চাকরিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী বা বাড়িতে দায়িত্বশীল অভিভাবক, দায়িত্বপালনের সময়ে ঘুমিয়ে থাকলে প্রথমে অর্জিত অধিকার হারান এবং পরে সামাজিক লিখিত বা অলিখিত চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে স্বল্প অথবা দীর্ঘমেয়াদে নানা শাস্তি পান। সমাজবিজ্ঞানের এটাই নীতি। কিন্তু সে ব্যবস্থায় সমাজতন্ত্রের বিশ্বাস-আস্থার ভিত কতটা মজবুত, তত্ত্ব ও অনুশীলনের ভারসাম্য কেমন ইত্যাদি বোঝা যায়। ভারতে সমাজতন্ত্রের সঙ্গে গণতন্ত্র সহাবস্থান করে। সম্পাদকীয় ‘নিদ্রিত রক্ষী’ (২০-৯) গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছে গণতন্ত্রের তত্ত্ব অনুযায়ী সাংবিধানিক কাঠামোয় ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বাস-আস্থার অনুশীলনের কথা, যেখানে রক্ষীর নিদ্রিত থাকার উপায় নেই।
অর্থাৎ আলোচ্য স্থায়ী কমিটির সদস্য, যাঁরা দায়িত্বশীল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আজ দায়িত্বপালনে ব্যর্থ। তা হলে এঁরা প্রথমে সাংসদ-বিধায়ক-পুরপ্রতিনিধি-পঞ্চায়েত সদস্য হিসাবে অর্জিত সুযোগ কেন পাবেন এবং পরে সাংবিধানিক শপথ অনুযায়ী রাষ্ট্রের আইন না-মানার দায়ে কেন অভিযুক্ত হবেন না? এই অভিযোগ স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে নির্বাচিত দায়িত্বপ্রাপ্ত সমস্ত রকম জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে প্রযুক্ত। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যর্থ জনপ্রতিনিধিদের প্রায় সকলেই সুবিধাভোগী ও বচনে এক-এক জন মুখ্যমন্ত্রীর সমতুল। এঁরা নিজেরা ‘নিদ্রিত’ থাকেন ও বিরোধীদের সেই নিদ্রার অজুহাত দেখাতে ব্যস্ত যেখানে মনুষ্যত্ব ও বিবেকের পরোয়ার অভাব সুস্পষ্ট। ব্যর্থ শাসকরা এই সমাজেরই উৎপাদন, গণতন্ত্র যাঁদের বুঝে বা না-বুঝে রাষ্ট্রের কাজের দায়িত্ব দেয়।
এই অসম্পূর্ণ, ব্যর্থ সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র আপাতত হতভাগ্য। এর সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ব্যতিক্রমী কিছু মানুষের প্রাণনাশ, যা সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। আপাতত এই দ্রোহ জাগিয়ে রাখার দায় নাগরিক সমাজের। ব্যতিক্রমী এও যে, এই দ্রোহ থেকে রাজনীতি ও দলীয় রাজনীতি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে দূরে আছে। আলোচ্য দ্রোহের নেতৃত্বে রয়েছেন চিকিৎসক সমাজের জুনিয়র ডাক্তার ও তাঁদের সংগঠন। এঁদের পাশে যেমন রয়েছেন চিকিৎসক সমাজ, তেমনই রয়েছেন নিরীহ সাতে-পাঁচে না থাকা বৃহত্তর জনগণও। এই জাগ্রত আন্দোলন শাসক রাজনীতির ব্যর্থতার সমালোচনা করছে, দায়িত্বজ্ঞানহীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে ও সংস্কারের পক্ষে দাবি করছে। আলোচ্য সমাজ যদি দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন রাজনীতির দাবি করে, তা হলে সেখান থেকে দায়িত্বশীল নতুন জনপ্রতিনিধি উঠে আসবে না কেন? তবেই তো জাগ্রত রক্ষী পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
এই জুনিয়র ডাক্তারদের কথা ধরা যাক। আগামী দিনে এঁদের থেকেই হয়তো কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি উঠে আসবেন। নির্দল প্রার্থী হলেও বাস্তবে কোনও রঙের রাজনৈতিক দলের হয়ে তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। এর আগেও অনেক চিকিৎসক জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। দায়িত্বশীল সার্থক জাগ্রত উদাহরণ সে কালের ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় থেকে এ কালের ডাক্তার সূর্যকান্ত মিশ্র। এ ভাবে সমমনস্ক আইনজ্ঞ, শিক্ষক, গবেষক, খেলোয়াড়, সাংস্কৃতিক জগৎ থেকে নানা ব্যক্তিত্ব উঠে এসেছেন যাঁরা প্রথম দিকে জাগ্রত রক্ষীই ছিলেন। কিন্তু এঁরাই আবার দলীয় রাজনীতির প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে ‘নিদ্রিত’ হয়ে গেছেন। ২০১০ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ভেঙে পড়া এই প্রক্রিয়াও শাসক দলীয় রাজনীতির নিরঙ্কুশ আধিপত্যে ‘নিদ্রা’য় চলে গিয়েছিল। ভাগ্যিস বাকি সমাজ সাম্প্রতিক ঘটনার ধাক্কায় জেগে উঠল। তাঁদের কথা, শব্দের আওয়াজে শাসকের নিদ্রার বারোটা বাজল।
এ অবস্থায় শাসক রাজনীতি ও তথাকথিত শাসিত অরাজনীতি, দুই-ই পালা দিয়ে জেগে থাকলে দেশের নাগরিক অন্তত শান্তিতে দু’দণ্ড নিদ্রা যেতে পারেন।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, ফটকগোড়া, চন্দননগর
অবহেলায় গাছ
পরিবেশ দূষণ রোধে গাছের বিকল্প নেই। গত শতকের সত্তরের দশক থেকে শহরতলি তো বটেই, কলকাতার বিবাদী বাগ-সহ আশপাশের সমস্ত রাস্তার দু’ধারে বর্ষাকালে নেতা-মন্ত্রী’সহ বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গাছ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কাগজে আমরা সেই সব ছবি দেখে আপ্লুত হই। তার পর, সদা ব্যস্ত জীবনে কতগুলো গাছ লাগানো হয়েছে, আর প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে লড়াই করে কতগুলো গাছ বড় হয়ে উঠছে, সে সব দেখার সময় নেতা-মন্ত্রীদের নেই। অনেক গাছ আবার বছরের পর বছর লোহার বেড়া-জালে আটকে থেকে প্রবল অত্যাচারের শিকার হয়। গাছেদের এই অসহায় অবস্থা পথচলতি মানুষদের শুধু দৃশ্যদূষণ ঘটায় না, সংবেদনশীল মানুষদের মনোবেদনার কারণ হয়। এক সময় এমন দৃশ্য দেখা গেছে বিবাদী বাগ অঞ্চল-সহ মহাকরণের সামনে পর্যন্ত। এমনকি শহরতলির পুরসভার অলিতে-গলিতে এখনও এই দৃশ্য দেখা যায়।
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেছিলেন, মানুষের মতো গাছেদেরও প্রাণ আছে, তাদেরও অনুভূতি আছে। ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে তাই পড়ানো হয় ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’। এই সুকুমারমতি ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের পথে যখন দেখে সমাজের অবহেলায় নিরীহ গাছেরা সীমাহীন ক্লেশের শিকার হচ্ছে, তখন তাদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতেও পারে। অতএব, বন দফতর, পুরপ্রশাসন ও পরিবেশ কর্মীদের প্রতি আবেদন, সমাজের স্বার্থে গাছদের উপযুক্ত দেখভালের ব্যবস্থা করা হোক।
প্রসন্নকুমার কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি
রাস্তার দশা
যে কোনও রাজ্যের উন্নয়নের একটি মাপকাঠি হল সেখানকার রাস্তাগুলি। ‘কাঁটাপথ’ (৮-১০) সম্পাদকীয়টিতে পশ্চিমবঙ্গের রাস্তাগুলির দুর্দশার বর্ণনা যথাযথ। এই প্রসঙ্গে উত্তর রামচন্দ্রপুরের রাস্তাটির দুর্দশার কথাকে তুলে ধরা চলে। রাস্তাটি মোটামুটি ভালই ছিল; লোকসভা ভোটের দামামা বেজে উঠতেই রাস্তা খোঁড়ার হাতিয়ার নিয়ে উঠেপড়ে লেগে পড়েছিল কন্ট্রাকটরের লোকজন। রাস্তার এক ধার কেটে দেওয়া হল— ওখানে নাকি জল পরিষেবার পাইপ বসবে। দেখতে দেখতে এসে গেল নির্বাচনের দিন, সেই সঙ্গে উধাও খননকারীর দল। রাস্তার গর্তগুলো আর পাইপ বসানোর জন্য কাটা অংশ ভরে গেল বৃষ্টির জলে।
ভাঙা রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের দুর্দশা বর্ণনাতীত। পদাতিকদের পিছলে যাচ্ছে পা। কর্তৃপক্ষের হাতে রাস্তা সারাইয়ের চেয়ে জরুরি অনেক কাজ। আপাতত সুরাহার আশা নেই। একমাত্র আশা ২০২৬ বেশি দূরে নয়। যখন আর এক বার নির্বাচন হবে, হয়তো তখন সারানো হবে রাস্তা।
সঞ্জিত ঘটক, কলকাতা-১০৩
গঙ্গাকে রেহাই
পবিত্র নদী হিসাবে বিবেচিত গঙ্গা এখন দূষণক্লিষ্ট। গঙ্গার ক্রমাগত স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দুর্গাপ্রতিমা-সহ সমস্ত ধরনের প্রতিমা নিরঞ্জনে গঙ্গাকে ছাড় দেওয়া হোক। প্রতিমা রং করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রঙে আছে জলকে দূষিত করার মতো নানা রাসায়নিক পদার্থ। যুগের দাবি মেনে প্রতিমা বিসর্জনে পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতি গৃহীত হোক।
প্রদীপ রঞ্জন রীত,আমতা, হাওড়া
অসার ঘোষণা
হাওড়া স্টেশন চত্বরে এবং হাওড়া স্টেশন থেকে প্রতি চলন্ত ট্রেনের কামরায় ঘন ঘন ঘোষণা করা হয় যে ‘ফেস-মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক, অন্যথায় জরিমানা করা হবে’। দীর্ঘ দিন যাবৎ এই ঘোষণা চালু সত্ত্বেও শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ যাত্রী ফেস-মাস্ক ব্যবহার করেন না। শুধু তা-ই নয়, এই ‘অপরাধে’ কাউকে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে বলে শুনিনি ও দেখিনি। সে ক্ষেত্রে এই ভিত্তিহীন প্রচার কেন?
বিশ্বজিৎ কর,কলকাতা-১০৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy