Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Senior Citizens

সম্পাদক সমীপেষু: ছাড় ফিরুক রেলে

প্রায় সব দেশেই পর্যটকদের তালিকার এক বড় অংশ জুড়ে থাকেন বয়স্করা, যাঁদের সাংসারিক দায়দায়িত্ব পালনের ভার থেকে কমবেশি রেহাই মিলেছে।

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৩৩
Share: Save:

‘আশা-আশঙ্কার দোলাচলে দেশের পর্যটন শিল্প’ (৩-৪) শীর্ষক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। অতিমারি ক্রমশ এ দেশে কমে আসায় পর্যটন শিল্পে বেশ কিছুটা বৃদ্ধি ঘটলেও আশানুরূপ জোয়ার আসেনি। কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে, তাতে একটি বড় দিক অনুল্লিখিত রয়েছে। সেটি হল, রেল ভ্রমণে কনসেশন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত রাখা।

প্রায় সব দেশেই পর্যটকদের তালিকার এক বড় অংশ জুড়ে থাকেন বয়স্করা, যাঁদের সাংসারিক দায়দায়িত্ব পালনের ভার থেকে কমবেশি রেহাই মিলেছে। অন্য দিকে কর্মজীবনে সাধ্যমতো সঞ্চয়ের ফলে সারা জীবন পুষে রাখা বেড়ানোর শখ তাঁরা পূরণ করতে পারেন। আর রেলভ্রমণই সাধারণের সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে আরামদায়ক। এ দেশের সরকারও বিষয়টি অনুধাবন করে বয়স্ক নাগরিকদের ভাড়ায় উল্লেখযোগ্য ছাড় দিতে থাকে। তার ফলে দেশের মধ্যের পর্যটন শিল্প বিশেষ ভাবে লাভবান হয়।

এখন হাত পড়েছে সেইখানে। অতিমারির পর রেল-পরিষেবা পুনরায় চালু করার সময় যাত্রিভাড়ায় বয়স্কদের কনসেশন বন্ধ রাখা হয়। গত মার্চ মাসে লোকসভায় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, বিগত অতিমারি কালে রেলশুল্ক বাবদ আয় হ্রাস পাওয়ায় আপাতত রেলভাড়ায় কনসেশন দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। খবরে প্রকাশ, ইতিমধ্যে রেলের শুল্ক বাবদ আয় প্রভূত পরিমাণে বেড়েছে। অথচ, বয়স্ক নাগরিকদের সুবিধাটুকু ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পর্যটকদের এই সম্ভাব্য বিশাল অংশ বাড়িতে বসে যাওয়ায় এক দিকে যেমন তাঁদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে, অন্য দিকে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন সংস্থাগুলি রক্তাল্পতায় ভুগতে বাধ্য। প্রশ্ন, বয়স্কদের কনসেশন স্থগিত করে রাখলেই দেশের উন্নয়ন ঘটবে কি?

বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি

আড়ালে সত্য
দ্য কাশ্মীর ফাইলস নামে যে চলচ্চিত্রটি নিয়ে আজ দেশ তোলপাড়, তাতে তথ্যগত ভুলভ্রান্তির সীমা-পরিসীমা নেই। সেই ছবিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন মান্যতা দেন, তখন উদ্বেগের উদ্রেক হয়। পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী ছবির অন্যতম চরিত্র অনুপম খেরের মুখে সংলাপ দিয়েছেন— “ফেক নিউজ় ছড়ানোর চেয়েও ভয়ঙ্কর হল সত্যিটা চেপে যাওয়া।” অথচ, জেনেবুঝে পরিচালক যেন সেই কাজই করেছেন।

কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর নিশ্চিত ভাবেই অত্যাচার হয়েছে। পাশাপাশি উপত্যকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর হামলাও কম হয়নি, তার কোনও চিত্র এ ছবিতে নেই। সরকারি তথ্য জানাচ্ছে, উপত্যকায় জঙ্গিদের হাতে তিন দশকে ৮৯ জন কাশ্মীরি পণ্ডিত খুন হয়েছেন। মহাফেজখানার রেকর্ডে এটাও আছে ১৬৩৫ জন মুসলমানের খুন হওয়ার প্রমাণ। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট যদি সত্যি হয়, তা হলে লক্ষাধিক সাধারণ শান্তিপ্রিয় কাশ্মীরি এই তিন দশকে নিহত। সেই নব্বই সাল থেকে সেনা অত্যাচারের অভিযোগে উথালপাতাল হয়েছে উপত্যকার সোপোর, গাওয়াকাদাল, কুপওয়ারা-র মতো জায়গা। পুলিশ বা সেনা কর্মীদের পদোন্নতির অদম্য তাড়নায় নিরপরাধ কাশ্মীরিদের হত্যার পর ‘জঙ্গি’ তকমা সেঁটে দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগও প্রমাণিত। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশা যতটা সত্য, কাশ্মীরি মুসলমানদের দুর্দশাও ততটাই। অথচ, কাশ্মীর ফাইলস ছবিকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ক্ষমতার বলে কর মকুব করার নিদান দিচ্ছেন।

ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যায়, ৩৭০ ধারা আকাশ থেকে পড়েনি, হরি সিংহের ভারতভুক্তির যে চুক্তি, তারই পরিবর্ধিত রূপ এই ধারা। জমি বেচা-কেনা নিয়ে আইনটি করেছিলেন কাশ্মীরের ডোগরা রাজারা। ১৯২৮ সালে তৈরি ওই আইনে কাশ্মীরের বাইরের কোনও মুসলমানের জমি কেনার অধিকার ছিল না। এ সমস্ত তথ্য এক বারের জন্যেও সারা ছবিতে উচ্চারিত হল না। বারে বারে কোনও এক মেননের নাম দিয়ে ‘কাশ্মীর ভারতের অঙ্গরাজ্য নয়’, বলানো হল। ছবির পরিচালকের জানা উচিত ছিল, অরুন্ধতী রায় বা নিবেদিতা মেননের অনেক আগেই দক্ষিণপন্থী রাজনীতির তাত্ত্বিক মিনু মাসানি লিখেছিলেন— কাশ্মীর কখনও ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল না। সিনেমা তৈরি করার আগে বিবেক অগ্নিহোত্রী ও তাঁর গবেষক দলের তথ্য সচেতনতা থাকলে জানতে পারতেন যে, নেহরু নন, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর রাজত্বকালে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের সঙ্গে দেখা করে কাশ্মীর সমস্যার জট খোলার সূত্র দেন। কাশ্মীরের পণ্ডিতেরা শুধুই নিরামিষভোজী নন, তাঁদের পছন্দের তালিকায় আমিষ খাবারও প্রচুর। সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার এই চেষ্টা নষ্ট করবে দেশের সংহতির ঐতিহ্য।

সৌমিত্র মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৬১

ভোগ ও ত্যাগ
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দর্পণে সময়শশী’ (২-৪, পত্রিকা) শীর্ষক প্রবন্ধটি পাঠ করে তৃপ্ত হলাম। সাধক রামপ্রসাদের দু’টি গানকে কেন্দ্র করে কিছু বক্তব্য জানাতে চাই। রামপ্রসাদের ‘নিম খাওয়ালে চিনি বলে’, ‘অন্ন দে গো অন্নদা’— গান দু’টিতে দু’প্রকারের মর্মার্থ প্রকাশিত। এ কথা ঠিক যে অভাব, বঞ্চনা থাকার জন্য মায়ের প্রতি দুঃখ, বেদনাসঞ্জাত ক্ষোভ সন্তানদের থাকা স্বাভাবিক। তবে তার সঙ্গে এই মনোভাবও কাজ করে যে, সীমাহীন ভোগ কখনও শান্তি দিতে পারে না। বিষয়ভোগ প্রথমে অমৃততুল্য, পরিণামে বিষবৎ। ত্যাগ প্রথমে বিষবৎ বলে মনে হলেও পরিণামে অমৃততুল্য। তাই রামপ্রসাদ লেখেন, ‘নিম খাওয়ালি চিনি বলে’।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছিলেন— ঘরেতে আচার, তেঁতুল থাকবে, আর অম্বলের রোগও সারবে, তা হয় না। বিষয়তৃষ্ণা থেকে উদ্ভূত মানসিক বিক্ষেপও ঠিক তেমনই। সেই জন্য রামপ্রসাদ চিনির মিষ্টি স্বাদকে নিমের মতোই তিক্ত বলে বুঝেছিলেন। ভোগে শান্তি নেই, ত্যাগেই শান্তি। ভোগকে ত্যাগের সঙ্গে বাঁধার শিক্ষা অর্জন করতে হয়। আর রামপ্রসাদ যে মা অন্নপূর্ণার কাছে অন্নভিক্ষা করেছিলেন, তা কেবলমাত্র জাগতিক অন্ন নয়, মুক্তি বা মোক্ষলাভের পরমান্নও।

শুধু রামপ্রসাদ নন, অনেক উচ্চকোটির সাধকও সংসারী ছিলেন। সাধন-ভজন করতে গেলে সংসার ত্যাগ করতেই হয়, তা নয়। সংসার করতে হবে ঈশ্বরের শরণাগত হয়ে। এর অর্থ, আমিত্বের অহঙ্কার নয়। আমার স্ত্রী, সন্তান, পরিজন, সমস্ত কিছুই তোমার (ঈশ্বরের), এই ভাব নিয়ে সংসার করা।

দিলীপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৯১

ধ্বংসের পথে
সম্প্রতি বিভিন্ন প্রবন্ধে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামনের ভয়ঙ্কর দিনগুলির কথা শোনা যাচ্ছে। কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বই, ভুবনেশ্বরের মতো শহর আসন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সামনে টলমল করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলে এরা টিকে থাকতে পারবে তো? পাশাপাশি ছোট মফস্সল শহরগুলো ওই নগরায়নের রোগে ভাল অবস্থায় নেই। আগামী দিনে এরা ভাবনার কারণ হবে। নগরায়নের সুবিধা পেতে গ্ৰাম থেকে আসা মানুষের ঘরবাড়িতে প্রতি দিন এই শহরগুলো বেড়ে চলছে। অপরিকল্পিত নির্মাণ, জলাভূমি ধ্বংস, পুকুর, ডোবা বোজানো, গাছপালা কাটা, খেলার মাঠ, খোলা মাঠ হারিয়ে যাওয়া এখন খুব সাধারণ ব্যাপারে পরিণত। শহরের ভিতরে গুটিকয়েক পুকুরের জল যতটুকু আছে, চার পাশের বাড়ি থেকে বার হওয়া বর্জ্য জলে তার নাভিশ্বাস উঠছে। নদীগুলোর হাল চোখে দেখা যায় না। বহু মানুষ ভুগছেন জলকষ্টে। মাটির নীচের জলও নিঃশেষিত হচ্ছে। ফল, পরিবেশের অবক্ষয়।

এখনই জনগণ সচেতন না হলে ও স্থানীয় প্রশাসন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে আন্তরিকতার সঙ্গে তা প্রয়োগ না করলে শহরের পাশাপাশি আমরাও ধ্বংস হয়ে যাব।

তড়িৎ কুমার ভাদুড়ি
সিউড়ি, বীরভূম

অন্য বিষয়গুলি:

Senior Citizens Indian Railway The Kashmir Files
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy