‘বিসিপিএল বিলগ্নিকরণ’ (১০-২) সংবাদে দেখলাম, কেন্দ্রীয় রসায়ন ও সারমন্ত্রী ডি ভি সদানন্দ গৌড়া দেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল কেমিক্যালস-এর বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি ‘কৌশলগত’ কারণে। দেশের সরকারি শিল্প, সে লাভজনক হোক বা অলাভজনক, তার বিলগ্নিকরণ এই সরকারের কার্যসূচিতে প্রাধান্য পেয়েছে। অথচ, নতুন শিল্প স্থাপনের কোনও উদ্যোগ নেই। ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ করে কি আর্থিক পরিকাঠামো পোক্ত হয়েছে? অথচ, বছরে দু’কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আছে। আত্মনির্ভর ভারত গড়ে উঠবে দেশীয় হ্যাল, বিপিসিএল, বিসিপিএল, ব্যাঙ্ক, এলআইসি প্রকারান্তরে বিক্রি করে। এই সব সিদ্ধান্ত কারা নিচ্ছেন? যাঁরা জনগণের টাকায় ‘সংসদ’ নামক শ্বেতহস্তীর কুশীলব। এঁদের সুরক্ষা, ভাতা, পেনশন (যদিও এঁরা কর্মচারী নন), বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদিতে যে বিপুল অর্থের অপচয় হয়, তার হিসেব হয় না। আর্থিক ক্ষতি মেটানোর দায় জাতীয় শিল্পের, আর ভোগের ছাড়পত্র জনপ্রতিনিধিদের হাতে! বেঙ্গল কেমিক্যালস ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠান। একে সম্মান দিয়ে জাতীয়তাবোধ দেখানো উচিত। বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে কি তাকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দিতে চাইছে কেন্দ্র? বোধ হয় ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নয়, ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি-বান্ধব ভারত গড়াই লক্ষ্য।
বদ্রীনাথ দাস
কলকাতা-২৮
গর্বের ট্রাম
‘রং চেনাবে ট্রাম রুট’ (২৫-১) অত্যন্ত শুভ প্রচেষ্টা। কলকাতার প্রাচীন এক যান-চলাচল ব্যবস্থার প্রতি কর্তৃপক্ষের ভালবাসার নিদর্শন। ভারতের আর কোনও শহরে ট্রাম নেই, ট্রাম কলকাতার গর্ব। আমাদের মতো বয়স্ক ব্যক্তিরা ট্রামের উপরে অনেকাংশে নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে ট্রামলাইনকে বুলেভার্ড থেকে সরিয়ে এনে রাস্তার মাঝখানে দ্রুতগামী যানবাহনের সঙ্গে চালানো হচ্ছে। ফলে ট্রামে ওঠানামা এখন বিরাট সমস্যার ব্যাপার। স্টপগুলিতে যাত্রীদের ওঠানামার জায়গা লাল বর্ডারে চিহ্নিত করা হলে তাঁরা নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-২৬
হেমন্তের গান
‘সুরের সাধনা’ (কলকাতার কড়চা, ২৫-১) প্রতিবেদনে উল্লিখিত হয়েছে, উমা বসু গান গেয়েছেন সুবোধ পুরকায়স্থ, সুনির্মল বসুর সুরে। ওঁরা সুরকার নন, গীতিকার ছিলেন। উমা বসু গেয়েছিলেন সুবোধ পুরকায়স্থের কথায় ‘চাঁদ কহে চামেলি গো’ এবং সুনির্মল বসুর কথায় ‘আকাশের চাঁদ মাটির ফুলেতে’। সোমনাথ রায়ের ‘বুলবুল’ (৩১-১) শীর্ষক চিঠিতে ভুল তথ্য রয়েছে যে, ‘চাঁদ কহে চামেলি গো’ পরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় রেকর্ড করেছিলেন। সন্ধ্যা এই গানটি রেকর্ড করেননি। ১৯৬৬ সালে ‘আ ট্রিবিউট টু হিমাংশু দত্ত’ এলপি রেকর্ডে (ইএএলপি ১৩১১) সন্ধ্যা গেয়েছিলেন ‘রাতের ময়ূর ছড়াল’ ও ‘শুধু কাঙালের মতো’। ওই একই রেকর্ডে ‘চাঁদ
কহে চামেলি গো’ শুনিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
স্বপন সোম
কলকাতা-৩
কবিতার পাঠক
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর ‘সারাজীবনের মতো’ বইটি নিয়ে আলোচনা (“বয়ে যায় এক ঝলক ‘কবিতা-বাতাস’”, ৬-২) পড়লাম। আলোচক প্রচেত গুপ্ত লিখেছেন, কবিতা অনেকের বোধগম্য হলে নাকি সে তার ‘কৌলীন্য’ হারায়। কবিতা অন্তর থেকে উৎসারিত সংবেদনশীল বর্ণমালা। পাঠক যদি পড়েও তার রস উপলব্ধি করতে না পারেন, তা হলে কবিতা লেখার সার্থকতা কোথায়? আধুনিক কবিতা জনমানসে চিরাচরিত আবেদনের কতটা উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে, তা বিতর্কের দাবি রাখে। কিছু কবিতা কঠিন শব্দের বাহুল্যে সাধারণ পাঠকের বোধগম্য হয় না, কিন্তু নিঃসন্দেহে বার্তা বহন করে। যথার্থ মননশীল পাঠকের অভাবে কবিতা অনেক ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা হারায়। ভয় হয়, পাঠক যেন কবিতাকে সারা জীবনের মতো নির্বাসনে না পাঠান!
নারায়ণ সাহা
কলকাতা-৮৪
নেতাজির সম্মান
নির্বাচনের বছরে নেতাজি-প্রেম জাহির করতে কেন্দ্র বা রাজ্য, কেউ পিছিয়ে থাকতে চায় না (‘নেতাজি-প্রেম: প্রতিযোগিতায় নামল কেন্দ্র এবং রাজ্য’, ৬-২)। দলীয় রাজনীতি যে প্রচ্ছন্ন প্রতিটি পদক্ষেপে, তা না বোঝার মতো মূর্খ জনগণ নয়। মনীষীদের প্রতি প্রেম, শ্রদ্ধা বা সম্মান দেখাতে এ সব আয়োজন নয়। নিজেদের ভোট বৈতরণি পারের নানা জনমোহিনী কৌশল এ সব। মনীষীকে ভালবাসা, তাঁর কাজকর্মকে ছড়িয়ে দেওয়া বা বাঁচিয়ে রাখার মধ্য দিয়েই যথার্থ শ্রদ্ধা প্রদর্শন হয়। নেতাজিকে মনে রাখতে হলে তাঁর বলিষ্ঠ, নির্ভীক দেশবাসী গড়ার কাজ অনুসরণ করতে হবে। বছরভর নেতাজির নামে খেলাধুলা হোক, স্বাস্থ্য-সম্বন্ধীয় অনুষ্ঠান, যুবশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করতে এলাকা জুড়ে ক্রীড়াচর্চা বা টুর্নামেন্ট হোক। নগরে-প্রান্তরে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধপেটা খেয়ে ক্রীড়া অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের ক্রীড়া সরঞ্জাম দিয়ে দেশের জনগণকে ক্রীড়ামুখী ও স্বাস্থ্য সচেতন করলে তার ফল হবে সুদূরপ্রসারী।
তৃণমূল সরকার বলেছে, আগের সরকার বা কেন্দ্রের সরকার কিছু করেনি নেতাজিকে নিয়ে। তৃণমূল সরকারই বা কী করেছে? সদ্য রাজ্য বাজেট পর্বে কিছু স্মারকস্তম্ভ বানানোর পরিকল্পনা করেছে। সঙ্গে একটি কলকাতা পুলিশের বাহিনী ‘নেতাজি ব্যাটালিয়ন’ নামে গড়তে চায়। যিনি একটি দেশকে, একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁকে সম্মান দেখাতে দেড়শো-দু’শো জনের একটা বাহিনীর শীর্ষনামে বসানো কতটা সম্মানজনক হবে, ভেবে দেখতে অনুরোধ রইল।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
কলকাতা-১৫৪
নকল রসিদ
লকডাউন ও তার পরবর্তী সময়ে অনলাইন ক্লাসের কল্যাণে অনেক ছাত্রছাত্রীই মোবাইল ফোন কিনেছে। বিদ্যালয়ের (বা প্রশাসনের) দাবি, নির্দিষ্ট তারিখের মোবাইল কেনার রসিদই প্রত্যাশিত। নিয়মের এমন বাড়াবাড়ি অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদের দুর্নীতির আশ্রয় নিতে বাধ্য করছে, দীর্ঘ হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকার বিনিময়ে নকল রসিদ কেনার সারি। তারিখ সংক্রান্ত নিয়মটি শিথিল করে এমন দুর্নীতি এড়ানো সম্ভব।
সাবির রহমান লস্কর
জয়নগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কাঁথির অবদান
“দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের (১৮৭০-১৯২৫) জন্মের সার্ধশতবর্ষ যেন কেটে গেল আনমনে, তেমন উদ্যাপন ছাড়াই” (‘ফিরে দেখা’, কলকাতার কড়চা, ১৫-২) মনে করিয়ে দিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান মেদিনীপুর জেলায় গাঁধীজির দ্বিতীয় বার আসার ঘটনা। সে বার তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের তিরোধানের (২৫ জুন, ১৯২৫) পর তাঁর নামে হাসপাতালের জন্য অর্থ সংগ্রহ। যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৭ সালে দেড়শো-শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নাম রাখা হয়, চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল, যেটি সত্তরের দশকে ‘ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল’ নামে পরিচিত হয়। সে বার গাঁধীজি ৪ জুলাই, ১৯২৫ সালে এসে রাত্রিযাপন করেন কাঁথির জাতীয় বিদ্যালয়ে। ভাবতে ভাল লাগে, অসহযোগ আন্দোলন-পরবর্তী পর্বে গড়ে-তোলা এক হাসপাতালে গাঁধীজির মাধ্যমে কাঁথি মহকুমাবাসীর সামান্য হলেও অবদান আছে।
নন্দগোপাল পাত্র
সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy