ভারতে এই প্রথম নাকি ডিজিটাল বাজেট পেশ হল। আমি কোনও দিন কোনও বাজেট ‘ডিজিট’, অর্থাৎ সংখ্যা ছাড়া দেখিনি। তবে দেখেছি, যে বাজেট যত ‘অর্থহীন’, সেই বাজেটে তত কবিতা, শায়েরির আধিক্য। ‘উন্নয়নমুখী’ বাজেট বলা হলেও বোঝা যায় না, কাদের উন্নতির কথা বলা হচ্ছে। নতুন একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে, ‘আত্মনির্ভরতা’। তাতে বুঝেছি, সরকার দরিদ্রকে ভর্তুকি দিতে আর রাজি নয়। নিজেদেরটা নিজেদেরই বুঝে নিতে হবে। আশা করি, আমাদের উপদেশ দিয়েই শাসকরা থেমে থাকবেন না, নিজেরাও আত্মনির্ভরতা অর্জন করতে চাইবেন। জানা গেল, ৭৫ বছর বয়সে আর নাকি আয়করের হিসেব জমা করতে হবে না! ৭৫ বছর বয়সের কত জন মানুষ আয়কর রিটার্ন জমা করেন, সেই সংখ্যাটা অর্থমন্ত্রী বলেননি। সেই সংখ্যা যে উল্লেখযোগ্য নয়, বোঝাই যাচ্ছে। রিটার্ন দাখিল ডিজিটাল এবং অধিকাংশ করদাতাই কোনও পরামর্শদাতার সাহায্যে সেটা দাখিল করেন। তবুও বাজেটে এটা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দীর্ঘ এক বছর ধরে যে সরকার কর্মীদের মহার্ঘভাতা বন্ধ রেখেছে, তারা যে আয়করে নতুন কোনও রেহাই দেবে না, বলা বাহুল্য। বরং ‘করোনা সেস’ নামে যে নতুন কোনও কর চাপায়নি, সেটা অর্থমন্ত্রীর অশেষ করুণা। উল্লেখযোগ্য বিষয়, প্রথমে বিমা কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগের মাত্রা ৪৯% থেকে বাড়িয়ে ৭৪% করা, পরে সরকারি সংস্থা, ভারতীয় জীবন বিমা নিগমের বেসরকারিকরণের ঘোষণা। অর্থাৎ, অগণিত বিমাগ্রাহকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দেওয়ার ব্যবস্থা।
আর একটা বিষয় অবাক করেছে। পশ্চিমবঙ্গের রাস্তা নির্মাণের বরাদ্দ, তামিলনাড়ু, কেরল এবং অসমের থেকে কম কেন? যত দূর দেখেছি, দক্ষিণ ভারতের রাস্তা যথেষ্ট উন্নত, অসমের রাস্তাও অনেকটা বর্ডার রোড অর্গানাইজ়েশন রক্ষণাবেক্ষণ করে। আর কলকাতা-শিলিগুড়ি রাস্তার সম্প্রসারণ ও নির্মাণের জন্য এর আগেও কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ বরাদ্দ হয়েছে এবং জমি সমস্যার কারণে সেই অর্থ ফিরেও গিয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বোধ হয় নিশ্চিত যে, পশ্চিমবঙ্গে এই অর্থ ব্যয় করতে হবে না।
অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
আত্মঘাতী
বাজেট ঘিরে আমজনতার আশায় আগুন লাগিয়ে দিল দুই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের প্রস্তাব। আমার গায়েও আঁচ লাগছে। “নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়”— ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ স্মরণ করাল বাজেট। ১ লাখ থেকে ৫ লাখের বিমা ঘোষণা সত্ত্বেও বুঝলাম, আমার সামান্য ব্যাঙের আধুলি নিরাপদ নয়। এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ‘মেগামার্জার’, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ মানবসম্পদ নিয়োগ, অত্যাধুনিক ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগে এত অর্থ, সময়, সরকারি পুঁজি, মেধার বিনিময়ে শেষে কিনা বেচে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? সরকারি ভাবে ‘ব্যাঙ্ক বোর্ড বুরো’ তৈরি হয়েছে, যা পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ককে মজবুত করবে। তার কী হল? ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দা থেকে ২০২০-এর কোভিড অতিমারি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কার্যত ভারতীয় অর্থনীতির লাইফলাইন। এখন ১৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সংযুক্ত করে ৫টি বড় ব্যাঙ্ক হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই, মানুষ তাঁর সঞ্চয়ের জন্য সুয়োরানি ব্যাঙ্কগুলো পছন্দ করেছেন। সরকার পুঁজি ঢেলেছে। প্রচার হয়েছে, বড় ব্যাঙ্কই ভাল। আশা বাড়িয়েছে। এখন সরকারই বেচে দেবে বাজারে। কাদের হাতে? বাকি সরকারি ব্যাঙ্ককে যারা ‘দুয়োরানি’ করেছে, তাদের।
সবাই জানেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণের টাকা মেরে কারা বিদেশে পালিয়েছে, কারা জালিয়াতি করে চলেছে, অথচ ধরা যাচ্ছে না, উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা সত্ত্বেও। কর্পোরেট ঋণ বাড়ার সঙ্গে ঋণ মকুব বেড়ে চলেছে। অসহায় গ্রাহক এখন লকডাউনের ঠেলায় কার্যত ব্যাঙ্কের বাইরে। অল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে শাখাগুলোর সময় ও সুযোগ নেই গ্রাহকদের বোঝানোর। ফলে গ্রাহক সামনে যাকে পাচ্ছেন, তাকেই নন্দ ঘোষ ভাবছেন। এই তো সুবর্ণ সুযোগ। কৃষি বিল, শ্রম বিলের পথে এ বার ‘দ্য ব্যাঙ্কিং কোম্পানিজ় (অ্যাকুইজ়িশন অ্যান্ড ট্রান্সফার অব আন্ডারটেকিংস অ্যাক্ট) ১৯৭০’-এর সুযোগ নেওয়াই যায়।
সামগ্রিক ভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে বিশাল অনাস্থা আনবে এই সিদ্ধান্ত। মোটেই আত্মনির্ভর নয়, বরং এ ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী পথ, যা আখেরে ব্যাঙ্কের মুনাফা, পরিষেবা, উৎপাদনশীলতা, কর্মক্ষমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব আনবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের টাকা ফের কাঁচা বাজারে ঘুরবে বেশি সুদের আশায়। সংসার সামলাতে মানুষ ছুটবেন অসংগঠিত অনিয়ন্ত্রিত অনুন্নত খুচরো বাজারে, যেখানে প্রতারক, ঠগ বসে আছে মুখিয়ে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। বাজারে দাম বাড়বে। অনুরোধ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে বেসরকারিকরণ করার পথ থেকে সরে এসে আসল দোষীদের শায়েস্তা করা হোক।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
চন্দননগর, হুগলি
কার বাজেট?
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কেন্দ্রীয় বাজেট শুনে সম্ভবত সবচেয়ে হতাশ ও ব্যথিত হয়েছেন আয়করদাতারা! কারণ, বাজেটে না আয়কর ছাড়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে, না আয়করের স্ল্যাবের কোনও পরিবর্তন করা হয়েছে। এমনকি ৮০ সি ধারায় ছাড়ের জন্য জমানোর পরিমাণ বাড়ানোর কথাও বলা হয়নি।
আরও আছে। গরিব দিনমজুরদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির কথা বলা হয়নি। তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ব্যাপারেও কিছু বলা হয়নি। কুটিরশিল্প, হস্তশিল্প-সহ ছোট ও মাঝারি শিল্পকে চাঙ্গা করার ব্যাপারেও কোনও পদক্ষেপ করা হল না। নতুন কোনও ভারী শিল্প বিকাশের কথাও নেই। নতুন করে কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়নি। প্রশ্ন তোলা যায়, এ কার বাজেট?
অর্থমন্ত্রী বড়ই নির্দয়! পেট্রল ও ডিজ়েলের উপর অন্তঃশুল্ক কমানোর কথাও বলা হয়নি, যা সবাই আশা করেছিলেন। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমই বলা যায়। সুতরাং, ধরেই নেওয়া যায় যে, বাজারদর দিন দিন আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে। শিক্ষাখাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। নতুন কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ তথা আইআইটি গঠন বা নির্মাণের ব্যাপারেও কিছু বলা হয় না। অন্তত বিধানসভা নির্বাচনের কথা ভেবেও তো কিছু নতুন ও আশাব্যঞ্জক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করতে পারতেন অর্থমন্ত্রী!
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
জলকর
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে ডান-বাম নির্বিশেষে, এ রাজ্যে কোনও সরকারই যে জলকর নেওয়ার পথে হাঁটেননি, তা পুরোপুরি ঠিক নয় (“জলের ‘রং’ লাল, সবুজ বা গেরুয়া, তাই জলকরে ‘না’?”, ৫-২)। দেশের কোনও শহরে জলকর নেওয়ার জন্য ভোট বাক্সে তার প্রভাব পড়েছে, তা শোনা যায়নি। অথচ, বিনামূল্যে প্রাপ্ত পরিশোধিত পানীয় জল মানুষের উদাসীনতায় অপচয় হয়েই চলেছে।
এ প্রসঙ্গে বলা যায়, আমি পূর্ব কলকাতার যে অঞ্চলে থাকি, সেখানে বহুতল ছাড়াও কয়েকটি বড় বড় আবাসন আছে। বছর কয়েক আগে জলকরের বিনিময়ে ওই সমস্ত আবাসনে পুরসভার পক্ষ থেকে পানীয় জলের লাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ডিপ টিউবওয়েলের আয়রনযুক্ত জলের পরিবর্তে পরিসৃত স্বচ্ছ জল পেয়ে সেখানকার আবাসিকরাও খুশি। তাঁরা নির্দ্বিধায় তাঁদের অংশের ধার্য জলকরের টাকা আবাসিক সমিতিকে প্রদান করছেন। অর্থাৎ, স্বল্প মূল্যের বিনিময়ে ভাল পরিষেবা পাওয়ার জন্য সম্ভবত কোনও নাগরিকই জলকর দিতে পিছপা হবেন না।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy