কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে আসন্ন কালীপুজো, ছট-সহ সমস্ত পুজোয় বাজি পোড়ানো অথবা বিক্রি নিষিদ্ধ।
অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে আসন্ন কালীপুজো, ছট-সহ সমস্ত পুজোয় বাজি পোড়ানো অথবা বিক্রি নিষিদ্ধ। এবং রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে ছটপুজোও নিষিদ্ধ। করোনা কালে যে সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের নেওয়া উচিত ছিল, সেই সিদ্ধান্ত আসছে কোর্টের মাধ্যমে। পুজো নিয়ে এ বার অন্তত রাজ্য সরকারের কঠোর ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল। বাস্তবে নেওয়া হল নমনীয় মনোভাব। উল্টে ছটপুজো রবীন্দ্র সরোবরে করতে দেওয়া নিয়ে সরকারি কর্তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন। ভোট রাজনীতির প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা কি করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি, করোনা-আক্রান্ত রোগীর সমস্যা বৃদ্ধি, বায়ু ও জলদূষণ বৃদ্ধি— এই সকল সমস্যা প্রতিরোধের ঊর্ধ্বে? অথচ সরকার যদি সিদ্ধান্ত নিত যে, নমনীয়তার রাজনীতি না করে পরিবেশ দূষণ রোধ করার ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব দেখানো হবে, তাতে শাসক দলের গরিমা যেমন বাড়ত, মানুষের সরকারের প্রতি আস্থাও অনেকটা বেড়ে যেত।
বাজির ধোঁয়া যে কোভিড রোগীদের পক্ষে মারাত্মক, ও বায়ুদূষণ বাড়লে করোনায় মৃত্যুহার বৃদ্ধি হওয়া প্রায় অবধারিত, সে বিষয়ে অনেক আগেই চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা সরকারকে সতর্ক করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রচার হয়েছে যথেষ্ট। সন্দেহ নেই, হাইকোর্টের রায় সরকারকে স্বস্তি দেবে। না হলে নাগরিকের প্রতি তাদের বাজি না-পোড়ানোর মোলায়েম অনুরোধ ছিল আসলে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি। প্রশ্ন উঠবে, অতঃপর মানুষের স্বার্থরক্ষায় কি সর্বদা নাগরিককে কোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে? আর প্রশাসন কি ভোটের স্বার্থে রাজ্যবাসীর প্রতি দায়িত্ব এড়িয়েই যাবে? আপাতত, আদালতের এই রায় যেন শিরোধার্য করে সরকার। এবং আমরা সবাই যেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি।
তপন কুমার দাস
কলকাতা-১২২
শব্দের দাপট
কালীপুজোয় বাজি নিষিদ্ধ হল। কিন্তু শব্দদূষণের কী হবে? আলোর রোশনাইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শব্দবাজি ফাটানো এবং জোরে জোরে মাইক বা বক্স বাজানো— এগুলো ছাড়া কালীপুজো হয় না বললেই চলে। গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্র অন্যান্য পুজোর তুলনায় কালীপুজোর সংখ্যা অনেক বেশি। মন্দির ও বাড়ির পুজো ছাড়াও পাড়ায়-পাড়ায়, ক্লাবে-ক্লাবে, রাস্তার মোড়ে-মোড়ে কালীপুজো হয়। প্রায়ই লক্ষ করা যায়, পাশাপাশি দু’টি পুজোকমিটির মধ্যে বাজি ফাটানো এবং মাইক বাজানোর প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাত্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শব্দের মাত্রা বাড়তে থাকে। সমস্যায় পড়তে হয় এলাকাবাসীদের, বিশেষ করে বয়স্ক এবং অসুস্থদের। তাই অসাধু বাজি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করার সঙ্গে সঙ্গে জোরে মাইক ও বক্স বাজানোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। সর্বোপরি, মানুষকে বোঝাতে হবে, বায়ুদূষণ যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে বিষবৎ, তেমনই শব্দদূষণও অত্যন্ত ক্ষতিকর। শুধু আলোর রোশনাইতেই দীপাবলি ও কালীপুজো করতে হবে।
লক্ষ্মীকান্ত মান্না
মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
ক’দিন বন্ধ?
অবশেষে মহামান্য আদালতের নির্দেশ জারি হল যে, কালীপুজোতে রাজ্যের সর্বত্র, সব ধরনের বাজি নিষিদ্ধ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা কি শুধুমাত্র কালীপুজোর দু’দিনের জন্য? যদি তা-ই হয়, তা হলে ঠিক কবে থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হবে? কারণ, এখন থেকেই শব্দবাজি অত্যন্ত দাপটে ব্যাটিং করে চলেছে। বাজি পোড়ানো ঠিক নয়, এটা জেনেও মানুষের একটা বড় অংশ স্বেচ্ছাচারিতার স্রোতে গা ভাসাবে। অবাধ্য শ্রেণি জানে যে, শাস্তি দেওয়ার কেউ নেই! এ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল মানুষকেই এমন কাণ্ডজ্ঞানহীনতার বিরুদ্ধে সম্মিলিত ভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে!
বিশ্বজিৎ কর
কলকাতা-১০৩
মাটির প্রদীপ
দীপাবলি বা ‘দেওয়ালি’ কথাটির অর্থ হল ‘প্রদীপের সমষ্টি’। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারত তথা বিশ্বের বহু দেশে এই উৎসব পালন করা হয়। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরস অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সূচনা হয়। নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মরিশাস, গুয়ানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সুরিনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিজিতে দীপাবলির দিন জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের নানা দেশে এই দিনটির গুরুত্ব রয়েছে। বাংলা, অসম, ওড়িশাতে হিন্দুরা এই দিনটি কালীপূজা হিসেবে উদ্যাপন করেন। প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন। এই প্রদীপ জ্বালানোর এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। কথিত আছে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপুজোর প্রচলন করেন। তাঁর পৌত্র অমঙ্গল বিতাড়নের উদ্দেশ্যে আতশবাজি পোড়ান। আবার, দীপাবলির দিনেই শ্রীরামচন্দ্র ১৪ বছর নির্বাসনের পর অযোধ্যায় ফিরে আসেন। রাজ্যবাসীরা তাঁকে ফিরে পেয়ে রাজধানী সাজিয়ে তোলেন ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে। জৈন মতে, মহাবীর ওই দিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন। শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও ৫২ জন রাজপুত্র ওই দিন মুক্তি পেয়েছিলেন বলে শিখরাও এই উৎসব পালন করেন। আর্য সমাজ ওই দিনটিই স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মৃত্যু দিন হিসেবে পালন করেন। ধনতেরসের দিন অনেকে নতুন বাসন, গয়না প্রভৃতি কিনে থাকেন। অনেক নিয়ম ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয় দীপাবলি উৎসব।
কিন্তু বর্তমানে এই উৎসবের ধারা পরিবর্তিত হয়েছে। মাটির প্রদীপের জায়গা করে নিয়েছে বৈদ্যুতিক আলো। বিশেষত এলইডি আলোতে মুড়ে ফেলা হয় বাড়ির চার পাশ। আতশবাজির রোশনাই থাকলেও অধিক ব্যবহৃত হয় বাজি পটকা জাতীয় দাহ্য বস্তু, যা খুবই বিপজ্জনক। নানা দুর্ঘটনা হামেশাই ঘটে দীপাবলির রাতে। বাজি, পটকার আচমকা শব্দে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে, হৃৎপিণ্ডের উপর তা প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বাজি, পটকা থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটায়। তবুও আমরা মেতে উঠি সব ভুলে।
যে কারণে দীপাবলির প্রচলন, সেই প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালিয়ে আমরা দিনটি পালন করি না কেন? মাটির প্রদীপের ব্যবহার দেশীয় কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে, বাজি, পটকা থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে মুক্ত হবে পরিবেশও।
নরসিংহ দাস
মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
অনুদান
পুজোকমিটিগুলোকে অনুদান না দিয়ে, ইমাম ভাতা, পুরোহিত ভাতা বন্ধ করে, যদি অনুমোদিত বাজি কারখানা ও তার কর্মীদের টাকা দিয়ে বাজি তৈরি থেকে বিরত করা যেত, তাতে নাগরিক এবং পরিবেশ রক্ষা পেত। প্রশাসনকে অনুরোধ, জনগণের শুভবুদ্ধি জাগিয়ে তোলার আবেদন না করে, বাজি নিষিদ্ধ করার কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।
অশোক দাশ
রিষড়া, হুগলি
প্রাণবায়ু
বাজির বিষধোঁয়ায় সুস্থ মানুষ হাঁসফাঁস করেন, আর অসুস্থ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। যাঁরা করোনায় আক্রান্ত, তাঁদের কথা ভাবুন। এই ভাইরাসের মূল কোপ পড়ে ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে। আমাদের আশেপাশে প্রচুর মানুষ এখন আক্রান্ত, অনেকেই হোম কোয়রান্টিন-এ আছেন। কালীপুজো ও দীপাবলিতে শব্দ ও ধোঁয়াভরা বাজি পুড়িয়ে আনন্দ করতে গিয়ে আমরা প্রতিবেশী অসুস্থ মানুষটার প্রাণবায়ু বার করে দেব না তো!
অমিত সিকদার
নিউ ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy