Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Letters to editor

সম্পাদক সমীপেষু: পথ খোঁজা দরকার

এ রাজ্যে কৃষিনির্ভর শিল্পে ইতিমধ্যেই অনেক ছোট-বড় পুঁজিপতি প্রবেশ করেছেন। আশির দশকে দেখেছি মালদার একটি সংস্থা আমের জ্যাম-জেলি রাশিয়াতে পাঠাচ্ছে।

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০০
Share: Save:

নতুন কৃষি আইনে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের কী ক্ষতি হবে? পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ব্লকে যে মান্ডিগুলো রয়েছে, সেগুলো এমন এলাকায়, যেখানে অধিকাংশ ক্ষুদ্র কৃষক সহজে পৌঁছতেই পারেন না। যদি বা পারেন, তা হলে গিয়ে দেখবেন সেগুলি দালাল পরিবেষ্টিত। সরকারি দামে ফসল বিক্রির সুযোগই চাষিরা পাবেন না। কারণ, সরকারি মূল্যে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম। সহায়ক মূল্য পান শুধু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। কাজেই ক্ষুদ্র কৃষক সরকার-নির্ধারিত দামে তাঁদের ফসল বিক্রির সুযোগ আগেও যেমন পাননি, শিল্পপতিরা ঢুকলেও হয়তো পাবেন না।

এ রাজ্যে কৃষিনির্ভর শিল্পে ইতিমধ্যেই অনেক ছোট-বড় পুঁজিপতি প্রবেশ করেছেন। আশির দশকে দেখেছি মালদার একটি সংস্থা আমের জ্যাম-জেলি রাশিয়াতে পাঠাচ্ছে। পরবর্তী কালে আরও অনেক জ্যাম-জেলির কারখানা এসেছে। একটি সুপরিচিত সংস্থা, যা চ্যবনপ্রাশ প্রভৃতি স্বাস্থ্যবর্ধক পণ্য প্রস্তুত করে, চুক্তির ভিত্তিতে কল্যাণীর আশেপাশে ওষধির চাষ করাচ্ছে বহু দিন ধরেই। এখন আর বারাসতের ময়নার হাটে টমেটো বিক্রি করতে না-পেরে কৃষকরা টমেটো রাস্তাতেই ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরে যান না। উত্তর দিনাজপুরের তুলাইপাঁজি চাল এখন কলকাতার শপিং মলগুলোতে পাওয়া যায়। চুক্তিতে আলুর চাষ তো অনেক দিন ধরেই চলছে। চুক্তি চাষে কৃষকদের ক্ষতি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে, এমন শুনিনি। বাংলার কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেট অনুপ্রবেশ নতুন বিপদ আনতেই পারে। আবার নতুন সুযোগও আনতে পারে। সুযোগের সম্ভাবনাগুলো ক্ষুণ্ণ না করে কৃষকদের বিপদের সম্ভাবনা থেকে বাঁচিয়ে রাখার পথ খোঁজা উচিত।

অনুপ কুমার তোকদার

কলকাতা-৫৯

এ কেমন কমিটি?

কৃষি আইনের বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট চার সদস্যের যে কমিটি তৈরি করেছে, কৃষক সংগঠনগুলি তার উপর আস্থা রাখতে পারেনি (‘প্রশ্ন কোর্টের কমিটি নিয়ে,’ ১৩-১)। তার কারণ, কমিটির চার সদস্যই কৃষি আইনের সমর্থক বলে পরিচিত। আইনের বিরোধীরা কী করে সুবিচার আশা করতে পারেন এই কমিটি থেকে? আইন পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বিচারের জন্য কোনও কমিটি তৈরি হলে সেখানে বিভিন্ন মতের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে, এটাই কি প্রত্যাশিত নয়? একই কারণে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে অপরাধ-সংক্রান্ত আইনের সংশোধন নিয়ে। এই আইনগুলি কী ভাবে যুগোপযোগী করা যায়, তা সুপারিশের জন্য গত মে মাসে কমিটি তৈরি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে কোনও মহিলা নেই। নেই মুসলিম, দলিত, বা এলজিবিটি প্রতিনিধি। দক্ষিণ ভারত, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের কেউ নেই। পাঁচ সদস্যই তথাকথিত উচ্চবর্ণ, চার জন দিল্লির, এক জন মধ্যপ্রদেশের। তেমনই, সেপ্টেম্বরে সংস্কৃতি মন্ত্রক ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, যা বিগত ১২ হাজার বছরে ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের ক্রমবিকাশের রূপরেখা রচনা করবে। এই কমিটিতেও কোনও মহিলা, মুসলমান, দলিত নেই। উত্তর-পূর্ব ভারত বা দক্ষিণ ভারতের নাগরিক নেই। সবাই ‘উচ্চবর্ণ’, একই ভাবধারার মানুষ। এত কাল আইন বদল বা নতুন আইন সুপারিশের দায়িত্ব পালন করেছে আইন কমিশন। তাকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে কেন? কেনই বা আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদ দীর্ঘ কাল শূন্য? বিচার ও আইন মন্ত্রক এড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেন আইন সংশোধনের কমিটি তৈরি করছে?

আরও আপত্তি, আইন তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মতামত ও অংশগ্রহণ আবশ্যক। সেই শর্তকে হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কমিটির ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ গোপন রেখে, কমিটির তরফে কোনও বক্তব্য না রেখে, শুধু কিছু প্রশ্নমালা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ইমেলে বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছিল খুব কম সময়ের ভিতর, তা-ও অতিমারির মধ্যে। মূল ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি) তৈরিতে সময় লেগেছিল ৩৪ বছর, ফৌজদারি আইনের (সিআরপিসি) একাংশ সংস্কার করতে ১০ বছর। আজ অপরাধ সংক্রান্ত চারটি আইন— আইপিসি, সিআরপিসি, সাক্ষ্য আইন (ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট) এবং মাদক আইনের সংশোধনের সুপারিশ করার জন্য দেওয়া হয়েছে মাত্র ছ’মাস! সবাই মানছেন, এই আইনগুলোর খোলনলচে বদলের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেটা তাড়াহুড়ো করে, চুপিসারে হবে কেন? পশ্চিমবঙ্গে এ ব্যাপারে তেমন প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে না।

রঞ্জিত শূর

কলকাতা-৭৫

চাই নমনীয়তা

‘রাষ্ট্র ও প্রতিবাদী’ (সম্পাদকীয়, ৮-১) সময়োপযোগী। রাজধানীর উপকণ্ঠে বিক্ষোভরত কৃষকদের প্রতি রাষ্ট্রের আচরণ যে গণতন্ত্রের পরিপন্থী, তাতে সন্দেহ নেই। ইতিপূর্বে বিক্ষোভকারীদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ও ‘খালিস্তানি’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল! গণতন্ত্রের কিছু স্বাভাবিক শর্ত রাষ্ট্রকে মানতেই হয়। নরেন্দ্র মোদীর শাসনাধীন রাষ্ট্রযন্ত্র যেন ভুলতে বসেছে বিরোধীর অস্তিত্ব। তাঁরা নিজেরা যা ঠিক বলে মনে করছেন, দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ ৪৫% ভোট পেয়েছিল। বাকি ৫৫% নাগরিকও দেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করেন। তাঁরা দেশের শত্রু নন। বিক্ষোভরত কৃষকেরা এখনও পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা উপেক্ষা করছেন। রাষ্ট্রের কাছ থেকেও তাঁরা নমনীয়তা আশা করবেন, স্বাভাবিক।

রাজা বাগচি

গুপ্তিপাড়া, হুগলি

আইনে যা আছে

‘অনিশ্চয়তা বাড়ছে, ক্ষোভও’ (৪-১) নিবন্ধে সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “নতুন কৃষি আইন কৃষকদের ঝুঁকি প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ নীরব।” চুক্তি চাষে কোনও এক পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করলে শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষের কার কী হবে সে নিয়ে প্রতিবেদকের মতে, আইনে তেমন কিছু বলা হয়নি। বিষয়টি তেমন নয়। আইনে বলা হয়েছে, বিরোধ দেখা দিলে মীমাংসার জন্য একটি বোর্ড গঠন করা হবে। সেই বোর্ডে থাকবেন বিডিও, এডিও, এসডিও বা এডিএম স্তরের এক জন সরকারি আমলা, কোম্পানির প্রতিনিধি এবং চাষির প্রতিনিধি। এ জাতীয় বোর্ডে যে গরিব চাষিদের পরাজয় হবে, তাতে বিশেষ সন্দেহ নেই। কেন না কোম্পানির প্রতিনিধি থাকবেন এক জন উচ্চশিক্ষিত আইনজ্ঞ আর গরিব চাষির প্রতিনিধি কে হবেন, তা সহজেই অনুমেয়। আবার পরাজিত হয়ে চাষি অন্য কোথাও আবেদন করবেন, তারও উপায় নেই। ফলে কৃষকদের ঝুঁকি বাড়বে। তবে তা নিয়ে আইন মোটেই নীরব নয়।

গৌরীশঙ্কর দাস

সাঁজোয়াল, খড়্গপুর

শব্দদানব

বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় রায় দিয়েছিলেন, কেউ কাউকে জোর করে শব্দ শোনাতে পারে না। জয়ন্ত বসুর ‘ভোটবাজারে পরিবেশে নম্বর কই’ (৮-১) পড়ে মনে পড়ল। নববর্ষ ও পিকনিকের জন্য ডিজে ও শব্দবাজির পর এখন শুরু হয়েছে অষ্টপ্রহর কীর্তন। আর আছে ভোরের আজান। আজানের শব্দ কমানোর কথা বললে শুনি, তাঁদের শব্দ মাত্র দু’-তিন মিনিট, কীর্তন তো চলে সারা রাত। আবার কীর্তনের ব্যবস্থাপকরা বলেন, ৩৬৫ দিন আজান হয়, কীর্তন তো মাত্র কয়েক দিন। থানা বলে, তাদের শব্দ মাপার যন্ত্র নেই। সামনে ভোট, শব্দের অত্যাচার বাড়বে। ‘শব্দ শহিদ’ দীপক দাস হতে চায় না কেউ। তাই সবাই নীরব।

অভীক রায়

অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

Letters to editor Farmer's movement New farm bill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy