Advertisement
E-Paper

মৌমাছি যেমতি

এই মহান গণতন্ত্রেও, হরিয়ানায় যাহা ঘটিল তাহা দেখিয়া অনেকেই চমৎকৃত। মোদী-শাহি বিজেপি ক্ষমতা দখলের জন্য কত দূর যাইতে পারে, বিভিন্ন রাজ্যে গত কয়েক বছরে বিরোধী শিবির ভাঙিবার রোমাঞ্চকর অভিযানগুলিতে তাহা বুঝা গিয়াছে।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩২
Share
Save

আজ, এই ২০১৯ সালে কেহ যদি বলে যে ভারতীয় রাজনীতি হইতে নীতি হারাইয়া গিয়াছে, তবে ১৩০ কোটি ভারতবাসী সমবেত ভাবে হাসিবেন। ব্যঙ্গের হাসি। নৈতিকতার প্রাথমিক শর্তগুলি ক্ষমতার যূপকাষ্ঠে বলি দেওয়া হইয়াছে বহু দশক আগেই। দলবদল এবং জোটবদল সেই বলির দুই প্রধান অস্ত্র। বস্তুত, একই অস্ত্রের দুই অঙ্গ। মৌমাছি যে ভাবে এক ফুল হইতে অন্য ফুলে উড়িয়া যায়, ক্ষমতার আকর্ষণে বিধায়ক বা সাংসদরা সেই ভাবেই এক দল ছাড়িয়া অন্য দলে চলাচল করিতেছেন— গত শতকের ষাটের দশক হইতেই এই দৃশ্য ক্রমে এমন আকার ধারণ করিয়াছিল যে শেষ অবধি ১৯৮৫ সালে সংবিধান সংশোধন করিয়া দলত্যাগ নিয়ন্ত্রণের আয়োজন করিতে হয়। তাহাতে মৌমাছির ওড়াউড়ি কিছুটা বাধা পায় বটে, কিন্তু একেবারেই বন্ধ হয় নাই। বস্তুত, আইনের তাড়নায় আইনসভার অন্তত এক-তৃতীয়াংশ সদস্যকে একযোগে কব্জা করিবার তৎপরতা বাড়িয়া যায়, আয়ারাম-গয়ারামের বাজারে খুচরোর বদলে পাইকারি লেনদেন বাড়ে। পাশাপাশি, জোটবদল অবাধে চলিতে থাকে— একটি জোটের শরিক হিসাবে নির্বাচনে লড়িবার পরে ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’র নির্বিকল্প যুক্তি দেখাইয়া রাতারাতি বিপরীত জোটে গিয়া ভিড়িবার উৎকট নজিরও কালক্রমে নাগরিকের চোখে সহিয়া গিয়াছে।

তবু, এই মহান গণতন্ত্রেও, হরিয়ানায় যাহা ঘটিল তাহা দেখিয়া অনেকেই চমৎকৃত। মোদী-শাহি বিজেপি ক্ষমতা দখলের জন্য কত দূর যাইতে পারে, বিভিন্ন রাজ্যে গত কয়েক বছরে বিরোধী শিবির ভাঙিবার রোমাঞ্চকর অভিযানগুলিতে তাহা বুঝা গিয়াছে। প্রয়োজনে মাননীয় গোপাল কান্ডাকেও বুকে টানিয়া লইতে তাঁহাদের বাধিত না, এমন সংশয় উড়াইয়া দেওয়া কঠিন। জননায়ক জনতা পার্টির তরুণ নায়ক দুষ্মন্ত চৌটালা ডিগবাজি দিয়াছেন, তাহাও বড় কথা নহে। কিন্তু বিজেপির নির্দেশনায় তাঁহার ডিগবাজির সাবলীলতা দেখিয়া স্বয়ং ভজনলালও স্বীকার করিতেন যে, রাজ্যে তাঁহার যোগ্য উত্তরসূরি আসিয়া গিয়াছেন। রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরোধিতাকে অস্ত্র করিয়াই এই নবীন দলটি রাজনীতিতে শান দিয়াছে, চৌটালা নির্বাচনী প্রচারে বিজেপির, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের, এমনকি খোদ নরেন্দ্র মোদীর কঠোর সমালোচনায় মুখর হইয়াছেন। অতঃপর বিজেপি ‘অপ্রত্যাশিত’ হোঁচট খাইবার ফলে দুষ্মন্তের সামনে সুবর্ণসুযোগ উপস্থিত হইয়াছে এবং তিনি কার্যত বিনা দ্বিধায় তাহা লুফিয়া লইয়া খট্টরের পাশে উপমুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়া পড়িয়াছেন। তাঁহার ‘যুক্তি’: কংগ্রেসকেই তিনি সমর্থন করিতেন, কিন্তু কংগ্রেস অপেক্ষা বিজেপি আসন বেশি পাইয়াছে, অতএব...

অতএব, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষায় বলিলে, ‘ট্রানজ়্যাকশনাল’ রাজনীতি। নৈতিকতা বা আদর্শের মতো শব্দগুলিই সেই রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক, তাহার ধর্ম সম্পূর্ণত বাজারের লেনদেনের ধর্ম, অর্থাৎ লাভলোকসানের অঙ্কই সেখানে একমাত্র বিচার্য। বস্তুত, এই ‘অ্যামরাল’ বা নৈতিকতা-নিরপেক্ষ রাজনীতি যে ভাবে ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া উত্তরোত্তর কায়েম হইতেছে, তাহা এ দেশের গণতন্ত্রের বিবর্তনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অপ্রিয় ও দুর্ভাগ্যজনক সত্যটি অস্বীকার করিবার উপায় নাই— ভোটদাতা তথা নাগরিকরা এই কারবারি রাজনীতিকে অন্তত অনেক দূর অবধি গ্রহণ করিতে প্রস্তুত। তাহা না হইলে ক্রমাগত এমন বেমালুম ডিগবাজি চলিত না। ব্যতিক্রম আছে, সাম্প্রতিক নির্বাচনেই বেশ কয়েকটি আসনে সহসা-দল-বদলানো প্রার্থীরা পরাজিত হইয়াছেন। আপাতত খড়কুটো বলিতে ওই ব্যতিক্রমগুলিই। ওইটুকু ধরিয়াই যদি ভারতীয় গণতন্ত্র এই লেনদেনসর্বস্ব রাজনীতির অকূল দরিয়া হইতে ন্যূনতম নৈতিকতার দিকে নূতন করিয়া যাত্রা শুরু করিতে পারে, মঙ্গল।

Dushyant Chautala BJP JJP Haryana Assembly Election 2019

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।