Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: স্মৃতির আখর

পৃথিবীতে বেঁচেবর্তে থাকার জন্যেই মানুষকে কাগজে ছাপার ব্যাপারগুলি ই-মাধ্যমে সারতে হবে, যে পথে বেশ কিছুটা চলেও এসেছে মানুষ।

book.

কাগজ উৎপাদনে সাফ হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার বনরাজি। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৩৫
Share
Save

‘হারিয়ে যাওয়ার পথে শখের আখরগুলি’ (রবিবাসরীয়, ২৬-৩) পাঠ করে স্মৃতিমেদুর বিপন্নতা জাগে। বহু অক্ষরের সমাবেশ বই কেবল ভাব বা জ্ঞানের বাহকমাত্র নয়, তার বাইরে আরও কিছু। কিন্তু তার হারিয়ে যাওয়া যদি হয় সময় ও পরিস্থিতির দাবি, তা হলে অযৌক্তিক আবেগ দিয়ে দেওয়ালের লিখন নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না। বর্তমানে কাগজ উৎপাদনে সাফ হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার বনরাজি, যার প্রত্যক্ষ কুপ্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর। তাই আজ সচেতনতার দাবি হল— কাগজের ব্যবহার দ্রুত কমিয়ে আনা, যখন বিজ্ঞান আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে বিকল্প মাধ্যম। পৃথিবীতে বেঁচেবর্তে থাকার জন্যেই মানুষকে কাগজে ছাপার ব্যাপারগুলি ই-মাধ্যমে সারতে হবে, যে পথে বেশ কিছুটা চলেও এসেছে মানুষ।

তবে রচনাটিতে জ্ঞান ও বিদ্যার প্রতি মানুষের অনুরাগের কথা বলা হয়েছে, যা সবিশেষ ইতিবাচক। বাহক বদল ঘটতে পারে, কিন্তু অক্ষর হারাতে পারে না। বর্তমান হেঁটমুণ্ড জীবনযাপনে বই রাখার স্থান কমে যাওয়ায় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ পড়াশোনার অভ্যাস টিকিয়ে রাখার জন্য নানা পন্থার কথা ভাবছেন। ছাপানো বই যাতে অনেক বেশি সংখ্যক পড়ুয়ার কাজে লাগে, সে জন্য একটি সাম্প্রতিক প্রয়াস হল— জনবহুল রাস্তার মোড়ে একটি শেডের নীচে পুরনো বই রাখা থাকবে। যার যেমন ইচ্ছে, বই রাখবেন এবং নিয়ে পড়া হয়ে গেলে আবার সেখানেই রেখে দেবেন। এই সব বইয়ের তাকে কিছু দিন পরে নাকি বইয়ের সংখ্যা কমতে থাকে, যা এই প্রয়াসের ব্যর্থতার ইঙ্গিত বলে উল্লিখিত হয়েছে। ঠিক এইখানে প্রবন্ধকারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করি। বই ধার নিয়ে ফেরত না দেওয়া বেশ প্রজ্ঞাপূর্ণ সমাজের ইঙ্গিত দেয়। পুস্তক-তঞ্চকদের তালিকায় বিখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েনের নাম দেখা যাবে, তাঁর বিপুল লাইব্রেরি নাকি বই ধার নিয়ে ফেরত দিতে ‘ভুলে যাওয়া’র উপায়ে সমৃদ্ধ হয়েছিল। অক্ষরসমৃদ্ধির জন্য যে চৌর্য, তা অনৈতিক হলেও সুগভীর ফলদায়ী।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি

বইপ্রেম

অম্লানকুসুম চক্রবর্তী তাঁর প্রবন্ধে ব্যক্তিগত সংগ্রহের বই ও পত্রপত্রিকার সংরক্ষণ নিয়ে একটি জরুরি প্রশ্ন তুলেছেন— শখের জন্য যাঁরা সারা জীবন সঁপে দেন, এই শখ-সম্পত্তি তাঁদের অবর্তমানে দশ টাকা কেজি দরে পাল্লায় ওঠাই কি এমন ভালবাসার ভবিতব্য! বর্তমানে যেখানে সস্তা রাজনীতি, সমাজমাধ্যমে কুরুচিকর হাবভাব— সেখানে এক জনের ভালবাসার সংগ্রহের অমূল্য দান বইপত্রগুলি অপরের জীবনে আলো দেখানোর কাজে নামতে পারে। লেখক বইপ্রেমীদের জন্য একটি সেন্ট্রাল বুক ব্যাঙ্ক গঠনের কথা বলেছেন— তা-ও ভাবার বিষয়।

একাগ্রচিত্তে বই, পত্রপত্রিকার নিবিড় অনুশীলন ছাত্রাবস্থা থেকেই দরকার। নইলে সুস্থ সংস্কৃতি ও রুচি তৈরি হবে কোথা থেকে? সৌভাগ্যক্রমে আমাদের প্রজন্মের হাতে তখন সিনেমা আর পত্রপত্রিকা ছিল জীবন গড়ার সম্বল। তখন বই ছিল আমাদের হাতের চাঁদ। ভাগ্যিস এ আসক্তি তখন ধরেছিল। তাই সাজানো সংসারের পাশে বইয়ের একটা ক্ষুদ্র ভুবন গড়ে তুলতে পেরেছি। সেই ভুবন একান্তই আমার। ভেবে খানিকটা পরিতৃপ্তি লাগে তো বটেই। একার সঙ্গে একা আড্ডা দেওয়ার এমন বন্ধুই আজ বেঁচে থাকার রসদ।

প্রসঙ্গত, লাইব্রেরির প্রেমে পড়েই এক সময় খানিক পছন্দের বই সংগ্রহের নেশাটা চেপেছিল। তাই নিজস্ব রুচিতে কলকাতার নানা এলাকার ফুটপাতের ধার, পার্ক স্ট্রিটের বইয়ের দোকান, কিংবা কলকাতার বইমেলা থেকে কিছু ভালবাসার বই জোগাড় করতে পেরেছি। তেমনই কলেজ স্ট্রিট থেকেও অনেক বই সংগ্রহ করেছি। মনে হয়, বিশ্ব জুড়ে বইপ্রেমীদের সংখ্যা যতই নিম্নগামী হোক, যতই বাধাবিপত্তি আসুক না কেন, মানুষের বইয়ের প্রতি ভালবাসা কখনও নিঃশেষ হবে না। এক-একটা ভাল বই যেন কেবল এক জীবনের নয়, জন্ম-জন্মান্তরের সম্পদ।

দীপককুমার দাস, কৃষ্ণনগর, নদিয়া

উপহার বিক্রি

অম্লানকুসুম চক্রবর্তীর লেখা পড়ে একটি অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল। গত নব্বইয়ের দশকের প্রথমে কলেজ জীবনের শেষের দিকে কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় গিয়ে দেখি শঙ্করীপ্রসাদ বসুর লেখা একটি বই, যেটা তিনি মণিশঙ্করবাবুকে উপহার দেন, সেটা বিক্রির জন্য আছে। যা-ই হোক, বইটি কিনে খুব গর্ব হল। পরবর্তী কালে, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, বিনয় ঘোষ, শান্তিময় চট্টোপাধ্যায়, ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের লেখা এবং নিকটজনদের উপহার দেওয়া বই পুরনো বইয়ের দোকানে পেতে খুব ভাল লাগত। কিন্তু এখন আর তেমনটা লাগে না। খালি মনে হয়, আমার যে কয়েকটি যৎসামান্য উপহার পাওয়া বই হয়েছে, সেগুলির ভবিষ্যৎ কি ঠিক এই রকমই হবে?

প্রতিটি সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের ভালবাসার মতোই, প্রতিটি বই হাতে পাওয়ার ভাল লাগার স্মৃতিও মনের মধ্যে থেকে যায়, যা আচ্ছন্ন করে রাখে। আমরাই আমাদের ইন্টারনেট-নির্ভরতার জন্য পরবর্তী প্রজন্মের ইতিহাস-বিমুখতার জন্য দায়ী।

দীপঙ্কর সান্যাল, মধ্যমগ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা

পাঠ্যে সুন্দরবন

২০২৩ সালে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ‘রিডিং কম্প্রিহেনশন (আনসিন)’ বিভাগে যথাক্রমে ম্যানগ্রোভ, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার— এই দুই বিষয়ের থেকে প্রশ্ন এসেছে। লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর কাছে পৌঁছে গেল অল্প পরিসরে সুন্দরবনের প্রাথমিক ধারণা। সুন্দরবন এবং বন্যপ্রাণ ও তাদের জীবনযাত্রাকে পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবিভাগের সকল আধিকারিককে ধন্যবাদ জানাই। আরও একটি বিনম্র আবেদন— বিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের পাঠ্যসূচি প্রণয়নকারী কমিটির আধিকারিকরা যদি সুন্দরবন, জীববৈচিত্র, ব-দ্বীপের গঠন প্রণালী, নদনদী, এখানকার স্থানীয় মানুষদের জীবনজীবিকা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা, ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর প্রচেষ্টা, জনজাতি ও চিরন্তন লোকসংস্কৃতি এবং লোকায়ত বিষয়গুলিকে পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করেন, তা হলে সুন্দরবন সম্পর্কে রাজ্যস্তরের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা স্বচ্ছ ধারণা গড়ে উঠবে। শুধু তা-ই নয়, সুন্দরবন ভ্রমণের ফলে বনকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বাংলার অর্থনৈতিক বিকাশে একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। তাই অনুরোধ, পৃথিবীর বৃহত্তম বাদাবন সুন্দরবনকে বাধ্যতামূলক ভাবে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

রতন নস্কর, সরিষা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

ট্রামযাত্রা

জয়ন্ত বসুর ‘ঐতিহ্য নয়, জরুরি পরিবহণ’ (২-৩) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, ট্রামের এক আলাদা রোম্যান্স আছে। ট্রামযাত্রা মানে কলকাতা শহরকে একটা সিনেমার রিলের মতো দেখতে দেখতে যাওয়া। মজবুত কাঠের বাঁকানো সিট, বিশাল প্লেনের প্রপেলারের মতো খাঁচাওয়ালা পাখার নস্টালজিয়া উপভোগ করা তো আছেই। বিশ্বের নানা বড় শহরে ট্রাম চলে। সান ফ্রান্সিসকোয় ট্রাম দিব্যি চলছে ওখানকার ঢেউ খেলানো রাস্তার উপর দিয়ে। মেলবোর্নের ট্রাম ওই শহরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সব শহরে ট্রাম এখনও জনপ্রিয়, কারণ শহরের নানা প্রান্তকে ট্রামলাইন যুক্ত করে। আজ বিশ্ব বাংলার ফ্লাইওভার এবং নতুন মেট্রো লাইনের জংশনে স্বর্ণযুগের ট্রাম শহর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম বিলুপ্তির বেদনা বড্ড অসহনীয়। কলকাতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ট্রামকে যেন বাঁচিয়ে রাখা হয়।

প্রদীপ সেনগুপ্ত, ব্যান্ডেল, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Books Environment

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}