—প্রতীকী ছবি।
তূর্য বাইন ‘ফোনের নেশা সর্বনাশা’ (১৬-৪) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে আধুনিক বিশ্বে মোবাইলের প্রতি আবালবৃদ্ধবনিতার প্রবল আসক্তিকে ‘সর্বনাশা নেশা’ বলে তার কুফলও যথাযথ ব্যক্ত করেছেন। তবে এই কুফলের বিষয়ে বেশ কয়েক দশক আগে বিজ্ঞান আমাদের সতর্ক করে দেয়। কিন্তু সব জেনেশুনেও আমরা এই আসক্তি থেকে বেরোতে পারছি কই? আসলে এই মোবাইলেই যে নিত্য প্রয়োজনীয় তথ্যে ঠাসা। বাড়িতে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে সব পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে, আমরা এতটাই মোবাইলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যে, কেউ আমাদের সঙ্গী না থাকলেও, মোবাইলই আমাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন একটু অবসর মানেই মোবাইল ঘাঁটা। এমন দৃশ্য ট্রেনে, বাসে, অফিসে, খেলার মাঠে, সিনেমা হলে, শপিং মলে, রাস্তাঘাটে, স্কুল-কলেজে, এমনকি চিকিৎসাকেন্দ্রেও স্বাভাবিক দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। আর এর ফলেই মানুষে মানুষে সম্পর্ক, আন্তরিকতা— সবই আজ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বোধ হয় একটাই— নতুন যে প্রজন্ম আসছে, তাদের কাছ থেকে মোবাইলের দূরত্ব বজায় রাখা। সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে বাবা-মা’কে। আর, উত্তর ২৪ পরগনার ওই বিদ্যালয়ের মতো সমস্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্মার্টফোন ব্যবহারে ছাত্রছাত্রীদের উপর বিধি-নিষেধ জারি করতে হবে। একই সঙ্গে মোবাইলের অতি ব্যবহার এবং তার কুফলের প্রচার কার্যে সরকারি সহায়তা একান্ত দরকার।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
ভবিষ্যৎ নষ্ট
তূর্য বাইন-এর প্রবন্ধ পড়ে জানা গেল যে, উত্তর ২৪ পরগনার একটি মেয়েদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নির্দেশ জারি করেছেন যে, স্মার্টফোন বা অন্য বৈদ্যুতিন যন্ত্রে ছাত্রীদের সমাজমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত থাকা যাবে না। তাঁকে সাধুবাদ। ছোট থেকেই হাতে মোবাইল পেয়ে বিচিত্র রকমের ওয়েবপেজের বাহার ছাত্রছাত্রীদের অপরিণত মনে ছাপ ফেলছে। তাদের মন বিক্ষিপ্ত হচ্ছে, পড়াশোনায় আর মন বসছে না। বিশেষ করে, মোবাইলে এমন তীব্র আসক্তি তৈরি হচ্ছে যে পরীক্ষায় খারাপ ফল করার পরে মোবাইল ব্যবহার করতে না দিলে আত্মহননের পথ পর্যন্ত বেছে নিচ্ছে। এর জন্য আমরা, অভিভাবকরা দায়ী। ছোট থেকেই কান্না থামাতে, দুষ্টুমি করলে, খেতে না চাইলে হাতে স্মার্টফোন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শিশু তখন থেকেই ভার্চুয়াল জগতে বুঁদ হয়ে থাকে। এই ভাবে বড় হতে গিয়ে সে ঘরকুনো, অসামাজিক, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। অভিভাবকদের যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে যাতে অন্তত স্কুল স্তরে ছেলেমেয়েরা হাতে মোবাইল না পায়। দেখা গিয়েছে, কোভিডকালে অনলাইন লেখাপড়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের হাতে যে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেকেই এখন অন্য বিভিন্ন অ্যাপে আসক্ত হয়ে কিছুতেই আর ফোন ছাড়তে রাজি নয়। সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী বলেছিলেন, নেশা যদি করতেই হয় রাবড়ির নেশা করুন। তেমনই মা-বাবাদেরও উচিত ছেলেমেয়েদের বই পড়া, খেলাধুলা, এমনকি সমবয়সিদের সঙ্গে কথোপকথনে উৎসাহ দান করা। তা হলেই তারা মনের দিক দিয়ে সুস্থ, সামাজিক মানুষ হয়ে উঠতে পারবে।
শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
কল্যাণকর?
তূর্য বাইনের প্রবন্ধে উল্লিখিত উত্তর ২৪ পরগনার ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার সিদ্ধান্তটি সঠিক। ছাত্রীদের স্মার্টফোনে সমাজমাধ্যমে যুক্ত থাকা যাবে না বলে যে নির্দেশ তিনি দিয়েছেন, তাতে সন্তানতুল্য ছাত্রীদের প্রতি তাঁর কল্যাণকামী মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে। যোগাযোগের অভূতপূর্ব উন্নতি, তথ্যের প্রাচুর্য, প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন অত্যাবশ্যক পরিষেবা মোবাইল ফোনের দৌলতে আজ হাতের মুঠোয়। তাই জনসাধারণের কাছে স্মার্টফোন এখন নিত্য ব্যবহৃত ও অপরিহার্য এক যন্ত্র। ডিজিটাল যুগে মোবাইলহীন জীবন বোধ হয় একেবারেই অসম্ভব। ক্ষতিকারক জানা সত্ত্বেও আজকের যুবসমাজ অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এর ফলে যেমন শিক্ষার্থীদের একাগ্রতা ও মনোযোগ ব্যাহত হচ্ছে, তেমনই মৌলিক গঠনমূলক চিন্তা ও সামাজিক দক্ষতার বিকাশ ঘটছে না। সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব কেনার জন্য টাকা দেওয়ার বিষয়টি আদৌ তাদের জন্য কল্যাণকর, না শুধু ভোট-রাজনীতির সস্তা জনপ্রিয়তা— সেই প্রশ্ন থাকবে।
অর্কপ্রভ ঘোষ, কাঁটাপুকুর (উত্তর), পূর্ব বর্ধমান
সৌজন্যবোধ
ভারতবর্ষ বিখ্যাত তার আতিথেয়তার জন্য। প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে বার বার বিদেশি শক্তি হানা দিলেও এ দেশের মানুষ তাঁদের সৌজন্যবোধ দেখাতে ও আত্মীয়তায় বেঁধে ফেলতে দ্বিধা করতেন না। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ ব্রততে বিশ্বাসী ভারতীয়দের ঐতিহ্যই ছিল পারস্পরিক সৌহার্দবোধ ও শান্তি।
স্বাধীনতার পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু থেকে অটল বিহারী বাজপেয়ী, রাজ্যে বিধানচন্দ্র রায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রমুখের রাজনৈতিক মতভেদ যা-ই থাকুক না কেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সৌজন্যবোধ বজায় ছিল। শোনা যায় জ্যোতি বসু তখন বিরোধী নেতা, তিনি অসুস্থ শুনে মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার রায় স্বয়ং দেখতে চলে গেছেন ও চিকিৎসাও করেছেন। অন্য দিকে, বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সংসদ থেকে প্রথম প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরিয়ে দেওয়া হলে তিনি নির্দেশ দেন ছবি যেন যথাস্থানে সে দিনই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রথম বার শপথ নেওয়ার পর একই রকম সৌজন্যবোধ দেখিয়েছিলেন বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে। এমনকি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হাসপাতালে ভর্তি হলে দিদি তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। এমনই তো আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য।
কিন্তু ভোট-পূর্ব ভারত গত কয়েক বছর ধরে সেই সৌজন্যবোধ, পরস্পরকে সম্মান জ্ঞাপন করতে ভুলে গেছে। প্রত্যেকেই অন্যের বিরুদ্ধে কু-কথা, অকথ্য গালাগাল ও দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এই লাগাতার অশ্লীল আচরণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বিচারকদের প্রতি কুকথা বর্ষণ।
এই পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমী একমাত্র ঘাটালের সাংসদ অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেব। তিনি নিজে অন্য দলের প্রতি কেবল সম্মান দেখিয়েই ক্ষান্ত হননি, এ কথাও বার বার বলছেন ভোটারদের উচিত, যাঁরা অন্যদের কটুকথা বলে প্রচার করে ভোট চাইছেন, তা যে দলেরই হোক, তাঁকে ভোট না দেওয়া। নিজে কাজ করলে সেই কাজের কথা বলে ভোট চাওয়ায় বিশ্বাসী তিনি। সম্প্রতি কয়েকটি সাক্ষাৎকারেও তিনি বলেছেন এ কথা। রাজনৈতিক নেতাদের উপরের দিকে সকলে সকলের বন্ধু, সেখানে কোনও শত্রুতা নেই। নিচু তলার কর্মীরা তাঁদের কথায় প্ররোচিত হয়ে যেন নিজস্ব মূল্যবোধ ভুলে গিয়ে বিদ্বেষের রাজনীতি না করেন। এবং তিনি এও বলেছেন, সর্বপ্রথম আমরা ভারতীয়, তার পর অন্য সব।
এই মানসিকতা এখন জাতীয় তথা আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। এর ফল ভুগছেন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানুষ। শব্দদূষণ সারা পৃথিবীতেই স্বীকৃত দূষণ। তা থেকে নিস্তারের পথ খুঁজছেন বৈজ্ঞানিক তথা সমাজবিদরা। কিন্তু এই বাক্যদূষণ কী ভাবে রোধ করা যাবে, সেটা নিয়েও ভাবার সময় এসেছে। না হলে নেতা-নেত্রীদের দেখানো পথে এই প্রজন্ম থেকে শুরু করে আগামী কয়েক প্রজন্ম এই সব বাক্যই স্বাভাবিক মনে করবে, এমনই অশনি সঙ্কেত দেখতে পাচ্ছি। সব ক’টি রাজনৈতিক দলের মানুষের কাছে তাই একটাই অনুরোধ, ভাষণ দেওয়ার সময় একটু ভেবেচিন্তে কথা বলুন।
বিতস্তা ঘোষাল, কলকাতা-৯০
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy