‘কচি হাত উল্টোয় কাঁচা ইট’ (১৮-৬) শীর্ষক নিবন্ধ পড়ে, চাকরি-জীবনের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। হাওড়ার সাঁকরাইল থানায় অবস্থিত ইটভাটাগুলিতে কর্মরত শ্রমিকদের শিশুদের পালস পোলিয়ো কর্মসূচিতে, রোগ প্রতিষেধক ড্রপ (ওপিভি) খাওয়ানোর তদারকির দায়িত্বে ছিলাম। এক বার হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডেকে পাঠালেন। বললেন, পোলিয়ো ড্রপ খাওয়ানোর পর প্রমাণস্বরূপ যে কালির দাগ দেওয়া হয়, একটি ইটভাটার দু’টি শিশুর হাতের আঙুলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিদর্শকেরা তা দেখতে পাননি। তাই অভিযোগ করেছেন। বললাম, যেখানে কাঠের ছাঁচে ভিজে মাটি ফেলে ইট তৈরির প্রতিযোগিতা চলে এবং শিশুরাও শামিল হয়, সেখানে ওই কালির দাগ শুকনো হওয়ার আগেই ওরা জল দিয়ে ইটের জন্য মাটি তৈরি করতে শুরু করে। তা হলে সে দাগ কি দু’দিন পর দেখতে পাওয়া যায়? শুধু শিশুরাই নয়, গর্ভবতী মায়েদের যন্ত্রণা দেখেছি, অবর্ণনীয়। সন্তানপ্রসবের দু’দিন পরেই আবার ইট তৈরি করতে লেগে পড়েন ওঁরা।
বেণীমাধব দাস অধিকারী
দেউলি, পশ্চিম মেদিনীপুর
সদিচ্ছা নেই
সঞ্জয় চক্রবর্তীর ‘কৃষিজমিতে শিল্পের কী হল’ (১৩-৬) শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে এই চিঠি। কৃষিজমিতে শিল্পস্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা ভারতের সর্বত্র। তাই নতুন শিল্পস্থাপনের জন্য কৃষিজমি নষ্ট না করে, যদি বন্ধ শিল্পের জমি ব্যবহার করা যায়, তা হলে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা হয় না। আবার লক্ষ লক্ষ বেকারের জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা হয়।
এক সময় গঙ্গার দুই তীরে, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনায়, কারখানার সাইরেন বাজলেই দলে দলে মানুষের ভিড় দেখা যেত রাস্তায়। হন্তদন্ত হয়ে কাজে ঢুকতেন কারখানার শ্রমিকরা। গত কয়েক দশক ধরে সেই ছবিটা ধীরে ধীরে মলিন হতে শুরু করে। একের পর এক কারখানায় তালা ঝুলে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনও কারখানার জমি প্রোমোটারের হাতে চলে যায়। কোথাও কারখানার যন্ত্রপাতি কার্যত লুট হয়ে গিয়েছে। কোথাও কারখানার চৌহদ্দি ঝোপজঙ্গলে ভর্তি। সেখানে সাপখোপ ও শিয়ালের বাসা।
বামফ্রন্টের আমলে টায়ার কর্পোরেশন, জয় ইঞ্জিনিয়ারিং, হাওড়া মিলস, সুর এনামেল, হলদিয়া টেক্সটাইল ইত্যাদি কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল জমি বিক্রির মাধ্যমে কারখানা পুনরুজ্জীবনের জন্য। এই তালিকায় পরবর্তী কালে সংযোজিত হয় কুসুম প্রোডাক্টস, ক্যালকাটা সিল্ক, নিকো কর্পোরেশন, অন্নপূর্ণা টেক্সটাইল, দমদমে গ্রামোফোন কোম্পানির ৪ একর জমি, ডানলপের ৭.৫ একর জমি, কলকাতার আশপাশে কিছু জুট মিলের জমি। কিন্তু কোথাও রুগ্ণ শিল্প পুনরুজ্জীবন হয়নি, হয়েছে বহুতল আবাসন।
২০১১-য় নির্বাচনী ইস্তাহারে তৃণমূল বলেছিল, পশ্চিমবঙ্গে ৫৬ হাজার বন্ধ কারখানার ৪৪ হাজার একর জমিতে হয় আগের কারখানার পুনরুজ্জীবন, নয়তো নতুন কারখানা করার উদ্যোগ করা হবে। অর্থাৎ, বন্ধ শিল্পের জমিতে নতুন শিল্প— এই নীতি নেওয়া হবে। কিন্তু মমতা সরকারের আমলেও কোথাও রুগ্ণ শিল্পের জমিতে নতুন শিল্প গড়ে ওঠেনি। রুগ্ণ শিল্পের জমি চলে গিয়েছে জমি-হাঙরদের কবলে। সেখানে গড়ে উঠেছে আবাসন, শপিং মল, সুইমিং পুল। অর্থাৎ বড়লোকদের স্বপ্নের আস্তানা।
বন্ধ শিল্পের জমিতে একের পর এক আবাসন যদি গড়ে উঠতে পারে, নতুন শিল্প গড়ে উঠতে অসুবিধে কোথায়? যেখানে জল, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, পরিকাঠামো সবই তৈরি আছে। অসুবিধে একটাই। সেটা হল, রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাব।
রবীন রায়
শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
জোর অসমান
আবাহন দত্ত-র ‘রাজনীতির প্যাঁচটা রয়েই গেল’ (২৯-৬) শীর্ষক নিবন্ধে লেখা হয়েছে ‘‘দেশকে যদি এক সুরে বাঁধতেই হয় তা হলে তামিল, গুজরাতি, মরাঠি, পঞ্জাবি, বাংলা, অসমিয়া-সহ ২১টা তফসিলভুক্ত ভাষাকে বাদ দিয়ে কী করে সম্ভব? সংবিধান অনুসারে প্রত্যেকেরই জোর সমান।’’ প্রথম প্রশ্ন, ‘নানা ভাষা, নানা মত’ সমৃদ্ধ দেশকে এক সুরে বাঁধতে হবে কেন? ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’র ভারতকে এক সুরে বাধ্যতার আড়ালে একচ্ছত্র মাথার দিব্যি কে দিয়েছে?
সংবিধানের খাতায়-কলমের সাদাকালো অক্ষরে ‘প্রত্যেকের জোর সমান’। ভুল নেই। কিন্তু বাস্তবে অসমান ভাব বেড়েই চলেছে। আর্থিক ক্ষেত্রে কাজ করার সুবাদে দেখেছি, সাধারণ ভাবে ২০০০ সাল থেকে অবাঙালি, মুখ্যত হিন্দিভাষীদের প্রাধান্য বেড়েছে আধিকারিকদের পদে। অন্য অফিস, ব্যক্তির সঙ্গেও কথা বলতে হয়। সেখানে অন্যান্য সরকারি ও অসরকারি দফতর, বাজার-দোকান, পরিবহণ, যোগাযোগ, রাস্তায় হকারি সর্বত্র হিন্দিভাষী ও ইংরেজিভাষীদের দাপট বেড়েছে। এই অবাঙালিরা যদি কাজের জায়গায় উঁচু পদে থাকেন অর্থাৎ ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি হন, তা হলে তাঁদের মনের ভাব বুঝতেই হয়। আর তার জন্য জরুরি তাঁদের ভাষা শিখে নেওয়া। কেউ বলতেই পারেন, বাংলায় থেকে অবাঙালিরা বাংলা ভাষা শিখবেন না কেন? আমরাই নিজভূমে ওঁদের ভাষা শিখে-বলে পরবাসী হব কেন? আবেগ অনুযায়ী দু’টি প্রশ্ন ঠিক।
কিন্তু যুক্তি অনুযায়ী মোটেই নয়। প্রথম যুক্তি, অবাঙালিরা তাঁদের দেশ-ভাষা ছেড়ে বাংলায় এসেছেন ব্যবসা, বাণিজ্য, চাকরি, চিকিৎসার জন্য। দ্বিতীয় যুক্তি, দেশ ভাগের আগে থেকেই বাঙালিরা বাংলা ছেড়ে ভারত ও ভারতের বাইরে বিভিন্ন শহরে গুছিয়ে বসেছেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, বাণিজ্যের সুবাদে। তৃতীয়ত, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে বাংলায় বসে বাঙালিরা দেশবিদেশের সঙ্গে কাজ করতে পারেন সহজেই, কিন্তু সেখানে হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় চোস্ত হতে হবে। সর্বোপরি, বাংলায় চাকরি, ব্যবসা, বাণিজ্যের যা আকাল, তাতে আগে তো পেট চালাতে হবে, তার জন্য হিন্দি-ইংরেজি শিখলে যদি জাত যায় তো যাবে।
তাই, সংবিধান অনুসারে হলেও বাস্তবে ‘প্রত্যেকেরই জোর সমান’ কি? কাজ করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে বুঝছি ‘প্রত্যেক ভাষার শক্তি ও সামর্থ্য’ সমান নয়। এর জন্য প্রধানত দায়ী বাংলার দুর্বল অর্থনীতি। সমানাধিকার দাবির পাশে বাংলার অর্থনীতিকে উন্নত, সক্ষম, স্বাবলম্বী করতে হবে। এর জন্য হিন্দি, ইংরেজি ভাষাকে অবহেলা, ঘৃণা না করে রপ্ত করতে হবে। এতে কোনও আত্মগ্লানি নেই, লজ্জা নেই, আত্মসম্মান হারানোর ভয় নেই। রাজনীতির প্যাঁচটা ছাড়িয়ে ঝুঁকি নিতে হবে।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
ফটকগোড়া, হুগলি
প্রতিবাদ সঙ্গত
2 ৩০-এ বাস স্ট্যান্ডের কাছে রামকৃষ্ণ ঘোষ রোডে নয়ারাস্তার সামনে মদের দোকান খোলা নিয়ে বেশ কিছু লোক প্রতিবাদ জানালেন। ওই প্রতিবাদ দেখে আমিও দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। এই প্রতিবাদকে সমর্থন করি। কী দরকার আছে বসতি এলাকার মধ্যে মদের দোকান খোলার? স্থানীয় এমএলএ বা কাউন্সিলরের সমর্থন বিনা নিশ্চয় কেউ লাইসেন্স পেতে পারেন না। আশ্চর্য লাগে, পাশেই দু’টি স্কুল আছে, রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দির এবং সিঁথি শিক্ষায়তন। মদের দোকান হলে পরিবেশ খুব খারাপ হবে।
পরিতোষ ভট্টাচার্য
কলকাতা-৫০
তার চেয়ে বরং
2 বিধাননগরের নাম পাল্টে রাজ্য বাম শিবির থেকে ‘জ্যোতি বসু নগর’ রাখার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। আমার মতে, সর্বহারাদের প্রয়াত মহান নেতার নাম চিরস্মরণীয় করার সব চেয়ে বড় উদ্যোগ হবে, বিধান নগরকে যদি ‘মরিচঝাঁপি নগর’ নামে চিহ্নিত করা যায়।
অতুল কৃষ্ণ বিশ্বাস
ঠাকুরনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy