Advertisement
E-Paper

সমানাধিকার

বাহির হইতে চাপাইয়া দেওয়া সংস্কার শেষ অবধি গভীরে প্রবেশ করিতে পারে না।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২০ ০১:৪৬
Share
Save

পথ দেখাইল কেরল। কেরলে ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ড একটি স্বশাসিত সংস্থা। সমগ্র কেরলে ১২০০-রও অধিক মন্দিরের নিয়ন্ত্রণ ভারটি এই স্বশাসিত বোর্ডের হাতেই ন্যস্ত। সম্প্রতি তাহারা সিদ্ধান্ত করিয়াছে— তফসিলি জাতি ও জনজাতির মধ্য হইতেও আংশিক সময়ের জন্য পুরোহিত নিয়োগ করা হইবে। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে, শীঘ্রই তফসিলি জাতির মধ্য হইতে ১৮ জন এবং জনজাতির মধ্য হইতে এক জন পুরোহিত পদে নিয়োজিত হইবেন। ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের একেবারে গোড়ায় আঘাত করিতেছে এই ঘোষণা। তথাকথিত নিম্নবর্ণের নাগাল হইতে যাহাকে সর্বান্তঃকরণে সরাইয়া রাখিত ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র, সেই পৌরোহিত্যের দরজা খুলিয়া দেওয়া হইতেছে তাঁহাদের জন্য। অর্থাৎ, এই সিদ্ধান্তটির মাধ্যমে দেবস্বম বোর্ড জানাইল, আপন অধ্যবসায়ে দেবার্চনার অধিকারটি অর্জন করিয়া লওয়া সম্ভব। জন্মগত পরিচয়ই শেষ কথা নহে, তাহারও উপরে স্থান পুরুষকারের, ব্যক্তির সত্তার।

ইহাই কি আদি বৈদিক যুগের মূল কথা নহে? পেশাগত পরিচয়েই তখন মানুষ পরিচিত হতেন। যিনি পূজার্চনা করিতেন, তিনি ব্রাহ্মণ; যিনি দেশ শাসন করিতেন, তিনি ক্ষত্রিয়। কালক্রমে সেই ভাবনা অন্তর্হিত হইল, বর্ণাশ্রম হইয়া উঠিল জন্মসূত্রে অর্জিত ও অনতিক্রম্য এক প্রতিষ্ঠান— হিন্দু ধর্মের অভ্যন্তরে সামাজিক চলমানতার আর অবকাশ থাকিল না। তাহাতে তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষই লাভবান হইয়াছে, ফলে এই অচলায়তনের অলিন্দে যাহাতে সংস্কারের সুবাতাস প্রবেশ না করিতে পারে, সেই তাগিদও মূলত তাহাদেরই ছিল। হিন্দুধর্মের অভ্যন্তরে যে সংস্কার আন্দোলনগুলি হইয়াছে, সেগুলি ধর্মের এই বিদ্বেষমূলক দিকটিকেই পরিহারের কথা বলিয়াছিল। ভক্তিবাদের প্রচারকরা পুরোহিততন্ত্রের আধিপত্যবাদের প্রতি প্রশ্ন তুলিয়া বলিয়াছিলেন, অন্তরে ভক্তি থাকিলেই ঈশ্বরলাভ সম্ভব, তাহার জন্য যাগযজ্ঞ, পূজার্চনার প্রয়োজন নাই। তৎসত্ত্বেও ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের দাপট অব্যাহতই ছিল। অধুনা মনুবাদী রাজনীতি তাহাকে সবলতর করিতেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ডের সিদ্ধান্তটিকে বৈপ্লবিক বলিলে অত্যুক্তি হয় কি?

ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের সঙ্গে পুরুষতন্ত্রের নিগড়টিকেও ভাঙা সমান প্রয়োজন। সেই চেষ্টা যে একেবারে হয় নাই, তাহা নহে। মহিলা পুরোহিতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়াছে। তাঁহারা পূজার পাশাপাশি বিবাহ অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্যও করিতেছেন। কিন্তু সর্ব স্তরে তাহা সমান ভাবে এখনও গ্রহণীয় হয় নাই। যে ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ড তফসিলি জাতি, জনজাতি হইতে পুরোহিত নিয়োগের সিদ্ধান্ত লইয়াছে, তাহারা কেরলের শবরীমালা মন্দিরেরও দায়িত্বপ্রাপ্ত। অথচ, সেখানে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও নারীর প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করা যায় নাই। এই বৈষম্য যাহাতে দূর হয়, তাহার জন্য মন্দিরের ট্রাস্টগুলিকে অগ্রসর হইতে হইবে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে সংস্কারের সিদ্ধান্তটি সংশ্লিষ্ট ধর্মের ভিতর হইতে আসাই বিধেয়— বাহির হইতে চাপাইয়া দেওয়া সংস্কার শেষ অবধি গভীরে প্রবেশ করিতে পারে না। দেবস্বম বোর্ড যে পথে হাঁটিবার সাহস করিয়াছে, তাহা প্রশংসনীয়— আশা করা যায়, অন্য প্রতিষ্ঠানগুলিও তাহাকে অনুসরণ করিবে। যাহা ভুল, তাহাকে পরিত্যাগ করিবার তুলনায় বড় ধর্ম আর কিছু আছে কি?

Kerala Travancore Devaswom Board Kerala Equality Mandir

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy