—প্রতীকী চিত্র।
‘নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সরব, নিশানায় কৃতী’ (২৭-৫) শিরোনামের প্রতিবেদনটি পড়ে চমকে উঠলাম। এক জন কৃতী ছাত্রী বলেছিল, “দুর্নীতি ভরা এ রাজ্য আমার বাংলা নয়।” অভিযোগ, তার জেরে সমাজমাধ্যমে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে সেই কৃতী ছাত্রী ও তার বাবাকে। যাঁরা এমন করেছেন তাঁদের পক্ষের যুক্তি হচ্ছে— সরকারের দেওয়া দশ হাজার টাকার ট্যাব পেয়ে, কন্যাশ্রীর টাকা পেয়ে, সবুজ সাথীর সাইকেল নিয়ে স্কুলে গিয়ে এত ভাল রেজ়াল্ট করে আজ তার মুখে এমন কথা?
এই সরকারি সুযোগ-সুবিধাগুলো তার মতোই অন্য পড়ুয়ারাও পেয়েছে। কিন্তু তারা সবাই উচ্চ মাধ্যমিকে চতুর্থ হয়নি। অর্থাৎ, ভাল রেজ়াল্ট করা ঠিক ওই সরকারি প্রকল্পগুলোর উপর সরাসরি নির্ভর করে না। প্রকল্পগুলো বড়জোর অনুঘটকের কাজ করতে পারে। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল— সরকারি সুবিধা ঠিক কিসের জন্য দেওয়া হচ্ছে? অনাচার অবিচার দেখে মুখ বন্ধ রাখার জন্য নিশ্চয় নয়! বর্তমানে আমাদের রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ‘দুর্নীতি’ এক বড় বিষয়। যে কোনও শিক্ষিত বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষকে এই ঘটনা কষ্ট দেবে! যদি কেউ শিক্ষক দুর্নীতি নিয়ে সাফাই দিতে চায়, তা হলে প্রশ্ন ওঠে বরং সেই সব মানুষের বোধবুদ্ধি ও বিবেক নিয়েই। এই কৃতী ছাত্রী তার মতো করে প্রতিবাদ করেছে। আমি মনে করি সঠিক কাজ করেছে, তার অর্জিত শিক্ষা সব দিক দিয়েই সার্থক। যাঁরা তাকে পড়াশোনায় ভাল হয়ে এমন কথা বলার চেয়ে ‘ভাল মানুষ’ হয়ে ওঠার, এমনকি এই রাজ্য ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁরা দয়া করে নিজেদের মুখ আয়নায় দেখুন। উচ্চ মাধ্যমিকের সেই ছাত্রী আমাদের সবার গর্ব। অথচ, তাকেও দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা করার কারণে সমাজমাধ্যমে আক্রান্ত হতে হচ্ছে! আমরা কোথায় যাচ্ছি, তা হলে বোঝাই যাচ্ছে!
ভূদেব সেনগুপ্ত, নাগেরবাজার, উত্তর ২৪ পরগনা
ঋণের বোঝা
স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সবার বেতন সতেরো হাজার’ (২৪-৫) শীর্ষক প্রবন্ধটি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে বেশ কিছু শিল্প ও কলকারখানা এবং বামফ্রন্টের শেষের দিকে শিল্পের জন্য উদ্যোগ ছাড়া আর তেমন ভাবে কোনও শিল্প-কারখানা চোখে পড়ে না। তাই বেকারত্ব দিন দিন বাড়তে বাড়তে আজ এক চরম অস্থিরতার জায়গায় পৌঁছে গেছে। যে কয়েকটি দফতরে বেকারত্ব দূরীকরণের কিছুটা সুযোগ ছিল, সেখানেও নাকি পাহাড়সমান দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। যোগ্য প্রার্থীরা ভবঘুরের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর অযোগ্য প্রার্থীরা বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। কে যোগ্য আর কে অযোগ্য, সেটা বিচারাধীন। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দৌলতে বাংলার মানুষ বিভিন্ন জায়গায় থরে থরে অবৈধ কোটি কোটি টাকা, সোনার গয়না সাজানো অবস্থায় দেখে ফেলেছেন। এগুলি দুর্নীতির টাকা কি না, সেটা সময়ই বলবে। এ দিকে জিএসটি-র চাপে ক্রমশ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, সরকারি কর্মচারীরা তাঁদের প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতার জন্য আন্দোলন করছেন আর ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করার জন্য রাজ্য সরকার খোলা বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ধনী-গরিব বাছবিচার না করে সকলকেই অনুদান দিচ্ছে। ঋণের পরিমাণ এমন একটি জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে, সদ্য যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করছে তার মাথায় চাপছে ৫৫ হাজার টাকা ঋণের বোঝা। স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের জিএসটি থেকে আয়, আবগারি থেকে আয়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর থেকে বিভিন্ন আয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তাতে রাজকোষ এতটা শূন্য হওয়ার কথা নয়। সে যা-ই হোক। মোট কথা, শিল্প, কলকারখানা না হলে, চাকরিবাকরির ব্যবস্থা না হলে, সরকারের অধীনস্থ কর্মচারীদের সহযোগিতা না পেলে এবং নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে স্বচ্ছতা না এলে অচিরেই জনরোষের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
স্বপন আদিত্য কুমার বিশ্বাস, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
প্লাস্টিক প্রহসন
প্রায় প্রতি বছরই বর্ষার সময় (জুলাই নাগাদ) ঢাকঢোল পিটিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়। কিছু সচেতনতা শিবির করা হয়, সমাজমাধ্যমেও বিস্তর লেখালিখি হয়। ২০২২ সালেও জুলাইয়ে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফ থেকে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয় যে, এক বার ব্যবহারযোগ্য ৭৫ মাইক্রনের কম ক্যারিব্যাগগুলি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। তার পর ২০২৩ থেকে ক্যারিব্যাগ হতে হবে ন্যূনতম ১২০ মাইক্রন পুরু। কিন্তু এই সময়সীমা বহু দিন হল শেষ হয়ে গেলেও দোকান-বাজার-মন্দির-মল— সর্বত্রই রমরমিয়ে চলছে ৭৫ মাইক্রনের নীচের ক্যারিব্যাগ। কথা ছিল, ২০২২ শারদীয় উৎসবের পর থেকে প্রশাসনের তরফ থেকে জরিমানা ও নাগরিক সচেতনতা বাড়ানোর কর্মসূচি নেওয়া হবে। কিন্তু কাজের কাজ প্রায় হয়নি বললেই চলে। ৫০, ৭৫, ১২০ মাইক্রনের সূক্ষ্ম হিসাবগুলি সাধারণ ক্রেতাসমাজের কাছে দুর্বোধ্যই রয়ে গেছে। কারণ, কোনও ক্যারিব্যাগেই চিহ্নিতকরণ বা মার্কিং থাকে না। ফলে, শুধুমাত্র স্পর্শের মাধ্যমে আমজনতার পক্ষে এই পুরুত্ব বোঝা সম্ভব হয় না। নিষেধাজ্ঞাকে কার্যকর করতে সচেতন নাগরিককেই এগিয়ে আসতে হবে। আশা করা যায়, প্রশাসনও এ বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণে সচেতনতা শিবির ও অসাধু ব্যবসায়ীদের উপর কঠোর জরিমানার ব্যবস্থা করবে। বর্ষার ঠিক মুখে পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক এই প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা একান্ত প্রয়োজন।
সৌম্য বটব্যাল, দক্ষিণ বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
কৌতুক নয়
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কমিক সেন্স আর এখনকার কৌতুক অভিনেতাদের ভাঁড়ামোর আকাশপাতাল তফাত। সাড়ে চুয়াত্তর ছবিতে ভানুর ‘মাসিমা মালপো খামু’ উক্তি শাশ্বত হয়ে গেছে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, অনুপকুমার এঁরা কেউই নায়ক ছিলেন না, কিন্তু কে ভুলতে পারবে গল্প হলেও সত্যি ছবির রবি ঘোষকে! নীল আকাশের নীচে ছবিতে কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় কি ভোলা যায়?
এই অভিনেতাদের কারও অঢেল সম্পদ ছিল না, যেটা ছিল সেটা হল অভিনয় দক্ষতা, যার জন্য আজও তাঁরা জনমানসে স্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত। আর বর্তমান প্রজন্মের কিছু তথাকথিত অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন যাঁদের কার্যকলাপ দেখে মনে হয়, অভিনয় ছাড়া আর সব কিছুই করেন। তাঁরা বিভিন্ন ভাবে অর্থ সংগ্রহ করেন বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য, কিন্তু কেউই মনে রাখার মতো অভিনয় করেন না। যাঁরা অভিনেতা হতে চান, তাঁদের প্রতি অনুরোধ, অন্য দিকে মন না দিয়ে পূর্বসূরিদের মতো অভিনয় করুন। তা হলেই আবার জলসাঘর, পরশ পাথর-এর মতো অসাধারণ ছবি তৈরি হতে পারে।
সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
দেশলাই
সে দিন বাসে শুনলাম, এক মহিলা আর এক জনকে বলছেন, রান্নার গ্যাস বেশি দিন চালাতে চাইলে সাধারণ বাজারচলতি লাইটারের বদলে দেশলাই ব্যবহার করো। কারণ, সাধারণ লাইটার দিয়ে দু’-তিন বার চেষ্টার পরে আভেনে আগুন জ্বলে, অথচ ওই সময়টুকু গ্যাসের সাপ্লাই চালু থাকছে। সুতরাং, গ্যাস সামান্য হলেও নষ্ট হচ্ছে। এ ভাবে সারা দিনে বেশ কিছুটা দামি গ্যাস নষ্ট হয়। প্রথমে দেশলাই জ্বালিয়ে তার পর আভেন অন করলে গ্যাস নষ্টের পরিমাণ অনেকটা কমে। তাঁদের কথোপকথন থেকে গ্যাস বাঁচানোর কৌশলটি জানতে পারলাম। মনে হল, কথাগুলি খুব একটা অযৌক্তিক নয়।
অমিতাভ সরকার, কলকাতা-৩৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy