আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। — ফাইল চিত্র।
আদানি গোষ্ঠীর দুর্নীতি সম্পর্কে লোকসভায় বিরোধী সদস্যরা তদন্তের জোরালো দাবি তুললে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা মানার ধারকাছ দিয়েও যাননি। এমনকি প্রত্যুত্তরে তিনি আদানিদের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যাঁরা বিনামূল্যে রেশন এবং অন্য সুবিধা পেয়েছেন, তাঁরা কি এই মিথ্যে, নোংরা অভিযোগ, গালিগালাজে বিশ্বাস করবেন? তিনি দুঃসময়ে তাঁদের পাশে থেকেছেন। তাই দেশের ১৪০ কোটি মানুষের আশীর্বাদ সুরক্ষা কবচের মতো মোদীর সঙ্গে রয়েছে (আদানি প্রশ্নে চুপই, মোদীর ঢাল জনতা, ৯-২)।
কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভুলে যাচ্ছেন, এগুলি সরকারের ন্যূনতম কর্তব্য। প্রশ্ন তো এখানে আদানিদের দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সরকারের যোগসাজশ নিয়ে। দেশের মানুষের জন্য সরকার কী করেছে না করেছে, তা নিয়ে নয়। তবে কি প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা করছেন, তদন্ত হলে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়বে? গত এক দশকের অভিজ্ঞতায় দেশের সাধারণ মানুষ জানেন, রকেট গতিতে আদানিদের দেশের এক নম্বর পুঁজিপতিতে পরিণত হওয়ার পিছনে এক সময়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, এবং তার পর দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে ধনীদের তালিকায় আদানি ২০১৪ থেকে ২০২২-এর মধ্যে ৬০৯ থেকে ৩ নম্বরে পৌঁছে গিয়েছেন। কিছু দিন আগে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সরকারকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আদানিদের শেয়ার কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত বিষয়টি সেবি এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের এক্তিয়ারে, এর সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।
পাইকারি হারে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো যে আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া হল, প্রাকৃতিক সব সম্পদ যে নির্বিচারে তারা দখল নিচ্ছে, এ সব কি সরকারের সম্মতি ছাড়াই হয়ে গেল? অস্ট্রেলিয়ায় আদানিদের কয়লা খনি কেনার জন্য স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ তৎক্ষণাৎ মঞ্জুর করতে স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানকে যে জরুরি তলবে অস্ট্রেলিয়ায় উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা কি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়াই? তা-ই যদি হয়, তবে তো বলতে হয়, সরকার নয়, স্টেট ব্যাঙ্ককে নিয়ন্ত্রণ করেন গৌতম আদানিই। ২০২২-এর জুনে যখন শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন, তখন সে দেশের বিদ্যুৎ পর্ষদের চেয়ারম্যান প্রকাশ্য শুনানিতে বলেছিলেন যে, রাষ্ট্রপতি রাজাপক্ষে তাঁকে বলেছেন, আদানিকে সরাসরি প্রকল্প দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে চাপ দিয়েছেন। এটা কী প্রমাণ করে? প্রধানমন্ত্রীর প্রায় প্রতিটি বিদেশ সফরের সঙ্গী হয়েছেন আদানি। সফর শেষে সেই দেশগুলির সঙ্গে আদানিদের বিরাট ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে। অর্থ দফতর এবং নীতি আয়োগের আপত্তি সত্ত্বেও যে দেশের ছ’টি বিমানবন্দর কোনও রকম পূর্ব অভিজ্ঞতাহীন আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া হল, তা কার নির্দেশে?
প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভাবছেন, তদন্ত এক বার শুরু করে দিলে তা আপন গতিতে শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছবে, তা তিনিও জানেন না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি এবং এলআইসি কার নির্দেশে আদানিদের শেয়ার অনেক বেশি দামে কিনেছিল, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে নরেন্দ্র মোদী সত্যিই চাপ দিয়েছিলেন কি না, আদানিদের ‘উপকার’ করার বিনিময়ে বিজেপি উপকৃত হয়েছে কি না, আদানিরা বিজেপিকে কত টাকা দিয়েছে, তদন্তে সবই উঠে আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তদন্ত এড়িয়ে আসলে অভিযোগকেই মেনে নিচ্ছেন।
সমর মিত্র, কলকাতা-১৩
তৃণমূলের ভূমিকা
‘রাজ্যের স্বার্থে’ (৮-২) সম্পাদকীয় প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাই। আদানি বিতর্ককে কেন্দ্র করে মোদী-বিরোধিতায় তৃণমূল দলের তেমন সক্রিয় ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। টাটাগোষ্ঠী এই বাংলা থেকে চলে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত কোনও শিল্পগোষ্ঠী এই রাজ্য বিনিয়োগ করতে উৎসাহ বোধ করেনি। সেখানে আদানি গোষ্ঠী বিনিয়োগের ইচ্ছা দেখিয়েছে নানা ক্ষেত্রে— তাজপুরে সমুদ্রবন্দর থেকে ডেউচা-পাঁচামির কয়লাখনি, কৃষিভিত্তিক শিল্প থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সম্প্রসারণে। এই সম্ভাবনাকে আদানি-বিরোধিতায় অতিসক্রিয় হয়ে উঠে নষ্ট করে দিতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং অবশ্যই বাংলার স্বার্থে। মোদী-বিরোধী জোটের রাজনীতির ‘ব্যাটন’ রাহুল গান্ধীর হাতে সহজে তুলে দিতে রাজি নয় তৃণমূল। কারণ মুখ্যমন্ত্রী রাহুলকে নয়, নিজেকে মোদীর বিকল্প হিসাবে তুলে ধরতে অভিলাষী। সেই কারণেই বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেসের ডাকা আদানি বিরোধিতায় তৃণমূলের ভূমিকা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’।
রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদানির সম্পর্ক নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা ছেলেমানুষের মতো। সব দেশের প্রধানদের সঙ্গে শিল্পপতিদের একটা সম্পর্ক থাকে, এবং তা দেশের শিল্প ও অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে। ব্যাঙ্ক, এলআইসি-র মতো সংস্থা যদি শিল্পপতিদের ঋণ না দেয়, তা হলে তাদের ব্যবসা চলবে কী করে? এঁদের ব্যবসাই তো ঋণ দেওয়া। তবে দেখতে হবে, ঋণ দেওয়ার মতো যথেষ্ট রক্ষাকবচ আছে কি না। আদানির ক্ষেত্রে তা আছে বলে মনে হয়। আদানি ব্যাঙ্কের ঋণ আগাম শোধ করে দেবেন বলেও জানিয়েছেন। তা ছাড়া আদানির কাছে বিজয় মাল্য বা মেহুল চোক্সীদের মতো দেশ ছেড়ে পালানোর পথও খোলা আছে বলে মনে হয় না।
মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১
বন্ধ স্কুল
পশ্চিমবঙ্গের শাসনব্যবস্থার ভয়ঙ্করতম দিক হল শিক্ষার মানের অবনমন, এবং স্কুলগুলির বেসরকারিকরণ। সরকার অত্যন্ত সুচতুর এবং সুনিপুণ ভাবে এ পথে এগিয়ে চলেছে। বরাহনগরে সতীঘাটের কাছে গঙ্গার পারে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল, যার বিল্ডিংয়ের আয়তন, ছাত্রসংখ্যা, শিক্ষক সংখ্যা, শিক্ষার মান, স্কুলের মাঠ যথেষ্ট উন্নত ছিল। বিদ্যালয়টি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধের তালিকায় সংযোজিত হয়েছে কাশীপুর বয়েজ় হাই স্কুল, কাশীপুর গার্লস হাই স্কুল, বাণীপীঠ বয়েজ় হাই স্কুল, মায়াপীঠ গার্লস হাই স্কুল, রামেশ্বর বয়েজ় হাই স্কুল, রামেশ্বর গার্লস হাই স্কুল, রামেশ্বর প্রাইমারি স্কুল, মহাকালী পাঠশালা মাধ্যমিক এবং প্রাইমারি স্কুল। প্রতিটি বিদ্যালয়ই ছিল সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত। যে রাজ্যের মানুষ বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে সন্তানকে চায়ের দোকান, ইটভাটা, ভিনরাজ্যে মজুরের কাজে লাগিয়ে দেয়, সে রাজ্যে শিক্ষার বেসরকারিকরণের পরিণাম ভাবতেই আতঙ্ক গ্রাস করছে। বহু জায়গায় এ রকম বিদ্যালয়গুলির মৃত শরীর পড়ে আছে, যেগুলোর বিল্ডিং এখনও যথেষ্ট ভাল আছে। শুধুমাত্র শিক্ষক নেই, পরিকাঠামো নষ্ট করে দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়গুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা যদি এখনই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারি, এবং শপথ নিতে না পারি যে, শিশুর জন্য প্রথম পর্বের শিক্ষা আমরা পয়সার বিনিময়ে কিনব না, তা হলে একটি গোটা প্রজন্মকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অন্ধকারে ডুবে যেতে দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না।
চৈতালী রায়, কলকাতা-১১০
কেন এত হুল্লোড়
‘শিবরাত্রিতেও চলল তাসা, বক্সের দাপট’ (২০-২) শীর্ষক চিত্র-প্রতিবেদন প্রসঙ্গে দু’-চার কথা। কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় শিবরাত্রির সন্ধ্যা থেকে, কোথাও বা সারা দিন তাসা, বক্স, ডিজে বাজিয়ে হুল্লোড়ে মেতেছিলেন উৎসবপালন-কারীরা। বিভিন্ন জেলাতেও একই ছবি প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রে যেমন ক্ষমতাসীন দল ধর্মীয় মেরুকরণকে হাতিয়ার করে এগিয়ে চলেছে; এই বাংলাতেও প্রায় সারাটা বছর ধরেই মানুষ বুঁদ হয়ে থাকছে পুজো-পার্বণের নামে বেলেল্লাপনায়। জনগণকে অসুবিধায় ফেলে, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে ধর্মীয় উৎসবের নামে এত কেন মাতামাতি?
সবুজ সান্যাল, ধাড়সা, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy