‘রক্ষকই ভক্ষক’— এই কথাটি আজ শুধু আর প্রশাসনিক জগতেই সীমাবদ্ধ নেই, তা ছড়িয়ে পড়েছে রোগ-নিরাময়কারী ওষুধের ক্ষেত্রেও। সরকারি হাসপাতালগুলোতে জাল ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপ্তি নিয়ে এই পত্রিকায় কয়েক দিন আগে শিহরণ জাগানো প্রতিবেদন ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশের পর ফের জানা গেল, রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নির্দিষ্ট দু’টি ব্যাচের রিঙ্গার ল্যাকটোজ় স্যালাইনে রোগীর অবস্থার উন্নতির বদলে তাঁদের কাঁপুনি শুরু হচ্ছে (‘স্যালাইন দিতেই কাঁপুনি, নমুনা নিল ড্রাগ কন্ট্রোল’, ২৭-৯)। তবে, এখানেই শেষ নয় ওষুধের মানের এই ভয়ঙ্কর বৃত্তান্ত। সে দিনই এই পত্রিকার অন্য একটি পৃষ্ঠায় দেখতে পেলাম ‘গুণমান বিচারে ব্যর্থ ৫০-এরও বেশি দাওয়াই’ শীর্ষক খবর। আঁতকে ওঠার মতোই সংবাদ। এ কোন রাজত্বে বাস করছি আমরা?
একেই তো কত রোগের ভাল ওষুধ নেই, কত ওষুধ সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তার উপর যেটুকু ভরসাযোগ্য ছিল, তাদের মধ্যেও কিছু আবার ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ল। এই ওষুধগুলোর মধ্যে খুব পরিচিত নাম যেমন রয়েছে, তেমন আবার কিছু বড় বড় ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার নামও জড়িয়ে আছে। অ্যান্টিবায়োটিক, বদহজম বা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক’এর খুব পরিচিত ব্র্যান্ডের ওষুধের নির্মাতা বড় আন্তর্জাতিক সংস্থার নামও এসেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের গুণমান খারাপ হলে তা যে সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজেই আসবে না, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বেশ কিছু অভিযুক্ত ফার্মা কোম্পানি দাবি করেছে যে, ওই ওষুধগুলো জাল, অর্থাৎ সেগুলো তাদের তৈরি নয়। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ উপভোক্তাদের পক্ষে কী ভাবে জাল এবং সঠিক ওষুধের মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব? এক বার মনে সন্দেহ প্রবেশ করলে, ওই ব্র্যান্ডের ওষুধগুলো কি কোনও দিন নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারব?
গৌতম নারায়ণ দেব,কলকাতা-৭৪
হিতে বিপরীত
‘গুণমান বিচারে ব্যর্থ ৫০-এরও বেশি দাওয়াই’ (২৭-৯) খবরটা পড়ে শঙ্কিত হলাম। নামী দোকান থেকে দামি কোম্পানির ওষুধ কিনলেই যে তার গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত থাকা যাবে এমনটা আর নয়, খবর এটাই। সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ডস কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন রিপোর্টে এই তথ্য সামনে এসেছে যে গুণমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৫৩টি ওষুধ। তালিকায় রয়েছে খুবই পরিচিত কিছু ওষুধ। এখন ভাল দোকানে বিক্রি হওয়া পরিচিত ব্র্যান্ডের দামি ওষুধের মানও যদি ঠিক না থাকে, তবে তো মহা বিপদ। বলা বাহুল্য, ওষুধের গুণগত মান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জ্ঞান থাকা তো সম্ভব নয়। তারা প্রায়শই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বা নামী কোম্পানির ওষুধের উপর আস্থা রাখেন।
ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, যে সমস্ত ব্যাচের ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে সেগুলি তাদের তৈরি নয় এবং সেগুলি জাল। এ বিষয়ে তদন্তের দাবি করেছে তারা। চিকিৎসক মহলের বক্তব্য এ ধরনের জাল ওষুধ দীর্ঘদিন খেলেও রোগী সুস্থ হবেন না। বরং অ্যান্টিবায়োটিকের গুণগত মান খারাপ হলে রোগীর শরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাবে, অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ দেবে না। বিষয়টি বড়ই দুশ্চিন্তার ও বিপদের।
চাকরিসূত্রে মালদহ জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে চার বছর ছিলাম। সেই সময় ওখানে অধিকাংশ দোকানেই জাল ওষুধ বিক্রি হতে দেখেছি। স্থানীয় চিকিৎসকেরা ব্যাপারটা জানতেন। তাঁরা রোগীকে নামী কোম্পানির ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব সারতেন। যে-হেতু জাল ওষুধের দাম আসল ওষুধের চেয়ে অনেক কম এবং তাতে দোকানির লাভ বেশি, আর ওষুধের পাতার গায়ে একই কম্পোজ়িশন লেখা থাকে, তাই দোকানদাররা ক্রেতাকে জাল ওষুধ কিনতে জোর করতেন। গ্রামের দরিদ্র মানুষ কম পয়সায় ওই জাল ওষুধ সরল মনে খায়। বলা বাহুল্য, এ চিত্র সারা দেশ জুড়ে। এমনকি কলকাতার বাগড়ি মার্কেটেও অনেক দোকানে এই রকম জাল ওষুধ পাওয়া যায়। কলকাতা পুলিশ এ বিষয়ে কিছু জানে না, তা বিশ্বাস করা কঠিন। প্রশ্ন জাগে, চারিদিকে জাল ওষুধের এত রমরমা, সরকার তা হলে কী করছে? সরকারের গাফিলতি তথা প্রশ্রয় ছাড়া এত জাল ওষুধ তৈরি করা হয় কী ভাবে?
কুমার শেখর সেনগুপ্ত,কোন্নগর, হুগলি
ডাকের দিনবদল
রক্তিম সুরের ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেও রানার যায়’ (রবিবাসরীয়, ১৫-৯) শিরোনামে সাধারণের অজানা তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধটি এক কথায় অনবদ্য। জানা গেল, আড়াইশো বছর আগে তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতে প্রথম ডাক ব্যবস্থার সূচনা করেছিলেন। প্রবন্ধটিতে উঠে এল দেশীয় কর্মচারীদের বঞ্চনা করা এবং দেশি ও বিদেশি সাহেব কর্মচারীদের মধ্যে বেতন-বৈষম্যের নির্মম ফারাকের দিকটাও। সেই সঙ্গে আরও জানা গেল, ডাক হরকরাদের ঝুঁকিবহুল দৈনন্দিন কর্মজীবনে ডাকাত কিংবা বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচতে মরণ-বাঁচনের মর্মস্পর্শী এক করুণ ছবিও। পদে পদে প্রত্যন্ত বিপদসঙ্কুল দুর্গম পথে মাইলের পর মাইল দিনরাত পায়ে হেঁটে যথাসময়ে যথাস্থানে ডাক পৌঁছে দেওয়ার যে দায় তাঁরা নির্দ্বিধায় কাঁধে তুলে নিতেন, তা সত্যিই অভাবনীয়। অথচ মাসিক মাত্র বারো টাকা বেতনের বিনিময়ে কী নিদারুণ কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন হতে হত তাঁদের। প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বে আমরা তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতার মধ্যে দিয়েই গ্রামের ডাক হরকরাদের করুণ জীবন যন্ত্রণার সুচারু ভাবে চিত্রিত ছবি দেখতে পাই।
খুব ভাল লাগল, আলোচনাটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লেখক এক জায়গায় এই ডাক পিয়নদের সঙ্গে চিঠি প্রাপক সাধারণ মানুষের একটা চমৎকার ও মধুর সম্পর্কের কথাও তুলে ধরেছেন— “সরকার বাহাদুরের লোক মানেই ভীতিপ্রদ। কিন্তু সরকারি কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও পিয়নদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের গড়ে উঠেছিল আত্মিক সম্পর্ক। দুর্গম জায়গায় এই ডাক পিয়নরাই মানুষের কাছে হয়ে উঠলেন বাইরের জগতের জানলা। শুধু বিলি নয়, চিঠি পড়ে বুঝিয়ে বা লিখে দেওয়ার কাজও তাঁদের করতে হত। তাঁদের সঙ্গে মন খুলে আলোচনা করা যেত যে কোনও পারিবারিক সমস্যা। তাই নিয়মিত না এলেই তাঁর বিরুদ্ধে জমা পড়ত অভিযোগ।” লক্ষণীয়, মনের মিল, বড় মানসিকতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও সরল বিশ্বাসই প্রকৃত অর্থে জন্ম দেয় এই অমলিন মধুর সম্পর্কের।
পরবর্তী কালে, কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ডাকব্যবস্থায় এল নব জোয়ার। যে ডাকব্যবস্থায় পোস্টকার্ড, ইন্ল্যান্ড লেটার, খাম, এয়ার মেল ব্যবস্থার রমরমা ছিল বছর জুড়ে, কিংবা বিজয়া দশমীতে গুরুজনদের প্রণাম-আশীর্বাদ বা নিকট বন্ধুবান্ধবদের শুভেচ্ছা জানানোর প্রথা ছিল এই সে দিনও। রাতারাতি সেই স্থান পাকাপাকি ভাবে দখল করে বসল আধুনিক ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারল না অতীতের সেই বিজয়া দশমীতে চিঠি লেখার আনন্দ-আবেগঘন মুহূর্তের দিনগুলোর অধ্যায়।
আগেই উল্লেখ করেছি, প্রতিনিয়ত জীবনের শঙ্কা নিয়েই ডাক হরকরাদের মানি অর্ডারের টাকা মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়ার দায় ছিল। তার পর সেই ঝুঁকি কমিয়ে পরবর্তী কালে তা রূপান্তরিত হল মানি অর্ডারে। অবশ্য দিন বদলেছে। শুরু হল আউটসোর্সিং বা কর্মী সঙ্কোচন। তাই এখন সেই মানি অর্ডারেরও জায়গা নিয়ে নিয়েছে ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই), নেফ্ট, যার মাধ্যমে নিমেষেই প্রয়োজনীয় টাকা দেশের যে কোনও প্রান্তে পাঠানো সম্ভব।
তবুও আজও বহু পোস্ট মাস্টার ও ডাক পিয়নদের দেখি যাঁরা কর্তব্যপরায়ণ, সততা, সু-ব্যবহার ও আন্তরিকতা নিয়ে নিয়মিত পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। ডাকের পুরনো স্মৃতিগুলো তাঁরাই বাঁচিয়ে রেখেছেন।
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়,নবদ্বীপ, নদিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy