্রো কর্তৃপক্ষ তা সংগ্রহ করে সেই নকশা অনুযায়ী উপযুক্ত পরিকল্পনা করে খননকাজ শুরু করেছিল বলে মনে হয় না। সম্ভবত, কোনও উচ্চপদস্থ ইঞ্জিনিয়ারও খননকালে ওই স্থানে ছিলেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, মেট্রোর কাজ চলার সময় পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার থাকেন না।
আর একটি কথা হল, কলকাতার মতো নিচু ভূস্তরের অঞ্চলে চার-পাঁচ ফুট নীচেই জল চুইয়ে আসে। ভগ্নস্তূপ ও বোজানো জলাভূমির উপর শহর গড়া হয়েছে। তাই ঘনবসতি অঞ্চলে অধিকতর গভীরতায় যেতে হলে পাম্প এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ‘ওয়েল পয়েন্ট’ নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু রেখে কাজ করা হয়। বর্ষার ঠিক পরে ঝুঁকি আরও বেশি। তাই এটা অতি প্রয়োজনীয়। দ্বিতীয়ত, ভূগর্ভে সর্বত্র বহু ধরনের যন্ত্রপাতি বসানো থাকতে পারে। তাই সতর্কতার সঙ্গে খনন করা আবশ্যক। তা করা হয়েছে বলে মনে হয় না। মেট্রো কর্তৃপক্ষ এগুলি ঠিকাদারের দায় মনে করেন। আর, ঠিকাদার মনে করেন এগুলি সাব-কন্ট্র্যাক্টরের দায়।
ব্যাপারটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করা এবং দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ কবে শেষ হবে, সেই বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ভাবে কিছু জানা যাচ্ছে না। হাওড়া-শিয়ালদহ সরল পথকে জটিল করে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরত্ব ও সময়ের অপচয় বাড়িয়ে কাজ চলছে।
আধুনিক প্রযুক্তির ঠিকমতো ব্যবহার না করার বহু উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে এ দেশে। অথচ, উন্নতির প্রধান শর্ত উন্নত গুণমান। এই সব ঘটনা মোটেই জনসাধারণের উৎসাহ বাড়ায় না। বরং, আমাদের চিরাচরিত ‘চলছে-চলবে’র বার্তাই প্রচার করে। বিবেকানন্দ ফ্লাইওভারে কোনও ইঞ্জিনিয়ারের উপস্থিতি ছাড়াই রাতের পর রাত ঢালাই করা হয়েছে। তা-ও তাঁরা ক্লিনচিট পেয়েছেন। দশ বছর কেটে যাওয়ার পরও সেটি কবে হবে, কেউ জানে না। প্রকল্পটি পাঁচ দশকের পুরনো। প্রাতিষ্ঠানিক অপদার্থতাই আজ আমাদের ‘প্রধান সম্পদ’।
তুষারকান্তি চৌধুরী, উত্তরপাড়া, হুগলি
বাতিল হোক
শিয়ালদহ-হাওড়া মেট্রো সংযোগের পথ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অঞ্চলের কয়েকটি পরিবারের স্বার্থে নিয়েছিলেন। এতে অন্যায় কিছু নেই। কিন্তু পরিকল্পনা রূপায়ণে যে গুরুতর বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকতে পারে, সেই কারিগরি অনুসন্ধান তথা বিশ্লেষণ সর্বাগ্রে হওয়া প্রয়োজন। কারণ, মধ্য কলকাতার এই অঞ্চলের মাটির তলায় বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় জলভান্ডার থাকার সম্ভাবনা বেশি। এই ব্যাপারে শহরের ভূগর্ভস্থ জলস্তর সংক্রান্ত সব সমীক্ষা, তথ্য এবং রেল ও বাইরের বিশেষজ্ঞদের অভিমত নিয়ে তবেই কাজ শুরু হয়েছে, এটাই আশা করা যায়। যদি তা না হয়ে থাকে, তা হলে প্রথম বা দ্বিতীয় বিপর্যয়ের পরেও কেন পরিকল্পনা বাতিল করে দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারগুলির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হল না, সে প্রশ্নটি বিস্ময়ের উদ্রেক ঘটায়। এর প্রতিকারের জন্য হাই কোর্টে মামলা হওয়া দরকার।
বৌবাজার এলাকার বহু পরিবার, এবং ছোট-বড় অসংখ্য ব্যবসায়ীর দুর্ভোগ মাথায় রেখে বিপিন বিহারী স্ট্রিটে মেট্রোপথের পরিকল্পনা বাতিল করা হোক।
অশোক কুমার ঘোষ, কলকাতা-১২
করের ফাঁদে
আশীষ কুমার রায়ের চিঠির (‘আয়করের পরিধি’, ১৪-১০) বক্তব্যের অংশবিশেষের থেকে ভিন্নমত পোষণে এই পত্র। পত্রলেখক আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের তুলনায় এ দেশে আয়করদাতার সংখ্যার বিপুল বৈপরীত্যের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ওই সব দেশে মন্ত্রী-বিচারক-আমলাদের কর প্রত্যক্ষ ভাবে উৎসমূলে কাটার ব্যবস্থা থাকলেও, ভারতে সমপদাধিকারীরা উল্লিখিত বন্ধন থেকে মুক্ত। বাস্তবে এ দেশে কেবল উল্লিখিত পদাধিকারীরাই নন, অন্যান্য উচ্চ পদাধিকারীদের ক্ষেত্রে, এমনকি পেনশনভোগীদেরও, প্রতি মাসের পেনশন থেকে এক বিশেষ শতাংশ কর হিসেবে কাটা হয়। এমনকি যাঁদের আয় করযোগ্য নয়, তাঁদেরও মেয়াদি জমার ত্রৈমাসিক সুদের উপরে উৎসমূলে কর কাটা হয় ১৫জি ফর্ম দাখিল করা সত্ত্বেও, যা ফেরত পেতে রিটার্ন দাখিল করে অপেক্ষা করতে হয়।
এর পরেও আছে বিভিন্ন ডিডিও অফিসের তরফে গাফিলতি বা ভুল। যার জন্য উৎসমূলে কর কাটার পর তা জমা করা সংক্রান্ত নথিপত্র আয়কর দফতরে না পাঠানোয়, বা ভুল ভাবে পাঠানোয়, আয়কর দফতরের সংশ্লিষ্ট রেকর্ডে (২৬এএস) সে তথ্য নথিভুক্ত হয় না। তাই যথার্থ কর দিয়ে, কিংবা ভুলবশত অতিরিক্ত কর জমা পড়লেও, তা ফেরতের জন্য সংশ্লিষ্ট আয়কর দাতাকে বছরের পর বছর হয়রানি ভোগ করতে হয়। এক দশক পার হয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট ডিডিও-র বিরুদ্ধে আয়কর দফতর কোনও পদক্ষেপ তো করেই না, বরং প্রদেয় কর যথাসময়ে দেওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট আয়কর দাতার উপরই সমস্ত দায় চাপিয়ে দেয়। বারংবার গ্রিভান্স সেলে অভিযোগ জানানোর পরও অতিরিক্ত কর ফেরত দেওয়া থেকে নিশ্চেষ্ট থাকে।
বস্তুত, সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে বেতনভুক চাকরিজীবীদের আয় গোপন করার সুযোগ বিশেষ নেই বললেই চলে। বরং, অন্য কিছু জনপ্রিয় ও লোভনীয় অতিপরিচিত পেশায় এবং এক শ্রেণির ব্যবসায় প্রকৃত আয় গোপনের (প্রমাণ বা কোনও নথি না থাকায়) প্রভূত সুযোগের সদ্ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদিও সে দিকটি বিস্ময়কর ভাবে অনুল্লিখিত থেকেছে পত্রলেখকের বক্তব্যে।
অনেক চাকরিজীবীকে বছরের দু’মাসের বেতন বাৎসরিক আয়কর হিসেবে দিতে হয়। এর প্রেক্ষিতে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, আয়কর আইনে প্রদত্ত বিভিন্ন ‘ছাড়’-এর সুবিধা নিতে (যাকে হয়তো পত্রলেখক কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা গণ্য করেছেন) এমন আয়কর দাতাদের একাংশ পত্রে উল্লিখিত ‘বিশেষ ভাবে শিক্ষাপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক’ নিয়োগ করেন, বা এ বিষয়ে দক্ষ আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করেন, তা কি আইনবিরুদ্ধ? তাতে আয়কর দাতার সংখ্যার ইতরবিশেষ হওয়ার কথা নয়, প্রদত্ত আয়করের পরিমাণে কিঞ্চিৎ হেরফের ঘটলেও।
অতএব আয়করের পরিধি বিস্তৃত করতে চাকরিজীবীদের বাইরে অন্যদেরও এর আওতায় আনার সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং তাঁদের প্রকৃত আয় নিরূপণের স্বচ্ছ পরিকাঠামো প্রস্তুত করতে হবে। সৎ করদাতাদের মাথার উপর অমূলক ‘ডিমান্ড’ ঝুলিয়ে রেখে হয়রানি ও সম্মানহানি থেকে সুরক্ষা দিতে হবে।
শান্তনু রায়, কলকাতা-৪৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy