Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: চুপ করাবার চেষ্টা

তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, সন্ময়বাবু তাঁর সমালোচনামূলক লেখাগুলিতে মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেন (সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে), তবে তাঁকে গ্রেফতার করানোর বদলে ওই সমাজমাধ্যমেই তাঁর লেখায় দেওয়া ভুল তথ্যগুলি খণ্ডন করলে, তা হত গঠনমূলক এবং কার্যকর।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

সামাজিক মাধ্যমে শাসক দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সমালোচনা করার কারণে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গণতন্ত্রে দলমতনির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে নিজস্ব মতপ্রকাশ করার, যার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনাও অতি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত। এই পরিসরটি কেড়ে নেওয়া হলে গণতন্ত্র আর একনায়কতন্ত্রের মধ্যে কোনও ফারাক থাকে না। সন্ময়বাবুর লেখার কারণে সামাজিক শান্তিভঙ্গ বা জনসাধারণের ক্ষতি হওয়ার কোনও তথ্যও নেই। তা সত্ত্বেও পুলিশের বিশাল বাহিনী পাঠিয়ে এক প্রবীণ মানুষকে (যিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা এবং প্রাক্তন পুরপিতাও বটেন) এমন তৎপরতার সঙ্গে গ্রেফতার করতে হল, এতই তিনি বিপজ্জনক? তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, সন্ময়বাবু তাঁর সমালোচনামূলক লেখাগুলিতে মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেন (সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে), তবে তাঁকে গ্রেফতার করানোর বদলে ওই সমাজমাধ্যমেই তাঁর লেখায় দেওয়া ভুল তথ্যগুলি খণ্ডন করলে, তা হত গঠনমূলক এবং কার্যকর। কারণ সমাজমাধ্যমে সন্ময়বাবুর তুলনায় শাসক দল ও তার নেতৃবর্গের উপস্থিতি, প্রভাব ও প্রসার অনেক বেশি বলেই আমার ধারণা। গায়ের জোরে বিরুদ্ধ মতকে চুপ করানোর চেষ্টার পরিবর্তে সুস্থ আলোচনা ও বিতর্কের পরিসর তৈরি হোক আমাদের সমাজে।

সুতপা ভট্টাচার্য

কলকাতা-৩৬

সিপিএম...

সন্দীপন চক্রবর্তীর ‘শতবর্ষ ও শত নষ্ট সুযোগ’ (২১-১০) শীর্ষক নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘‘শত সমালোচনার পরেও যে কথা মানতে হবে, এই দলের (সিপিএম) সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় না দেওয়ার নজির অম্লান।’’ বাস্তব কিছুটা অন্য রকম। যেমন, ১) নব্বইয়ের দশকে রামমন্দির তৈরির জিগিরের সময় পশ্চিমবঙ্গের শয়ে শয়ে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ থেকে রামশিলা পুজো করে অযোধ্যা পাঠানো হয়েছে। সিপিএমের নেতারাই সে সময় পুজোগুলির হর্তাকর্তা ছিলেন। ২) কুসংস্কার, ডাইনি দাগিয়ে দিয়ে খুন, বধূহত্যা, পণপ্রথার মতো কুপ্রথার বিরুদ্ধে ৭টি বামফ্রন্ট সরকার কোনও কড়া ও কার্যকর আইন প্রণয়ন করেনি। ৪) সিমি-র মতো ব্যতিক্রম ছাড়া কোনও মৌলবাদী ধর্মীয় সংগঠন বামফ্রন্ট শাসনকালে নিষিদ্ধ হয়নি। যদিও একাধিক মাওবাদী সংগঠন নিষিদ্ধ থেকেছে। ৫) সিপিএমের একাধিক নেতা-মন্ত্রী তারাপীঠে পুজো দেওয়া বা হজ যাত্রার মতো সরাসরি ধর্মীয় কার্যকলাপে যুক্ত হলেও, দল কোনও ব্যবস্থা করেনি।

যদিও সৈফুদ্দিন চৌধুরী বা নৃপেন চক্রবর্তীরা মতবিরোধের কারণে বহিষ্কৃত হয়েছেন।

অরিজিৎ কুমার

শ্রীরামপুর, হুগলি

...সাম্প্রদায়িকতা

‘শতবর্ষ ও নষ্ট সুযোগ’ লেখাটিতে লেখক যতই বলুন, ‘‘এই দলের সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় না দেওয়ার নজির অম্লান’’, তা সত্যি হলে, যে উদ্বাস্তু কলোনি বছরের পর বছর লাল পতাকার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছে, সেখানে অধুনা গেরুয়া অনুপ্রবেশ ঘটে গেল কী করে? সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সিপিএমের ভিতর সচেতন সংগ্রাম চলেছিল কি? সাম্প্রদায়িকতা কেন মারাত্মক, কেন তা শোষিত মানুষের স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকারক, সে ব্যাপারে দলের কর্মী, সমর্থক এবং জনগণকে কি নেতারা সচেতন করেছিলেন? গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের দলের কর্মী-সমর্থকরা বিরাট সংখ্যায় বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, এই অভিযোগ তো নেতারাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না।

বাবরি মসজিদ ভাঙার পর তাঁদের কর্মীরা প্রতিবাদে মিছিল করেছেন, এ কথা যেমন সত্যি, তেমনই মিছিল শেষে চায়ের দোকানে বসে তাঁরা আলোচনা করেছেন, ‘‘যা-ই বলুন, ওদের কিন্তু বড্ড বাড় বেড়েছে’’—সেই আলোচনাও তো রাজ্যের মানুষ শুনেছে। ভোটে জিততে সংখ্যালঘু এলাকায় সংখ্যালঘু প্রার্থী দাঁড় করানো কি কারও চোখ এড়িয়ে গিয়েছে? প্রাক্তন এক মুখ্যমন্ত্রীর গলায় তো মানুষ শুনেছে যে মাদ্রাসাগুলি সন্ত্রাসী তৈরির আঁতুড়ঘর।

ঠিকই, এগুলিকে বড়জোর বলা যায় ‘নরম সাম্প্রদায়িকতা’, কিন্তু এ রাজ্যে এগুলির উপরই ভিত্তি করে কি বিজেপি তার অবস্থান দৃঢ় করেনি? আজও কি ভোটের অঙ্কই সিপিএমের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান নয়? কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে তোলার জন্য নেতাদের এত তাগিদ কি শুধু বিজেপিকে ঠেকাতে? ভোটের অঙ্ক কি এই তাগিদের মূলে নেই?

সমরেন্দ্র প্রতিহার

কলকাতা-৪

এয়ার ট্র্যাফিক

সে দিন শুনলাম এক জন বলছেন, এরোপ্লেন চলার ক্ষেত্রে, ‘এটিসি’ বা ‘এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল’-এর তো কোনও দরকার নেই! স্থলপথে আমাদের চলাচলের রাস্তা প্রয়োজনের তুলনায় কম, কিন্তু আকাশপথ তো অসীম! উপর থেকে তো সব দেখাও যায়। মনে হল, অনেকেরই এমন ধারণা থাকতে পারে, তাই কয়েকটা কথা।

এয়ার ট্র্যাফিক সার্ভিসের উদ্দেশ্য হল: ক) বিমানে বিমানে সংঘর্ষ প্রতিরোধ করা। খ) বিমানবন্দরের ভিতরের এলাকায় বিমানে-বিমানে ও বিমানের সঙ্গে অন্য কোনও বস্তুর সংঘর্ষ প্রতিরোধ করা। গ) বায়ু ট্র্যাফিকের দ্রুততা ও সুশৃঙ্খল প্রবাহ বজায় রাখা। ঘ) বায়ু ট্র্যাফিকের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য তথ্য সরবরাহ করা। ঙ) বিমানের সন্ধান ও উদ্ধারকার্যে যুক্ত যথাযথ সংস্থাকে বিপদে অবহিত করা ও সহায়তা করা।

আমাদের মনে রাখা দরকার, বিমানের ইঞ্জিন চালু করা থেকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে ইঞ্জিন বন্ধ করা পর্যন্ত বিমানকে একটি বায়ু যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রেখে চলতে হয়।

এ বার কিছু উদাহরণ দিই। ধরা যাক, কলকাতা বিমানবন্দরে নামার জন্য, কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকগুলি বিমান পৌঁছচ্ছে। চেন্নাই থেকে একটা বিমান আসছে, গুয়াহাটি থেকে, বাগডোগরা থেকে, দিল্লি থেকে ইত্যাদি। এ বারে দেখতে হবে, কলকাতা বিমানবন্দরে কোন দিক দিয়ে বিমান ওঠানামা করছে। যদি মধ্যমগ্রামের দিক দিয়ে বিমান ওঠানামা করে, তবে গুয়াহাটি থেকে আসা বিমান এক নম্বর হবে। এবং সে ক্ষেত্রে চেন্নাই থেকে আসা বিমানটি নামার জন্য আরও ন্যূনতম ২০ নটিক্যাল মাইল বেশি চলবে। আবার, যদি রাজারহাটের দিক দিয়ে বিমান ওঠানামা করে, তা হলে চেন্নাই থেকে আসা বিমানটি প্রথম নামবে।

এ বার, প্রথমটি নামার কত ক্ষণ পরে দ্বিতীয়টি নামবে? সেটা নির্ভর করে বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার কত ক্ষণ পরে বিমানটি রানওয়ে খালি করছে, তার উপর। যদি রানওয়ে সংলগ্ন ট্যাক্সিওয়েগুলিতে কোনও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ না চলে, তা হলে কলকাতায় দুটো বিমান পর পর নামার জন্য ৬ নটিক্যাল মাইল (২ মিনিট ৩০ সেকেন্ড) দূরত্ব হলেই চলে। আবার এই দু’টি বিমানের নামার মধ্যের সময়ে যদি একটি বিমান উড়ে যায়, তা হলে নামা বিমান দু’টির দূরত্ব ৭ নটিক্যাল মাইল (২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড) হলেও চলে (যদি ডিপার্চারের বিমান ট্যাক্সি থেকে রানওয়েতে উঠেই ছুটতে শুরু করে)।

আবার ধরা যাক, ১০টি বিমান কলকাতা বিমানবন্দরে নামতে চাইছে। রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশ হাত দেখালে গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়, প্লেন তো আর আকাশে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। তাই বিমানগুলিকে কলকাতার আকাশে এমন ভাবে অবস্থান করতে হবে, যাতে রানওয়ে থেকে তাদের দূরত্ব হবে আনুমানিক ০, ৬, ১৩, ২২, ৩২, ৪২, ৫২, ৬২, ৭২, ৮২ নটিক্যাল মাইল। এক বিমান নিয়ন্ত্রককে এই সব সিদ্ধান্ত নিতে হয় অত্যন্ত দ্রুততার ও দৃঢ়তার সঙ্গে। এর জন্য কয়েক বছরের লাগাতার প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

এই ভাবে বিমান নিয়ন্ত্রক নেপথ্যে থেকে বিমানযাত্রীদের সেবা করে চলেন। আমরা হয়তো তাঁদের কাজের গুরুত্ব বুঝতে পারি না।

কৈলাসপতি মণ্ডল

রিজিয়নাল সেক্রেটারি,

এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার্স’ গিল্ড (ইন্ডিয়া), পূর্বাঞ্চল

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Sanmoy Bandyopadhyay Congress Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy