Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রশাসনের ব্যর্থতা

সত্যই যে পদ্ধতিতে বাজিগুলি প্রস্তুত হইয়া থাকে, তাহাতে প্রতি বৎসর আরও অনেকের মৃত্যু হইবার কথা। বাজি প্রস্তুত হইতে শুরু করিয়া তাহাতে আগুন দেওয়া পর্যন্ত বিবিধ ধাপে কোথাও আইন নামক বস্তুটিকে খুঁজিয়া পাওয়া যায় না।

মৃত শিশু আদি দাস। —ফাইল চিত্র

মৃত শিশু আদি দাস। —ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

কোনও সভ্য দেশে বাজি ফাটিয়া শিশুমৃত্যু অকল্পনীয় ঘটনা। প্রকৃত সভ্য কোনও দেশে দুর্ভাগ্যক্রমে এই ঘটনা ঘটিলে তাহার সামাজিক-রাজনৈতিক অভিঘাত কতখানি বিপুল হইত, ভারতবাসী হয়তো অনুমানও করিতে পারিবেন না। ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে এই মৃত্যুগুলি নিতান্ত ‘স্বাভাবিক’। দীপাবলির রাত্রিতে খাস কলিকাতায় তেমনই দুইটি স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটিল। পাঁচ বৎসর বয়সি আদি দাসের মৃত্যু হইল তুবড়ির খোল ফাটিয়া। সে নিজে বাজিতে আগুন দেয় নাই। অন্য কাহারও আমোদের দায় তাহাকে চুকাইতে হইল নিজ জীবন দিয়া। তুবড়ি জ্বালাইতে গিয়া প্রাণ গেল দীপকুমার কোলে নামক আর এক ব্যক্তিরও। অথচ, এই ঘটনাগুলির দায় লওয়া তো দূরস্থান, প্রশাসনিক তরফে সামান্যতম নাড়াচড়াও চোখে পড়িল না। যেন এমনটা হইতেই পারে। বাজি পুড়াইতে গেলে দুই-চারিটি প্রাণ নষ্ট হওয়া এমন আর কী বড় ব্যাপার।

সত্যই যে পদ্ধতিতে বাজিগুলি প্রস্তুত হইয়া থাকে, তাহাতে প্রতি বৎসর আরও অনেকের মৃত্যু হইবার কথা। বাজি প্রস্তুত হইতে শুরু করিয়া তাহাতে আগুন দেওয়া পর্যন্ত বিবিধ ধাপে কোথাও আইন নামক বস্তুটিকে খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। কারখানাগুলিতে বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটিলে কিছু হইচই হয়। অতঃপর উৎসবের আলোয় যাবতীয় অন্ধকার চাপা পড়িয়া যায়। শুধুমাত্র প্রশাসনিক কর্তারাই অন্ধকারে বসিয়া থাকেন। বসিয়া থাকিতে চাহেন। তাঁহারা আইন করেন, বিজ্ঞাপন ছাপান, প্রথামাফিক জনগণকে সতর্ক করেন। অথচ, নির্দিষ্ট দিনে দেখা যায়, কাজের কাজ সামান্যই হইয়াছে। যে শব্দবাজি লইয়া পরিবেশবিদরা নিরন্তর সতর্ক করিয়া চলিতেছেন, এত দিনেও তাহার ব্যবসাতে দাঁড়ি পড়ে নাই। প্রকাশ্যে বন্ধ হইয়াছে, আড়ালে দিব্য চলিতেছে। পরিসংখ্যানের তুল্যমূল্য বিচারে হয়তো দেখা যাইবে এই বৎসরের অবস্থা গত বৎসরের তুলনায় সামান্য ভাল। কিন্তু, সেই হিসাবকেই সাফল্য বলিয়া দাবি করিলে নিজেদের ভুল বোঝানোর অধিক লাভ হইবে না। শব্দবাজিতে সাফল্য তখনই আসিবে, যখন অন্যের শান্তি বিঘ্নিত করিবার অপরাধে প্রয়োজনে পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় করিবে। ধরিয়া লইতে হইবে, নাগরিকের শুভবুদ্ধি নাই। সুতরাং, শুধুমাত্র আবেদনে ভরসা না করিয়া প্রশাসনকেই সেই শুভবুদ্ধি জাগ্রত করিবার ব্যবস্থা করিতে হইবে।

এবং, এই দুইটি মৃত্যুর দায় লইতে হইবে প্রশাসনকে। নাগরিকের বাঁচিয়া থাকিবার অধিকার সুরক্ষিত না করিতে পারিবার দায়। সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ব্যর্থতাতেই এই দুইটি প্রাণকে এমন অকালে চলিয়া যাইতে হইল। বস্তুত, বাজি বাজারের কোথাও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নাই। নাই নিয়মিত নজরদারি, মান পরীক্ষার ব্যবস্থা। সর্বোপরি, নাই কোনও শাস্তির ভয়ও। কার্যত কোনও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বাজি তৈরি হইয়াছে। সদর্পে ঘোষণা চলিতেছে নিষিদ্ধ বাজি ফাটাইবার এবং রাস্তায় নামিয়া ফাটানোও হইতেছে। আইন কার্যত প্রহসনে পরিণত। পুলিশ-প্রশাসন নীরব, নিষ্ক্রিয়। পুলিশের দাবি, অভিযোগ মিলিলে ব্যবস্থা করা হইতেছে। আসলে প্রয়োজন ছিল একটি অভিযোগও না উঠিবার ব্যবস্থা করিবার। অস্বীকার করিবার উপায় নাই, শাস্তির ভয় নাই বলিয়াই বাজির সমর্থকদের এমন বাড়বাড়ন্ত। এমতাবস্থায় বাজি লইয়া প্রশাসনিক ভাবনাটিকেই বদলাইতে হইবে। শুধুমাত্র শাস্তির ভয় দেখানো নহে, আইনকে কড়া ভাবে প্রয়োগ করিয়া উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করিতে হইবে। নিষিদ্ধ বাজি প্রস্তুতকারক এবং যাঁহারা ফাটাইতেছেন, উভয়কেই গ্রেফতার করিতে হইবে। বাজির মানের সঙ্গে কোনও রকম আপস করা চলিবে না। এবং নিশ্চিত করিতে হইবে যাহাতে ভবিষ্যতে আর একটি প্রাণও বাজির আঘাতে নষ্ট না হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Firecracker burning Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy