বিচারাধীন বন্দিদের জামিন দিবার বিষয়ে তৎপর হইতে হইবে, নির্দেশ দিয়াছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই অনুসারে সম্প্রতি কলিকাতা হাইকোর্ট রাজ্য আইনি সহায়তা পরিষেবা সংস্থাকে (সালসা) নির্দেশ দিয়াছে, কারাগারে গিয়া বিচারাধীন বন্দিদের নথি দেখিতে হইবে। সম্ভাব্য সাজার অর্ধেকের অধিক কাল কারাগারে কাটাইয়া থাকিলে বন্দির জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করিতে হইবে। আইনে এমনই ব্যবস্থা আছে, কিন্তু কার্যে ভারতে বন্দিরা, বিশেষত দরিদ্র, স্বল্পশিক্ষিত, অল্পবয়সি নারীপুরুষ দীর্ঘ কাল কারাগারে অতিবাহিত করে, কারণ জামিন করাইবার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করিবার সাধ্য তাহাদের নাই। ভারতে কারাগারে আবদ্ধ মানুষদের তিন জনের দুই জনই বিচারাধীন বন্দি। ইহাতে কারাগারের অভ্যন্তরে এক অমানবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হইতেছে, বিচারব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি হইতেছে, দেশের মানবসম্পদের অপচয় হইতেছে। সর্বোপরি, অগণিত নিরপরাধ মানুষ এক দীর্ঘ সময় অকারণ কারাবাসের যন্ত্রণা ভোগ করিতেছেন। ইহাতে আইনের শাসনের উপর ভরসা কমিতেছে। অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত সকল অভিযুক্তকে ‘নিরপরাধ’ বলিয়া গণ্য করে আইন। সুপ্রিম কোর্টের বিধান, ‘জেল নহে, জামিন।’ কিন্তু সেই সকল নীতি অর্থহীন বাক্যে পরিণত হয় যদি জামিন দিবার ব্যবস্থাটি সক্রিয় এবং সংবেদনশীল না হয়।
কয়েক বৎসর পূর্বে আইন কমিশন সুপারিশ করিয়াছিল, সম্ভাব্য কারাবাসের অর্ধেকের পরিবর্তে এক-তৃতীয়াংশ কাটাইয়া থাকিলেই বিচারাধীন বন্দির জামিন হওয়া প্রয়োজন। বিচারাধীনের বন্দিদশা কমাইতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও এই প্রথম নহে। দেশের কারাগারগুলিতে বন্দির সংখ্যা কমাইতে এবং বন্দিদের আইনি অধিকারের অমর্যাদা রুখিতে বার বার জামিনের আইন কার্যকর করিবার নির্দেশ দিয়াছে শীর্ষ আদালত। গত বৎসর কাশ্মীরের জেলে দীর্ঘ দিন যাবৎ বন্দিদের মুক্তির আদেশ দিয়া প্রধান বিচারপতি-সহ তিন বিচারপতির একটি বেঞ্চ কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়াছিল, বিভিন্ন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলিতে। সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নটিও ইহাতে জড়িত, যে হেতু প্রতি তিন জন বিচারাধীন বন্দির এক জন দলিত বা আদিবাসী। কখনও হাইকোর্টের বিচারপতি, কখনও জেলাস্তরের বিচারকদেরও এ বিষয়ে তৎপর হইবার নির্দেশ দিয়াছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই অনুসারে কখনও কারাগারে বিশেষ বেঞ্চ বসিয়াছে, কখনও বিচারকেরা কারাগার পরিদর্শন করিয়াছেন। এই বার হয়তো সালসা-র সদস্যেরা কারাগারে গিয়া খোঁজখবর করিবেন। আশঙ্কা হয়, কিছু দিন পরেই পরিস্থিতি যথাপূর্বং হইবে না তো? বন্দির অধিকার রক্ষা করিতে হইলে সকল স্তরের আদালতে শূন্য পদে নিয়োগ-সহ নানা সংস্কার প্রয়োজন। ‘সালসা’ কতটুকু করিবে?
বিরুদ্ধাচারীকে কারাবন্দি করা ক্ষমতার প্রমাণ। বহু নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি তাহাতে অতীব তৎপর। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে তাঁহাদের ইঙ্গিতেই পুলিশ জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করে, জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন সরকারি উকিল। জমিদারি প্রথার দিন গিয়াছে, কিন্তু গুমঘরে কয়েদ করিবার প্রবণতাটি ঘোচে নাই বাহুবলীদের। পুলিশ ও সরকারি আইনজীবী যত দিন ‘লেঠেল’-এর ভূমিকাটি লইবে, জনপ্রতিনিধি দাঁড়াইবে প্রান্তবাসীর বিপরীতে, তত দিন বিচারাধীনের বন্দিদশা ঘুচিবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy