Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

সন্তান ও ভোটাধিকার

প্রশ্ন হইল, গোটা দেশে বিপুল জন্মনিয়ন্ত্রণ কি আদৌ প্রয়োজন?

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

গিরিরাজ সিংহকে যদি গুরুত্ব না-ও দেওয়া হয়, তাঁহার দাবিটিকে অবজ্ঞা করিবার উপায় নাই। তিনি একা নহেন, দেশের বর্তমান শাসক দলের অভ্যন্তর হইতে বারে বারেই ‘দুই সন্তান নীতি’র প্রস্তাব আসিতেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শেষে বলিলেন, কাহারও সন্তানের সংখ্যা দুইয়ের অধিক হইলে তাঁহার ভোটাধিকার কাড়িয়া লওয়া হউক। দুর্জনে বলিবে, এ হেন দাবির শিকড় মুসলমান-বিদ্বেষে। যে হেতু হিন্দুত্ববাদীদের অপরিবর্তনীয় বিশ্বাস যে মুসলমান-মাত্রেরই সন্তানসংখ্যা অন্তত চার, ফলে দুই সন্তানের অধিক থাকিলেই যদি ভোটাধিকার কাড়িয়া লওয়া যায়, তবে সেই ছাঁকনিতে বহু মুসলমানই ধরা পড়িবে। যুক্তিটি নিতান্ত গোদা, এবং সেই কারণেই হিন্দুত্ববাদীদের পছন্দের যুক্তি হিসাবে সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য নহে। গিরিরাজ সিংহদের জানাইয়া রাখা জরুরি যে, ভারতে প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়েই জন্মের হার কমিতেছে, মুসলমানদেরও। এবং, দেশের বহু রাজ্যেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখন আগের তুলনায় কম। কিন্তু, এই কথাগুলির পূর্বে আরও স্পষ্ট ভাষায় বলা প্রয়োজন, যদি বা কোনও সম্প্রদায়ের, বা কোনও অঞ্চলে, জন্মের হার বেশিও হয়— ভোটাধিকার কাড়িয়া লওয়া, সরকারি চাকুরি অথবা পরিষেবা হইতে বঞ্চিত করা বা অন্য কোনও অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাহার সমাধান গণতন্ত্রে সম্ভব নহে। জন্মনিয়ন্ত্রণ করিতে হইলে তাহা সম্মতি নির্মাণের মাধ্যমেই করিতে হইবে।

কিন্তু, প্রশ্ন হইল, গোটা দেশে বিপুল জন্মনিয়ন্ত্রণ কি আদৌ প্রয়োজন? পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট হয়, দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে ফার্টিলিটি রেট বা সন্তানধারণের হারে পার্থক্য বিপুল। বিহারে এক জন মহিলা তাঁহার প্রজনন কালে গড়ে ৩.৩টি সন্তানের জন্ম দেন, পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ১.৬টি। গোটা দেশের গড় ২.২। জন্মহার সংক্রান্ত যাবতীয় গবেষণা নির্দেশ করিতেছে, সন্তানধারণের হারের সহিত শিক্ষা, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, আর্থিক অবস্থা ইত্যাদির যোগসূত্র অতি গভীর। অর্থাৎ, সমস্যাটি কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের বা বিশেষ রাজ্যের নহে। সমস্যা আর্থসামাজিক। নাগরিকের ভোটাধিকার কাড়িয়া লইয়া সেই সমস্যার সমাধান সম্ভব নহে। তাহার জন্য যাহা করণীয়, সেগুলি সরকারেরই কর্তব্য। মুশকিল হইল, চিনের ভূত ভারতের শাসকদের স্কন্ধে এমনই চাপিয়াছে যে গা-জোয়ারির বিকল্প তাঁহাদের আর চোখে পড়িতেছে না। চিনের ‘এক সন্তান নীতি’ সেই দেশের অর্থনীতি ও সমাজের জন্য কোন বিপদ ডাকিয়া আনিয়াছে, সেই খোঁজ গিরিরাজ সিংহরা লইয়াছেন কি? এ-ক্ষণে আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ভারতে জনসংখ্যা কি সত্যই বেশি? যে কোনও দেশেই জনসংখ্যা একটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায়, এবং তাহার পর ক্রমে কমিতে থাকে। জনসংখ্যাতত্ত্বের দিক দিয়া ইহাকে বলে ‘পিক’ কিংবা সর্বোচ্চ স্তর। হিসাব বলিতেছে, আর ২০ বৎসরের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যাও এই সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাইবে। কিন্তু, আরও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হইল, ভারতীয় জনসংখ্যায় শিশুর অনুপাত প্রায় এক দশক পূর্বেই সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাইয়াছে। এখন তাহা হ্রাসমাণ। ফলে, উন্নত দেশগুলির ন্যায় ভারতও ক্রমে প্রবীণ নাগরিকের দেশ হইয়া উঠিতেছে, অথচ সামাজিক সুরক্ষা প্রায় নাই বলিলেই চলে। এই অবস্থায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চাপ বিপরীত ফলদায়ী হওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু, গিরিরাজ সিংহদের এত কথা ভাবিবার দায় নাই।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Birth Control Giriraj Singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy