Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Democracy

সম্পাদক সমীপেষু: গণতন্ত্র ও উন্নয়ন

অন্য দিকে পরিসংখ্যান বলছে, গত লকডাউনে ৫০ হাজার লোক কর্মহীন হয়েছেন। কিন্তু, নতুন করে আরও ১৯ জন শতকোটিপতির উদয় হয়েছে।

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:১৬
Share: Save:

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘মুখ ফস্কে মনের কথা’ (১১-১২) নিবন্ধটিতে তাঁর তীব্র শ্লেষ, “গণতন্ত্র উন্নয়নের বাধা নয়, এই উন্নয়ন গণতন্ত্রের বাধা”— একশো ভাগ সমর্থনযোগ্য। অতিমারির বিপন্নতার মধ্যে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগে যে কৃষি ও শ্রম আইন বদলানো হল, তা জনস্বার্থ বিরোধী। যদি এখানে কৃষকদের মতামত বা বিরোধী মত চাওয়া হত, যা গণতন্ত্রের আবশ্যক শর্ত, তা হলে এই আইন পাশ হতে পারত না। কৃষকের ঘাম-রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ফসলের লাভের ফয়দা কর্পোরেট পুরোপুরি লুটবে, আর কৃষককে পরিণত করবে ভূমিদাসে! এর বিরুদ্ধে কৃষকেরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়বেন না তো কী করবেন? এ তো তাঁদের বাঁচার লড়াই। তাই দিল্লির শীত সহ্য করেও খোলা আকাশের নীচে তাঁরা মাটি কামড়ে পড়ে আছেন। দিল্লি ঘিরে ধরে সমস্ত যানবাহন বন্ধ করে শাসনযন্ত্র অচল করার প্রতিস্পর্ধা দেখাচ্ছেন।

অন্য দিকে পরিসংখ্যান বলছে, গত লকডাউনে ৫০ হাজার লোক কর্মহীন হয়েছেন। কিন্তু, নতুন করে আরও ১৯ জন শতকোটিপতির উদয় হয়েছে। এর মধ্যেই শ্রম আইন পাশ হল যে, শ্রমিককে যত ঘণ্টা খুশি খাটিয়ে নেওয়া যাবে, যখন খুশি ছাঁটাই করা যাবে। লেখক যথার্থ বলেছেন, যে দেশে অধিকাংশের ভাত, কাপড়, রোজগার নেই, জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা নেই, তার আবার উন্নয়ন কী? গণতন্ত্রের সলিলসমাধি ঘটেছে। এমতাবস্থায় বামপন্থীদের কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনকে সর্বাত্মক বিপ্লবের রূপ দিতে হবে। তবেই শাসক বাধ্য হবে জনগণের স্বার্থ দেখতে, যাঁদের কল্যাণের কথা বলে তারা ক্ষমতায় এসেছে।

শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

সাহসকে কুর্নিশ

‘মুখ ফস্কে মনের কথা’ প্রসঙ্গে কিছু কথা। কৃষকদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে, না কি সরকার নতুন আইনে কিছু সংশোধন কিংবা পরিবর্ধন করবেন— ভবিষ্যৎ তার উত্তর দেবে। আপাতত কৃষকদের এককাট্টা মনোভাব, প্রবল প্রতাপান্বিত সরকারের চোখে চোখ রেখে কথা বলার যে সাহস তাঁরা দেখাচ্ছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে।

এখন যাঁরা আন্দোলনের পুরোধা, তাঁরা যে দেশের সমগ্র কৃষিজীবী জনগণের স্বার্থেই সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ, এটা বলার সময় এখনও আসেনি। এত দিন পর্যন্ত কৃষিতে কর্পোরেটদের তেমন ভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। দীর্ঘ লকডাউন শিল্পক্ষেত্রে যে মন্দা এনেছে, তার প্রভাব সরাসরি শিল্পপতিদের উপরেই পড়বে। করোনা আবহে দেশের অর্থনৈতিক হাল এমনিতেই নিম্নগামী, কারণ, দেশের সিংহভাগ জনগণ তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছেন। অতএব বাকি রইল কৃষিক্ষেত্র। সেই কৃষিক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পেলে ধুরন্ধর কর্পোরেটরা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই শুধরে নিতে পারবে।

নিবন্ধকার গণতন্ত্রের যে প্রাথমিক শর্ত মানার কথা বলেছেন, তা আদৌ মানা হয় কি? গণতন্ত্রে বিরোধী দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বললেও, রাষ্ট্রনায়কেরা এই শর্ত মানতে নারাজ। তাঁরা জানেন, ক্ষমতায় দীর্ঘ দিন থাকতে চাইলে আগে বিরোধী দলের অস্তিত্বকে বিলীন করতে হবে। এ ছাড়াও এক দল মানুষ আছেন, যাঁরা ভাল-মন্দ বিচারের ঊর্ধ্বে উঠে নয়া কৃষি আইন যে কৃষকদের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই পাশ করা হয়েছে, সেটা বোঝাতে ব্যস্ত। এই মানুষদের সংখ্যাটাও নগণ্য নয়। এঁরাই সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে আইনটির পক্ষে সওয়াল করছেন। তাই প্রতিবাদ, প্রতিরোধ মুখ থুবড়ে পড়বে বলেই মনে হয়।

রাজা বাগচি, গুপ্তিপাড়া, হুগলি

স্বেচ্ছাচার

‘মুখ ফস্কে মনের কথা’ নিবন্ধটির প্রেক্ষিতে বলতে চাই, ভারতের ন্যায় সুবৃহৎ দেশের গণতন্ত্রে যে জনসাধারণের অধিকারবোধে নানা ফাঁকফোকর থাকবে— এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই। তবু ধাক্কা লাগে যখন শোনা যায় যে, দেশে গণতান্ত্রিক অধিকারের অছিলায় স্বেচ্ছাচারের প্লাবন ডেকেছে!

আবহমান কাল ধরে সংস্কারের নামে একের পর এক সরকার কর্পোরেটদের ধ্বজা তুলে ধরতে গিয়ে জনগণের স্বার্থ বিপন্ন করেছে। কর্পোরেট কর্তাদের আবদার অনুযায়ী সংস্কারের তুফান তুলে প্রকৃত অর্থে দেশের কৃষক-শ্রমিকদের কল্যাণ যে হয় না, তার প্রমাণ স্বাধীনতা-উত্তর দেশের খেটে-খাওয়া মানুষদের বর্তমান দুরবস্থা। গরিব চাষিদের ফড়েদের হাত থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে দেশের সরকার তাঁদের ‘কর্পোরেট’ নামক হাঙরদের মুখে ফেলে দিচ্ছে। মুনাফালোভী কর্পোরেট কর্তারা বিনাস্বার্থে শুধুমাত্র কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য তুলে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করবেন, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। মনে হয়, ‘গণতন্ত্র’ নামক ফলটির অধিকার সাধারণ গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষের নেই। এর সিংহভাগই পুঁজিপতি শ্রেণির দখলে।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

বিকল্পের খোঁজ

অগ্নিরূপ সরকার ‘এই আইন ছাড়া বিকল্প কী আছে’ (১৪-১২) নিবন্ধের উপসংহারে লিখেছেন, “কৃষি বিল আসুক, কর্পোরেটরা তাদের নতুন প্রযুক্তি নিয়ে বাজারে প্রবেশ করুক। কিন্তু সেই অজুহাতে সরকার যেন সব দায়িত্ব এড়িয়ে কৃষি থেকে বেরিয়ে না যায়।” লেখক মনে করেন, এই আইন অপরিহার্য। কিন্তু এই আইনে কে উপকৃত হবে? লেখক লিখেছেন, “প্রথম বিলটি কৃষি পণ্যে মুক্ত বাণিজ্য সম্পর্কিত। এই বিল কার্যকর হলে কৃষক মান্ডির বাইরেও তাঁর পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।” কৃষি পণ্যে মুক্ত বাণিজ্য আগে কি ছিল না? কৃষকের মনোমতো জায়গায় ফসল বিক্রিতে বাধা ছিল না। তাঁকে মান্ডিতে যেতে হত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের জন্য।

দ্বিতীয়ত, চুক্তি চাষ ভয়ঙ্কর পদ্ধতি। চুক্তি হবে প্রবল প্রতাপান্বিত কর্পোরেটদের সঙ্গে, আর্থিক দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল কৃষকের সঙ্গে। চুক্তির শর্ত শুধু দাম নয়, ফসলের গুণমান নিয়েও হবে। ফসলের গুণমান নির্ভর করবে বীজ, সার, জল, কীটনাশক এবং প্রাকৃতিক পরিস্থিতির উপর। কোনওটার উপর কৃষকের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফসলের গুণগত মান বিচার করবে চুক্তিবদ্ধ কর্পোরেট সংস্থা। ফসলের মানের অজুহাতে দাম কমিয়ে দিলে কৃষক কেমন লাভবান হবেন, সে কথা বুঝতে কি ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে? অত্যাবশ্যক পণ্যের তালিকা থেকে অবশ্য প্রয়োজনীয় দানাশস্যকে মুক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ হল, খাদ্যশস্যকে বিনিয়ন্ত্রিত করে কর্পোরেটদের লুটের সুযোগ করে দেওয়া হল।

কৃষি উৎপাদন নির্ভর করে বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদির উপর। সেচের প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো। বাকি কৃষি উপকরণে কৃষকরা কর্পোরেটদের অবাধ লুণ্ঠনের শিকার। ফলে কৃষির উৎপাদন ব্যয় ক্রমবর্ধমান। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ ছিল, উৎপাদন ব্যয়ের দেড় গুণ সহায়ক মূল্য দিতে হবে। সরকার সে দায়িত্ব অস্বীকার করল। প্রচার করা হচ্ছে, মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে চাষিদের মুক্ত করার জন্য এই আইন। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের
হটিয়ে দিয়ে কর্পোরেটদের লুটের একচেটিয়া ব্যবস্থায় চাষির কী উপকার হবে? উপভোক্তারই বা কী উপকার হবে?

নরেন বেরা, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Democracy Development মুখ ফস্কে মনের কথা Letters to Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy