Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: নিজভূমে পরভাষী

মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ, কিন্তু কোনও শিশুকে মাতৃদুগ্ধ বাদ দিয়ে জন্ম থেকেই যদি গরু, মহিষ বা ভেঁড়ার দুগ্ধ পান করানো হয়, তা হলে তা যেমন সেই শিশুর কাছে বিষাদ ও ক্ষতিকারক, তেমন অবস্থা আজ যেন বাংলাভাষীদের, আর তা নিজভূমেই।

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

‘বাংলায় বলার আর্জি...’ (৫-৯) না মানায় ক্ষুব্ধ হয়ে দুর্গাপুর শহরের মেয়র দিলীপ অগস্তি মহাশয় কলেজ পরিচালন সমিতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার যে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সাধুবাদযোগ্য। দুর্গাপুরের মাইকেল মধুসূদন মেমোরিয়াল কলেজের অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা এই বাংলার এক কলেজের প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে কোন যুক্তিতে হিন্দিতে সঞ্চালনা করছিলেন ভেবে পায় না, যদি অনুষ্ঠানটি হিন্দি বিভাগের নিজস্ব অনুষ্ঠান হত তা হলে না-হয় মানা যায়। এ প্রসঙ্গে বলতে হয় গলসি পার হয়ে পানাগড়, দুর্গাপুর, আসানসোল প্রভৃতি অঞ্চল থেকে বাংলা ভাষা ক্রমশ লোপ পেতে বসেছে, আর তা হচ্ছে এক নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক, রেলস্টেশন থেকে হাটে বাজারে দোকান বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বাংলা ক্রমশ বাদ যাচ্ছে, দোকানদারদের সঙ্গে বিনিময়ের দরদাম আপনাকে হিন্দিতে করতে হবে; এ যেন নিজভূমে নিজ মাতৃভাষাই অচ্ছুত। এ সব দেখে খুব খারাপ লাগে, মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ, কিন্তু কোনও শিশুকে মাতৃদুগ্ধ বাদ দিয়ে জন্ম থেকেই যদি গরু, মহিষ বা ভেঁড়ার দুগ্ধ পান করানো হয়, তা হলে তা যেমন সেই শিশুর কাছে বিষাদ ও ক্ষতিকারক, তেমন অবস্থা আজ যেন বাংলাভাষীদের, আর তা নিজভূমেই।

ফিরোজ আলি কাঞ্চন

গলসি, বর্ধমান

কয়েকটি প্রশ্ন

‘রাষ্ট্রপুঞ্জেও এনআরসি’ (৩-৯) খবর পড়ে মনে কয়েকটা প্রশ্ন জাগল। সূত্রের খবর, এনআরসি বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে দু’তিনটি বিষয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে নয়াদিল্লি। প্রথমত বলা হবে, এটি সরকারের সিদ্ধান্ত নয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হচ্ছে। যদি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই হয়ে থাকে তা হলে কোন রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে, নেতা মন্ত্রিগণ গলা ফাটাচ্ছেন যে এনআরসি সারা দেশেই হবে? দ্বিতীয়ত, যাঁরা তালিকা থেকে বাদ পড়লেন, তাঁরা ১২০ দিনের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে আবেদন করতে পারবেন। সেখানে আবেদন করতে না পারলে হাইকোর্ট এবং তার পরও সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তা থাকবে। আচ্ছা, নেতামন্ত্রিগণ কি ভাবেন ওই সহায়সম্বলহীন গ্রাম্য মানুষগুলো হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট যেতে পারবেন? তৃতীয়ত, বলা হবে ১৯৮৫ সালে ভারত সরকার এবং তৎকালীন অসম সরকারের মধ্যে হওয়া চুক্তির ভিত্তিতেই এনআরসি করা হয়েছে। ওই চুক্তিতে কি সারা দেশে এনঅরসি করার কথা বলা ছিল? সবই যদি সুপ্রিম কোর্ট আর চুক্তির দোষ হয়, তা হলে ‘সারা দেশে এনআরসি, এনআরসি’ বলে চেঁচানো হচ্ছে কেন?

সেখ সামসুজ্জামান

নিমদিঘি, উলুবেড়িয়া, হাওড়া

মুক্তি পাবে?

মৌমিতার ‘তিন তালাক রদ খুব জরুরি ছিল’ (২৮-৮) লেখার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি দিক আলোকপাত করতে চাইছি। লেখাটির মূল অভিমুখ তাৎক্ষণিক তিন তালাক রদের আইন তৈরির ব্যাপারে দৃঢ পদক্ষেপের প্রশংসা। অবশ্যই দৃঢ় পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হয়, যদি সেখানে মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তাৎক্ষণিক তিন তালাক শুধু নয়, মৌখিক তালাকের বিরুদ্ধেও এ দেশের অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা দীর্ঘ দিন সরব। লেখিকা লিখেছেন ‘‘কত জন মহিলার সেই বুকের পাটা রয়েছে যে পুরুষকে তিন তালাক দিয়ে বেরিয়ে আসবেন?’’ বিচ্ছেদ নিতে সব সম্প্রদায়ের মেয়েরা ভয় পান সামাজিক নিন্দা ও আর্থিক দুর্বলতার জন্য। এটা বাস্তব সত্য হলেও, লেখিকা সব মেয়েদের জোট বাঁধতে বলছেন তাৎক্ষণিক তিন তালাক রদ আইনকে সমর্থন জানিয়ে। এটা এক মস্ত বিভ্রান্তি। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই শুধু মেয়েরা করেন না। এমনকি বহু মেয়ে আছেন যাঁরা পিতৃতন্ত্রকে পোষণ করেন, লালন করেন, বহন করেন। বহু পুরুষ পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়েন। অনেক সময় বিপদে পড়ে যান, রাগ করে তালাক বলে ফেলা কোনও স্বামী ও মানতে বাধ্য হওয়া স্ত্রী। এটা আর তখন রাগারাগি মুহূর্তের শব্দ থাকে না। ঝগড়া থেমে গেলেও তাঁদের জীবন এক ছাদের তলায় রাখার অনুমতি হারায়। নিকা হালালার মতো পাশবিক নিয়ম পালনের মধ্য দিয়ে মেয়েটিকে পূর্ব স্বামীর জন্য শুদ্ধ করা হয়। ‘তাৎক্ষণিক তিন তালাক অসাংবিধানিক’— উচ্চ আদালতের এই রায়কে তাই দেশের অধিকাংশ মানুষ স্বাগত জানিয়েছিলেন। মুসলিম তালাক বিলও তাৎক্ষণিক তিন তালাককে অকার্যকর বলছে। কিন্তু জটিল করে তুলেছে একে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। স্বামীর তিন বছর পর্যন্ত জেল, জরিমানা হল। তার পর? তালাক তো হল না। স্বামী জেল থেকে বেরিয়ে আর একটা বিয়ে করলেন? স্ত্রী কিন্তু আর বিয়ে করতে পারবেন না বৈধ তালাক না পাওয়া পর্যন্ত। সেই স্বামীকেই বলতে হবে তালাককে বৈধ করতে। কী অধিকার হাতে পেলেন মুসলিম মেয়েরা? যে তালাক বৈধ নয় তা তো মানার প্রশ্নই ছিল না। তবু জোর করে স্ত্রীকে ঘর ছাড়া করতে চাইলে গার্হস্থ্য হিংসা আইনের সাহায্যে স্বামীকে প্রতিরোধ করা যেত। লেখিকা বলেছেন, ‘‘তাৎক্ষণিক তিন তালাকের শিকার হয়ে রাস্তায় বসে থাকতে পারেন, ভিক্ষে করতে পারেন, সন্তান কোলে নিয়ে একেবারে ভেসে যেতে পারেন...।’’ কিন্তু পুরুষনির্ভর জীবন বলেই নাকি স্বামীকে তালাক দেওয়ার সাহস দেখান না স্ত্রীরা। এই বাস্তব অভিজ্ঞতা যদি লেখিকার থাকে, তা হলে কোন যুক্তিতে মনে করেন, স্বামী জেলে থাকলে স্ত্রী ভেসে যাবেন না, সন্তান নিয়ে ভিক্ষে করবেন না?

লেখিকার মনে হয়েছে তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিল হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সব মেয়ের জন্যই আলোকবর্তিকা। তা হলে ১৯৫৫-তে হিন্দু কোড বিল পাশ হওয়ার পরও মুসলিম মেয়েরা সেই আলোকবর্তিকা থেকে এত দিন দূরে কেন? তিন তালাক রদের মতো প্রক্রিয়া নাকি এক জন ধর্ষক পাদ্রির মুখে থাপ্পড় হতে পারে। তা হলে তালাক দেওয়া পুরুষ ও ধর্ষক সমগোত্রীয়? ৩৭০ উঠে যাওয়ার ফলে কাশ্মীরিরাও তাৎক্ষণিক তিন তালাক থেকে মুক্তি পাবে বলে আশ্বস্ত হয়েছেন লেখিকা। তা হলে, যে নিরাপত্তা রক্ষীরা কাশ্মীরের গ্রামে গণধর্ষণ চালিয়েছিল, তাদের মুখেও কি তিন তালাক রদের মতো প্রক্রিয়া থাপ্পড় হতে পারে? আর তাঁদের মুখে, যাঁরা বিয়ের জন্য কাশ্মীরি মেয়ে নিয়ে আসতে পারবেন বলেছেন?

আফরোজা খাতুন

কলকাতা-৭৫

নজরদারি জরুরি

সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ কোর্ট এক নির্দেশে জানিয়েছে যে, কোনও দোকান বা বিপণি খরিদ্দারদের কাছ থেকে জিনিস বহন করার জন্য ব্যাগের জন্য দাম নিতে পারবে না। কয়েক দিন আগে রুবির কাছে, কসবা রাজডাঙা রাস্তার উপর একটি দোকানে কিন্তু যথারীতি চার টাকা বা ছ’টাকা হারে ব্যাগের মূল্য কেটে নেওয়া হল। প্রশ্ন করতেই বিলিং ভদ্রলোক জানালেন তিনি শুনেছেন এ রকম নির্দেশের কথা। কিন্তু কেন নিচ্ছেন এই কথার জবাব না দিয়ে নীরব রইলেন। প্রশ্ন হল, সরকারের যে দফতরের এই নির্দেশ সঠিক রূপায়ণ হচ্ছে কি না নজরদারি করা দরকার, তারা কি আদৌ এই কাজটি শুরু করেছে, না এখনও করব করব ভাবছে। আজকাল অনেক দোকানই এই ব্যাগগুলির জন্য অর্থ চেয়ে বসে। এরা নির্দেশ মানছে কি না আমার জানা নেই। অবিলম্বে এই কাজে আত্মনিয়োগ করা উচিত, যাতে ক্রেতাসুরক্ষা সুনিশ্চিত হয়।

মৃণাল মুখোপাধ্যায়

কসবা, কলকাতা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘ইসরোয় দেশভক্তির মন্ত্র মোদীর, বিতর্কে শিবন’ (দেশ, পৃ ৬, ৯-৯) শীর্ষক প্রতিবেদনে ১৯৭৯ সালের রোহিণী উপগ্রহ ভেঙে পড়ার সময় ইসরোর তৎকালীন চেয়ারম্যানের নাম সতীশ ধবনের বদলে বিক্রম সারাভাই লেখা হয়েছে।

কলকাতার কড়চায় (৯-৯) ‘চিরজীবী চিরযুবা’ লেখায় জীবনানন্দ দাশের কাব্যপঙ্‌ক্তিটির শুদ্ধ পাঠ: ‘‘মানুষের মৃত্যু হ’লে তবুও মানব থেকে যায়;...’’।

অনিচ্ছাকৃত এই ভুলগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

অন্য বিষয়গুলি:

Language Hindi Bengali Asansol Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy