—প্রতীকী চিত্র।
বিশ্বজিৎ রায়ের ‘অবতারের সন্ধানে’ (১৪-১) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে প্লেটোর একটা কথা মনে পড়ে গেল। প্লেটো বলেছিলেন, যার ক্ষমতার মোহ নেই, সে-ই ক্ষমতার উপযুক্ত। প্রাবন্ধিক আদর্শবাদী রাষ্ট্রের কল্পনা করেছেন, যা ভাবতে ভাল লাগলেও, বাস্তবে কোনও দিন সম্ভব নয়। আল-বেরুনি আক্ষেপ করেছিলেন, হিন্দুরা ইতিহাস রচনায় উদাসীন। রবীন্দ্রনাথও সে মন্তব্য সমর্থন করেন। কংগ্রেস গান্ধীজিকে মহান করেছেন, বিজেপি সর্দার বল্লভভাই পটেলকে মহান করবে। মানুষের যুক্তি দিয়ে ভাল-মন্দ বিচার করার আগেই তার উপর নিজের মতামত চাপিয়ে দিতে চায় সব দল, যাতে মানুষ নিজে ভাবতে না পারে। রাম, যুধিষ্ঠিরের সম্পর্কে তথ্য নেই, কিন্তু অশোক বা আকবর কত মহান রাজা ছিলেন, তার চেয়ে বড় ব্যাপার তাঁরা দক্ষ প্রশাসন চালাতে পেরেছিলেন। বর্তমানে শাসকদের চাল-চলন দেখে মনে হয়, তাঁরা সব জানেন। যা চলছে তা তাঁদের অহমিকার লড়াই। জ্ঞান যাঁর যত কম, তাঁর আত্মম্ভরিতা তত বেশি।
নাগরিককে সচেতন করতে যে শিক্ষার দরকার, তা কোনও দিন পাওয়া যাবে কি না, সন্দেহ। কারণ, রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষাকে। সিলেবাস পাঠের শেষে তোষামোদের প্রশ্নপত্র, এই হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার স্বরূপ। তাই মনে হয়, প্রবন্ধকার যেন বিবেকানন্দের আদর্শ আর স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। রাজনীতিতে রাম থাকবে, কিন্তু রাজনীতিবিদদের রামের মতো ত্যাগ থাকবে না, তা কি হয়?
তন্ময় কবিরাজ, রসুলপুর, পূর্ব বর্ধমান
পঞ্চকোটগিরি
বিশ্বজিৎ রায়ের ‘বিদেশি সনেটে দেশীয় কপোতাক্ষের স্বপ্নরূপ’ (রবিবাসরীয়, ১৪-১) প্রবন্ধে মাইকেল মধুসূদনের পুরুলিয়া আগমন সম্পর্কে কয়েকটি কথা লক্ষ করলাম। সেগুলিতে কিছু সংশোধনের প্রয়োজন বলে মনে করি। এ কথা ঠিক যে, জীবনের শেষ সময়ে মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরুলিয়া আসেন। তবে মাইকেল তার আগেও ১৮৭২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে এক বার পুরুলিয়া এসেছিলেন একটি মকদ্দমায়, বাদীপক্ষের ব্যারিস্টার হয়ে। পরবর্তী সময়ে ১৮৭২ সালে মার্চ মাসে তিনি কাশীপুরের রাজা নীলমণি সিংদেওয়ের আমন্ত্রণে পুরুলিয়া আসেন, এবং তাঁর আইনি পরামর্শদাতা ও দেওয়ান হিসাবে কাজে যোগদান করেন। কিন্তু প্রবন্ধে মাইকেলের প্রথম বারের পুরুলিয়ার আসার কথা উল্লেখ নেই। প্রবন্ধকার পরেশনাথ পাহাড়ের ভৌগোলিক অবস্থান পুরুলিয়ায় বলে উল্লেখ করেছেন। অধুনা ঝাড়খণ্ড রাজ্যে গিরিডি জেলায় অবস্থিত পরেশনাথ পাহাড় তখন মানভূম জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। উল্লেখ্য, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরুলিয়া থাকাকালীনই এই পাহাড়টি সম্পর্কে একটি কবিতা রচনা করেন, যা ‘পরেশনাথ গিরি’ নামে পরিচিত। পুরুলিয়ায় থাকাকালীন তিনি ‘পঞ্চকোটগিরি’, ‘পঞ্চকোটস্য রাজশ্রী’, এবং ‘পঞ্চকোটগিরি বিদায় সঙ্গীত’ এই তিনটি কবিতাও রচনা করেছিলেন। ‘পঞ্চকোটগিরি’ ও ‘পঞ্চকোটগিরি বিদায় সঙ্গীত’ এই দু’টি কবিতা পুরুলিয়া জেলার পঞ্চকোট পাহাড়কে নিয়ে লেখা। কিন্তু প্রবন্ধকার এই তিনটি কবিতার কোনওটির উল্লেখ করেননি।
দূর্বাদল চট্টোপাধ্যায়, মিঠানি, পশ্চিম বর্ধমান
পৌষলক্ষ্মী
‘পৌষের ডাক’ (১৩-১) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন করা হয়েছে, সংস্কৃতি কি অপরিবর্তনীয়, না কি অপরিবর্তনীয় বলে যাকে মনে করা হয়, তাও আসলে পরিবর্তনশীলতারই ভিন্ন রূপ? মানুষের অর্থপূর্ণ অস্তিত্বই সংস্কৃতির দান। জীবনের সঙ্গে সংস্কৃতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। জীবনযাপন পদ্ধতির মধ্যেই সংস্কৃতির উদ্ভব ও বিকাশ। জীবনচর্যার পরিশীলিত, পরিমার্জিত, পরিস্রুত দিকটাকেই সংস্কৃতি বলা যায়। সব মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি এক নয়। তাই স্থান-কাল-পরিবেশের কারণে সংস্কৃতির মধ্যে নানা বৈচিত্র ঘটে। সংস্কৃতি নিজের ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে না, অতীতকে সে বর্তমানের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখে এগিয়ে চলে।
বাংলার লক্ষ্মীপুজোর সংস্কৃতি পৌষসংক্রান্তির সঙ্গে জুড়ে গিয়ে সৃষ্টি করেছে পৌষলক্ষ্মীর পুজো। সংক্রান্তি, বা তার পরের দিন লক্ষ্মীপুজো বাংলার এক প্রাচীন রীতি। পৌষ মাসের শেষের এক দিন আগেই গেরস্তবাড়ির আঙিনা নিকিয়ে চালগুঁড়ি দিয়ে কুলো, লক্ষ্মীর পা, ধানের ছড়ার আলপনা দেওয়া হয়। ধুয়ে-মুছে, সিঁদুরে মাখিয়ে রাখা হয় ঢেঁকি। কয়েকটি পাকা ধানের শিষ, সঙ্গে আমপাতা, মুলোফুল অথবা সর্ষেফুল দিয়ে বিনুনি করে গেঁথে বেঁধে দেওয়া হয় গেরস্তবাড়ির বিভিন্ন জায়গায়, সৌভাগ্যের চিহ্ন হিসাবে। বাঁধার সময় মুখে মুখে কাটা হয় ছড়া, “আওনি বাউনি চাউনি/ তিন দিন কোথাও না যেয়ো/ ঘরে বসে পিঠে-ভাত খেয়ো।”
পৌষ মাঘের সন্ধিক্ষণে ভোররাতে মাঘবাতির প্রদীপ আর শঙ্খধ্বনি শোনা যায়। গোটা পৌষ মাস ধরেই ঘরে ঘরে অনুষ্ঠিত হওয়া টুসুদেবীর পুজোর শেষ দিন পৌষসংক্রান্তিতেই।
সুপ্রিয় দেবরায়, বরোদা, গুজরাত
ঘোষণার ধুম
কলকাতা বইমেলায় বার বার প্লাস্টিক বর্জন করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের বার্তা দেওয়া হয়। অথচ, মেলা প্রাঙ্গণটি শব্দদূষণের প্রকৃষ্ট উদাহরণ নয় কি? চড়া স্বরে গান-বাজনা, আরও বেশি স্বর চড়িয়ে নানা ঘোষণা চলতে থাকে। সেই সব ঘোষণার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়— কোন সাহিত্যিকের নামে মেলার কোন পথের নামকরণ হয়েছে, তা পথগুলির উপরেই লাগিয়ে দেওয়া যেত। তেমনই, কোন মঞ্চে কখন কী অনুষ্ঠান, কারা বক্তা, তা টাঙিয়ে দেওয়া যেত বিশেষ কয়েকটি স্থানে। ডিজিটাল সংযোগের ব্যবস্থাও করা যেত।
তার উপরে আবার নানা স্টলে মাইক্রোফোন ব্যবহার করে কিছু ঘোষক কুইজ় চালানোর ছলে বাণিজ্যিক প্রচার করতে থাকেন। কারও সঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রায় চিৎকার করতে হয়। সব মিলিয়ে চড়া শব্দে বিরক্তি উৎপাদন করে মেলা চত্বরটি। এটি কি কোনও ভাবে বন্ধ করা যায় না? আগামী বছর থেকে বইমেলা হোক শব্দদূষণ মুক্ত।
মলিনা বিশ্বাস, রঘুনাথগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ
নিখোঁজ মেয়ে
কিশোরী ও তরুণীদের অনভিজ্ঞতা ও দুর্বলতার সুযোগে তাদের পাচার করা, নানা ভাবে হয়রানি করার ঘটনাগুলি নিয়ন্ত্রণে আসার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। গত ডিসেম্বরে হাওড়ার জগদীশপুর থেকে বছর পনেরোর এক কিশোরী হারিয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় রিপোর্ট লেখালে পুলিশ এফআইআর গ্রহণ করে। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেয়েটিকে খুঁজে বার করার জন্য আমাদের সংগঠনের সহায়তা চায়। যথারীতি ‘খোয়া পায়া’ অ্যাপ-এ রেজিস্ট্রেশন করা হল। জানুয়ারিতে খবর পাওয়া গেল, মেয়েটি রয়েছে পুরুলিয়ায়। পুলিশ, পরিবার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা পুরুলিয়া গিয়ে জানতে পারেন, মেয়েটি সেখানে নেই। নানা সূত্রে সন্দেহ জাগে যে, মেয়েটিকে চেন্নাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন ওই কিশোরীর খোঁজ করছে, দু’টি সংস্থার পক্ষ থেকেও খোঁজ চলছে। কিন্তু কেবল এই মেয়েটিই তো নয়। এই রকম অনেক হারিয়ে যাওয়া, পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েদের খবর সামনে আসছে বার বার। যাদের স্কুল-কলেজে পড়ার কথা, সেই মেয়েরা কেন প্রেমের টানে বা কাজের তাগিদে সামান্য-পরিচিতদের সঙ্গে রওনা দিচ্ছে, এই প্রশ্নগুলো সে ভাবে করা হচ্ছে না। মেয়েদের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। মেয়েরা ভোগের পাত্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সাজিদা পারভিন, কোতোয়ালি, কোচবিহার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy