Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
BJP

ঐতিহাসিক তো বটেই

এখন ধর্ম মানে হিন্দুত্ব, যে হিন্দুত্ব সঙ্ঘ পরিবারের ছাঁচে ঢালা। ইতিহাস কেন বাধ্যতে?

ছবি: রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য গঠিত শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট মন্তব্য করিয়াছে, প্রধানমন্ত্রী যখন রামমন্দিরের কাজ শুরু করিয়া পূজা করিবেন, তাহা হইবে স্বাধীন ভারতের এক অনন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ‘ঐতিহাসিক’ শব্দটির তাৎপর্য বহুমাত্রিক। এক অর্থে ইতিহাসের যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকেই ঐতিহাসিক বলা চলে। ট্রাস্টের পক্ষে, রামমন্দির আন্দোলনের সহিত যুক্ত বিবিধ সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলের পক্ষে, বিশেষ করিয়া বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তথা সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষে, সর্বোপরি ভারতীয় জনতা পার্টি ও তাহার রাজনীতিকদের পক্ষে এই মন্দির যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ থাকিতে পারে না। ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপির নির্বাচনী সাফল্যের ইমারতটির ভিত্তিতে যে মন্দির নির্মাণের প্রকল্প, দল এবং তাহার সহযোগীদের পক্ষে তাহার গুরুত্ব প্রশ্নাতীত— সবার উপরে ভোট সত্য।

কিন্তু আগামী ৫ অগস্ট ‘রামজন্মভূমি’তে মন্দির নির্মাণের সূচনা-লগ্নটি এক গভীরতর অর্থেও ঐতিহাসিক। ভূতপূর্ব বাবরি মসজিদের যে ধ্বংসক্ষেত্রটিতে গত নভেম্বরে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মন্দির নির্মাণের ছাড়পত্র মিলিয়াছিল, সরযূর তীরে অযোধ্যা নগরীর সেই ভূমিতে ৪০ কেজি ওজনের রুপার ইট দিয়া রামলালার মন্দিরের শিলান্যাসের অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করিতেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী— ভারতের সমাজ ও রাজনীতির ইতিহাসে এই ঘটনা অবশ্যই একটি মৌলিক পরিবর্তনের সূচক। এক কথায় বলিলে, ইহা নেহরুর ভারত হইতে মোদীর ভারতে পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী নেহরু ঘোষণা করিয়াছিলেন: বড় বাঁধ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইস্পাত কারখানা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানই হইবে আধুনিক ভারতের মন্দির। ‘আধুনিকতা’র এই সংজ্ঞা লইয়া পরবর্তী কালে তুমুল বিতর্ক চলিয়াছে, আজও চলিতেছে। কিন্তু সেই তর্ক এখানে অপ্রাসঙ্গিক। লক্ষণীয় ইহাই যে, সেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ধর্মের এক নূতন সংজ্ঞা নির্মাণ করিয়াছিলেন। ৪০ কেজি রুপার ইটে মন্দির বানাইবার প্রস্তুতি করিয়া এই ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানাইয়া দিবেন, সেই সংজ্ঞাকে— বাবরি মসজিদের মতোই— ধ্বংস করিয়া দেওয়া হইতেছে। এখন ধর্ম মানে হিন্দুত্ব, যে হিন্দুত্ব সঙ্ঘ পরিবারের ছাঁচে ঢালা। ইতিহাস কেন বাধ্যতে?

প্রশ্ন আপাতত একটিই। ঈষৎ ধৈর্য অবলম্বন করিলে চলিত না কি? ‘অভিজিৎ মুহূর্ত’ কি আর কোনও দিন ফিরিত না? সত্য বটে, কাশ্মীরের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ কাড়িয়া লইবার ‘ঐতিহাসিক’ ঘোষণার বর্ষপূর্তি বিফলে যাইত। কিন্তু তাই বলিয়া এই অতিমারির বিপদ তুচ্ছ করিয়া ভূমিপূজনের সমারোহ? করোনাভাইরাসের তাড়নায় বিশ্বপৃথিবী থমকাইয়া গিয়াছে, রামলালার মন্দির নির্মাণ কিছু কাল পরে শুরু করিলে রামায়ণ অশুদ্ধ হইত কি? করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিকে মান্য করিয়া অনুষ্ঠান স্থগিত রাখিবার আবেদন আদালত নাকচ করিয়াছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অবশ্যই শিরোধার্য। কিন্তু তাহাতে ঝুঁকি মিথ্যা হইয়া যায় না। সরকার অহেতুক— কেবল একটি মন্দির দ্রুত বানাইবার তাগিদে— সেই ঝুঁকি লইবে কেন? যোগী আদিত্যনাথের বিচার-বিবেচনা লইয়া কথা বাড়াইয়া লাভ নাই, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী? তিনি গত কয়েক মাসে বার বার সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশবাসীকে সর্বপ্রকারে সতর্ক থাকিবার আহ্বান জানাইয়াছেন, অথচ এই কর্মসূচিতে যোগদান করিতে চলিলেন? ‘সমস্ত নিয়ম মানিয়া অনুষ্ঠান হইবে’— এই আশ্বাসের বাস্তব মূল্য কয় আনা, তাহা তিনি জানেন না? থালাবাটি বাজাইবার মহোৎসবের দৃশ্যগুলি ভুলিয়া গিয়াছেন? এহ বাহ্য। দেশের প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু করিবেন কেন, যাহাতে সংক্রমণের বিপদকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিবার সঙ্কেত প্রচারিত হয়? মন্দির কিছু কাল অপেক্ষা করিতে পারে না? এবং ভোটের রাজনীতি?

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Ram Janmabhoomi Ayodhya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy