জগদ্দলে পুলিশের এনকাউন্টারে মৃত দুষ্কৃতী প্রভু সাউ। —ফাইল চিত্র।
হতবাক, হতভম্ব, হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকছে না। প্রশাসনের রাশ কতখানি আলগা হয়ে গেলে প্রায় রোজ এমন নৈরাজ্যের উপসর্গ টুকরো টুকরো ছবির মতো মাথা তুলতে থাকে, সে কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার। প্রকাশ্যে বা সর্বসমক্ষে বা জমজমাট রাস্তার মোড়ে যখন তখন খুন হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের সামনেই কোথাও দুষ্কৃতীর তাণ্ডব চলছে। কোথাও আবার আচমকাই পথ চলতে চলতে সংঘর্ষ বেধে যাচ্ছে পুলিশ আর সমাজবিরোধীর মধ্যে, এনকাউন্টারে মৃত্যু হচ্ছে দুষ্কৃতীর। এই দৃশ্যগুলো কোনও স্বাভাবিক দৃশ্য নয়। লাগামছাড়া রাজনৈতিক হিংসা এবং তার জেরে রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে খুন জখম যে ভাবে চলছে, তাতে হিংসা বা রক্তপাত বোধ হয় আমাদের অনেকের চোখেই সয়ে গিয়েছে। তাই দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত বা নানা সমাজবিরোধী তত্ত্বের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যর্থতা আলাদা করে চোখে ধরা দেয় না। কিন্তু সাধারণ নাগরিক সমাজকে ঘিরে একের পর অগ্নিবলয় কী ভাবে লেলিহান হয়ে উঠছে, তা উপলব্ধি করা খুব জরুরি।
দক্ষিণ কলকাতায় ব্যবসায়ীকে হুমকি দিচ্ছেন কাউন্সিলরের সমর্থনপুষ্ট প্রোমোটার। অভিযোগ অন্তত তেমনই। অভিযোগ পৌঁছেছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। পুলিশের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশও পৌঁছেছে। তার পরেও পুলিশের সামনেই ব্যবসায়ীকে হেনস্থা করছেন প্রোমোটার ও তাঁর শাগরেদরা।
উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে আচমকা পুলিশের মুখোমুখি হয়ে পড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে বোমা-গুলি নিয়ে হামলা চালাচ্ছে কুখ্যাত সমাজবিরোধী। শুরু হচ্ছে গুলির লড়াই। সর্বসমক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটছে দুষ্কৃতীর।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
কোথাও পুলিশ-প্রশাসনকে গ্রাহ্যই করছে না সমাজবিরোধী। কোনও প্রান্ত থেকে আবার এনকাউন্টারের খবর আসছে। এই রকম পরিস্থিতি শেষ কবে দেখেছে এ রাজ্য? হিংসা বা অশান্তি বা অস্থিরতা বা প্রাণহানির হিসেব তুলে ধরে অনেকে হয়তো সত্তরের দশকের কথা বলবেন। কিন্তু অনেকগুলো দশক আগেই সে সময়টাকে পিছনে ফেলে রেখে এসেছি আমরা। বর্তমান প্রজন্ম সেই সময়টার কথা শুধু ইতিহাসেই পড়েছে। নৈরাজ্যের উপসর্গ যে ভাবে প্রায় রোজ ফুটে উঠছে, সে রকমটা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে কি না, তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করবেন।
আরও পড়ুন: ভর দুপুরে এনকাউন্টার, পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে জগদ্দলে খতম কুখ্যাত দুষ্কৃতী
প্রশাসনের কর্তৃত্ব লঘু হয়ে গেলে পরিস্থিতি এই রকম হয়। কর্তৃত্ব কেন লঘু হয়? কোনও একটা সময়ে প্রশাসনিক কর্তারা অত্যন্ত বলশালী ছিলেন, এই সময়টায় প্রশাসনিক কর্তারা খুব দুর্বল— বিষয়টা এই রকম নয় নিশ্চয়ই। প্রশাসন প্রশাসনের জায়গাতেই থাকে। তার কর্তৃত্ব লঘু হবে, নাকি মাত্রাতিরিক্ত গুরু হয়ে উঠবে, সেটা নির্ভর করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কুশলতার উপরে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রশাসনকে যে ভাবে কাজে লাগাতে চাইবে এবং যতটা কাজে যতটা কাজে লাগাতে চাইবে, প্রশাসন ঠিক সেই ভাবে এবং ততটাই কাজে লাগবে। অতএব নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হওয়ার দায়টা কাদের উপর বর্তায়, তা বুঝে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এখনও সবটা হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়নি। এখনও রাশটাকে টেনে ধরা সম্ভব। কিন্তু এখনও যদি টনক না নড়ে, তাহলে গোটা নগরীই কিন্তু পুড়বে, রেহাই পাবে না রাজ সিংহাসনও।
আরও পড়ুন: পুলিশ দাঁড়িয়ে! তা-ও হুমকি,ধাক্কা ব্যবসায়ীকে, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ফোন গেল থানায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy