Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

গণতন্ত্রের পথেই

বামপন্থীদের ঘাড়ে দুর্নীতির বোঝা চাপিয়া বসিবার পরে অপর কাহারও কথা বিবেচনা না করিয়া প্রাক্তন সেনানায়ককে প্রেসিডেন্টের আসনে বসাইয়া দিলেন ব্রাজ়িলবাসী।

টি শার্টে জাইর বোলসোনারো। ছবি: এএফপি।

টি শার্টে জাইর বোলসোনারো। ছবি: এএফপি।

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০০
Share: Save:

ষোলো বৎসর বাম পথ আঁকড়াইয়া থাকিবার পরে দক্ষিণে মুখ ফিরাইল ব্রাজ়িল। বামপন্থীদের ঘাড়ে দুর্নীতির বোঝা চাপিয়া বসিবার পরে অপর কাহারও কথা বিবেচনা না করিয়া প্রাক্তন সেনানায়ককে প্রেসিডেন্টের আসনে বসাইয়া দিলেন ব্রাজ়িলবাসী। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অতি-দক্ষিণপন্থী জাইর বোলসোনারো সামরিক শাসনের দিনগুলির প্রকাশ্য সমর্থক। এক দিকে ঘৃণার বীজ বপন, অপর দিকে রঙিন দিনের স্বপ্নে দেশবাসীকে বিভোর করিতে সচেষ্ট হইয়াছেন তিনি। তবে তাঁহার সাফল্যের প্রধান কারণ বামপন্থীদের নীতিপঙ্গুত্ব, অপদার্থতা এবং দুর্নীতি। ষোলো বছরের শাসনে ওয়ার্কার্স পার্টি জমির পুনর্বণ্টনে কিছুটা অগ্রসর হইয়াছে, দারিদ্র কমাইয়াছে, শ্রমিক সহায়ক আইন প্রণয়ন করিয়াছে, কিন্তু জাতীয় অর্থনীতির ভিত ক্রমশ দুর্বল হইয়াছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়ে নাই। কর্মসংস্থান তথৈবচ। সর্বোপরি, শাসকদের বিরুদ্ধে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হইবার অভিযোগগুলি ক্রমে পর্বতপ্রমাণ। দুই বৎসরে নূতন দিশা দেখাইতে ব্যর্থ হইয়াছেন কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট মধ্যপন্থী মিশেল তেমেরও। অতএব, কার্যকর মধ্যপন্থার অনুপস্থিতিতে, পরিবর্তনের তীব্র চাহিদায় মানুষ প্রাক্তন সেনানায়ককেই বরণ করিয়া লইয়াছেন।

বোলসোনারো বিভিন্ন বিষয়ে তাঁহার ভয়াবহ মন্তব্য ও আচরণের কারণে ‘ট্রপিক্যাল ট্রাম্প’ শিরোপা লাভ করিয়াছেন। তিনি সমকামীদের মৃত্যুকামনা করিয়াছেন, কৃষ্ণাঙ্গরা সন্তানের জন্ম দিতে পারেন কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন, মহিলাদের লইয়াও অনুচ্চারণীয় কুমন্তব্য করিয়াছেন— অশালীন উচ্চারণে তিনি সত্যই ট্রাম্পের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী। ভয়ঙ্কর নীতির প্রস্তাবনাতেও। ব্রাজ়িলের অর্থনীতিতে গতি আনিতে গেলে মাংসের রফতানি বাড়াইতে হইবে, অতএব আমাজ়নের জঙ্গল সাফ করিয়া গোপালনের বন্দোবস্ত করিতে চাহেন তিনি। মনে পড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের যাবতীয় আশঙ্কাকে ‘ধাপ্পা’ বলিয়া আন্তর্জাতিক চুক্তি হইতে ট্রাম্পের সরিয়া আসিবার কাহিনি। ট্রাম্প সমর্থকের কল্যাণে মার্কিন দেশে বিরোধীদের নিকট পার্সেল-বোমা পৌঁছাইতেছে, ব্রাজ়িলে পূর্ণাঙ্গ ফলপ্রকাশের পূর্বেই নানা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হানা দিয়া গণতন্ত্রকামী ও ফ্যাসিবাদ-বিরোধী প্রচারপত্র বাজেয়াপ্ত করিয়াছে পুলিশ।

বোলসোনারোর জয় ব্যতিক্রমী নহে। ফিলিপিন্সের রদরিগো দুতের্তে হইতে রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, তুরস্কের রেচেপ তায়িপ এর্দোয়ান হইতে হাঙ্গারির ভিক্তর অরবান— উদার গণতন্ত্রের বিরোধী কট্টর দক্ষিণপন্থার যে ধারাটি এখন দিগ্বিজয়ে রত, ইউরোপের মূল ভূখণ্ডেও যাহার প্রতিপত্তি দ্রুত বাড়িতেছে, দক্ষিণ আমেরিকার রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই সেই ধারাটি অনুসরণ করিতেছিলেন আর্জেন্টিনার মাউরিসিয়ো মাকরি এবং কলম্বিয়ার ইভান দুক মার্কেস। লক্ষণীয়, পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে স্বৈরতন্ত্রীদের অপসারণের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হইত। অধুনা গণতন্ত্রের পথেই তাঁহাদের উত্তরসূরিরা গদিতে পৌঁছাইতেছেন। যথেচ্ছাচারের পরে ‘ভোটে জিতিয়াছি’ বলিবার ছাড়পত্র এই নায়কদের প্রদান করিয়াছে নূতন বিশ্ব। ব্রাজ়িল তাহার সাম্প্রতিকতম শরিক। শেষ শরিক বলিবার কোনও উপায় নাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Brazil President Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy