Advertisement
E-Paper

আমার প্রতিবেশী তার সাত বছরের ছেলেকেও বুঝিয়েছে বেশি খাওয়া চলবে না

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

নির্জন সান দিয়েগো।

নির্জন সান দিয়েগো।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ২০:৫০
Share
Save

করোনা ভাইরাস সঙ্গে লকডাউন, আমাকে শিখিয়েছে সংযমী হতে। প্রতিদিনের ছোট ছোট ঘটনায় নিজেকে প্রমাণ করি যে আমি মানুষটা জীবনকে ভাবতে শিখেছি একদম অন্য ভাবে। এই লকডাউনের মধ্যে ঘন ঘন বাজার করতে যাওয়াটা ঠিক বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজেকে বাঁচাতে আর অন্যদের বাঁচাতে বাইরে না বেরনোটাই কাজের কথা। কিন্তু পেট তো মানে না সে সব কথা। তাই হাতে গ্লাভস আর মুখে মাস্ক পরে সপ্তাহ তিনেক আগে বাজার করেছিলাম। এনেছিলাম ফুলকপি। ফুলকপি এমন একটা জিনিস যার ফুল, ডাঁটা ও পাতা সবটাই খাওয়া যায়। আগে আগে বাজার থেকে ফুলকপি এনে মূলত ফুলটাই খেতাম। মাঝে সাঝে ডাঁটাচচ্চড়ি। কিন্তু সেটা একটু পরিশ্রম সাপেক্ষ। ঝিরিঝিরি করে কাটতে বেশ ধৈর্য্য ও সময়ের দরকার হয়। চাকরি, ঘরের সব কাজ সামলে মনে হত, বাব্বা কে এতো খাটবে! তার থেকে ফেলে দেওয়াই ভাল। কিন্তু সময় মানুষকে অনেক কিছু শেখায়। সেই ডাঁটা আর পাতাগুলোকে এখন কপির সাথে মিশিয়ে রাঁধি আর মনে মনে বলি, এগুলো শরীরের পক্ষে অতিশয় উপকারী। প্রচুর ফাইবার আছে যা শরীরকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা নেবে। ধনেপাতা ধুয়ে সাফ করে আলাদা করে জিপলকে ঢুকিয়ে রাখি যাতে অনেকদিন ভাল থাকে এবং তা ব্যবহার করা যায়।

ধনেপাতা এমন একটা জিনিস যা বেশিরভাগ তরকারির স্বাদে বেশ একটা নতুন চমক এনে দেয়। তাই তাকে যত্নে রাখাটা পরম কর্তব্য। কিন্তু এই লকডাউনের আগের কথা বলছি, এক ডলারে তিন আঁটি ধনেপাতা পাওয়া যায় বলে নিয়ে আসতাম এবং দেড় আঁটি খাওয়া হলে, বাকি দেড় আঁটি অমর্যাদায় ট্র্যাশে ফেলে দিতাম। কিন্ত এখন ধনেপাতা খাওয়া হয়ে গেলেও ডাঁটাগুলো রেখে দিই যে, ডালের বড়া বা বাঁধাকপির বড়া ভাজলে তাতে দিয়ে দেব।

নির্জনতাথেকে আমি সবসমই একটু দূরে থাকতে চাই। কিন্তু আমেরিকা আসার পর দেখলাম, এই নির্জনতাকে ভর করেই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ভাবলাম যদি বাড়ির আলোগুলোকে জ্বালিয়ে নিজেকে একটু আলোকিত করা যায় তাতে মন্দ কী ? দেখে শুনে আলোকেই বন্ধু করে নিলাম। অনেক আলোর সান্নিধ্যে থাকলে মনের উপর চাপ খানিকটা মনে হয় কম পড়ে। কিন্তু ভাইরাসের দৌলতে চেষ্টা করি কম আলো, কম জল ব্যবহার করতে। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, কত লোকের কাজ চলে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ছে। আগামী দিনগুলো যে কী ভাবে আসবে কে জানে। আজ বাঁচাতে পারলে কাল তা খানিকটা ব্যবহার করতে পারব, এই চিন্তা মনের মধ্যে বয়ে চলেছে অনবরত।

আরও পড়ুন: সঙ্ঘাত তো শেষ কালই, আজও কেন ঘরে বসে কেন্দ্রীয় দল?

সোফিয়া মেক্সিকান মহিলা রেস্তুরাঁতে রান্নার কাজ করে। যে কোনও রান্নাতেই পটু। সাজতে খুব ভালবাসে। এই ভাল মানুষটার সাথে পরিচয় আমার বহু দিনের। সবে তখন আমেরিকায় করোনাভাইরাস শোনা যাচ্ছে। আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তবে তা ভয়ঙ্কর রূপ নেয় নি। রেডিয়োতে মাঝে সাঝে শোনা যাচ্ছে কিছু ক্যান ফুড, ওষুধ বাড়িতে রাখা ভাল। যে কোনও ঝড়ের আগে তো কিছু খাবার, জল, ওষুধ আমরা সংরক্ষণ করে থাকি। এ সব শুনেও সে ভাবে পাত্তা দিই নি। ভাবলাম, আমেরিকাতেও জিনিস কিনে সংরক্ষণ করতে হবে? প্রতি বছর শীত আসার আগে এখানে ভাইরাসের প্রকোপ হয়। জ্বরজারি হয়। আবার দু-চারদিন বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যায়। ভাবনাটা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সোফিয়ার সঙ্গে দেখা হতে বলল, ‘‘জান আমি আর আমার বর দু’জনে মিলে কাল বাজার থেকে প্রচুর শুকনো খাবার আর আমার ছোট ছেলের জন্য ডায়াপার কিনে এনেছি। যা দিন আসছে, কী হবে কে জানে? বড় ছেলেকে বলেছি বেশি না খেতে।’’ জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘তোমার দুই ছেলের বয়স কত?’’

ও বলল ‘‘বড় ছেলের সাত আর ছোট ছেলের দেড়। বড় ছেলে এত খেতে ভালোবাসে যে কিছু না কিছু খাবার কিনে রাখতেই হয়। কিন্তু ভাইরাসের ভয়াবহতা আঁচ করে ছেলেকে বুঝিয়েছি যে, বেশি খেয়ে নিলে চলবে না।’’ কিছুদিন বাদে লকডাউনের জেরে রেস্তরাঁ বন্ধ হওয়ায় ওর কাজ চলে গেল। শুনেছি ওর বরও চাকরি হারিয়েছে। জানি না, এই চার জনের সংসারে ওরা কত খাওয়ার সঞ্চয় করে রাখতে পেরেছে। কর্মহীন জীবনে পেট চালানো একটা বড় দায়।

আরও পড়ুন: ত্রাণ নিয়ে বিক্ষোভ, বাদুড়িয়ায় জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ, মাথা ফাটল পুলিশের

ভাইরাস,মৃত্যু, লকডাউন ও কাজ চলে যাওয়া বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে খানিকটা যেন অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। তবে খুঁজে পেয়েছি অনেক বন্ধুদের। যারা শুধু ইমোজি বা টেক্সটিংবের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে ফোনের মাধ্যমে খোঁজ নেয়। মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপের যুগে এই খোঁজটাও কিন্তু বড় পাওয়া। কাল কী ঘটবে আমরা কেউই জানি না। কিন্তু ভাল থাকার শুভেচ্ছা জানিয়ে ফোনের অপর প্রান্তের গলার আওয়াজটা যে কতটা সঞ্জীবনীশক্তি বহন করে , তা অপর প্রান্তের মানুষটাও উপলব্ধি করেন। ২০ বছর আগে যখন আমেরিকার মাটিতে পা রেখেছিলাম, তখন কল্পনাও করিনি দেশে ফেলা আসা প্রিয় জনদের মুখগুলো দেখতে পাব। কিন্তু এই চরম প্যান্ডেমিক আর লকডাউনের মধ্যেও যখন ভালোবাসাই মানুষগুলোকে দেখতে পাই বড় সুখময় লাগে। অবশ্য এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব প্রযুক্তিরই প্রাপ্য। তাই শতভাগ ধন্যবাদ প্রযুক্তিকে দিলাম। আজ ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম মেঘের আস্তরণ সরিয়ে সুয্যিমামা দেখা দিয়েছে, সত্য কি মিথ্যা জানি না, লোকে বলছে করোনা ভাইরাস রোদ্দুর, গরমকে নাকি ভয় পায়। বেশ, তাই যদি হয়, ভাইরাস পাক না ভয় একটু আজ। অনেকটা তো হেরেই বসে আছি, মাঝে মাঝে জিততে তো আমাদেরও ভাল লাগে।

সুমনা চক্রবর্তী

সান দিয়াগো, ক্যালিফোর্নিয়া

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

Lockdown Coronavirus USA America Covid 19 San Diego California

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।