অর্থের অভাবে যখন অনেক প্রয়োজনীয় জনকল্যাণমূলক কাজ করা সম্ভব হয় না, তখন হরির লুটের বাতাসা ছড়ানোর মতো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকাতরে সরকারি অর্থ বিলি (‘সব পুজো কমিটিকে ৫০ হাজার’, ২৫-৯) বিস্মিত ও ব্যথিত করে। পুজো কমিটিগুলিকে টাকা বিলানো কোনও গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপক্ষ সরকারের কাজ হতে পারে না। তা হলে ভবিষ্যতে রাজ্য জুড়ে মহরমের মিছিলের তাজিয়া বানিয়ে দেওয়া কিংবা বড়দিনে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত গির্জা আলোয় সাজিয়ে দেওয়াও সরকারের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়।
অহেতুক দান খয়রাতি করে, অপ্রয়োজনীয় ভাতা দিয়ে, প্রতি বছর যে বিপুল সরকারি অর্থ অপচয় হয়, তা দিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির জন্য হাসপাতাল ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নত করলে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির হাল ফেরালে, কিংবা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করলে প্রচুর মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বেলে দেওয়া যায়।
অনুদান বা ভাতা দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী প্রায়শই বলে থাকেন, ‘আমি দিয়ে দিলাম’, ‘আমি করে দিলাম’, ইত্যাদি। তিনি আসলে জনগণেরই টাকা জনকল্যাণে ব্যবহার না করে বহু ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনে বিলিয়ে দেন। তা তিনি ক্ষমতার জোরে দিচ্ছেন, দিন। কিন্তু তাঁর কথায় ‘আমিত্ব’-ই বেশি প্রকট হয়ে ওঠে।
সমীর কুমার ঘোষ, কলকাতা-৬৫
অনৈতিক
করোনা সংক্রমণ যাতে না বাড়ে, তার জন্য বিধিনিষেধের তালিকা দেওয়া হয়েছে সব পুজো কমিটির কাছে। যেমন, খোলামেলা প্যান্ডেল, ভিতরে গোল দাগ কেটে দূরত্ব রক্ষা, মাইকে শারীরিক দূরত্ব রাখার জন্য ক্রমাগত ঘোষণা, এ ছাড়া প্যান্ডেলে স্যানিটাইজ়ার ও মাস্ক রাখা, এবং শোভাযাত্রা ব্যতিরেকে অল্প লোক নিয়ে বিসর্জন প্রভৃতি। কলকাতা বা হাওড়ায় বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার নিরিখে আগাম বলে দেওয়া যায় যে, এই নির্দেশগুলোর কোনওটিই যথাযথ ভাবে পালিত হবে না। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্যান্ডেলের কাঠামো প্রস্তুত, যেগুলো আদৌ খোলামেলা থাকবে না। ভিতরে গোল গোল দাগ কিংবা স্যানিটাইজ়ার ও মাস্ক রাখার মতো নির্দেশগুলোও নিতান্তই প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। যে করোনার বিরুদ্ধে বিগত ছ’মাস ধরে এত লড়াই, সেই করোনা-আবহেই অঞ্জলি ও সিঁদুর খেলাও চালিয়ে যেতে হবে। এহেন ‘ঐতিহ্য রক্ষা’র আয়োজন দেখে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে তাঁদের কথা ভেবে, যাঁদের আমরা করোনা-যোদ্ধা হিসেবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি প্রতি দিন। পুজো কমিটিগুলোকে অতিরিক্ত অনুদান পাইয়ে দিয়ে, বিদ্যুৎ বিলে ৫০% ছাড়ের মাধ্যমে যে ভাবে অনৈতিক উৎসাহ প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তাতে সংক্রমণের বিপদ বাড়তে বাধ্য।
শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া
ভুবনের মাসি
‘নিম অন্নপূর্ণা’ (সম্পাদকীয়, ২৮-৯) শিরোনাম কমলকুমার মজুমদারের অনাহারক্লিষ্ট চরিত্রগুলির কথা মনে পড়ায়। এঁদের ন্যায্য দাবি কাজ, নিয়মিত দীর্ঘমেয়াদি জীবিকা। অনুদান তো সাময়িক প্রলেপমাত্র। উৎপাদন, সৃজনশীল কাজে টাকা দিলে অভাবী মানুষের হাতে টাকা গিয়ে পুজোয় অনেক মানুষকে আনন্দ দিতে পারে। বাজারে চাহিদার সৃষ্টি হতে পারে। সারা বছর ধরে পুজো আর মেলায় আর্থিক অনুদান উপকারী তো নয়, বরং ক্ষতিকর। যাঁদের প্রাপ্য, তাঁদের বকেয়া না মিটিয়ে, পুজোয় তাঁদের ঘর অন্ধকার রেখে এই ‘না চাহিলে যারে পাওয়া যায়’ অনুদানে মূল্যবোধ থাকতে পারে না। পরের বছর না দিলে ভুবনের মতো মাসির কান কামড়াবে।
সরকারের বহুমুখী সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের ফলে গৃহস্থের দরজায়, ট্রেনে, হাটে, বাজারে গত কয়েক দশক ভিখিরির সংখ্যা কমে গিয়েছিল। ইদানীং আবার বাড়তে শুরু করেছে। কাজ হারিয়ে বহু মানুষ হকার হয়েছেন। কেন্দ্রের নতুন কৃষি বিল ও শ্রম বিলের সংস্কারে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
সমাজসেবা
এ বছর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে রাজ্য সরকার জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজোর কথা ভাবছে কেন? এবার কি সাদামাটা পুজো করা যায় না? পুজো কমিটিগুলি যদি তাদের প্যান্ডেলের সাজসজ্জা আর আলোর রোশনাইয়ের বাজেট কমিয়ে পুজোর চার দিন ধরে এলাকার দরিদ্র,কর্মহীন মানুষদের ভূরিভোজের ব্যবস্থা করে, দুঃস্থ পরিবারের মধ্যে নতুন জামাকাপড়, কম্বল বিতরণ করে, চার দিন ধরে রক্তদান শিবির ও বিনামূল্যে অসুস্থ, দরিদ্র মানুষের জন্য চিকিৎসা শিবির গড়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, তা হলে ক্ষতি কী!
এই সমাজসেবাই হোক না এবার পুজোর ‘থিম,’ যা দিয়ে বিচার হবে সেরার শিরোপা!
তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
বিস্মৃত বেকার
রাজ্য সরকার বেকারদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ভারত সরকারের ‘এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ’-এর গুরুত্ব কমিয়ে রাজ্যে ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক’ তৈরি করে। ২০১৩ সালে ‘যুবশ্রী’ প্রকল্পের সূচনায় মুখ্যমন্ত্রী এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, অন্যান্য সরকারি চাকরিতে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে প্রথম এক লক্ষ যুবক-যুবতীকে নেওয়ার পর, পরের এক লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে, নথিভুক্তরা মাসিক দেড় হাজার টাকা করে পাবেন যত ক্ষণ না তাঁরা চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন— এই আশ্বাসও দেন। সে সব কিছুই হয়নি। দীর্ঘ সাত বছরে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নথিভুক্ত বেকার এখন প্রায় ৩৫ লক্ষ। সিএমআইই-র অগস্ট মাসের রিপোর্টে রাজ্যে বেকারত্বের হার ১৪.৯ শতাংশ। শিল্প নেই, কলকারখানা বন্ধ। সব ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ হচ্ছে। বেকার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কী?
সুজাতা মাইতি মণ্ডল, নাইকুড়ি, পূর্ব মেদিনীপুর
জলসঙ্কট
উৎসবের আবহে আমরা ভুলতে বসেছি, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ পানীয় জলের সঙ্কটে পড়বেন। ভূগর্ভস্থ জলের যথেচ্ছ ব্যবহার বেড়েই চলেছে। আমাদের রাজ্যেও বিভিন্ন জেলায় ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ নামছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বীরভূমে ৭.২৭, হুগলিতে ৯.২৫, হাওড়ায় ৯.৫৫, মুর্শিদাবাদে ৮.৪৩, মেদিনীপুরে ২০.১৯, বর্ধমানে ৩১.৪৮ মিটার পর্যন্ত জলস্তর নেমে গিয়েছে। মানুষ যদি সচেতন না হয়ে জলের যথেচ্ছ ব্যবহার বাড়িয়ে চলেন, তা হলে পরবর্তী প্রজন্ম আর পানীয় জল পাবে না। প্রতিটি নাগরিক সংগঠনকে নিজ এলাকায় পানীয় জলের অপব্যবহার বন্ধে এবং জল সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে আগামী দিনে জলসঙ্কট আরও তীব্র হবে।
জয়ন্ত কুমার পাঁজা, কোন্নগর, হুগলি
অপর অতিমারি
বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজ়াইনার শর্বরী দত্ত যেন অবহেলায়, অভিমানে চলে গেলেন। রেখে গেলেন অসংখ্য গুণমুগ্ধ মানুষ আর অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। একটা বয়সের পর সবচেয়ে বেশি দরকার সুব্যবহার, সহমর্মিতা। তার অভাব ঘটলে মনে হতেই পারে, প্রিয়জনই যদি সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ, আইন-আদালত করে, তখন আর বেঁচে থেকে কী লাভ? নিজের উপর চরম অবহেলা শুরু হয়। মানসিক অবসাদ এক সামাজিক ব্যাধি, যা থেকে ধনী-নির্ধন কেউই মুক্ত নন। এই অবসাদের অতিমারি হয়তো বেড়েই চলবে।
অরূপ দত্ত গুপ্ত, কলকাতা-৪৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy