Advertisement
E-Paper

স্টেশনে ডেকে এনেও ট্রেন দিল না, পুণের রাস্তায় পড়ে আছেন কয়েকশো জন

প্রশাসনের নির্দেশ মেনে এখানকার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারিয়ে ফুটপাতে দিন কাটছে আমাদের।

পুণেতে রাস্তায় শুয়ে রাত কাটাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র।

পুণেতে রাস্তায় শুয়ে রাত কাটাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ১১:৪৭
Share
Save

কাজের জন্য পুণেতে এসেছিলাম আমরা বেশ কয়েক জন। কিন্তু এমন পরিস্থিতির শিকার হব স্বপ্নেও ভাবিনি। প্রশাসনের নির্দেশ মেনে এখানকার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারিয়ে ফুটপাতে রাত কাটল আমাদের। দুর্গাপুর ও আশেপাশের এলাকা থেকে ন’জন ছিলাম আমরা। ছিলেন বাঁকুড়ার তিন জনও। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকশো মানুষ এখানে আটকে যাই এ ভাবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনার জন্য মহারাষ্ট্র সরকার আমাদের সকলকে বাড়ি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কোথায় কখন যেতে হবে বা কী করতে হবে তা আমাদের জানানো হয়।

তালেগাঁও থানায় যাওয়ার জন্য গত ২৮ মে স্থানীয় প্রশাসন থেকে জানানো হয় আমাদের। সেই সঙ্গে বলা হয়, আমরা যেন সকাল ৬টার মধ্যে থানায় হাজির হই। নির্ধারিত সময়েই আমরা সকলে তালেগাঁও থানায় পৌঁছই। সেখান থেকে আমাদের অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। তার পর সেখান থেকে বাসে করে পুণে স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক আশার আলো দেখেছিলাম, এ বার হয়তো বাড়ি ফিরতে পারব। স্টেশনে ৬ ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম ট্রেন ধরার জন্য। কিন্তু উঠতে পারিনি। হতোদ্যম হয়ে ফের বাসে করে তালেগাঁও থানায় ফিরে আসতে হয়েছিল আমাদের। কোনও উপায় না পেয়ে যে এলাকায় থাকি সেখানেই রওনা হলাম।

এই সেই অনুমতিপত্র।

এখানেও বিপত্তি। আমাদের ঢুকতে দেখেই পাড়ার লোকেরা প্রায় রে রে করে তেড়ে আসেন। আমাদের তাঁরা বলেন, ‘পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া যাবে না।’ সে সময় কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল। শেষমেশ পুলিশের দ্বারস্থ হই আমরা। সব ঘটনা খুলে বলি তাদের। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কোনও রকম সহযোগিতাই করেনি। থানা থেকে ফের পাড়ায় ফিরে আসি। এ বার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে কাকুতি-মিনতি করে, প্রায় হাত-পা ধরে থাকতে দেওয়ার জন্য রাজি করাই। কিন্তু পাড়া-পড়শিরা হুমকির সুরে জানিয়ে দেন, দ্বিতীয় বার এ রকম ঘটনা ঘটলে পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না।

অপেক্ষায় ছিলাম কবে আবার ডাক পড়বে! শনিবার (৩০/০৫/২০২০) আবার থানা থেকে ডাক পড়ল। এ বার আর তালেগাঁও নয়, এ বার যেতে বলা হল বদগাঁও থানায়। এবং সেই একই সময়ের মধ্যে। অর্থাত্ সকাল ৬টায়। এ বারও নির্ধারিত সময়ে সবাই হাজির হয়েছিলাম থানায়। এ বারও প্রত্যেককে অনুমতিপত্র হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফের বাসে চেপে পুণে স্টেশনে পৌঁছই। কিন্তু এ বার যে আরও হয়রানি অপেক্ষা করছে সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। আগের বার ৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল ট্রেন ধরার জন্য। এ বার সেই অপেক্ষার সময় ছাপিয়ে ১০ ঘণ্টা হয়ে গেল। কিন্তু এ বারও ট্রেন ধরতে পারলাম না। আমরা যখন হতাশ হয়ে স্টেশনের সামনে অপেক্ষা করছিলাম, ঠিক তখনই পুলিশ এসে আমাদের উপর লাঠিচার্জ করা শুরু করল। বলা হল, স্টেশনের সামনে দাঁড়ানো যাবে না।

অপেক্ষায়।

এ দিকে পাড়ায় ফেরারও আর উপায় নেই। কারণ তাঁরা আগে থেকেই হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন, দ্বিতীয় বার এমন ঘটনা ঘটলে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।

স্টেশনের সামনেও অপেক্ষা করতে দেওয়া হচ্ছে না, আবার পাড়াতেও ফিরতে পারছি না। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা! কোনও উপায় না পেয়ে রাতভর ফুটপাতেই শুয়ে কাটিয়েছি আমরা।

রবিবার সকালে মরিয়া হয়ে আমরা ১৮ জন একটা বাসের ব্যবস্থা করে রওনা দিয়েছি বাড়ির দিকে। অনেক টাকা লাগছে। এক এক জনের ৬ হাজার টাকা। কিছু করার নেই এই অবস্থায়। কিন্তু অধিকাংশই এখনও রয়ে যাচ্ছেন এখানে। কী করবেন সবাই কে জানে।

বিপ্লব সাহা, গৌরবাজার, পশ্চিম বর্ধমান

ফোন- ৭৫৫৯২৭০৮৬৪

Migrant Workers Pune West Bengal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}