দোলন গঙ্গোপাধ্যায় ‘শুধু অন্যায় বললে কম হয়’ (২২-১২) লেখাটিতে স্বল্প পরিসরে ‘লাভ জেহাদ’ সম্পর্কিত আইন ও তার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইসলাম-বিদ্বেষী দিকটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘মুসলমান যুবকের সঙ্গে হিন্দু নারীর বিয়ে আটকানোর পিছনে ভারতীয় রাষ্ট্রের যে ব্রাহ্মণ্যবাদী কট্টরপনা এখন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে, তা হল হিন্দু নারীর যৌন-স্বাধীনতার উপর নিয়ন্ত্রণ।’’ শুধু যৌন-স্বাধীনতা নয়, নারীর সব স্বাধীনতার উপর পুরুষের ক্ষমতা আরোপ করার চেষ্টার প্রকাশ এই আইন। মেয়েটির পছন্দ, ইচ্ছে, ভালবাসা, কথা বলা— সব নিয়ন্ত্রণ করে আইনটি। দুই ভিন্ন ধর্মের নারী-পুরুষ বিবাহের জন্যে বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪, খাতায়-কলমে থাকলেও, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির উৎপাতে বিয়ের এক মাস আগে দেওয়া বেশির ভাগ নোটিসই বিয়েতে বাস্তবায়িত হয় না। সাধারণত সমাজ বিয়ের পর পুরুষের নাম-পদবি-ধর্ম নারীদের নিতে বাধ্য করে। তাই, হিন্দু মেয়ে মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করলে তাঁকে ধর্মান্তরিত হতে হয়। হিন্দু সমাজেও তো নারীদের বিয়ের পর স্বামীর পদবি গ্রহণের রীতি আছে। দুটো ব্যাপারই এক নয় কি? জোর করে ধর্মান্তকরণ নিষিদ্ধ করার জন্য আইন প্রথম আনা হয় ওড়িশায়, ১৯৬৭-তে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার অবৈধ ধর্মান্তকরণ নিষিদ্ধ করার অধ্যাদেশে (২০২০) ‘বিয়ে’-কে জুড়েছে, যা আগের কোনও আইনে ছিল না। আইনটি অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক।
সুমন চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৫
হে কালবৈশাখী
ঈশা দাশগুপ্তের ‘যখন প্রতিবাদে উত্তাল গৃহবধূরা’ (২১-১২) প্রবন্ধ সূত্রে আরও কিছু কথা। ‘‘ফসলের তেভাগা চাই/ জান দুবো— ধান দুবোনি ভাই’’(পূর্ণেন্দু পত্রী)— তেভাগার এই রণধ্বনিতে সে দিন উচ্চকিত হয়েছিল রাজবংশী রমণী জয়মণির নাম। কৃষক আন্দোলনের শক্ত ঘাঁটি দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও শহরের বালিয়াডিঙির জয়মণি সিংহ কৃষক নারীদের সংগঠিত করে তেভাগার লড়াইকে উজ্জীবিত করেছিলেন। কৃষক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই জয়মণিকে সম্মান জানিয়ে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন— ‘‘জয়মণি, স্থির হও!/ হে কালবৈশাখী, শান্ত হও।’’ ১৯৪৬-৪৭’এর রক্তক্ষয়ী এই তেভাগা আন্দোলনের শরিক হন আর এক নারী। জলপাইগুড়ির দেবীগঞ্জের সুন্দরদিঘি গ্রামের বিধবা বৃদ্ধা পুণ্যেশ্বরী দেবী। যিনি ‘বুড়িমা’ বলে পরিচিত ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে এই আন্দোলন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে খুলনা, রংপুর, ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, মালদহ, ময়মনসিংহেও। আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বে (১৯৪৮-৪৯) তেলঙ্গানার প্রেরণায় গড়ে ওঠে কাকদ্বীপের তীব্র সংগ্রাম। পুলিশের গুলিতে নিহত হন কৃষক রমণীরাও। নিহত কৃষক রমণী অহল্যার উদ্দেশে সলিল চৌধুরী লিখেছিলেন কবিতা ‘শপথ’। সশস্ত্র পুলিশ ও জোতদার জমিদারের লেঠেলদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন নাচোলের ইলা মিত্র, হুগলির পাঁচুবালা, ময়মনসিংহের রাসমণি, নাড়াইলের সরলারা। কৃষক সংগ্রামের প্রেরণাদাত্রী হিসেবে তাঁরা মুক্তিকামী মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। রক্তক্ষয়ী তেভাগায় তাঁরা সে দিন নিরস্ত্র ভাবে অকুতোভয়ে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন— ‘‘শুধু তো গুলি করবে; করো গুলি।’’ (ছবি বসু, রচনা সংকলন, সম্পাদনা যশোধরা বাগচী)। প্রয়োজনে এঁরা ফসল আগলে পড়ে থাকতেন মাঠে। বর্বর দমন নীতির পুলিশি অভিযানকে প্রতিহত করেছিলেন সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে।
তেভাগার অভিঘাতে সে দিন কলম ধরেছিলেন অনেকে। উঠে এসেছিল গান-গল্প-কবিতা, যা কৃষিজীবী নরনারীকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। মুক্তিকামী মানুষের দেশে দেশে সে দিন কবি গোলাম কুদ্দুস ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ইলা মিত্রের নাম। বিনয় রায়ের গানে পাই ‘‘চন্দনপিঁড়ির সরোজিনী অহল্যার মা’’-র কথা। কবি রাম বসুর কবিতা ‘পরান মাঝি হাঁক দিয়েছে’ অনন্য রচনা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হারানের নাতজামাই’ গল্পে দেখি, সাহস ও সূক্ষ্ম বুদ্ধি দিয়ে ময়নার মা অদ্ভুত কৌশলে কৃষকদের সংগ্রামী নেতাকে নিজের জামাই বলে পরিচয় দিয়ে পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তেভাগা-ভিত্তিক গল্প নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বন্দুক’, স্বর্ণকমল ভট্টাচার্যের ‘মন্ত্রশক্তি’ চিরস্মরণীয়।
সুদেব মাল, খরসরাই, হুগলি
কেবল বোঝা?
সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রবীণ নাগরিকদের করুণ অবস্থার কথা জানতে পারি। কখনও দেখি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে বৃদ্ধ, অথর্ব মা-বাবাকে সন্তান ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না। ফলে তাঁরা হাসপাতালে অবাঞ্ছিত, পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়ছেন। স্বাভাবিক ভাবে হাসপাতালে জায়গা অকুলান হওয়ায় তাঁদের স্থান রাস্তায় হচ্ছে (‘প্রবীণদের ফুটপাতে ফেলে যাচ্ছে পরিবার’, ২৮-১২)। যে মানুষ ছাড়া পরিবারই থাকত না, তাঁকেই আপনজন অবহেলা, বঞ্চনার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সভ্য দেশে এমন ঘটনা অমার্জনীয় অপরাধ হওয়া উচিত।
এই ধরনের মানুষরা হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়েও মুক্তি পান না। কিছু মানুষ মুক্তি পেতে চান না, আর কিছু মানুষ বার বার হাসপাতালে আসেন, শুধু আশ্রয়ের জন্য। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কারণে এই সমাজে এই সব ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধ মানুষটি শারীরিক ও আর্থিক অক্ষমতার জন্য পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ান।
বৃদ্ধ, অসহায়দের যথোপযুক্ত সামাজিক সুরক্ষার অভাবের জন্য প্রবীণ নাগরিকদের এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে। যদিও সরকার পক্ষ থেকে বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতার মতো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করা হয়েছে, কিন্তু তা অপ্রতুল। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে প্রস্তাব, প্রবীণ নাগরিকদের জন্য জাতীয় হেল্পলাইন চালু করা হোক, যেখানে তাঁরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। অসহায়, অক্ষম এবং অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল প্রবীণদের বাধ্যতামূলক পেনশন যোজনার মধ্যে আনা হোক। হাসপাতালে প্রবীণদের জন্য শয্যা সংরক্ষিত রাখা হোক। সরকারের পক্ষ থেকে নজর রাখা হোক, যাতে এক জনও প্রবীণ খাদ্যাভাবে কষ্ট না পান। দরকার হলে তৈরি করা খাবার এই নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক। তবেই বরিষ্ঠ নাগরিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
দেবাশিস চক্রবর্তী, মাহেশ, হুগলি
পরিত্যক্ত
‘প্রবীণদের ফুটপাতে ফেলে যাচ্ছে পরিবার’ খবরটি মর্মস্পর্শী। ঔরঙ্গাবাদের ঘটনার কথা জেনে বহু বছর আগে দেখা গঙ্গাসাগরের স্মৃতি মনে ভেসে ওঠে। সেখানে ভোররাতে পুণ্যস্নানের পর ক্রন্দনরত বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দল আপনজনদের খোঁজে আকুল। মন ভারাক্রান্ত করে দেওয়া এমন দৃশ্যের অবতারণা যে দেশের শহুরে হাসপাতালেও ঘটবে, সে কথা এই একুশ শতকে ভাবাই যায় না। আমরা কোন অন্ধকার জগতে প্রবেশ করছি?
সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
অশিষ্ট
‘প্রতিবাদ: বাংলা আকাদেমি চত্বরে বিশিষ্টদের জমায়েত’ ক্যাপশন-সহ যে ছবিটি প্রকাশিত হয়েছে (২৮-১২), তাতে বিশিষ্টজনেদের হাতে একটি ব্যানার দেখা যাচ্ছে। তাতে লেখা, ‘‘অমর্ত্য সেনের অপমান বাঙালির অপমান।’’ আমি সহমত। কিন্তু ছবিতে এঁদের পাশেই প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এক জন। তাতে লেখা, ‘‘চাড্ডি চায় বাঙালির হাড্ডি!’’ আমার প্রশ্ন, এটা কি বিশিষ্টদের প্রতিবাদের ভাষা? এমন ভাষায় প্রতিবাদ করলে, অমর্ত্য সেনের অপমান হয় না? সর্বোপরি, এতে
কি বাঙালি এবং বাংলা ভাষাকে কলুষিত করা হয় না? প্রতিবাদ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবাদের ভাষা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শঙ্খমণি গোস্বামী, কলকাতা-১২২
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy