Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
India

অধঃপতনের অর্থ

বিস্ময় না জাগিবার কারণ, ইদানীং প্রায় সমস্ত সূচকেই ভারতের অবস্থান নিম্নমুখী। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গত বৎসর বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে তাহার স্থান ছিল ১৪০।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

বিশ্বের বৃহৎ পঁচিশটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাধীনতা সূচকের নিরিখে ভারতের স্থান বিপজ্জনক ভাবে নীচে নামিয়া গিয়াছে, জানাইল এক মার্কিন সংস্থার রিপোর্ট। গত দুই বৎসরে গণতন্ত্রের ক্রমাবনতির আবহে তাহার স্থান হইয়াছে ইরান, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, সুদানের ন্যায় দেশগুলির সহিত। চিনের তথাকথিত গণতন্ত্রের সহিত ভারতে গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থার তুলনা টানিয়া মন্তব্য করা হইয়াছে— ভারত ও চিনের মধ্যে মূল্যবোধজনিত পার্থক্যগুলি মুছিয়া যাইতেছে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার বহুত্ববাদ ও ব্যক্তি মানুষের অধিকারের ন্যায় সাংবিধানিক দায়বদ্ধতাগুলির সহিত ক্রমশ দূরত্ব বাড়াইয়া চলিয়াছে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার হরণ, অসমে নাগরিকপঞ্জি চালু এবং নাগরিকত্ব সংশোধন আইন প্রবর্তনের জেরে দেশে কী হইতেছে, অধিক বলিবার প্রয়োজন নাই। প্রত্যেকটি কার্যই যেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী, সেখানে অধঃপতন দুঃখজনক হইলেও আশ্চর্যের নহে।

বিস্ময় না জাগিবার কারণ, ইদানীং প্রায় সমস্ত সূচকেই ভারতের অবস্থান নিম্নমুখী। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গত বৎসর বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে তাহার স্থান ছিল ১৪০। গত বৎসরের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকও আশাব্যঞ্জক নহে। কেহ তথ্য দেখাইয়া বলিতে পারেন, চিনের ন্যায় বৃহৎ ও বহুপ্রজ অর্থনীতির স্থান যেখানে ১১৩, ভারত সেখানে ৭৯তম স্থান পাইয়াছে, ইহা কি ভাল ফল নহে? উত্তরে বলিতে হয়, নাগরিক অধিকার হইতে অর্থনীতি, সর্ব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে সরাইয়া রাখিয়া যদি চিনের ন্যায় আগ্রাসী ও দমনমূলক রাষ্ট্রই তুলনীয় হইয়া থাকে, তাহা অপেক্ষা দুর্ভাগ্যের আর কিছু নাই। দৌড়ে যে আগাইয়া আছে তাহার নিকট হইতেই প্রেরণা লইলে ভাল, পশ্চাদ্‌বর্তী কাহাকেও দেখিয়া আত্মতুষ্টিতে বুক ফুলাইলে তাহা নিতান্ত মূর্খামি। কোন পদক্ষেপের বলে নরওয়ে বা ফিনল্যান্ড বছরের পর বছর দেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার বাতাবরণ নিশ্চিত করে, চিনের দমন-পীড়নের শিকার হইয়াও হংকং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে প্রথম স্থানটি ধরিয়া রাখে, তাহা লইয়া ভারতের আগ্রহ বা শিরঃপীড়া কোনওটিই নাই। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও সংখ্যাগুরুর রাজনীতি লইয়াই সে দিব্য রহিয়াছে।

রাষ্ট্র কর্তৃক নাগরিককে আপাত-উত্তেজক বিষয়সকলে ভুলাইয়া রাখিবার প্রবণতাটি বিপজ্জনক। নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকিল কি না, ঠিক সংবাদটি পৌঁছাইল কি না, দেশে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি কী রূপ, এই সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অবস্থান চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিতেছে, আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের ভাবমূর্তি তুলিয়া ধরিতেছে। নাগরিকের স্বাধীনতা হরণকারী ভাবমূর্তিটি চূড়ান্ত অগৌরবের। নরেন্দ্র মোদীর ভারত বলিতেই পারে, কোথাও কোনও সূচকে নামিয়া যাওয়ার অর্থ যদি গৌরবহীনতা হয়, সে গৌরবের দরকার নাই। ঘটনা হইল, তর্কের খাতিরে ভাবমূর্তিকে সরাইয়া রাখিলেও, শুধু নামা-ওঠার প্রশ্নেই সূচকগুলি গুরুত্বপূর্ণ নহে। নাগরিক অধিকার আসলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে পছন্দ-অপছন্দ বাছিয়া লইবার অধিকার, তাহা নিশ্চিত হইলে দেশে উন্নয়নের পরিসরটিও ফলদ হইয়া থাকে। পতনমাত্রেই পীড়াদায়ক। তবে কিছু কিছু সূচকের ক্ষেত্রে নীচে গড়াইয়া পড়া চরম পীড়ার কারণ।

অন্য বিষয়গুলি:

India Democracy Index
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy