‘জয় হে’ (সম্পাদকীয়, ১৬-১২) প্রসঙ্গে এই চিঠি। বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর জাতীয় সঙ্গীত সংশোধনের প্রস্তাবটিতে তাঁর ইতিহাস ও ভূগোল জ্ঞানের অভাবের পাশাপাশি বিদ্বেষী মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর প্রস্তাবে মূল আপত্তির কারণ ‘জনগণমন’ গানে থাকা ‘সিন্ধু’ শব্দটিতে। সিন্ধু নামে পাকিস্তানের একটি প্রদেশ থাকলেও, সিন্ধু আসলে একটি আন্তর্জাতিক নদের নাম। তিব্বতের মানস সরোবরের একটি প্রস্রবণ থেকে তার উৎপত্তি। প্রায় ৩০০০ কিমি দীর্ঘ সিন্ধুনদ ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে ৭০৯ কিমি পথ চলার পর পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে আরব সাগরে পড়েছে। শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা— সিন্ধুর এই পাঁচটি প্রধান উপনদী ভারতের পঞ্জাব রাজ্যের উপর দিয়ে প্রবাহিত। সুতরাং ভৌগোলিক দিক থেকে ভারত ‘সিন্ধু’ শব্দের অনুষঙ্গ বর্জিত দেশ নয়। পারসিকদের উচ্চারণে ‘সিন্ধু’ শব্দ থেকেই হিন্দু তথা হিন্দুস্থান শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ, সিন্ধুনদের তীরের মানুষের বাসস্থান। সুতরাং ‘সিন্ধু’ শব্দের উপস্থিতির জন্য জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের যুক্তি অসার।
রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সঙ্গীতকে বাতিল করার প্রস্তাবে বাংলা ও বাঙালির প্রতি বিদ্বেষের মানসিকতাও সুপ্ত। বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বাঙালি অস্মিতাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস। আশা করি, অচিরেই তাঁর প্রস্তাব বাতিল হবে। প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো ও দর্শকদের উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানোর ফরমান তাঁর দলের সরকারই জারি করেছিল। এখন সেই জাতীয় সঙ্গীতেরই বদল চেয়ে কোন সম্মান প্রদর্শিত হল?
কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া
আগেও হয়েছে
জাতীয় সঙ্গীতে ‘সিন্ধু’ শব্দটি বদলানোর চেষ্টা এই প্রথম নয়। সিন্ধুপ্রদেশ পাকিস্তানে গিয়েছে বলে তার জায়গায় ‘কামরূপ’ শব্দটি বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় স্বাধীনতার পর পর। সে ইতিহাস পাওয়া যায় রবীন্দ্রানুগ ছান্দসিক প্রবোধচন্দ্র সেনের একটি চিঠিতে, যা তিনি লিখেছিলেন ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫০ সালে শিল্পী অসিতকুমার হালদারকে। “সিন্ধু বাদ দিয়ে কামরূপ বসাবার, এবং সে উপলক্ষে জাতীয় সঙ্গীতে হস্তক্ষেপের নমুনা পূর্বেই দেখেছিলাম... রথীবাবু তখনই প্রতিবাদ জানিয়ে পন্ডিতজীকে পত্র লিখেছিলেন। এখনও এ বিষয়ে কোনও শেষ সিদ্ধান্ত হয়নি।... হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছিল যে, যোগ্য ব্যক্তির মতামত নিয়েই পাঠপরিবর্তন সম্বন্ধে শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সুতরাং বিশ্বভারতীর মত না নিয়ে শেষ পরিবর্তন করা হবে না আশা করি।” রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর পিতার রচনার পরিবর্তনের প্রস্তাবে আপত্তি করে চিঠি দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে। সিন্ধু পাকিস্তানের একটি প্রদেশ, দেশভাগের পরে ভারতের অন্তর্গত নয় জেনেও নেহরু রবীন্দ্রনাথের উপর কলম চালানোকে সমর্থন করেননি। আজ পাঠ পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কাকে ‘যোগ্য ব্যক্তি’ গণ্য করা হয়, দেখার অপেক্ষায় দেশ।
দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-২৯
কিসের বিতর্ক?
‘রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সঙ্গীত এ বার বদলাতে চান স্বামী’ সংবাদটি (১৩-১২) পড়ে বিস্মিত হলাম। ‘জনগণমন’ ভারতবাসীর পরমপ্রিয়। কোটি কোটি মানুষের ভাবাবেগ এর সঙ্গে জড়িয়ে। এই সঙ্গীত বাংলা ভাষার গর্ব। গানটির কোনও শব্দ নিয়েই বিতর্ক তোলা অনুচিত। বিজেপির সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক তৈরি করেন। তাঁর প্রস্তাবটি খারিজ করা উচিত।
কাজি মুরশিদুল আরেফিন, খোলাপোতা, উত্তর ২৪ পরগনা
ঐকতান
‘সত্তার বহু স্বরেই ঐক্যের হারমোনিয়াম’ (৭-১২) নিবন্ধটি পড়ে প্রশ্ন জাগল, আমাদের পরিবারটিকে ভারতীয়ত্বের কোন গোত্রে ফেলা হবে? আমার আমেরিকান পুত্রবধূ ক্যাথলিক খ্রিস্টান, কানাডিয়ান শ্যালকের ইউরোপিয়ান স্ত্রীও খ্রিস্টান, আমার অস্ট্রেলিয়ান/ভিয়েতনামি নাতবৌ বৌদ্ধ, না মুসলিম বংশোদ্ভূত, জানি না। জানার প্রয়োজনও হয়নি। আমার এক তুতো ভাইপোর স্ত্রী মুসলমান। বিয়ের আগে বা পরে এরা কেউই পূর্বপুরুষের ধর্ম পরিবর্তন করেনি। নিউ জ়িল্যান্ডের ভাইঝির স্বামী নেপালি ব্রাহ্মণ। আমার সহোদরা ভগিনী নিষ্ঠাবতী ব্রাহ্মণী। এক তুতো বোন ওড়িয়া, এক ভাগ্নিজামাই পঞ্জাবি। আমি আমার বাঙাল গিন্নির সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের খেলা দেখার পর ইলিশের সঙ্গে চিংড়ির মালাইকারি সমান ভাবে উপভোগ করি। আমার অস্ট্রেলিয়ান নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে দেখতে ভারতীয় ব্যাটসম্যান ছক্কা মারলে হাততালি দিই, আউট হলেও উল্লাস করি। আমার পরিবার বহু স্বরে ঐক্যের হারমোনিয়াম বাজায়। তা এতটুকুও বেসুরো, বে-তাল হয় না।
অশোক কুমার দাস, কলকাতা-৭৮
দেশের স্বার্থ
সেমন্তী ঘোষের ‘বিদ্বেষই একমাত্র সত্য?’ (১৮-১২) পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া রাজনীতিতে নয়া নাগরিকত্ব আইন ও তার কুফল সম্পর্কে এক সুচিন্তিত বিশ্লেষণ। এই রাজ্য তথা দেশে অসংখ্য মানুষ আছেন, যাঁরা ১৯৭১ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত নানা সময়ে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছেন। নয়া নাগরিকত্ব আইনে এঁদের প্রতি কী করণীয়? নতুন নিয়মে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের পরে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের কী হবে? চোরাপথে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে এ দেশে এলে কে কবে এলেন, তার প্রামাণ্য নথি কী ভাবে দাখিল করা সম্ভব? বাস্তবে, সদ্য বাংলাদেশ থেকে আগত সবাইকে যদি ঢালাও নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গের, তথা ভারতের পুরনো নাগরিকরা সেটা খোলা মনে কতটা মানতে পারবেন?
সুতরাং, নয়া নাগরিকত্ব আইনে শুধুমাত্র মুসলিম ও অ-মুসলিম দ্বন্দ্ব নয়, নতুন ও পুরনো নাগরিকদের মধ্যেও এক ধরনের বিদ্বেষ সমাজ ও অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে নেতিবাচক ছাপ ফেলতে পারে। সর্বোপরি, আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু নীতির বাইরে গিয়ে যদি সিএএ অনুযায়ী নাগরিকত্ব প্রদান শুরু হয়, তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সীমানা ঘেরা পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বেড়েই চলবে। জাতপাত ও সাম্প্রদায়িক বৈর এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটে নতুন করে জর্জরিত হবে এই রাজ্যটি।
তন্ময় মণ্ডল, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
অগণতান্ত্রিক
সেমন্তী ঘোষ লিখেছেন, ধর্মীয় নির্যাতন যদি কোনও মুসলিমের উপর হয় (হয়তো তিনি বাংলাদেশের আহমদিয়া কিংবা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী মুসলিম), তিনি কিন্তু ভারতে নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ‘শরণার্থী’ আখ্যা পাবেন না, কেন না মুসলিমদের সেই অধিকার নেই। আহমদিয়ারা অ-মুসলিম নন। এঁরা মুসলিম ধর্মেরই এক সম্প্রদায়। এখন একই মুসলিম ধর্মের অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ কোনও মুসলিম দেশে অত্যাচারিত হলে, তার দায় ভারত সরকার নেবে কেন? ভারত কি ধর্মশালা? বিশ্বে পঞ্চাশটিরও বেশি মুসলিম দেশ আছে। একমাত্র হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এই ভারত। তাই মুসলিম দেশে অত্যাচারিত হিন্দুরা তাঁদের প্রাণ এবং মান বাঁচাতে এই ভারতেই শরণার্থী হচ্ছেন দেশভাগের পর থেকে। ভারত সরকারের দায়ও বেশি এই ছিন্নমূল হিন্দু শরণার্থীদের অনতিবিলম্বে নাগরিকত্ব প্রদান করার। এই দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে হিন্দু-মুসলিম প্রশ্নটি তোলা অগণতান্ত্রিক কাজ।
মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy