প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যে হেতু ইস্টার্ন রেলের ফুটবলার ছিলেন, তাই অসাধারণ ফুটবলার হওয়া সত্ত্বেও বাংলার লক্ষ লক্ষ ফুটবল প্রেমিকের হৃদয়ের বাইরেই তাঁর জায়গা ছিল। কিন্তু কোচ হওয়ার পর অসাধারণ কীর্তির জন্য ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের লক্ষ লক্ষ সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়ে তিনি সেই অভাব ‘সুদে-আসলে’ পুষিয়ে নিয়েছিলেন।
বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলে তিনিই প্রথম কোচ, যিনি বহু ক্ষেত্রে ফুটবলারদের চেয়েও বেশি কদর বা মর্যাদা আদায় করে নিতেন। আগের শতকের সত্তরের দশকে বাংলার ফুটবলে জনজোয়ার ঘটার অন্যতম কারণ তাঁর ‘ভোকাল টনিক’।
বাবলু নন্দী
দমদম
নিরহঙ্কার
১৯৭৩। তখন বি বি কলেজে আমাদের প্রথম বর্ষ। সে দিন প্র্যাকটিকাল ক্লাস হবে না জানলাম। অতএব দুটো পিরিয়ডের পর কলেজ কাট। উদ্দেশ্য আসানসোল লোকো গ্ৰাউন্ডে অল ইন্ডিয়া রেল অ্যাথলেটিকস মিট দেখা। প্রখ্যাত অ্যাথলিটরা এসেছেন। এডওয়ার্ড সিকোয়েরা, রূপা চট্টোপাধ্যায়, কিঙ্করী দাস ইত্যাদি।
স্টেডিয়ামে বসে দৌড় দেখছি। আমাদের পাশ দিয়ে কয়েক জন অফিশিয়াল যাচ্ছিলেন। দেখি, তার মধ্যে স্বনামধন্য পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। তার ক’দিন আগেই দিল্লিতে ডুরান্ড কাপ ফাইনাল হয়ে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল সে বার ফাইনালে সুবিধা করতে পারেনি। আমাদের কম বয়স, আমরা ভিড়ের মাঝে আলটপকা মন্তব্য করে দিলাম, ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতা নিয়ে।
দেখি উনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তার পর আমাদের সামনে চলে এসে, জোরে জোরে একনাগাড়ে বলে চললেন, সুভাষ, সুরজিৎ গৌতম কী কী ভুল করেছেন। সুধীর, পিন্টুকে (সমরেশ) একগাদা বকাবকি করলেন। আমার মনে হচ্ছিল, খেলার মাঠে ভুল খেললে যেমন আমাদের কোচ আমাদের বকাবকি করতেন, তেমনই কেউ কথা বলে চলেছেন। উনি বুঝতেও দিলেন না, আমাদের সামনে যিনি দাঁড়িয়ে কথা বলছেন তিনি ভারতপ্রসিদ্ধ পিকে। কোনও অহমিকা নেই। আমাদের মতো কয়েক জন আসানসোলের এলেবেলে কলেজ-ছোকরাকে দীর্ঘ ক্ষণ খেলা নিয়ে কত দামি দামি কথা বললেন।
সাধনার চরম উৎকর্ষে পৌঁছলে মানুষ এমন অহঙ্কার বিসর্জন দিতে পারে।
বিপ্লব কান্তি দে
কুলটি, পশ্চিম বর্ধমান
কত রূপ
১৯৬৭ সালে ইস্টার্ন রেলওয়ে বরদলৈ ট্রফির ফাইনালে উঠেছে। গুয়াহাটিতে আমার এক নিকটজন গুয়াহাটির প্রথম ডিভিশন লিগে খেলতেন। ড্রেসিংরুমে নিয়ে গেলেন। খুব সামনে থেকে স্বপ্নের ফুটবলার পিকে-কে দেখলাম। ফাইনাল খেলার দিন কলকাতা থেকে এসেছেন। রাউট আউট পোজিশন-টা উঠতি খেলোয়াড় নিরঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়কে ছেড়ে দিয়ে, সেন্টার ফরওয়ার্ড পোজিশনে চলে গেলেন। নবীনকে নিজের জায়গা ছেড়ে দেওয়া— এটাই তো এক মহান খেলোয়াড়ের লক্ষণ।
বিহারে বাংলার প্রান্তিক এক শহর কাটিহার। ওখানকার রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্যোগে ভেটারেন্স টিম নিয়ে এসেছেন কোচ পিকে। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সব বিখ্যাত ফুটবলারকে কী ভাবে আগলে রাখলেন এবং কে কী খেতে পছন্দ করে সব বলে দিলেন— সেই অভিভাবক-রূপ কাছ থেকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
সঞ্জীব গঙ্গোপাধ্যায়
নারকেল বাগান, যাদবপুর
ক্ষমা চাইছি
১৯৭৯ সালের মার্চ। আমি ও আমার এক বন্ধু তখন বেড়াতে গিয়েছি মুম্বইয়ের কাছে, রোজই তাই মুম্বই ঘুরতাম। এক দিন দুপুরে ঘোষণা শুনলাম, রোভার্স কাপের খেলা, মোহনবাগানের সঙ্গে অর্কে মিলস-এর, আজ কুপারেজ স্টেডিয়ামে।
আমরা দু’জনেই ফুটবল-পাগল ছিলাম, যদিও আমি মোহনবাগান সাপোর্টার, বন্ধু ইস্টবেঙ্গল। আমার আবার সংস্কার ছিল, আমি মাঠে গেলে মোহনবাগান হেরে যায়। বন্ধু বলল, অর্কে মিলসের সঙ্গে কখনওই হারবে না, তা ছাড়া মোহনবাগানের কোচ পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, সেটা ভুলিস না।
মোহনবাগান ফার্স্ট হাফে এক গোল খেল। আমি বন্ধুকে বললাম, এই জন্যে মাঠে আসতে চাইনি। তার পরে বেশ জোরে গ্যালারিকে শুনিয়ে বললাম, ‘‘দাঁড়া, সেকেন্ড হাফে মোহনবাগান একেবারে ভরে দেবে!’’
তার পর সেকেন্ড হাফে আরও তিন গোল খেল মোহনবাগান, ৪-০ ব্যবধানে হারল। মনে আছে, অর্কে মিলস-এর গণেশ রাও নামে এক দুরন্ত খেলোয়াড় একাই মোহনবাগানকে শেষ করে দিয়েছিলেন। খেলা শেষের পর আমি অনেক ক্ষণ চোখে জল নিয়ে গ্যালারিতে বসেছিলাম, গ্যালারি থেকে লোকজন নামতে নামতে আমার পিঠ চাপড়ে বলছিল, ‘‘ভরে-এ-এ দেবে-এ-এ!’’
মুম্বইয়ের লোকজন ঢোল-টোল নিয়ে নাচছিল মেহনবাগানের ড্রেসিং রুমের সামনে। মুম্বইয়ের বাঙালিরা পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়কে নানা কুকথা শোনাচ্ছিল। তখন সেই দলে আমিও ভিড়ে গেলাম। সুব্রত ভট্টাচার্য আমাদের সামলাচ্ছিলেন। উনি ওই ম্যাচটা খেলেননি, দুটো হলুদ কার্ড ডুরান্ডে দেখার জন্য (মোহনবাগান ডুরান্ড খেলে এই ম্যাচটা খেলতে এসেছিল)।
সে দিন দেখেছিলাম, পিকে-র চোখে জল চিকচিক করছে। উনি আমাদের অত খারাপ খারাপ কথার বিরুদ্ধে একটাও কথা বলেননি। এক জন সত্যিকারের স্পোর্টসম্যানের মতো হারটা মেনে নিয়েছিলেন, কোনও অজুহাত না দিয়েই। যা আজকের দিনে প্রায় ভাবাই যায় না।
আজ আমার খুব অাফশোস হয়, কেন সে দিন অত বাজে কথা শুনিয়েছিলাম ওঁকে। ক্ষমা চাইছি।
উৎপল মজুমদার
কুলটি, পশ্চিম বর্ধমান
নিরাশা, আশা
সম্প্রতি করোনাতঙ্কের দিনে, দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ সকালে স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত ধুয়ে মুখে মাস্ক পরে দিব্যি বাজারে ঘুরতে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু নিজেকে গৃহবন্দি রাখাটা যে হাত ধোয়ার থেকেও বেশি প্রয়োজন সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এখনও পর্যন্ত যে প্রবল সচেতনতা দরকার সেটা চোখে পড়ছে না। কেবল আমলা-পুত্রই নয়, আম আদমিও ‘কোয়রান্টিন’কে জেল বা কয়েদখানা ভাবছেন। তাই পালিয়ে যাওয়ার মতো ছেলেমানুষির ঘটনা ঘটছে।
তবুও এই সঙ্কটের মধ্যে আশার কথা, কট্টর বামপন্থীও পোস্ট করছেন ‘‘আমি গর্বিত,আমার মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ তৃণমূলকর্মীও বলছেন, ‘‘আজ রাজনীতি ভুলে আসুন প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াই।’’ এ সব দেখেই আশা জাগে, আমরা পারব রুখে দিতে। ইতিহাস তৈরি করব আমরাই, শুধু চাই একটু সচেতনতা, একটু ‘অ’-সামাজিকতা।
সম্পদ হালদার
রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
চুলকাইলে
সোশ্যাল মিডিয়া জুড়িয়া কত বাণী। করোনা উপদেশাবলি। কিন্তু নাসিকাগহ্বর অথবা চক্ষুদ্বয় চুলকাইলে কী করিব, কে কহিবে? কোভিড-১৯ ব্যাধিটি নাসিকা অথবা মুখগহ্বর এবং চক্ষু দিয়া প্রবেশ করে, জানা ইস্তক এই স্থানগুলি অধিক পরিমাণে চুলকাইতে লাগিয়াছে!
উত্তম রূপে সাবান দিয়া হস্ত ধৌত করিয়া চুলকাইতে পারি কি? অতঃপর কী করিব? চুলকানোর পর হস্ত পুনরায় সাবান সহযোগে বিশুদ্ধ করিব? পুনরায় চুলকানোর নিমিত্ত!
এই রূপ চলিতে থাকিবে?
শুভেন্দু দত্ত
কেষ্টপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy